তারাবির নামায - তারাবির নামাযের নিয়ম - তারাবির নামাযের মাঝের দোয়া - এত্বকাফের মাসাআলা
আলোচনার বিষয়ঃতারাবির নামায - তারাবির নামাযের নিয়ম - তারাবির নামাযের মাঝের দোয়া - এত্বকাফের মাসাআলা
- তারাবির নামাজ কি
- তারাবির নামাজের মাসলা মাসায়েল
- তারাবির নামাজের নিয়ত
- তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম
- তারাবির নামাজের দোয়া
- তারাবির নামাজের মোনাজাত
- এ'তেকাফ কি
- এত্বেকাফে কিছু মাসাআলা
তারাবির নামাজ কি
'তারাবিহ' অর্থ বিরতিসহ নামাজ পড়া। হুজুর (সা) বলেছেন - যে ব্যক্তি
রমজানের রাতে তারাবির নামাজ পড়ল, তার সবগুলো গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে
(বুখারী ও মুসলিম শরীফ)। রমজান মাসে চাঁদ দেখা গেলে, এশার নামাজের পর
পুরুষদের জন্য জামাতের সাথে ২০ রাকাত নামাজ পড়া এবং মেয়েদের
জন্য একক বা জামাতের সাথে ২০ রাকাত নফল নামাজ পড়া কে তারাবি নামাজ বলে।
তারাবির নামাজ হলো সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। কেউ এ নামাজ ছেড়ে দিলে কে
আল্লাহর কাছে গুনাগার হতে হবে।
তারাবির নামাজের মাসলা মাসায়েল
রমজান মাসে এশার নামাজের পর দুই দুই রাকাত করে ২০ রাকাত নামাজ পড়া সুন্নতে
মুয়াক্কাদা। বিতরের নামাজ তারাবি নামাজের পর পড়া উত্তম, তবে আগে পড়লেও কোন
সমস্যা নেই এটি জায়েজ আছে। তারাবির নামাজ জামাতের সাথে আদায় করা সুন্নত,
মহিলা গন নিজের ঘরে তারাবির নামাজ আদায় করবে। রমজান মাসে তারাবিতে সম্পূর্ণ
কুরআন খতম করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। তবে যদি খতম তারাবিতে লোকজন না আসার
সম্ভাবনা থাকে তবে সূরা তারাবি পড়া যায়।
আরো পড়ুনঃ রোজা এবং ইফতারের নিয়ত ।
খতম তারাবিতে কুরআন শরীফের যে কোন সূরার শুরুতে তাসনিয়া উচ্চস্বরে পড়তে হবে।
না হলে পুরা কোরআন শরীফ খতম হবে না কারণ বিসমিল্লাহও কোরআন শরীফে একটি আয়াত।
তারাবির নামাজের প্রতি চার রাকাতের পর পর কিছুটা সময় বিশ্রাম নিয়ে এ সময়টিতে
বিভিন্ন দোয়া দরুদ পড়া মুস্তাহাব।
তারাবির নামাজের নিয়ত
" নাওয়াইতু আন্ উসালিয়া লিল্লাহি তা'আলা রাকাআতাই সালাতিত তারাবিহী সুন্নতু রাসূলুল্লাহি মতাওয়াজ্জিহান ইলা ইহাতিল কা'বাতিস শারিফাতি আল্লাহু আকবার"
এর অর্থ হল , আমি আল্লাহর ওয়াস্তে কিবলামুখী হয়ে দুই রাকাত তারাবির সুন্নত
নামাজ পড়ি আবার নিয়ত করলাম। কেউ যদি তারাবির নামাজের আরবি নিয়ত না জানে
তাহলে বাংলা দিয়ে নিয়ত করলেও নামাজ হবে।
তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম
তারাবির নামাজের জন্য দুই রাকাত সুন্নত নামাজের নিয়ত করে তাহরীমা বাঁধতে হবে,
এরপর সানা তাসমিয়া পড়ে সুরা ফাতিহা ও তার সাথে অন্য সূরা পড়তে হবে।
এরপর যথা নিয়মে রুকু, সেজদা করে প্রথম রাকাত শেষ করে দ্বিতীয় রাকাতের জন্য
দাঁড়াতে হবে। দ্বিতীয় রাকাতেও সূরা ফাতিহা এবং অন্য একটি সূরা পড়ে রুকু
সেজদা করতে হবে । এভাবে দুই রাকাত আদায় করা হয়ে গেলে বসে একবার বা তিনবার
দুরুদ শরীফ পাঠ করে দাঁড়িয়ে পরবর্তী দুই রাকাত নামাজের জন্য নিয়ত করতে
হবে।
আরো পড়ুনঃ রমজানের ফজিলত ।
এভাবে দুই রাকাত দুই রাকাত করে, প্রতি চার রাকাত নামাজের পরে কিছুক্ষণ সময়
বিশ্রাম নিতে হবে, এই সময়ে কিছু নির্দিষ্ট দোয়া এবং মোনাজাত করতে হবে। ২০
রাকাত নামাজ শেষ করার পরে একবারে মোনাজাত করলেও অসুবিধা নেই।
তারাবির নামাজের দোয়া
চার রাকাত নামাজের পরে কিছু বিরতি দিতে হয় এই বিরতি সময় চুপচাপ বসে না থেকে, বিভিন্ন নফল নামাজ পড়া বা জিকির আজগার করা , তাসবিহ তাহলিল পাঠ করা , দরুদ শরীফ বা কোরআন তেলাওয়াত করা যেতে পারে। তবে নিম্নলিখিত দোয়াটি পাঠ করা সবচেয়ে ভালো, চার রাকাত তারাবির নামাজ পড়ার পরে নিম্নোক্ত দোয়াটি পাঠ করতে হয়।
"সুবহানা জিল মুলকি, ওয়াল মালাকুতি, সুবহানাজিল ইজ্জাতি ওয়াল আজমাতি ওয়াল হায়বাতি ওয়াল কুদরাতি ওয়াল কিবরিয়াই ওয়াল জবারুত, সুবহানাল মালিকিল হাইয়িল্লাযী লাইয়ানামু ওয়ালা ইয়ামূতু আবাদান আবাদা।সুববূহুন কুদ্দুসুন রাব্বু ওয়া রাব্বুল মালাইকাতি ওয়ার রুহ"।
আরো পড়ুনঃ রোজা মাখ্রুহ এবং নষ্ট হওয়ার কারনগুলো।
অর্থঃ আমি তাঁরই পবত্রতা ঘোষণা করছি ও ফেরেস্তা কুলের মালিক। আমি তারই
পবিত্রতা ঘোষণা করছি যিনি সমুদয় সম্মানের অধিকারী , মহীয়ান, ক্ষমতাশালী
, গৌরবান্বিত এবং বৃহত্তম। আমি সেই চিরজীবী শাহানশাহের পবিত্রতা
ঘোষণা করছি যিনি তন্দ্রা জাননা ও তিনি অমর, তিনি পবিত্র , তিনি আমাদের
প্রতিপালক এবং ফেরেশতা ও আত্মা সমূহের রব।
তারাবির নামাজের মোনাজাত
প্রতি চার রাকাত তারাবির নামাজের পর অথবা নামাজ শেষ করার পর এই নিম্নোক্ত দোয়াটি পড়ে মোনাজাত করা উত্তম। মোনাজাতের দোয়াটি হল,
" আল্লাহুম্মা ইন্না নাস্আলুকাল জান্নাতা ওয়া নাউজুবিকা মিন্নারি ইয়া খালিকাল জান্নাতি ওয়ান্নারি বিরাহমাতিকা ইয়া আজিজু ইয়া গাফফারু ইয়া কারিমু ইয়া সাত্তারু ইয়া রাহিমু ইয়া জব্বারু ইয়া খালিকু ইয়া বাররু। আল্লাহুম্মা আজিরনা মিন্নারি। ইয়া মুজিরু ইয়া মুজিরু ইয়া মুজিরু বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন"
অর্থঃ হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমরা তোমার নিকট বেহেস্ত চাচ্ছি ও দোযখ হতে
মুক্তি চাচ্ছি।হে বেহেশত ও দোযখ সৃষ্টিকারী, হে প্রবল পরাক্রমশালী,হে
ক্ষমাকারী,হে দয়াময় ,হে দোষত্রুটি আচ্ছাদনকারী ,হে প্রতাপশালী,হে মহান খোদা !
স্বীয় করুনা বলে ,আমাদের উপর ক্রুনার দৃষ্টি কর, হে আল্লাহ! হে
ত্রানকর্তা,আমাদেরকে দোযখ থেকে রক্ষা করুন।হে রক্ষাকারী ! হে রক্ষাকারী ! হে
রক্ষাকারী,হে সর্বশ্রষ্ঠ দয়ালু দাতা ! তোমার অনুগ্রহে আমাদেরকে রক্ষা করুন।
এত্বেকাফ কি
রমজান মাসের ২০ তারিখের সূর্যাস্তের পূর্ব থেকে আরম্ভ করে রমজান শরীফের
শেষ পর্যন্ত -পুরুষদের জন্য মসজিদে এবং মহিলাদের জন্য নিজ নিজ ইবাদতের কক্ষে
পাক-পবিত্র অবস্থায় কেবলমাত্র এবাদতের উদ্দেশ্যে নির্জনে বাস করাকে
"ইত্তেকাফ বা এত্বেকাফ" বলে। এত্বেকাফ হল সুন্নাতে মুয়াক্কাদায়ে কেফায়া
। গ্রামবাসীদের মধ্যে থেকে যে কোন একজন এত্বেকাফ করলেই গ্রামের সকলের এই সুন্নত
সুন্নত পালন হয়ে যাবে, আর যদি গ্রামের কেওই এত্বেকাফ পালন না করে তাহলে
সেই গ্রমের সবাইকে এর জন্য গুনাগার হতে হবে। এত্বেকাফ পালন অত্যন্ত
সওয়াবের কাজ। রাসূলুল্লাহ(সা) রমজানের শেষ দশ দিন ইত্তেফাক পালন করতেন।
এত্বেকাফের কিছু মাসাআলা
এত্বেকাফ পালনরত ব্যক্তি শুধুমাত্র প্রস্রাব - পায়খানা, গোসল এবং খাবার আনা নেওয়ার জন্য যদি কেউ না থাকে তাহলে ও জুম্মার নামাজ পড়িবার জন্যই বাইরে যেতে পারবে। এ কাজগুলো ছাড়া অন্য কোন কাজের উদ্দেশ্যে বাইরে যেতে পারবেনা।এত্বেকাফ পালনকালে স্ত্রী সম্বন্ধে আজ নয় এতে কাফ নষ্ট হয়ে যায়।
মেয়েদের হায়েজ বা ফার্স্ট আরম্ভ হলেও ইত্তেফ ছাড়িয়ে দিতে হবে এবং পাক
হওয়ার পরে যে দিন থেকে স্রাব শুরু হয়েছে রোজার সাথে শুধু সেই দিনগুলোর
ইত্তেকাফ কাজা করতে হবে।এত্বেকাফ পালনরত ব্যাক্তি অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা
এবং দুনিয়াবী কাজের সাথে যুক্ত হতে পারবেনা।
ইত্বেকাফ পালনরত অবস্থায় আল্লাহর ইবাদাত বন্দেগীর মাধ্যমে কাটাতে হবে,এদিন গুলো নফল নামায,তাসবিহ তাহলীল,দোয়া দরুদ ,ইস্তেগফার ইত্যাদির মধ্যে দিয়ে কাটাতে হবে।
শেষ কথা, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ,সকলকে তারাবির নামায ও এত্বেকাফের মর্যাদা সম্পর্কে জানার এবং সে অনু্যায়ী আমল করার তৈফিক দান করুন।
0 Comments
দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন