রমজানের শেষ ১০ দিনের আমল - শবে কদরের বিশেষ দোয়া
রমজানের শেষ ১০ দিনের আমলের মধ্যে দিয়ে অশেষ সওয়াব হাসিল করুন এবং নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করুন।
সূচিপত্রঃ রমজানের শেষ ১০ দিনের আমল - শবে কদরের বিশেষ দোয়া
- রমজানের শেষ ১০ দিনের আমল
- শবে কদরের রাত
- কদরের রাত্রির বিশেষ দোয়া
- এত্বেকাফ
- এত্বেকাফের মাসাআলা
রমজানের শেষ ১০ দিনের আমল
রমজানের শেষ ১০ দিনের আমল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।রমজান মাসের শেষ দশ দিন কে
বলা হয় নাজাত লাভের দিন । নাজাত অর্থ-মুক্তি। রমজানের এই শেষ ১০ দিনে মাধ্যমে
জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ এবং জান্নাত লাভ করার শ্রেষ্ঠ সময়। এই সম্পর্কে
রাসূলে পাক (সা) একটি হাদিসে বলেছেন-' যে ব্যক্তি রমজান মাস পেল
কিন্তু জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করতে পারল না তার মতন হতভাগা আর কেউ নেই'।
এই হাদিস থেকে স্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে, রমজান মাস হল যার নাম থেকে মুক্ত হওয়ার
শ্রেষ্ঠ মাস। আর এই রমজানের মধ্যে শেষের দশ দিন হল যার নাম থেকে মুক্তির লাভ করার
শ্রেষ্ঠ কয়েকটি দিন। আর রমজানের এই শেষ দশদিনের মধ্যে এমন একটি রাত রয়েছে যেই
রাতে ইবাদতের মাধ্যমে হাজার বছর ধরে ইবাদত করার চাইতেও বেশি সওয়াব লাভ করা যায়।
এটি হলো শবে কদরের রাত।
আরো পড়ুনঃ ঈদুল ফিতরের নামাজ পড়ার নিয়ম
রমজানের তৃতীয় দশ দিন নাজাত লাভের উদ্দেশে বেশি বেশি সূরা ইখলাস এবং কোরআন তেলাওয়াত করতে হবে। এছাড়াও নাজাত লাভের উদ্দেশ্যে শবে কদরের রাত্রিগুলো ইবাদত বন্দেগির মধ্যেই কাটাতে হবে এবং ইত্তেকাফ করতে হবে। রমজানের শেষ ১০ দশ দিনের আমল গুলোর মধ্যে আরও যেগুলো রয়েছে সেগুলো হল বেশি বেশি দান খায়রাত করা , ফিতরা আদাই করা ,যাকাত আদায় করা। যদিও যাকাত যেকোনো সময় আদায় করা যায় তারপরেও রমজান যেহেতু একটি পবিত্র মাস এবং রমজানের এই শেষ দশ দিনের মর্যাদা আরো বেশি এই কারণে এই সময় যাকাত আদায় করারও একটি উত্তম সময়।
শবে কদরের রাত
শবে কদরের রাত বা লাইলাতুল কদর কে শ্রেষ্ঠ এবং পবিত্র রজনী। রমজানের শেষ ১০ দিনের আমলের মধ্যে কদরের রাত্রিতে এবাদত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল। কারণ কোরআনে বলা রয়েছে এই রাতে এবাদতের মাধ্যমে হাজার বছর ইবাদত করার চাইতেও বেশি সওয়াব লাভ করা যায়। শবে কদরের রাত্রিতে তাজবীহ - তাহলীল, জিকির , কালেমা , দরুদ , কোরআন তেলাওয়াত , নামাজ , দোয়া , হাদিস শোনা বা পড়া মোনাজাত ইত্যাদির মাধ্যমে কাটাতে হবে । কদরের রাতে বেশি বেশি নামাজ পড়া উচিত কারণ অন্যান্য সব ইবাদতের মধ্যে নামাজের স্থান সবার উপরে।
কদরের রাত্রির বিশেষ দোয়া
কদরের রাত্রিতে পড়ার জন্য আমাদের প্রিয় নবী (সা) একটি দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন । নবীজি বলেছেন-তোমাদের মধ্যে যদি কেউ কদরের রাত্রি পাও তাহলে এই দোয়াটি বেশি বেশি পাঠ করো ।রাত্রির এই বিশেষ দোয়াটি নিচে দেয়া হলো,
'আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফু 'উন তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্নি'।
হাদিস থেকে পাওয়া যায়- যে ব্যক্তি সকাল সন্ধ্যা জান্নাতের আশায় জাহান্নাম
থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে, হাশরের দিন আল্লাহর কাছে জান্নাতে
ওই ব্যক্তি সুপারিশ করবে। এছাড়াও শবে কদরের রাত্রিতে বেশি বেশি
ইস্তেগফার পাঠ করতে হবে।
আরো পড়ুনঃ রোজা নষ্ট হওয়ার কারণ
প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ(সা) নাজাত লাভের জন্য রমজানের পুরো মাস জুড়ে বেশি বেশি
ইবাদত বন্দেগি , এবং ইস্তেগফার করতে বলেছেন। তিনি আরো বলেছেন নাজাত এবং
মাগফিরাতের জন্য এ মাসে বেশি বেশি দোয়া করতে। এবং নাজাত লাভের জন্য রমজানের শেষ ১০ দিনের আমল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যেহেতু নাজাত ও ক্ষমা চাওয়ার একটি উত্তম মাস আমাদেরকে দান
করেছে তাই আমাদের কারো উচিত না এই মাসকে অবহেলা করে কাটিয়ে দেওয়া । রমজানের এই
শেষ দশ দিন আল্লাহর কাছে মাগফিরাতের দোয়া করে আমাদের সকলেরই কাটানো উচিত। আল্লাহ
সুবহানাতায়ালা আমাদের সবাইকে মাগফিরাতের নাজাতের দোয়া করার ও ক্ষমাল আছে তৌফিক
দান করুন
এত্বেকাফ
রমজান মাসের ২০ তারিখের সূর্যাস্তের পূর্ব থেকে আরম্ভ করে রমজান শরীফের শেষ পর্যন্ত -পুরুষদের জন্য মসজিদে এবং মহিলাদের জন্য নিজ নিজ ইবাদতের কক্ষে পাক-পবিত্র অবস্থায় কেবলমাত্র এবাদতের উদ্দেশ্যে নির্জনে বাস করাকে "ইত্তেকাফ বা এত্বেকাফ" বলে। এত্বেকাফ হল সুন্নাতে মুয়াক্কাদায়ে কেফায়া । গ্রামবাসীদের মধ্যে থেকে যে কোন একজন এত্বেকাফ করলেই গ্রামের সকলের এই সুন্নত সুন্নত পালন হয়ে যাবে, আর যদি গ্রামের কেওই এত্বেকাফ পালন না করে তাহলে সেই গ্রমের সবাইকে এর জন্য গুনাগার হতে হবে। এত্বেকাফ পালন অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। রাসূলুল্লাহ(সা) রমজানের শেষ দশ দিন ইত্তেফাক পালন করতেন।
এত্বেকাফের মাসাআলা
এত্বেকাফ পালনরত ব্যক্তি শুধুমাত্র প্রস্রাব - পায়খানা, গোসল এবং খাবার আনা নেওয়ার জন্য যদি কেউ না থাকে তাহলে ও জুম্মার নামাজ পড়িবার জন্যই বাইরে যেতে পারবে। এ কাজগুলো ছাড়া অন্য কোন কাজের উদ্দেশ্যে বাইরে যেতে পারবেনা।এত্বেকাফ পালনকালে স্ত্রী সম্বন্ধে আজ নয় এতে কাফ নষ্ট হয়ে যায়।
মেয়েদের হায়েজ বা মাসিক আরম্ভ হলেও ইত্তেফ ছাড়িয়ে দিতে হবে এবং পাক হওয়ার
পরে যে দিন থেকে স্রাব শুরু হয়েছে রোজার সাথে শুধু সেই দিনগুলোর ইত্তেকাফ কাজা
করতে হবে।এত্বেকাফ পালনরত ব্যাক্তি অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা এবং দুনিয়াবী
কাজের সাথে যুক্ত হতে পারবেনা।
ইত্বেকাফ পালনরত অবস্থায় আল্লাহর ইবাদাত বন্দেগীর মাধ্যমে কাটাতে হবে,এদিন গুলো নফল নামায,তাসবিহ তাহলীল,দোয়া দরুদ ,ইস্তেগফার ইত্যাদির মধ্যে দিয়ে কাটাতে হবে।
শেষ কথা, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ,সকলকে রমজানের শেষ ১০ দিনের আমল ও শবে কদর এবং এত্বেকাফের মর্যাদা সম্পর্কে জানার এবং সে অনু্যায়ী আমল করার তৈফিক দান করুন।
0 Comments
দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন