পোস্ট সমূহ

Bornomala It https://www.bornomalait.com/2023/02/blog-post_24.html

শবে বরাত কবে - শবে বরাতের ইবাদত - শবে বরাতের নাময ও রোজা

মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব গুলোর মধ্যে শবে বরাত একটি।শবে বরাতের কথা শুনলেই আমরা রমযানের আগমনী বার্তা বুঝতে পারি।বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এ দিনটিকে ইবাদত বান্দেগীর মধ্যে দিয়ে পালন করে থাকে।শবে বরাতের রাতের অনেক ফজিলত আছে কিন্তু এ পবিত্র রাতটি উৎযাপন করতে গিয়ে অনেক সময় বেদয়াত করে ফেলি।আমরা আজ শবে বরাত কি,শবে বরাতের ফজিলত ,শবে বরাতের নামায,শবে বরাতে কি কি করা বেদয়াত এ সব নিয়ে আলোচনা করা যাক।



আজকের এই পোস্টটি মূলত সাজানো হয়েছে শবে বরাত সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য দিয়ে। এই পোস্টটি পড়লে আপনারা জানতে পারবেন ২০২৩ সালের শবে বরাত কবে , শবে বরাতের নামাজ , শবে বরাতের রোজা, শবে বরাতে কোন কোন দোয়া বেশি পড়তে হবে সেই সম্পর্কে।

আলোচনার বিষয়বস্তুঃশবে বরাত কবে  - শবে বরাতের ইবাদত - শবে বরাতের নাময ও রোজা 

শবে বরাত বা লাইলাতুল বরাত কিঃ

শবে বরাত হলো একটি পবিত্র রাত এবং মুসলমানদের প্রধান  ধর্মীয় উৎসবগুলোর মধ্যে একটি।শবে বরাতকে আরবিতে "লাইলাতুল বরাত " বলা হয়।মুসলমানরা বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যেমন নামায , দোয়া -কালাম,ইস্তেগফারে  ইত্যাদির মাধ্যমে পালন করে থাকে।আরবি শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে শবে বরাত পালন করা হয়।এ রাতে আল্লাহ কাছে ক্ষমাপ্রার্থি বান্দাদের ক্ষমা করেদেন।শবে বরাতের  রাতে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য কৃপা ও অনুগ্রহের দরজা খুলে দেন।

শবে বরাত অর্থঃ

শবে বরাত  কথাটি ফারসি থেকে নেয়া দুটি শব্দ।শব অর্থ রাত এবং 'বরাত' অর্থ মুক্তি,সুতরাং শবে বরাত কথাটির অর্থ দাঁড়ায় 'মুক্তির রাত'।

আরবিতে শবে বরাতকে 'লাইলাতুল বরাত ' বলা হয় ,লাইলাতুল মানে 'রাত বা রজনী' আর আরবি ভাষায় 'বরাত' মানে হল 'ক্ষমা' সুতরাং আরবি ভাষায় শবে বরাত অর্থ দাঁড়ায় 'ক্ষমার রাত'।

শবে বরাত ২০২৩ঃ

শবে বরাত পালিত হয় আরবি  শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিনগত রাতে,আর শাবান মাস হলো আরবি বছরের ৮ম তম মাস। ২০২৩ সালে আরবি শবান মাস শুরু হয়েছে গত ২২ তারিখে। তাহলে ২২ তারিখ যদি শবান মাসের ১ তারিখ হয় তাহলে আগামি ৭ই মার্চ  ২০২৩ পবিত্র শবে বরাত পালিত হবে।

শবে বরাতের ইতিহাসঃ

ইবনে তাউস (রহ.) এবং আলী বিন মুসা (রহ) এর বর্ননা থেকে জানা যায় , রাসূল (সা)  ১৫ ই শাবান রাতে ঘুমিয়ে ছিলেন এমন সময় জিব্রাইল (আ) রাসূল (সা) এর কাছে আসেন এবং বলেনঃ হে মুহাম্মদ (সা) উঠুন,এর পর জিব্রাইল (আ) নবীজি কে জান্নাতুল বাকী কবরস্থানে নিয়া যান এবং মুহাম্মদ(সা) কে বলেন- আকাশের দিকে দেখুন ,আসমানের দরজাগুলো আজ রাতে খুলে যাবে।খুলে যাবে রহমতের দরজাসহ সকল সুখ,সমৃদ্ধি,ক্ষমা,রূজি,পরিত্রান পাওয়ার দরজাসমূহ।

তিনি আরো বলেন আল্লাহ তায়ালা আজ তাঁর অগনিত বান্দাকে জাহান্নামের আগুন থাকে মক্তি দিবেন।জিব্রাইল (আ) বলেন যারা আজ রাতে আল্লাহর ইবাদাত করে যেমন আল্লাহকে খুশি করার জন্য নামায,তাসবিহ,ইস্তগফার,জিকির দোয়া ইত্যাদির মধ্যে দিয়া পার করবে আল্লাহ তায়ালা তার আগের ও পরের গুনাহ ক্ষমা করে বেহেস্তে স্থান দেবেন

এ ঘটনাটি ঘটে দ্বিতীয় হিজরি ১৪ শবান দিবাগত রাতে আর তখন থেকেই শবে বরাত পালন করা শুরু হয়।

শবে বরাতের ফজিলতঃ

শবে বরাত একটি পবিত্র ও বরকতময় তাই এ রাতের ফজিলত অনেক।এ রাতে আল্লাহ তাঁর সৃষ্টির প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেন।শিরক, মাতা পিতার অবাধ্য এবং মদ পানকারী ,বিদ্বেশ পোষন কারি ছাড়া  এ রাতে সকল ক্ষমা প্রার্থনাকারী কে আল্লাহ ক্ষমা করে দেবেন (ইবনে হিব্বানঃ৫৬৬৫,ইবনে মাজাহঃ ১৩৯০,মুসনাদে আহমদঃ চতুর্থ খন্ড,)।

শবে বরতের রাতে আল্লাহ চারপায়া পশুর গায়ের  লোমের চেয়েও অধিক পরিমান বান্দাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দেবেন (তিরমিজিঃ ৭৩৯)।

হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্নিত-তিনি বলেন শবে বরাতের রাতে আগামী এক বছরে জন্মগ্রহনকারি আদম সন্তানের নাম তাদের রিজিক,মৃত্যবরণকারী আদম সন্তানদের নাম লেখা হয়।আয়েশা (রা) আরো বলেন ,এ রাতে বান্দাদের আমল উঠিয়ে নেন  এবং বান্দাদের রিজিক অবর্তীন করেন।

এই রাতে আল্লাহ তায়ালা শেষ আসমানে নেমে আসেন এবং বলেন ,কেও ক্ষমাপ্রার্থী আছ ? আমি ক্ষমা করব, কেও বিপদগ্রস্থ আছ ? আমি বিপদ থেকে উদ্ধার করব, কেও রিজিকপ্রার্থী আছ? আমি রিজিক দান করব।এভাবে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ডাকতে থাকেন (ইবনে মাজাহঃ১৩৮৪)

শবে বরাতের ইবাদতঃ

শবে বরাতের  রাতে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য যে যতবেশি  নফল নামায ,তসবিহ তাহলিল ,ইস্তেগফার, দরুদ শরীফ,কুরাআন শরীফ তেলায়াত,দোয়া,কালিমা পাঠ করব তত ভাল।এ রাতের ইবাদতের ধরা বাঁধা কনো নিয়ম নাই

শবে বরাতের নামাজঃ

শবে বরাতে কোন নির্দিষ্ট নামায নেই, দুই দুই রাকায়াত করে যে যত বেশি নামায পড়তে পারে। সবে বরাতের পবিত্র রাতে আমরা নফল নামাজ হিসেবে সালাতুল তাসবির নামায পড়তে পারি।এ নামাযে মোট ৩০০ বার তাসবিহ পাঠ করতে হয়। তাসবিহটি হলো,

'সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবর'

সালাতুল তাসবিহ এর নামায পড়ার জন্য ৪ রাকায়াত সালাতুল তাসবিহ এর নফল নামাযের নিয়ত করতে হবে,তাকবিরে তাহরিমা ,সানা পড়ার পর ১৫ বার তাসবিহ পড়ে সূরা ফাতিহা সাথে অন্য একটি সূরা পড়তে হবে তারপর ১০ বার তাসবিহ পড়ে রুকুতে যেতে হবে ,রুকুর তাসবিহ পড়ার পর আবার তাসবিহ পাঠ করতে হবে,রুকু থেকে দাঁড়িয়ে আবার ১০ বার তাসবিহ পাঠ তারপর সেজদাতে  গিয়ে সেজদার তাসবির পর আবার ১০ বার এ তাসবিহ পড়তে হবে ,সেজদা থেকে উঠে ১০ বার একই নিয়মে সেজদাই গিয়ে আবার ১০ বার এবং সেজদা থেকে উঠে ১০বার তাসবিহ পড়তে হবে ।এভাবে একই নিয়মে ৪ রাকায়াত নাময শেষ করতে হবে।

শবে বরাতের নামাযে নিয়তঃ

শবে বরাতের দুই রাকায়াত নফল নামাযের নিয়ত - নাওয়াইত আন উছালিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকায়াতাই ছালাতিল বারাতিন নাফলী মুতাওয়াজিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিস শরীফতি আল্লাহু আকবর।

আরো পড়ুনঃ তারাবির নামায পড়ার নিয়ম

শবে বরাতের রোজাঃ

রাসূল (সা) রমজানের পরে যে মাসে বেশি রোজা রাখতেন সেটি হলো শবান মাস।এমাসে নবী (সা) কখন ১০ টি ১৫ টি আবার কখনও ২০টি রোজা রাখতেন।

হযরত আয়েশা (রা) বলেন -আমি নবি (সা) কে শাবান মাস ছাড়া অন্য কোন মাসে এত রোজা করতে দেখিনি।

শবান মাসে ১৩,১৪,১৫ এ তিন দিন রোজা রাখা উচিৎ তাহলে শবে বরাতের সাথে অ্যাইয়ামে বীজের রোজাও হয়ে যাবে।আর আমরা যদি সুন্নত পালন করতে চাই তাহলে ১০ থেকে ১৫ টি রোজা রাখতে পারি।

শবে বরাতে কোন দোয়া বেশি পড়তে হয়ঃ

শবে বরাতের রাতে আমরা নিচের দোয়াগুল বেশি বেশি পাঠ করতে পারি

  • আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি ওয়াল আজযি ওয়াল কাসালি, ওয়াল জুবনি ওয়াল বুখলি ওয়া দালায়িদ দাইনি ওয়া গালাবাতিল রিজালি।’ (বুখারি ও মুসলিম, মিশকাত)
  • আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল জুবনি ওয়া আউজুবিকা মিনাল বুখলি ওয়া আউজুবিকা মিন আরজালিল উমুরি ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিদ দুনিয়া ওয়া আজাবিল কাবরি।’ (বুখারি ও মিশকাত)
  • আল্লাহুম্মাকফিনি বিহালালিকা ওয়া হারামিকা ওয়া আয়িন্নি বিফাজলিকা আম্মান সেওয়াকা।
  • রাব্বি আওঝি'নি আন আশরুকা নি'মাতাকাল্লিতি আন আমতা আলাইয়্যা ওয়া আলা ওয়ালিদাইয়্যা ওয়া আন আ'মালা সালেহাং তারদাহু ওয়া আদখিলনি বিরাহমাতিকা ফি ইবাদিকাস সালেহিন।(সূরা নামল ঃআয়াত ১৯)

শবে বরাত সম্পর্কিত বিদয়াতঃ

এ পবিত্র রাত উৎযাপন করতে গিয়ে জেনে ,না জেনে অনেক সময় বেদয়াতে লিপ্ত হয়ে যায় যেমন আমাদের সমাজে অনেকের মাঝে হালুয়া রুটি খাওয়ার প্রচলন আছে ,এটি এক ধরনের বেদয়াত ।ধর্মীও বই পুস্তকে সাধ্যমত গরিব মানুষদের খাওয়ানোর কথা বলা হয়েছে ।হালুয়া রুটিই খেতে হবে বা খাওয়তে হবে আমন বলা নেই ।
শবে বরাত পালনের জন্য আমরা বিভিন্ন জাগায় আলোকসজ্জা করি ,আতসবাজী করি । বিভিন্ন মসজিদ গুলোকেও লাইট দিয়ে সাজায়  কিন্তু এগুলো ইসলামে সম্পন্নভাবে নিষিদ্ধ ।

অন্যদের সাথে শেয়ার করুন

0 Comments

দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন ??

নটিফিকেশন ও নোটিশ এরিয়া