ঈদুল ফিতরের নামাজের আরবি নিয়ত - ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম - ঈদুল ফিতরের তাকবীর
দীর্ঘ একমাস রমজানের রোজা পালনের পরে শাওয়াল মাসের প্রথম তারিখে সকল মুসলমান নর নারী , ধনী-গরীর , ছোট-বড় সকলে অত্যন্ত আনন্দের সাথে ঈদুল ফিতর উদযাপন করে। ঈদুল ফিতর এর উদযাপন শুরু হয় ঈদের নামাজ দিয়ে। আর এ কারণে ঈদুল ফিতরের নামাজের আরবি নিয়ত এবং বাংলা নিয়ত সকলের জানা উচিত।
আজকে এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন ঈদুল ফিতরের আরবি নিয়ত, বাংলা নিয়ত ঈদুল ফিতরের তাকবীর এবং আরো কিছু মাসালা সম্পর্কে। ঈদুল ফিতর সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য জানতে হলে এই সম্পূর্ণ পোস্টটি আপনাকে পড়তে হবে।সূচিপত্রঃ ঈদুল ফিতরের আরবি নিয়ত - ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম - ঈদুল ফিতরের তাকবীর
- ঈদুল ফিতর
- ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম
- ঈদুল ফিতরের নামাজের আরবি নিয়ত
- ঈদুল ফিতরের বাংলা নিয়ত
- ঈদুল ফিতরের তাকবীর
- ঈদুল ফিতরের নামাজ কি ওয়াজিব
- ঈদুল ফিতরের দিন কোন কাজ করা ওয়াজিব
- ঈদুল ফিতরের নামাজের কতিপয় মাসাআলা
ঈদুল ফিতর
ঈদুল ফিতর হলো মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। রমজানের ৩০ দিন রোজা রাখার পর শাওয়াল মাসের প্রথম তারিখে যে আনন্দ ও উৎসব উদযাপন করা হয় তাকে ঈদুল ফিতর বলে। ঈদুল ফিতর ও বড় সকলের মুসলমান দের জন্য খুব আনন্দের একটি দিন। মুসলমানরা এই দিনে একে অন্যের বাসায় বেড়াতে যাই এবং একে অন্যের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করে, বড়দের সালাম করে, এবং বিভিন্ন মিষ্টি জাতীয় খাবার রান্না এবং সকলকে খাওয়ানোর মাধ্যমে ঈদুল ফিতর উদযাপন করে। ঈদুল ফিতরের দিন রোজা রাখা হারাম।
ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম
ঈদুল ফিতরের ২ রাকাত নামাজ ৬ তাকবীরের সাথে পড়তে হয় ।ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায়ের জন্য আযান অথবা ইকামতের দরকার হয় না। প্রথমে ইমাম তাকবীরে তাহরীমা বলে হাত বাঁধবেন। এরপর সানা পড়ে তিনবার পর পর তাকবির বলবে। প্রত্যেকবার তাকবীর বলার সময় পুরুষরা কান পর্যন্ত হাত উঠাবে এবং মহিলারা কাঁধ পর্যন্ত হাত উঠাবে এবং নামিয়ে ফেলবে। তাকবির বলার সময় দুইবার হাত উঠানো এবং নামানোর পর তৃতীয়বার তাকবীর বলার পরে হাত বাধতে হবে।
আরো পড়ুনঃতারাবির নামাযের মোনাজাত।
ইমামের পেছনে যারা নামাজ পড়বেন তারাও ওই রূপে হাত উঠানোর পর আস্তে আস্তে তাকবির বলে তৃতীয় বার তাকবীর বলে হাত বেঁধে ফেলবেন । তারপর ইমাম আউযুবিল্লাহ বিসমিল্লাহ সহ মনে মনে পড়ার পরে উচ্চস্বরে সূরা ফাতিহা এবং অন্য একটি সূরা পাঠ করবেন। এরপর রুকু সেজদার পর উঠে দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহা ও অন্য একটি সূরা পড়ার পর আগের মতন তিনবার তাকবীর বলে রুকু করবেন । নামাজ শেষ করে ইমাম মুসল্লীদের উদ্দেশ্যে খুতবা দেবেন । উপস্থিত লোকজন সেই খুতবা মনোযোগ সহকারে শুনবে। ঈদের নামাজের খুতবা শোনা ওয়াজিব।
ঈদুল ফিতরের নামাজের আরবি নিয়ত
ঈদুল ফিতরের নামাজের আরবি নিয়ত এবং এর উচ্চারণ নিচে দেওয়া হলো।
نَوَيْتُ أنْ أصَلِّي للهِ تَعَالىَ رَكْعَتَيْنِ صَلَاةِ الْعِيْدِ الْفِطْرِ مَعَ سِتِّ التَكْبِيْرَاتِ وَاجِبُ اللهِ تَعَالَى اِقْتَضَيْتُ بِهَذَا الْاِمَامِ مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اللهُ اَكْب - ( jagonews24.com)
উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকায়াতাই সালাতিল ঈদুল ফিতরি
মাআ'সিত্তাতি তাকবিরাতি ওয়াজিবুল্লাহি তায়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল
কা'বাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবর।
ঈদুল ফিতরের বাংলা নিয়ত
আমি কেবলামুখী হয়ে ঈদুল ফিতরের দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ ছয় তাকবীরের সাথে
ইমামের পিছনে পড়ার জন্য নিয়ত করলাম। আর যদি কেউ একা একা ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায়
করে তাহলে বলতে হবে-আমি কিবলামুখী হয়ে ঈদুল ফিতরের দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ ৬
সাথে পড়ার নিয়ত করলাম।
ঈদুল ফিতরের তাকবীর
ঈদুল ফিতরের দিন সকাল বেলা গোসল করে, সাধ্য অনুযায়ী নতুন পোশাক অথবা নিজেদের
সবচাইতে ভালো পোশাকটি পড়ে পুরুষেরা তাকবীর বলতে বলতে ঈদগায়ে যাবে। ঈদুল ফিতরের
তাকবীরটি হলো
আরো পড়ুনঃ রোজা মাখ্রুহ এবং নষ্ট হওয়ার কারনগুলো।
"আল্লাহু আকবর আল্লাহু্ আকবর,লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবর , আল্লাহ আকবর ,ওয়ালিল্লাহিল হামদ"। এর অর্থ হলো-আল্লাহ মহান , আল্লাহ মহান তিনি ব্যতীত অন্য কোন মাবুদ নেই , আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান সকল প্রশংসা তারই জন্য।
ঈদুল ফিতরের নামাজ কি ওয়াজিব
ঈদুল ফিতরের দিন সকাল বেলা পাক-পবিত্র হয়ে ছয় তাকবীরের সাথে দুই রাকাত
নামাজ আদায় করা ওয়াজিব । আর ওয়াজিবের মর্যাদা হল ফরজের কাছাকাছি ।কোনো কারণে
কেউ যদি ঈদের দিন ঈদের নামাজ আদায় করতে না পারে তাহলে পরেরদিনও ঈদুল ফিতরের
নামাজ আদায় করা যায়।
ঈদুল ফিতরের মুস্তাহাব এবং সুন্নত কাজ
জেনে নিন ঈদুল ফিতরের দিন মুস্তাহাব এবং সুন্নত কিছু কাজ। ঈদুল ফিতরের দিন সকাল
বেলা ঈদের নামাজ পড়তে যাওয়ার আগে কিছু কাজ আছে সেগুলো করা মুস্তাহাব এবং
সুন্নত। ঈদুল ফিতরের মুস্তাহাব এবং সুন্নত কাজগুলো নিম্নরূপ
- মেসওয়াক করা
- গোসল করা
- আতর ব্যবহার করা
- সুরমা ব্যবহার করা
- সাধ্য অনুযায়ী নতুন অথবা উত্তম কাপড় পরিধান করা
- ফিতরা আদায় করা
- দান-খয়রাত করা
- আস্তে আস্তে ঈদ্গাদে যাওয়া
- ঈদগায়ে যাওয়ার আগে মিষ্টি জাতীয় কিছু খাবার খাওয়া
- যাওয়ার সময় এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া এবং ফিরে আসার সময় অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরে আসা।
ঈদুল ফিতরের নামাজের কতিপয় মাসআলা
জুম্মার নামাজ আদায় করা যাদের প্রতি ফরজ, ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করা তাদের
উপরে ওয়াজিব। আর যাদের ওপরে জুম্মার নামাজ ফরজ না তাদের উপরে ঈদুল ফিতরের
নামাজ আদায় করা ওয়াজিব না।
- ঈদের খুতবা পাঠ করা সুন্নত
- ঈদুল ফিতরের খুতবা নাবালে পড়ালে কোন সমস্যা নেই, এটি জায়েজ
- ঈদের নামাজের আগে পরে কোন নফল নামাজ নেই
- কোন ব্যক্তি এক জায়গার ঈদের নামাজের ইমামতি করে অন্য জায়গায় গিয়ে আবার ইমামতি করতে পারবে না তবে খুতবা পাঠ করতে পারবে।
- লোক সংখ্যা অনেক বেশি হলে একবারে জামাতে জায়গা না হলে দ্বিতীয় জামাতের ব্যবস্থা করা জায়েজ আছে।
আরো পড়ুনঃ ঈদুল ফিতরের ইংরেজি ও বাংলা স্ট্যাটাস।
আশা করছি ঈদুল ফিতরের আরবি নিয়ত, ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম এবং ঈদুল ফিতরের তাকবির সম্পর্কে জেনে আপনি অনেক উপকৃত হয়েছেন । ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করা ওয়াজিব এই ওয়াজিব নামাজ কোনভাবেই তরফ করা বাদ ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়। ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করার তৌফিক আল্লাহ আমাদেরকে দান করুন।
0 Comments
দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন