সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ - সিজারের পর ব্যথা কতদিন থাকে - সিজারের পর খাবার তালিকা

নরমাল ডেলিভারির চেয়ে কষ্ট কম হওয়াই বর্ত্মানে জন্ম দানের বা সন্তান প্রসবের পদ্ধতি হিসেবে খুব জনপ্রিয় হয়ে  উঠেছে সিজারিয়ান ডিলিভারি।তবে সিজার করানোর আগে সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ,সিজারের পর ব্যথা কতদিন থাকে ও সিজারের পর খাবার তালিকা সম্পর্কে জেনে নেয়া উচিত।তাই,আজ এ পোষ্ট জানানো হবে সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ, সিজারের পর ব্যথা কতদিন থাকে ও সিজারের পর খাবার তালিকা সম্পর্কে ।

সিজার খুব একটা ছোট অপারেশন নয়।তাই সিজারের পর সুস্থ হবার জন্য বেশ কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। প্রায় ২০-৩০% নারীদের ক্ষেত্রে সিজারের পরে ইনফেকশন হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়, এই কারণে সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ গুলো জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই পোস্টের মাধ্যমে সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ এর পাশাপাশি আবু জানতে পারবেন সিজারের পর ইনফেকশন হলে করণীয়, সিজারের পর ব্যথা কতদিন থাকে , সিজারের পর খাবার তালিকা সহ সিজারের পর করণীয় সকল বিষয়ে এবং সিজারের পর কাটা স্থানের যত্ন নেয়া সম্পর্কে। এই বিষয়গুলো যদি আপনার জানা না থাকে তাহলে এই পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন এবং জেনে নিন।

সূচিপত্রঃসিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ - সিজারের পর ব্যথা কতদিন থাকে - সিজারের পর খাবার তালিকা।

সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ

অপারেশনের সেনসেটিভ কাতা জায়গা অনেক কারনেই সিজারের পরে ইনফেকশন হতে পারে। বিষয়টি কিন্তু অত্যন্ত স্পর্শকাতর , এ কারণে সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ দেখা গেলে দেরি না করে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত। তবে তার আগে আমাদেরকে জানতে হবে , সিজারের পর ইনফেকশন এর লক্ষণ গুলো।সিজার করানোর পরে , সিজারের স্বাভাবিক লক্ষণ ও পাশাপাশি যদি বিশেষ কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায় তাহলে বুঝে নিতে হবে কাটায় স্থানে প্রদানের সৃষ্টি হয়েছে। সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ গুলো যদি না জানেন, তাহলে সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ গুলো জেনে নিন।

  • সিজারের কাটা স্থান ফুলে যাবে এবং লাল হবে
  • সিজারের স্থানে প্রচন্ড রকম ব্যাথা হওয়া
  • জ্বর আসা
  • সিজারের স্থান দিয়ে  পুঁজ বা পানি বের হওয়া
  • প্রসাব করতে অসুবিধা হওয়া
  • পা ফুলে যাওয়া
  • মাসিকের রাস্তায় দূঃগন্ধযুক্ত তরল ও জমাট রক্ত আসা

সিজারের পর ইনফেকশন হলে করণীয়

বিভিন্ন কারনে বর্তমানে দিন দিন সিজারিয়ান রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সিজারের পর বিভিন্ন শারীরিক জটিল একটি অন্যতম বিপদজনক সমস্যা হলো ইনফেকশন। যদিও প্রায় ৭০-৮০ % মহিলাদের সিজারের পর ইনফেকশন এর সমস্যা হয় না, তবুও যারা সিজার করাতে চাচ্ছেন তাদের প্রত্যেকেরই সিজারের পর ইনফেকশন হলে করণীয় বিষয় সম্পর্কে জেনে রাখা উচিত।তাই আজকে আপনাদের জানাবো সিজারের পর ইনফেকশন হলে করণীয় বিষয় সম্পর্কে। সিজারিয়ান রোগীরা যদি একটু সতর্কভাবে চলাফেরা না করেন তাহলে, ইনফেকশনের সম্ভাবনা বহু গুনে বেড়ে যায় , তাই সিজারের পরে যে সকল সতর্কতামূলক পদ্ধতি গুলো মেনে চলতে সেগুলো হল,

সিজারের পরে যদি ইনফেকশন দেখা দেয় তাহলে  দ্রুত কাটা স্থান বা ইনফেকশন সারিয়ে তোলার জন্য সুষম খাবার এবং ভিটামিন সি যুক্ত খাবার গুলো বেশি বেশি গ্রহণ করতে হবে বিশেষ করে -কমলালেবু , মাল্টা , আমলকি , কাগজি লেবু এগুলোর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায় তাই জন্য সিজারের পরে বেশি বেশি এই জাতীয় খাবার গুলো সাথে প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি খেতে হবে।

সিজারের পরে খেয়াল রাখতে হবে কাঁটা বা ক্ষতস্থানটিতে যেন কোনভাবে ময়লা বা ধুলোবালি না লাগে। যদি এখানে ময়লা বা ধুলোবালি লাগার সম্ভাবনা থাকে তাহলে এখান থেকে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া সংক্রামন দেখা দিবে এবং এখান থেকে ইনফেকশনের মাত্রা বেড়ে যাবে। তাই সিজারের পরে কাটা স্থানে ইনফেকশন হোক বা না হোক প্রতিনিয়ত এই স্থানগুলো ড্রেসিং করতে হবে এবং পরিষ্কার ও জীবাণু মুক্ত রাখতে হবে। সিজারের পরে ক্ষতস্থানে ইনফেকশন দেখা দিলে কোন এ স্থানটি সাবান দিয়ে পরিষ্কারের চেষ্টা করবেন না , কারণ ইনফেকশনের স্থানে সাবান ব্যবহার করলে ইনফেকশন আরো বেড়ে গিয়ে বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি করবে।

আরো পড়ুনঃ অনিয়মিত মাসিকের কারণ ও কুফল

অনেকেই মনে করেন ইনফেকশনের পরে, কাটার স্থানটি খোলা রাখলে সেখানে বাতাস চলাচল করবে এবং দ্রুত ক্ষতস্থান শুকিয়ে যাবে কিন্তু , প্রচলিত এই ধারণাটি একেবারেই ভুল। আপনি যদি সিজারের কাটা স্থানটি শুকানোর আগ পর্যন্ত এভাবে খোলা ছেড়ে দেন তাহলে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া বা রোগ জীবাণুর সংক্রমণ এখানে ঘটবে এবং ইনফেকশনের সৃষ্টি করবে। আর যদি আগে থেকেই ইনফেকশন হয়ে থাকে তাহলে বিভিন্ন ভাইরাস ব্যাকটেরিয়ার আক্রমের ফলে ইনফেকশনের মাত্রা বেড়ে গিয়ে জটিলতার সৃষ্টি করবে। আর তাই সিজারের পরে কাটায় শান্তি ড্রেসিং বা পরিষ্কার করার পর ইনফেকশন না শুকানো পর্যন্ত হালকা ব্যান্ডেজ করে রাখতে হবে।  সিজারের পরে কাটা স্থানে ইনফেকশন এর লক্ষণ দেখা দিলে যে কাজটি করা অত্যন্ত জরুরি সেটা হল, দ্রুত রেজিস্টার ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা এবং এরপরে ডাক্তারি পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের মাধ্যমে দ্রুত ইনফেকশন সারিয়ে তোলার চেষ্টা করা।

সিজারের পর ব্যথা কতদিন থাকে

যারা সিজার করিয়াছেন বা করানর কথা ভাবছেন, তাদের মধ্যে একটা প্রশ্ন থাকে সিজারের পর ব্যথা কতদিন থাকে।আজ আপনাদেরকে খুব সাধারন ভাবে এর উত্তর টি দেয়ার চেষ্টা করবো।আসলে সিজারের পর ব্যাথা কত দিন থাকে বা থাকবে এ বিষয়টি অনেকটায় নির্ভর করে সিজারিয়ান রোগীর লাইফ স্টাইল ও শারীর বৈশিষ্ট্যের উপর। কারন আমাদের সকলের শরীর এর ধরন এক নয়,কার কার কাটা স্থান শুকাতে কম সময় লাগে আবার কারো এক্টু বেশি সময় লাগে। আর এ কারনে এক এক জনের সিজারের পর ব্যাথা কমতে সময়ে কম বেশি হতে পারে।

তবে সাধারনত সিজার করার পর পুরপরি ব্যাথা সারতে ২/৩ সপ্তাহ অথবা ১ মাস বা তার কিছু বেশি সময় লাগতে পারে।বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ব্যাথা কমে যেতে দেখা যায়।কিন্তু আপনার যদি সিজস্রের পর ইনফেকশান হয় অথবা কাজ কর্ম বেশি করেন তাহলে সে ক্ষেত্রে ব্যাথা কমতে বেশ কিছুদিন।এ ক্ষেত্রে আপনি ডাক্তারি পরামর্শ নিতে পারেন।সিজারের পর ব্যাথা কত দিন থাকে বিষয়টি নিশ্চয়

সিজারের পর খাবার তালিকা

সিজার পরবর্তী সময় রোগীর খাদ্য তালিকার ওপর বিশেষ নজর দিতে হবে। সিজারের পর খাবার তালিকা প্রস্তুতে যদি যত্নবান হওয়া যায় তাহলে এর মাধ্যমে রোগী প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও শক্তি ফিরে পাবে এবং দ্রুত ছেরে উঠতে পারবে। যারা সিজার এর রোগী রয়েছেন অথবা যারা সিজার করাতে চাচ্ছেন তাদের জন্য আজকে জানাবো সিজারের পর খাবার তালিকা সম্পর্কে। তাহলে চলুন এবার সিজারের পর খাবার তালিকা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

তরল খাবার খাওয়াঃ সিজারের পর খাবার তালিকা তৈরির সময় খেয়াল রাখতে হবে খাদ্য তালিকায় যেন তরল জাতীয় খাবার থাকে। এই তরল খাবার গুলো রুগীর শরীরে পানি শূন্যতা দূর করবে , বুকের দুধ উৎপাদনে সাহায্য করবে।

দুধ এবং ডিম জাতীয় খাবার খাওয়াঃ সিজারের পরে রোগীকে দুধ অথবা দুধ তৈরি খাবার খেতে দেওয়া প্রয়োজন কারণ এর মধ্যে থেকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও প্রটিন পাওয়া যাবে যা রোগীর জন্য এবং বাচ্চার জন্য হাড় ও দাঁত গঠনে সহায়তা করবে।

ফলমূল ও শাক সবজিঃ সিজারের পরে রোগীকে প্রচুর পরিমাণে টাটকা ফলমূল এবং শাকসবজি খাওয়াতে হবে এতে করে শরীরের পুষ্টি ঘাটতি দূর হবে এবং দুটি সহজে সেরে উঠতে পারবে।

ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারঃ সিজারের পরে খাবার তালিকায় অবশ্যই ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারগুলো যুক্ত করতে হবে কারণ ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার গুলো হজমে সহায়তা করে করে যার ফলে পেটে গ্যাসের সমস্যা হয় না এবং কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্ত থাকা যাবে।

আইরন সমৃদ্ধ খাবারঃ সিজারের পরে রক্তশূন্যতা বা রক্তস্বল্পতা দূর করার জন্য অবশ্যই আয়রন সমৃদ্ধ খাবার গুলো খাদ্য তালিকায় যুক্ত করতে হবে।

ঝাল মসলাযুক্ত খাবার না খাওয়াঃ ঝাল মসলাযুক্ত খাবার এবং অতিরিক্ত ভাজাপোড়া খাবার এই সময় পরিহার করতে হবে। কারণ এই ধরনের খাবার গুলো পেটে গ্যাসের সমস্যা তৈরি করা ছাড়াও আরো বিভিন্ন ধরনের অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে।

আরো পড়ুনঃ কতটুকু সাদা স্রাব হওয়া স্বাভাবিক

চা বা কফি কম খাওয়াঃ সিজারের পরে কয়েকদিন চা এবং কফি জাতীয় খাবার গুলো কম খাওয়াই ভালো কারণ এ ধরনের খাবার গুলো শরীরে পানি শূন্যতা সৃষ্টি করতে পারে এবং এর ফলে অনিদ্রার সমস্যা তৈরি হতে পারে তাই কয়েক দিন চা বা কফি এড়িয়ে চলাই ভালো আর যদি খেতেই হয় তবে অল্প পরিমাণে খেতে হবে।

কালোজিরাঃ সিজারের পরে খাদ্য তালিকায় যুক্ত করতে পারেন কালোজিরা , কারণ কালোজিরার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের রোগের সমাধান এর পাশাপাশি বুকের দুধ উৎপাদন করতে এটি ভীষণ কার্যকর। তাই কালোজিরা খাওয়ার অভ্যাস করলে , বুকের দুধ উৎপাদন বেশি হবে যার ফলে বাচ্চার দুধের ঘাটতি পরবেনা ।

এক কথায় বলতে গেলে বলতে হয় সিজারের পর খাবার তালিকা তৈরি করার সময় মাথায় রাখতে হবে, যেন রোগী সকল ধরনের পুষ্টি উপাদান গুলো খাবারের মাধ্যমে পেয়ে যায় বিশেষ করে আইরন , ক্যালসিয়াম , ভিটামিন ইত্যাদি। কারণ মায়ের খাদ্যের পুষ্টি উপাদান গুলো শুধু মায়ের শরীরের নয় শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজন। তাই খাবার তালিকায় যদি সব বিভিন্ন পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার গুলো যুক্ত করা যায় তবে মা এবং শিশু উভয়ের শরীরে পুষ্টি ঘাটতি পূরণ হবে এবং মা দ্রুত ছেড়ে উঠতে পারবে ও শিশু সুস্থ থাকবে।

সিজারের পর কাটা স্থানের যত্ন

অনেক মায়েরাই জানেন না সিজারের পরে কাটা স্থানের যত্ন কিভাবে নিতে হয়।কিন্তু সিজারের পরে কাটা স্থানের বিশেষ যত্ন নিতে হয় বলে ,সিজারের পর কাটা স্থানের যত্ন সম্পর্কে জেনে নিতে হবে।যদিও সিজারের পর ক্লনিক বা হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেয়ার সময় সিজারের পর কাটা স্থানের যত্ন সম্পর্কে আপনাকে নির্দেশ্না দিয়ে দিবে তারপরেও,আপনাদের সুবিধার জন্য এ বিষয় গুলো উল্লেখ করে রাখছি।

  • কাটা স্থানে বার বার হাত দেয়া যাবে না ,এতে বিভিন্ন রোগ জিবানুর সংক্রামন ঘটতে পারে।
  • প্রথম কিছুদিন পানি ও সাবান ব্যাবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে,না হলে ইনফেকশান হতে পারে।
  • প্রতিদিন savlon , povisep অথবা এ জাতিও লিকুইড গুলে দিয়ে কাটা স্থান জিবানু মক্ত  করতে হবে।
  • সিজারের কাটা স্থানে উঠা বসা,হাঁচি- কাশির সময় যাতে বেশি চাপ না লাগে এ ব্যাপারে আচেত্ন থাকতে হবে।
  • বেশ কিছুদিন সহবার বন্ধ রাখতে হবে।

মন্তব্য, এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ে নিশ্চয়ই জেনে গেছেন সিয়ারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ এবং সিজারের পরে ইনফেকশন হলে করণীয় বিষয় সম্পর্কে। সিজারের পরে দ্রুত সেরে ওঠার জন্য, পোস্টের ভেতরে দেওয়া পদ্ধতি গুলো ভালোভাবে অনুসরণ করুন এবং যদি ইনফেকশনের লক্ষণ গুলো প্রকাশ পায় তাহলে দেরি না করে  ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url