আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ - আয়াতুল কুরসি ফজিলত - আয়াতুল কুরসি আরবি

আয়াতুল কুরসি কুরআনের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ একটি আয়াত এবং এই আয়াত সম্পর্কে নবীজি (সা) বলেছেন - সবকিছুরই একটি চূড়া থাকে আর কুরআনের সূরা হলো আয়াতুল কুরসি। আজকে আপনাদের এই পোস্টে আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ  এবং আয়াতুল কুরসি ফজিলত সম্পর্কে জানাবো এবং এই পোস্টের মাধ্যমে আপনারা বুঝতে পারবেন আয়াতুল কুরসি তেলাওয়াত করা আমাদের জন্য কেন এবং কতটা জরুরী।


আয়াতুল কুরসি নামক এই মর্যাদাপূর্ণ আয়াতটি সম্পর্কে আমাদের সকলেরই বিস্তারিত জ্ঞান রাখা প্রয়োজন। আয়াতুল কুরসি এই ছোট্ট আয়াতটি আমলের মাধ্যমে আমরা অশেষ সওয়াবের পাশাপাশি জান্নাতে যাওয়ার বাধা অতিক্রম করতে পারব। আয়াতুল কুরসি ফজিলত সকলকে জানানোর উদ্দেশ্যে এবং সকলে যাতে এই আয়াতটি আমল করতে পারে সেজন্য এই পোস্টে আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ ,আয়াতুল কুরসি ফজিলত ,আয়াতুল কুরসি আরবি এবং আয়াতুল কুরসি আমল সম্পর্কে আরো বেশ কিছু বিষয় আপনাদের জানাবো।

সূচিপত্রঃ আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ - আয়াতুল কুরসি ফজিলত - আয়াতুল কুরসি আরবি

আয়াতুল কুরসি ফজিলত

আয়াতুল কুরসি ফজিলত অনেক বেশি , কুরআন মাজিদের সবচেয়ে মর্যাদা পূর্ণ আয়াত হল আয়াতুল কুরসি। আজকে আপনাদের  কুরআনের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আয়াত অর্থাৎ আয়াতুল কুরসি ফজিলত সম্পর্কে জানাবো। প্রত্যেক ফরজ নামাজের পরে আয়াতুল কুরসী পাঠ করা সুন্নত। কেউ যদি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে তাড়াতাড়ি তাড়াতাড়ি পাঠ করে তাহলে এই আয়াতুল কুরসি ফজিলত এর বরকতে সকাল পর্যন্ত শয়তান তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না এবং তার হেফাজতের জন্য আল্লাহ পাক সকাল পর্যন্ত একজন ফেরেশতা নিয়োজিত রাখবেন। এছাড়াও আয়াতুল কুরসি ফজিলত এর বদৌলতে আল্লাহ পাক বিভিন্ন প্রকার বালা মুসিবত এবং অভাব অনটন দূর করবেন।

হযরত উবাই বিন কা'ব (রাঃ) বলেন, রাসূল (সাঃ) ফরমান, " হে আবু মুনযির! তোমার কি জানা আছে কোরআনের কোন আয়াতটি শ্রেষ্ঠতম?" আমি বললাম, "আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই ভালো জানেন।" তিনি আবার বললেন "হে আবু মুনযির! তোমার কি জানা রয়েছে, আল্লাহর কিতাবের কোন আয়াতটি সর্বশ্রেষ্ঠ?" এবার আমি বললাম, "আল্লা-হু লা ইলা-হা ইল্লাহুওয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যূম, উবাই বলেন, এ সময় হুযর (সাঃ) আমার বক্ষে হাত মেরে বললেন, " জ্ঞান তোমার মোবারক হোক, হে আবু মুনযির।" (মুসলিম) নিজ দেহ, গৃহ বা অন্য কারো গৃহ বন্ধ করতে হলে এশার নামাযান্তে আয়াতুল কুরসী পড়ে বুকে বা হাতের তালুতে বুকে ফুঁ দিয়ে ১বার বা ৩বার জোরে তালি দিবে। এই আয়াত পড়ে শিশুদের বুকে ফু দিলে শিশুরা বদনজর থেকে রক্ষা পায়।
তালির শব্দ যতদূর পৌঁছাবে ততদূর পর্যন্ত জ্বীন-পরী, ভূত-প্রেত, দৈত্য-দানব কিছুই আসতে পারবে না। অন্ধকারের চলাফেরা করলে সাপ-বিচ্ছু, জন্তু-জানোয়ার, কোন ক্ষতি করতে পারবে না। ইহা লিখে দোকানের দরজায় ঝুলিয়ে রাখলে রুজি বৃদ্ধি পাবে। অর্থের জন্য কারো মুখাপেক্ষী হবে না। এই আয়াত বেশি পরিমাণে পাঠ করলে কবরের আযাব মাফ হবে। একাধারে ৩১৩ বার পাঠ করলে শত্রু তার নিকট পরাজিত হবে। তার জান আল্লাহর রহমতে ফেরেশতারা হেফাজত করবে। ফরজ নামাজের পরে এতটা পাঠ করলে জান্নাতে প্রবেশের বাধা শুধু মৃত্যু। এছাড়া অসংখ্য নেকি হাসিল হবে বিপদ-আপদ হতে নিরাপদ থাকবে। সুস্বাস্থ্যের জন্য ইহার তেলওয়াত খুবই উপকারী এই আয়াত বেশি পরিমাণে পাঠ করলে কবরের আযাব মাফ হয় সুতরাং বুঝতেই পারছেন আয়াতুল কুরসি ফজিলত কত বেশি।

আয়াতুল কুরসি আরবি

এবার আপনাদেরকে জানাবো আয়াতুল কুরসি আরবি। যারা শুদ্ধ রূপে আরবি পড়তে পারেন তাদের উচিত কুরআন পড়ার সময় অথবা কোরআনের কোন সূরা বা আয়াত পড়ার সময় অবশ্যই আরবি দেখে পড়ার কারণ আরবির প্রত্যেকটি বর্ণ পড়ার কারণে আল্লাহ পাক আমাদেরকে দশটি করে নেকি দিয়ে থাকেন। তাই অশেষ সওয়াব হাসিলের উদ্দেশ্যে আরবি দেখে পড়ার জন্য নিচে আয়াতুল কুরসি আরবি এর সম্পূর্ণ আয়াতটি তুলে ধরা হলো।

اَللهُ لآ إِلهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّوْمُ، لاَ تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَّلاَ نَوْمٌ، لَهُ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْأَرْضِ، مَنْ ذَا الَّذِىْ يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلاَّ بِإِذْنِهِ، يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلاَ يُحِيْطُوْنَ بِشَيْئٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلاَّ بِمَا شَآءَ، وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ، وَلاَ يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا وَ هُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيْمُ-

আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ

যারা আরবি পড়তে জানেন তাদের উদ্দেশ্যে প্রশ্নের উপরে অংশে আমরা আয়াতুল কুরসি আরবি এর সম্পূর্ণ আয়াতটি জানিয়েছি কিন্তু এমনও অনেক মানুষ আছেন যারা আরবি পড়তে পারেন না , তাদের জন্য এখন আপনাদের  জানাবো আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ। আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ দেয়ার দেওয়ার উদ্দেশ্য এটাই যেন যারা আরবি পড়তে পারেন না তারা আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ মাধ্যমে এই মর্যাদাপূর্ণ আয়াতটির আমল করতে পারেন এবং এর মাধ্যমে অশেষ সওয়াবের অধিকারী হতে পারেন। তাই নিচে আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ তুলে ধরা হলো।

আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণঃ "আল্লা-হু লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুম। লা তা’খুযুহু সিনাতুঁ ওয়ালা নাঊম। লাহূ মা ফিস্ সামা-ওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ্বি। মান যাল্লাযী ইয়াশফাউ’ ই’ন্দাহূ ইল্লা বিইজনিহি। ইয়া’লামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খালফাহুম, ওয়ালা ইউহিতূনা বিশাইয়্যিম্ মিন ‘ইলমিহি ইল্লা বিমা শা-আ’ ওয়াসিআ’ কুরসিইয়্যুহুস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদ্বি, ওয়ালা ইয়াউ’দুহূ হিফযুহুমা ওয়া হুওয়াল ‘আলিইয়্যুল আ’জিম।"

আয়াতুল কুরসি বাংলা অর্থ

কোরআন , কুরআনের বিভিন্ন সূরা বা আয়াত পড়ার সময় এর অর্থ বুঝে বুঝে পড়ার তাগিদ রয়েছে। তাই আজকে আয়াতুল কুরসি এর আরবি এবং বাংলা উচ্চারণের পাশাপাশি আপনাদেরকে আয়াতুল কুরসি বাংলা অর্থ জানাবো। আয়াতুল কুরসি বাংলা অর্থ জানা থাকলে আপনারা বুঝতে পারবেন এই মর্যাদাপূর্ণ এবং ফজিলত পূর্ণ আয়াতটির ভেতরে আল্লাহ পাক কি বলেছেন।

আয়াতুল কুরসি বাংলা অর্থঃ "আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তিনি শাশ্বত চিরঞ্জীব। বিশ্বপ্রকৃতির সর্বসত্তার ধারক। তিনি তন্দ্রা-নিদ্রাহীন সদাসজাগ। মহাকাশ ও পৃথিবীর সবকিছুর মালিক। তাঁর সদয় অনুমতি ছাড়া তাঁর কাছে সুপারিশ করার সাধ্য কারো নেই। দৃশ্যমান বা অদৃশ্য, অতীত বা ভবিষ্যৎ—সৃষ্টির সবকিছুই তিনি জানেন। তিনি যতটুকু জানাবেন, এর বাইরে তাঁর জ্ঞানের সীমানা সম্পর্কে ধারণা করা কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। তাঁর আসন, তাঁর কর্তৃত্ব পৃথিবী ও নভোমণ্ডলের সর্বত্র বিস্তৃত। আর তা সংরক্ষণে তিনি অক্লান্ত। তিনি সর্বোচ্চ সুমহান।"

আয়াতুল কুরসি ছবি

অনেক সময় আপনারা আয়াতুল কুরসি ছবি চেয়ে থাকেন। তাই আজকে আপনাদের জন্য google creative commons licenses থেকে নেওয়া তিন ধরনের আয়াতুল কুরসি ছবি শেয়ার করছি ।নিচের অংশে আরবি , ইংরেজি এবং বাংলা এই তিন ধরনের আয়াতুল কুরসি ছবি দেয়া হলো । 


আয়াতুল কুরসি কোন সূরার আয়াত

আপনাদের মধ্যে এমন অনেক মানুষ আছে যারা হয়তো জানেন না যে আয়াতুল কুরসির কোরআনের কোন সূরা নয় , এটি একটি আয়াত এবং এই আয়াতটিকে পবিত্র কুরআনের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আয়াত বলা হয়। যারা জানেন না তাদের উদ্দেশ্যে আজকে আপনাদেরকে জানাবো আয়াতুল কুরসি কোন সূরার আয়াত। তাহলে চলুন আর দেরি না করে যারা আয়াতুল কুরসি কোন সূরার আয়াত এ বিষয়টি জানেন না তারা জেনে নিন। আয়াতুল কুরসি হল -কুরআনের ২ নং সূরা , আল বাকারা এর ২৫৫ নম্বর আয়াত। সূরা বাকারা মদিনায় অবতীর্ণ হয় বলে এই সূরাকে মাদানী সূরা বলা হয়। সূরা বাকারা হল কুরআনের সবচেয়ে বড় সূরা।  সূরা বাকারার  আয়াতের সংখ্যা হল ২৮৬ এবং এই সূরার ২৫৫ নম্বর আয়াতকে বলা হয় আয়াতুল কুরসি।

আয়াতুল কুরসি কখন পড়তে হয়

আপনারা কি জানেন আয়াতুল কুরসি কখন পড়তে হয় বা আয়াতুল কুরসি কখন আমল করা উত্তম?  যদি না জেনে থাকেন তাহলে , এই বিষয়টিও সঠিকভাবে জেনে নিন। আয়াতুল কুরসি যেহেতু অত্যন্ত ফজিলত পূর্ণ একটি আয়াত তাই আয়াতুল কুরসি কখন পড়তে হয় এই বিষয়েও আপনাদের সঠিক জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। আয়াতুল কুরসি পড়ার বা আমল করার উত্তম সময় গুলো হল,

  • প্রত্যেক ফরজ নামাজের পরে
  • ঘুমাতে যাওয়ার আগে
  • আয়াতুল কুরসী আমল করুন সকাল এবং সন্ধ্যায়
  • ফজরের নামাজের পরে
  • মাগরিবের নামাজের পর
  • এছাড়াও যেকোনো সময় বেশি বেশি আয়তুল কুরসি পাঠ করার মাধ্যমে অসে সওয়াব হাসিল করা যায়
মন্তব্য, উপরিউক্ত আলোচনা টির মাধ্যমে আয়াতুল কুরসি ফজিলত জানার পরে সকলের উচিত বেশি বেশি এই মর্যাদাপূর্ণ এবং বরকতময় আয়াতটি আমলের চেষ্টা করা। যথাযথভাবে ফরজ নামাজ আদায়ের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করুন এবং আপনার জান্নাতে যাওয়ার পথ  সুগম করুন কারণ কেউ যদি ফরজ নামাজের পরে আয়াতুল কুরসী পাঠের আমল করে তাহলে মৃত্যু ব্যতীত কোন কিছুই জান্নাতে যাওয়া থেকে তাকে আটকাতে পারবেনা। আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে ঈমানের সাথে থাকার  এবং আয়াতুল কুরসী বেশি বেশি পাঠ করার তৌফিক দান করুন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url