রমজানে মাগফিরাত লাভের দোয়া - রমজানে নাজাত লাভের আমল
আরবি মাসগুলোর মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মহিমানিত মাস হল রমজানুল মোবারক। একটি হাদিসে এ মাস কে রহমত, বরকত, গুনাহ মাফ ও দোয়া কবুলের মাস বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আজকে এ পোস্টে আমরা আলোচনা করব রমজান মাসের দ্বিতীয় দশ দিনে মাগফিরাত লাভের দোয়া এবং শেষ ১০ দিনের নাজাত লাভের আমল সম্পর্কে।
এ মাসে যে যত বেশি ইবাদত বন্দেগী , দান-খয়রাত করতে পারবে সে তত বেশি সওয়াব হাসিল করতে পারবে।রমজান যেহেতু মাগফিরাত লাভের মাস সেইজন্য এই মাসে বিভিন্ন ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে আমাদের উচিত মাগফিরাত লাভের চেষ্টা করা। এ পোস্টে আজকে তাই আলোচনা করা হবে রমজান মাসে দ্বিতীয় দশ দিনে মাগফিরাত লাভের দোয়া সম্পর্কে।
সূচিপত্রঃ রমজানের দ্বিতীয় ১০ দিনে মাগফিরাত লাভের দোয়া - রমজানের তৃতীয় ১০ দিনে নাজাত লাভের আমল
রমজান মাসের দ্বিতীয় ১০ দিনে মাগফিরাত লাভের দোয়া
রমজানের দ্বিতীয় দশ দিন কে বলা হয় মাগফিরাত লাভের দিনে। অর্থাৎ ,১১ রমজান থেকে শুরু করে ২০ রমজান পর্যন্ত এই ১০ দিন হল মাগফিরাত লাভের দিন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের জন্য রমজানের এই দ্বিতীয় দশদিন ক্ষমা লাভের একটি সুবর্ণ সুযোগ করে দিয়েছেন। তাই এই ১০ দিন আমাদের উচিত অতীতের সকল কৃতকর্মের জন্য তওবার উদ্দেশ্যে আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করা এবং ক্ষমা চাওয়া। আল্লাহর দরবারে ক্ষমা লাভের জন্য মাগফিরাতের দোয়া করা। মাগফিরাত লাভের দোয়া হিসেবে নিচে একটি দোয়া আপনাদের সুবিধার্থে এবং আপনাদের সকলকে জানানোর উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হলো,
মাগফিরাত লাভের দোয়াঃ "আল্লাহুমা হাব্বিব ইলা ইলাইয়া ফিহিল ইহসান, ওয়া কাররিহ ই'লাইয়্যা ফিহিল ফুসুক্বি ওয়াল ই'সিয়ান,ওয়া হাররিম ওয়াল আ'লাইয়্যা ফিহিস সাখাত্বা ওয়ান নিরানা বি'আওয়ানিকা ইয়া গিয়াছাল মুস্তাগিছিন"।
অর্থঃ হে আল্লাহ! এদিনে সৎ কাজকে আমার কাছে প্রিয় করে দাও আর অন্যায় ও
নাফরমানীকে অপছন্দনীয় করে দাও। তোমার অনুগ্রহের ওসিলায় আমার জন্য তোমার
ক্রোধ ও যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি হারাম করে দাও, এ আবেদনকারীদের আবেদন শ্রবণকারী।
রমজানের এই দ্বিতীয় দশদিনের ইবাদত হিসেবে আমরা ইস্তেগফার পাঠ করে
আমাদের অতীতের গুনাহের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে পারি। রমজানের এই
মাগফিরাতের দশ দিনে যে ইস্তেগফারটি পাঠ করা বেশি সওয়াবের সেই ইস্তেগফারটি হল,
" আল্লাহুম্মা আমতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আনতা খালাক্বতানী, ওয়া আনা আবদুকা, ওয়া আনা আলা আহদিকা ওয়া ওয়া ওয়াদিকা মাস্তাত্ব'তু আউযুবিকা মিন শাররি মা ছানা 'তু।আবূউ বিযাম্বি ফাগফিরলি ফাইন্নাহু লা ইয়াগফিরুয "।
অর্থঃ 'হে আল্লাহ তুমি আমার পালনকর্তা। তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তুমি
আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমার দাস। আমি আমার সাধ্যমত তোমার নিকটে দেয়া
অঙ্গীকারে ও প্রতিশ্রুতিতে দৃঢ় আছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট হতে তোমার নিকট
আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি আমার ওপরে তোমার দেওয়া অনুগ্রহ কে স্বীকার করছি এবং
আমি আমার গুনাহের স্বীকৃতি দিচ্ছি। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা করো। কেননা তুমি
ব্যতীত পাপসমূহ ক্ষমা করার আর কেউ নেই' ।(বুখারী ও মিশকাত শরীফ)
আরো পড়ুনঃ এত্বকাফের মাসয়ালা সম্পর্কে।
রমজান মাসের এই দ্বিতীয় দশ দিন মাগফিরাত রাতের উদ্দেশ্যে তারাবির নামাজ ,অন্যকে ইফতার , করানো , দান খয়রাত করা এবং বিভিন্ন নেক আমলের মাধ্যমে মাগফিরাতের আশা করা যেতে পারে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি হাদিসে বলেছেন-"অপরাধ স্বিকারকারী নিরপরাধ ব্যক্তির মত"(মুসলিম, বুখারী, তিরমিজি)। এ কারণে আপনি যতই বড় গুনাগার হোন না কেন রমজানের এই মাগফিরাতের দশ দিনকে কাজে লাগিয়ে খালেদ দিলে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থী এবং অতীতের গুনাহের জন্য তওবা করুন আর ভবিষ্যতে এ ধরনের গুনা হবে না বলে আল্লাহর কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাকারি।
অন্য একটি হাদিসে পাওয়া যায়, নবী (সা) বলেছেন- "মানুষ মাত্রই ভুলকারী আর ভুল
কারীদের মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ সেই ব্যক্তি যে তওবাকারী"।(বায়হাকি)
রমজানের তৃতীয় দশ দিনে নাজাত লাভের আমল
রমজান মাসের তৃতীয় দশ দিন কে বলা হয় নাজাত লাভের দিন । নাজাত অর্থ-মুক্তি।
রমজানের এই শেষ ১০ দিনে মাধ্যমে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ এবং জান্নাত লাভ করার
শ্রেষ্ঠ সময়। এই সম্পর্কে রাসূলে পাক (সা) একটি হাদিসে বলেছেন-' যে ব্যক্তি
রমজান মাস পেল কিন্তু জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করতে পারল না তার মতন
হতভাগা আর কেউ নেই'। এই হাদিস থেকে স্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে, রমজান মাস হল যার
নাম থেকে মুক্ত হওয়ার শ্রেষ্ঠ মাস। আর এই রমজানের মধ্যে শেষের দশ দিন হল যার নাম
থেকে মুক্তির লাভ করার শ্রেষ্ঠ কয়েকটি দিন।
আরো পড়ুনঃ রোজা মাকরুহের কারণ।
রমজানের তৃতীয় দশ দিন নাজাত লাভের উদ্দেশে বেশি বেশি সূরা ইখলাস এবং কোরআন তেলাওয়াত করতে হবে। এছাড়াও নাজাত লাভের উদ্দেশ্যে শবে কদরের রাত্রিগুলো ইবাদত বন্দেগির মধ্যেই কাটাতে হবে এবং ইত্তেকাফ করতে হবে। শবে কদরের রাত্রির জন্য একটি বিশেষ দোয়া নিচে দেয়া হলো,
'আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফু 'উন তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্নি'।
হাদিস থেকে পাওয়া যায়- যে ব্যক্তি সকাল সন্ধ্যা জান্নাতের আশায় জাহান্নাম
থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে, হাশরের দিন আল্লাহর কাছে জান্নাতে
ওই ব্যক্তি সুপারিশ করবে।
আরো পড়ুনঃ রোজা নষ্ট হওয়ার কারণ
প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ(সা) নাজাত লাভের জন্য রমজানের পুরো মাস জুড়ে বেশি বেশি
ইবাদত বন্দেগি , এবং ইস্তেগফার করতে বলেছেন। তিনি আরো বলেছেন নাজাত এবং
মাগফিরাতের জন্য এ মাসে বেশি বেশি দোয়া করতে।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যেহেতু নাজাত ও ক্ষমা চাওয়ার একটি উত্তম মাস আমাদেরকে দান
করেছে তাই আমাদের কারো উচিত না এই মাসকে অবহেলা করে কাটিয়ে দেওয়া । রমজানের এই
শেষ দশ দিন আল্লাহর কাছে মাগফিরাতের দোয়া করে আমাদের সকলেরই কাটানো উচিত। আল্লাহ
সুবহানাতায়ালা আমাদের সবাইকে মাগফিরাতের নাজাতের দোয়া করার ও ক্ষমাল আছে তৌফিক
দান করুন
0 Comments
দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন