আলু দিয়ে রূপচর্চা করার বিভিন্ন উপায়

যারা সময়ের স্বল্পতার কারণে স্কিন কেয়ার সেন্টারে গিয়ে অথবা পার্লারে গিয়ে রূপচর্চা বা ত্বকের যত্ন নিতে পারেন না , তাদের জন্য জানাবো রূপচর্চার সহজ কয়েকটি উপায়। আর আজকের পোস্টে আপনাদের জন্য থাকছে একটি উপকরণের মাধ্যমে রূপচর্চার উপায়। এই উপকরণটি আমাদের সকলের ঘরে প্রায় সব সময় থাকে , কারণ এই উপকরণটিকে আমরা সবজি হিসেবে প্রায় সব রান্নাই ব্যবহার করি , আর এই সবজিটি হল- আলু।
হ্যাঁ বন্ধুরা, আজকে আপনাদেরকে জানাবো আলু দিয়ে কিভাবে আপনারা খুব সহজে নিজেদের রূপচর্চা করে নিতে পারেন। শুধুমাত্র আলুর রস দিয়েই রূপচর্চা করা সম্ভব ,এমনকি কি ত্বকের বিভিন্ন সমস্যাও দূর করা সম্ভব তবে আলুর সাথে যদি আপনারা আরো কিছু উপকরণ অ্যাড করেন তাহলে এর কার্যকারিতা বেড়ে যায়। বেশিরভাগ মেয়েরাই সাধারণত তাদের নিজেদের টক বা রূপচর্চা নিয়ে অত্যন্ত সচেতন থাকেন। তবে কিছু কিছু মহিলারা আছে যারা ব্যস্ততার কারণে রূপচর্চার দিকে খুব একটা নজর দেন না , কারণ তারা ভাবে রূপচর্চা করাটা বেশ সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তাই রূপচর্চা করার জন্য কিভাবে আপনারা খুব সহজে , কম সময়ে এবং ঘরে থাকা সাধারণ একটি উপকরণ আলুর মাধ্যমে ত্বকের যত্ন নিতে পারেন তা জানাবো।

আলু দিয়ে রূপচর্চা

রূপচর্চা করার জন্য নিয়মিতভাবে সপ্তাহের দুই থেকে তিন দিন -স্ক্রাব , ব্লিচ , টোনার ইউজ , ফেস মাস্ক এবং ফেসপ্যাক ব্যবহার , ফেসিয়াল এই বিষয়গুলো করতেই হবে। আর রূপচর্চার এই সকল বিষয়গুলো আপনি ঘরে বসে মাত্র একটি উপাদানের সাহায্য করে ফেলতে পারেন। ঘরোয়া ভাবে রূপচর্চা করার বা ত্বকের যত্ন নেয়ার জন্য শুধু ভালই যথেষ্ট। কিন্তু আলু দিয়ে রূপচর্চা করার পূর্বে অবশ্যই এর নিয়ম কানুন গুলো আপনাকে জানতে হবে। তাহলে চলুন আর দেরি না করে আলু দিয়ে কিভাবে রূপচর্চা করবেন সেই বিষয়গুলো জেনে নেওয়া যাক।
ফেস মাস্ক তৈরিঃ আলুর পেস্ট বা আলুর রসের সাথে একাধিক উপকরণ মেশানোর মাধ্যমে আপনি ফেসপ্যাক তৈরি করতে পারেন এবং এই প্যাকটি ত্বকে লাগিয়ে ব্রণ এবং ত্বকের কালো দাগ সহ বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে পারেন। ফেস মাস্ক তৈরীর জন্য আলুর রস বা আলুর পেস্ট এর সাথে মেশাতে পারেন গোলাপ জল , মধু , লেবুর রস উপাদান গুলো একত্রে মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বকের কালো দাগ দূর করে ত্বক ফর্সা করতে সাহায্য করে। তবে যদি আপনার ড্রাই স্কিন হয় তাহলে আলুর সাথে লেবুর রসের পরিবর্তে মধু ব্যবহার করুন আর যদি আপনার অয়েলি স্কিন হয় তাহলে মধুর পরিবর্তে লেবুর রস অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে।
এছাড়া ফেস মাস্ক তৈরি করার জন্য আলুর রসের সাথে মেশাতে পারবেন এলোভেরা জেল , মুলতানি মাটি , গোলাপ জল , চালের আটা ইত্যাদি। এই উপকরণগুলো একত্রে মিশিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করে স্কিনে ব্যবহার করলে ত্বকের তৈলাক্ততা দূর হওয়ার পাশাপাশি ত্বকের ন্যাচারাল স্ক্রাবের এবং ত্বক উজ্জ্বল এবং ফর্সা হবে। এই ফেসপ্যাকটি সপ্তাহে ১ -২ ব্যবহার করতে পারেন 20 থেকে 30 মিনিটের জন্য।
**
আলু দিয়ে ফেস স্ক্রাবঃ নিয়ত পরিষ্কার রাখার জন্য এবং ত্বকের উপর থেকে মৃত কোষ দূর করার জন্য সপ্তাহে অন্ততপক্ষে এক থেকে দুই দিন স্ক্রাব করা খুবই জরুরী। ঘরোয়া ভাবে আলু দিয়ে স্ক্রাব তৈরি করার জন্য আলুর রসের সাথে চালের গুড়া , মধু ও সামান্য তরল দুধ মিশিয়ে ঘন একটি পেস্ট তৈরি করুন। চালের গুড়ার পরিবর্তে এখানে ওটস ব্যবহার করতে পারেন। সব উপকরণগুলো একত্রে ভালোভাবে মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি হলে , আলতো হাতে স্ক্রিনে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে অর্থাৎ রাউন্ড আকারে মাসাজ করুন। কিছুক্ষণ মাসাজ করার পরে , ১০ থেকে ১৫ মিনিটের জন্য একটি ত্বকে লাগিয়ে রাখুন এবং এরপর আবার হালকা ভাবে একটু মাছ চাষ করে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন আপনার ত্বক অনেকটাই মসৃন এবং উজ্জ্বল হবে।
**
আলুর রস দিয়ে টোনারঃ স্কিনকে ভালো রাখার জন্য , টোনার ব্যবহার করা খুবই জরুরী কারণ টোনার আমাদের ত্বককে মশ্চারাইজ রাখতে সাহায্য করে। ত্বকের টোনার এর কাজটি খুব ভালোভাবে সম্পূর্ণ করতে পারে আলু। আলুর রস স্ক্রিনে লাগালে এটি ন্যাচারাল টোনার হিসেবে কাজ করবে। আলুর রস দিয়ে টোনার বানানোর জন্য প্রথমে আলুকে ব্লেন্ড করে এর থেকে সম্পূর্ণ রসটুকু আলাদা করে নিতে হবে এবং এই রসের সাথে মধু ভালোভাবে মিশিয়ে নিয়ে ত্বকে লাগাতে হবে। ২০ থেকে ৩০ মিনিট ত্বকের ওপরে আলুর রস এবং মধুর মিশ্রণটি লাগিয়ে রাখলে , এর থেকে আমাদের ত্বক খুব ভালোভাবে মশ্চারাইজ শোষণ করে নিতে পারবে যা প্রাকৃতিক টোনার হিসেবে কাজ করবে।
আলু দিয়ে ক্লিনজার তৈরিঃ স্কিনকে ভালো রাখতে হলে এবং সুস্থ রাখতে হলে অবশ্যই নিয়মিতভাবে ত্বক পরিষ্কার করতে হবে। ত্বক যদি গভীর থেকে পরিষ্কার না করা হয় তাহলে , লোমকূপের গোড়ায় ধুলোবালি আটকে গিয়ে ত্বকের দক্ষতা বাড়িয়ে দিবে এবং পাশাপাশি স্কিনের বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করে। ত্বককে গভীরভাবে পরিষ্কার করার ক্ষমতা রাখে ক্লিনজার। আলুর সাথে লেবুর রস মিশিয়ে বিশ মিনিট ত্বকে লাগিয়ে রাখলে এটি আমাদের ত্বকের প্রাকৃতিক ব্রিজ হিসেবে কাজ করবে এবং ক্লিনজার হিসেবেও কাজ করবে। এছাড়াও আলুর সাথে শসার রস এবং বেকিং সোডা মিশিয়ে ভালো একটি ক্লিনজার তৈরি করে স্ক্রিনে লাগাতে পারেন।
**
আলু দিয়ে ফেসিয়ালঃ ফেসিয়াল করার জন্য যারা এক্সট্রা সময় এবং টাকা-পয়সা খরচ করতে চান না তারা খুব সহজে ঘরে থাকা আলু দিয়ে তৈরি করে নিতে পারেন ফেসিয়ালের প্যাক।ঘরোয়া ভাবে আলুর ফেসিয়াল তৈরির জন্য এর সাথে প্রয়োজন হবে গাজর। আর এই ফেসিয়ালটি শুধু আপনাকে ফর্সার ত্বকই দেবে না, বরং এর পাশাপাশি আপনাদের মুখের মেছতার কালো দাগ দূর করতে যথেষ্ট সাহায্য করবে। প্রথমেই এই ফেসপ্যাকটি তৈরি করার জন্য আপনাকে আলু ও গাজর কুচি করে নিতে হবে এবং এগুলোকে একত্রে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। আপনি চাইলে গাজর ও আলু আলাদাভাবে ব্লেন্ড করতে পারেন। উপকরণ দুটি ব্লেন্ড করা হয়ে গেলে এর থেকে থেকে রসগুলো বের করে নিতে হবে , সবটুকু রস বের করা হয়ে গেলে রসের সাথে দের অথবা দুই চামচ পরিমাণ চিনি মিশিয়ে হালকা আছে কিছুক্ষণ চুলায় জ্বাল দিতে হবে এবং অনবরত নাড়তে হবে। চুলার আচে কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করার ফলে দেখা যাবে মিশ্রণটি ঘন আকার ধারণ করেছে । আলোর রস গাজর এবং চিনির মিশ্রণটি ঘন হয়ে আসলে এটিকে নামিয়ে ঠান্ডা করে ফেসপ্যাক আকারে ত্বকে লাগিয়ে রাখতে হবে 15 থেকে 20 মিনিট। তারপর পরিষ্কার পানি দিয়ে ত্বক ধুয়ে নিতে হবে। এভাবে যদি আপনি মাসে ২-৩ দিন এই ফেসিয়ালটি ইউজ করেন তাহলে খুব তাড়াতাড়ি আপনার ত্বক ফর্সা ও উজ্জ্বল হবে এবং পাশাপাশি মেছতার সমস্যা দূর হবে।
রিঙ্কেল এবং ডার্ক সার্কেল দূর করতে আলুঃ অনেক সময় দেখা যায় স্কিনের প্রপার টেক কেয়ার না করার কারণে অথবা শারীরিক অসুস্থতা বা মানসিক টেনশন এর কারণে ত্বকের উপরে রিংকেলস এবং ডার্ক সার্কেল দেখা দেয়।এই রিংকেলস এবং ডার্ক সার্কেলও খুব সহজে দূর করে নিতে পারেন আলুর সাহায্যে। ডার্ক সার্কেল দূর করার জন্য চোখের চারপাশে আলুর রস লাগিয়ে রাখতে পারেন অথবা আলু গোল গোল স্লাইস করে কেটে চোখের উপরে ১৫ থেকে ২০ মিনিটের জন্য দিয়ে রাখতে পারেন। এতে করে ডার্ক সার্কেল বা চোখের নিচের কালো দাগ দূর হওয়ার পাশাপাশি চোখে ফোলা ভাবো দূর হবে।
আর রিংকেলস দূর করার জন্য আলুর পেস্টের সঙ্গে গোলাপ জল মিশিয়ে ত্বকের ওপরে এপ্লাই করতে পারেন অন্ততপক্ষে 15 মিনিটের জন্য। অথবা আলুর পেস্টের সঙ্গে টক দই মিশিয়ে ত্বকের ওপরে ব্যবহার করেও খুব সহজে রিংকেল দূর করা সম্ভব।
ব্রণ ও ব্রণের দাগ দূর করতে আলুঃ মুখের ত্বকে ব্রণ এবং ব্রণের দাগ থাকলে আমাদের সৌন্দর্য অনেক অংশেই নষ্ট হয়ে যায়। তাই রূপচর্চা করার শোনার জন্য ব্রণ এবং ব্রনের দাগ দূর করার ব্যাপারটিও চলে আসে। দ্রুত ব্রণ দূর করতে এবং ত্বকের উপর থেকে ব্রণের দাগ দূর করার জন্য আলুর রস , টমেটোর রস এবং মধু একসাথে ভালোভাবে মিশিয়ে মিশ্রণটি ৫-৭ মিনিটের জন্য নরমাল ফ্রিজে রেখে দিন।এরপর প্যাকটি ব্রণের উপরে এবং ব্রণের কালো দাগের স্থানে ভালোভাবে লাগান , আপনি চাইলে এই প্যাকটি আপনার সম্পূর্ণ মুখে লাগাতে পারেন। টমেটো , আলু এবং মধুর এই মিশ্রণটি ব্রণ ও ব্রণের দাগ দূর করার পাশাপাশি রোধে পোড়া কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করবে।
মন্তব্য , আশা করছি রূপচর্চার কাজে আপনারা যদি আলুর প্রোপার ইউজ করেন তাহলে আপনাদের ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর হবে এবং ঘরে বসেই খুব সহজে আপনারা ত্বকের যত্ন নিতে পারবেন। আর আলু দিয়ে রূপচর্চা করার সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এটি যে কোন বয়সী মানুষই ব্যবহার করতে পারে এতে ত্বকের কোন ক্ষতি হয় না।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url