পড়া মনে রাখার দোয়া - স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধির দোয়া

আজকে আপনাদের সাথে পড়া মনে রাখার বিষয়ে আলোচনা করব এবং এই প্রশ্নের মাধ্যমে পড়া মনে রাখার দোয়া এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির দোয়া গুলো জানাবো। কেননা শিক্ষা জীবনে সফলতা লাভের জন্য এবং মৃত্যু পর্যন্ত সুন্দরভাবে জীবন যাপনের জন্য পড়া মনে রাখার ও স্মৃতিশক্তির বৃদ্ধির দোয়া গুলো জেনে রাখা এবং এর উপরে আমল করা অত্যন্ত জরুরী। সঠিকভাবে এই দোয়া গুলো আমল করার মাধ্যমে আপনি বিশেষ কার্যকরী ফল পেতে পারেন তবে এর আগে আপনাদেরকে এই দোয়াগুলো ভালোভাবে জেনে নিতে হবে।

যেহেতু পড়া মনে রাখার দোয়া এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির দোয়া গুলো সঠিকভাবে জেনে রাখা উচিত তাই আজকে আপনাদেরকে এই পোস্টের মাধ্যমে এই দোয়া গুলো সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানাবো। এই পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে আপনারা পড়া মনে রাখার বিশেষ কিছু দোয়া জানতে পারবেন আর এগুলো যদি সঠিকভাবে আমলের ভেতরে নিয়ে আসেন তাহলে কার্যকরী ফল পাবেন তবে শুধু দোয়ার উপরে নির্ভরশীল হয়ে বসে থাকলে চলবে না এর পাশাপাশি নিজেদের প্রচেষ্টা চালিয়ে নিতে হবে। এই পোস্টের মাধ্যমে আপনারা আরো জানতে পারবেন স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধির খাবার গুলোর নাম এবং কোন সময় পড়লে পড়ার মনে থাকে এই বিষয়ে দুটি। তাহলে চলুন আর দেরি না করে বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।

পড়া মনে রাখার দোয়া

অনেক শিক্ষার্থী ভাই বোনেরা জানতে চেয়ে থাকেন পড়া মনে রাখার দোয়া সম্পর্ক। আর পড়া শুনার  ক্ষেত্রে যেহেতু বিভিন্ন বিষয়ে অনেক কিছু মনে রাখতে হয় তাই সে ক্ষেত্রে পড়া মনে রাখার দোয়া জেনে রাখা খুবই প্রয়োজন। কিন্তু অনেকেরই পড়া মনে রাখার দোয়া জানা নেই , তাই আজকে আপনাদেরকে পড়া মনে রাখার দোয়া জানাবো। কোরআনে পড়া মনে রাখা বা স্মৃতিশক্তি বাড়ানো অথবা এলম বৃদ্ধির জন্য বেশ অনেকগুলো দোয়া রয়েছে। তবে এই দোয়া গুলোর মধ্যে থেকে আজকে আপনাদেরকে পড়া মনে রাখার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি দোয়া শেখাবো। আর এই দোয়াগুলো নিয়মিত বিশ্বাসের সাথে বেশি বেশি আমল করলে অবশ্যই পড়া মনে রাখার ক্ষেত্রে ফল পাবেন। তাহলে চলুন আর দেরি না করে পড়া মনে রাখার দোয়া গুলো শিখে নেয়া যাক। পড়া মনে রাখার উল্লেখযোগ্য দোয়াগুলো হলো,

 ১ নং. দোয়া ঃ ﺳُﺒْﺤَﺎﻧَﻚَ ﻻَ ﻋِﻠْﻢَ ﻟَﻨَﺎ ﺇِﻻَّ ﻣَﺎ ﻋَﻠَّﻤْﺘَﻨَﺎ ﺇِﻧَّﻚَ ﺃَﻧﺖَ ﺍﻟْﻌَﻠِﻴﻢُ ﺍﻟْﺤَﻜِﻴﻢُ

উচ্চারন ঃ "সুবহানাকা লা ইলমা লানা ইল্লা মা আল্লামতানা, ইন্নাকা আনতাল আলিমুল হাকিম"।

অর্থ ঃ হে আল্লাহ আপনি পবিত্র! ,আপনি আমাদের যা শিখিয়েছ সেগুলো ব্যতীত আমরা কোন কিছুই জানি না। নিশ্চয় আপনিই প্রকৃত জ্ঞানসম্পন্ন, হেকমতওয়ালা।

২ নং. দোয়া ঃ رَّبِّ زِدْنِي عِلْمًا

উচ্চারণ: রাব্বি যিদনী ইলমা 
অর্থ: হে আমার রব! আমার ইলম বাড়িয়ে দাও। (সূরা ত্বাহা; আয়াত ১১৪) বৈশিষ্ট্য: প্রতি ফরয নামাযের পর এ আয়াত কয়েকবার তিলাওয়াত করলে স্মরণ শক্তি বাড়ে। আল্লাহ তায়ালা নবী করীম (সাঃ)-কে বলেছিলেন যে, তোমার ওপর ওহী অবতীর্ণ সম্পূর্ণ হওয়ার আগে জিবরাঈল (আঃ) এর সাথে সাথে পড়ার চেষ্টা করবেন না কারণ এতে তোমার কষ্ট হয়। কারণ জিবরাঈল (আঃ)-এর সাথে সাথে তিলাওয়াত করা আবার জিবরাঈলের তিলাওয়াত শোনা, এ দুটি কাজ একত্রে করা কষ্টকর। 
অতএব ওহী পূর্ণ হওয়ার পরই তুমি তিলাওয়াত করবে। তোমার মনে থাকবে না এ ধারণা কখনও করবে না, কারণ তোমাকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব আমি নিজের গ্রহণ করেছি। আর তুমি স্মরণশক্তি বাড়ার জন্য আমার কাছে উপরিক্ত দোয়া করতে থাকো যে, হে রব্ব! আমার মেধা শক্তি ও ইলম বাড়িয়ে দাও।এছাড়াও পড়া মনে রাখার জন্য ,স্মরণ শক্তি ও ইলম বাড়ানোর আমল বা দোয়া হিসেবে  নিচে দেয়া সূরা আর রহমান এর এই ৪টি আয়াত  ফজর ও মাগরিবের নামাজের পর ১১বার তিলাওয়াত করলে স্মরণ শন্তি বেড়ে যাবে এবং পড়া মনে থাকবে। আয়াতগুলো হলো নিম্নরুপ এবং নিচে আয়াত চারটি উচ্চারণ তুলে ধরা হলো ,
  1. আররাহমানু। 
  2. আল্লামাল ক্বুরআনা। 
  3. খালাক্বাল ইনসানা। 
  4. আল্লামাহুল বায়ান । 
অর্থ: ১। অসীম দয়ালু আল্লাহ। ২। তিনি কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন। ৩। তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন। ৪। এবং তাকে (মানুষকে) কথা বলতে শিক্ষা দিয়েছেন। ফযীলত: এ আয়াত ৪টি সূরা-রাহমানের প্রথমাংশে রয়েছে। এ আয়াতসমূহের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা জানিয়েছেন যে, সকল প্রকার শিক্ষার মূলের তাঁর ইচ্ছা ও রহমতের হাত রয়েছে। তাঁর ইচ্ছা ও অনুগ্রহ ছাড়া কেউ কিছু শিক্ষা লাভ করতে পারে না। এ আয়াতসমূহ দ্বারা তাঁর ঐ সকল শক্তি ও রহমতের কথা বলা হয়েছে, ফলে এদের বরকতের তিলাওয়াতকারীর ওপর ইলম শিক্ষার রহমত অবতীর্ণ।
সব সময় বা বেশি বেশি আল্লাহর জিকির এবং তাসবীহ পাঠ করলে সে ক্ষেত্রেও স্মৃতিশক্তি এবং পড়া মনে রাখার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। আল্লাহ পাক সূরা কাহাফ এর ২৪ নম্বর আয়াতে বলেন - যখন ভুলে যাও , তখন তোমার প্রতিপালকের স্মরণ কর। তাই পড়া মনে রাখার জন্য এবং স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর জন্য যত বেশি সম্ভব আল্লাহর জিকির , তসবি পাঠ এবং স্মৃতিশক্তি ও পড়া মনে রাখার দোয়াগুলো পাঠ করতে হবে।

কোন সময় পড়লে পড়া মনে থাকে

দিনের অধিকাংশ সময়ে পড়াশোনা করার পরেও কি আপনার পড়া কি সহযে মনে থাকছে না ? তাহলে হয়তো আপনি যে সময় করলে দ্রুত পড়া মনে রাখা যায় সেই সময়টিই মিস করে ফেলছেন যার কারণে দিনের বেশিরভাগ সময় পড়ার পরেও সহজে পড়া মনে থাকছে না বা মনে রাখার ক্ষেত্রে অসুবিধা হচ্ছে। এই সমস্যাটি অনেকের মধ্যেই হয়ে থাকে তাই আজকে আপনাদেরকে জানাবো কোন সময় পড়লে পড়া মনে থাকে। সকালবেলা ঘুম থেকে ওঠার পরের সময় হলো পড়তে বসার উপযুক্ত একটি টাইম কেননা এই সময় পড়লে সেই পড়াটি মনে রাখতে সুবিধা হয় এর পেছনের কারণ হলো , সারা রাত ঘুমানোর পর আমাদের মস্তিষ্ক অনেক ফ্রেশ থাকে , চাপমুক্ত থাকে এবং এই সময়টিতে শরীরের এনার্জিও বেশি থাকে। সকাল বলতে এখানে বোঝানো হয়েছে ভোর ৪/৫টা - সকাল ৭/৮ এই সময়টিকে কেননা এই সময়টিতে পরিবেশ অনেক শান্ত , ঠান্ডা এবং কোলাহলমুক্ত থাকে তাই সব মিলিয়ে সকালে করতে বসলে সেভ করাকে তাড়াতাড়ি মনে রাখা যায়।

আরো পড়ুনঃ স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির বিশেষ উপায়

এছাড়াও , বিশেষজ্ঞরা মনে করেন পড়া মনে রাখার জন্য বিশেষ টাইমগুলো হল রাতে ঘুমানোর আগে ,  সন্ধার পরে। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে যে রাতে ঘুমানোর আগে করলে সেই পড়াটি মেমোরিতে সহজে ঢুকে যায় এবং এই সময় পড়লে পড়া সহজে মনে থাকে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন কোন সময় পড়লে পড়া মনে থাকে, পড়াশোনা করার ক্ষেত্রে বা পড়াশোনা মনে রাখার জন্য আপনাকে সকালে , সন্ধাতে এবং রাতের কিছু অংশ কাজে লাগাতে হবে তাহলে আপনি খুব সহজেই আপনার পড়াশোনা গুলোকে মনে রাখতে পারবেন।

স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধির দোয়া

প্রতিনিয়ত গুনাহ এবং পাপ কাজের লিপ্ত হওয়ার কারণে মানুষের স্মৃতিশক্তি ধীরে ধীরে কম হতে থাকে। জ্ঞান হল আল্লাহর পক্ষ থেকে পাওয়া একটি নূর বা আলো আর সেই জ্ঞান বা স্মৃতিশক্তিকে বাড়াতে হলে অবশ্যই নিজেকে পাপ কাজ থেকে দূরে রাখতে হবে এবং কুরআন ও হাদিসে দেখানো পথ অনুযায়ী আমল করতে হবে। তাই আজকে আপনাদেরকে  স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধির দোয়া জানাবো , আর অনেকেই আপনারা স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধির দোয়া জানতে চেয়ে থাকেন। কুরআনের ২০ নং সুরায় এমন একটি আয়াত রয়েছে যেই আয়াতটি নিয়মিত আমল করলে ,এর বরকতে আল্লাহপাক স্মৃতিশক্তি বাড়িয়ে দিবেন আর এই সূরাটি হলো - সূরা ত্বহা। সুরা ত্বহা এর ভেতরে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির  দোয়াটি রয়েছে ১১৪ নং আয়াতে। এখন আপনাদেরকে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির দোয়া বা জানাবো। নিচে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির দোয়া এর আরবি ,বাংলা  এবং অর্থ দেয়া হলো,

স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধির দোয়া হলো- رَّبِّ زِدْنِي عِلْمًا

দোয়াটির উচ্চারনঃ ‘রাব্বি যিদনি ইলমা’

অর্থঃ হে আমার রব! আমার ইলম বাড়িয়ে দাও। (সূরা ত্বাহা; আয়াত ১১৪)

নিয়মিত ফজরের নামাজের পরে এবং দিনের যে কোন সময় বেশি বেশি এই দোয়াটি পড়তে থাকলে এর বরকতে আল্লাহ পাক স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে দেবেন। তবে এই দোয়াটির মাধ্যমে স্মৃতিশক্তি বাড়াতে হলে অবশ্যই আল্লাহর উপরে পরিপূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থার সাথে আমল করতে হবে এবং এর পাশাপাশি পাপ কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে।

স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধির খাবার

চলুন এবার স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধির খাবার খাবার গুলোর নাম জেনে নেওয়া যায়। এমন কিছু খাবার রয়েছে যে খাবারগুলো স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধির খাবার হিসেবে পরিচিত কেন না এই খাবারগুলো খেলে স্মৃতিশক্তি বাড়ে। তাই আপনি যদি স্মৃতিশক্তি বাড়াতে চান তাহলে অবশ্যই আমি কোন খাবারগুলোতে স্মৃতিশক্তি বাড়ে সেই খাবারগুলোর নাম জেনে নিতে হবে। তাই এবার আপনাদেরকে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির কিছু খাবারের নাম জানাবো। স্মৃতিশক্তি বাড়াতে পারে এমন খাবারগুলো হল -বাদাম , ডার্ক চকলেট , এভোকাডো , ব্লুবেরি, ওটস , ডালিম বা বেদানা , কমলা , গ্রিন টি , কফি , ব্রকলি , পালংশাক , বিট , টমেটো , ডিম , কুমড়ো বীজ , সূর্যমুখীর বীজ , কালোজিরা , সামুদ্রিক মাছ ইত্যাদি। এছাড়াও স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর জন্য শরীরকে সবসময় হাইড্রেট রাখতে হবে, কেননা শরীরে যদি ডিহাইড্রেশন দেখা যায় তাহলে সে ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের কার্য ক্ষমতা কমে যাবে তাই স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর জন্য পানি পানের প্রয়োজনীয়তাও অপরিসীম।

মন্তব্য , এই পোস্টটি পড়ে আপনারা পড়া মনে রাখার দোয়া এবং স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধির দোয়া সম্পর্কে জেনেছেন। পূর্ণ আস্থা এবং বিশ্বাসের সাথে পড়া মনে রাখার দোয়া এবং স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধির আমলের পাশাপাশি নিজের পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি এবং পড়া মনে রাখার জন্য চেষ্টা চালিয়ে  যান এবং এর পাশাপাশি স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধির খাবার গুলো খাদ্য তালিকায় যুক্ত করার চেষ্টা করুন কেননা এই খাবারগুলো আপনাকে শারীরিকভাবে সুস্থ রাখার পাশাপাশি স্মৃতিশক্তি বাড়াতেও সাহায্য করবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url