মৃত ব্যক্তির গোসলের নিয়ম - কাফন পরানোর নিয়ম

কোন মুসলমান মারা গেলে তাকে সঠিক সময়ে গোসল করানো অপর মুসলমানের উপরে দায়িত্ব এবং মৃত ব্যক্তিকে গোসল করানো ফরজে কিফায়া। মৃত ব্যক্তিকে গোসল করানোর কাজটি অভিজ্ঞতা সম্পন্ন মানুষ দ্বারা করানো উচিত।

যেহেতু মৃত ব্যক্তিকে গোসল করানো জীবিত মুসলমানদের উপর একটি অর্পিত দায়িত্ব এই কারণে আজকে আমরা এই বিষয়টি আলোচনা করব কারণ হাদিসেও বলা রয়েছে কেউ মারা গেলে যত দ্রুত সম্ভব তার গোসল এবং দাফনের কাজটি সম্পন্ন করার ব্যাপারে। মৃতকে গোসল করানোর বিষয়টি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে কোন শিশুর যদি ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরে মৃত্যুবরণ করে সেক্ষেত্রে তাকেও গোসল করাতে হবে এমনকি যদি শিশু মৃত অবস্থায় জন্মগ্রহণ করে তারপরেও তাকে গোসল করানো উচিত তবে এক্ষেত্রে গোসল করানো ফরজ নাই।

সূচিপত্রঃ মৃত ব্যক্তির গোসলের নিয়ম - কাফন পরানোর নিয়ম

মৃত ব্যক্তির গোসলের নিয়ম

মৃত ব্যক্তিকে গোসল করানো জীবিতদের জন্য ফরযে কিফায়া। যে কেউ গোসল করালেই সকলের পক্ষ হতে আদায় হয়। যদি গোসল না করানো হয় তাহলে সকলেই গুনাহগার হবে। গোসলের স্থান পর্দা দ্বারা আড়াল করে পবিত্র খাটের উপর উত্তর দিকে মাথা দিয়ে মৃত ব্যক্তিকে শোয়াবে। তারপর পরনের কাপড় খুলে নাভি হতে হাঁটু পর্যন্ত একখানা ভিন্ন কাপড় দ্বারা ঢেকে রাখবে। গোসলের পানি বরই পাতা দ্বারা সামান্য গরম করে নিবে। নাক ও কানের ছিদ্র তুলা দ্বারা বন্ধ করে অযু করাবে। অযুতে নাকে কানে পানি দিবার আবশ্যক নেই। কাপড় হাতে জড়িয়ে মুখের ভেতর আঙ্গুল প্রবেশ করিয়ে মুখের ভেতর মুছে দিবে এবং দাঁত পরিষ্কার করে দিবে।
আঙ্গুলে কাপড় জড়িয়ে নাক ও কানের ভিতর পরিষ্কার করে দিবে। মাথার চুল দাঁড়িসহ সাবান দ্বারা সমস্ত শরীর ভালোভাবে পরিষ্কার করে দিবে। মৃতের শরীর আস্তে আস্তে মর্দন করবে। মৃতকে প্রথমে বাম কাত করে ডান দিক ও পরে ডান কাত করে বাম দিক পরিষ্কার করবে। তারপর হাতে কাপড় জড়িয়ে কাপড়ের ভিতরে হাত ঢুকিয়ে গুপ্তাঙ্গ ভালোচাবে পরিষ্কার করবে। এরপর ঘাড় ও পিঠে হাত দিয়ে আস্তে আস্তে পেটে সামান্য চাপ দিবে। এতে যদি মলমূত্র কিছু বের হয় তা পরিষ্কার করে দিবে। সবশেষে তিনবার সমস্ত শরীরে পানি ঢেলে দিবে এবং পরিষ্কার নেকড়া দ্বারা সমস্ত শরীর মুছে দিবে। মৃত ব্যক্তির হাত পায়ের নখ কাটা, মাথার চুল কাটা বা আচড়ানো নিষেধ। ব্যবহার্য গহনা বা অন্য কিছু থাকলে খুলে রাখবে। পুরুষের গোসল পুরুষে এবং স্ত্রীলোকের গোসল স্ত্রীলোকে করাবে। স্ত্রীলোকের গোসলের জন্য যদি কোন স্ত্রীলোক পাওয়া না যায় তবে কোন মোহরেম তাকে তায়াম্মুম করাবে। মোহরেম পাওয়া না গেলে অন্য কেউ হাতে কাপড় জড়িয়ে তায়াম্মুম করাবে। স্ত্রী স্বামীকে গোসল করাতে পারে কিন্তু স্বামী স্ত্রীকে স্পর্শ করতে পারবে না। শহীদ ব্যক্তিকে গোসল করাতে ও কাফন দিতে হয় না। কেননা শহীদের রক্ত আল্লাহ তাআ'লার কাছে অত্যন্ত প্রিয়। শহীদ ব্যক্তিকে রক্তমাখা কাপড় দ্বারা জানা্যা দিয়ে দাফন করতে হয়।

কাফন পরানোর নিয়ম

পুরুষের: খাটের উপর প্রথমে লেফাফা, তার ওপর ইজার, তারপর কামিজের নিচের অংশ বিছিয়ে উপরের অংশ (যা বুকের উপরে থাকবে) মাথার দিকে গুটিয়ে রাখবে। তারপর মৃত ব্যক্তিকে শোয়ায়ের কামিজ মাথার ভেতর দিয়ে নিয়ে বুকের ওপর উঠিয়ে বিছিয়ে দিবে। তারপর ইজার প্রথমে বাম দিকের পরে ডান দিকের কাপড় উঠিয়ে জড়িয়ে দিবে। তারপর লেফাফাও অনুরূপভাবে ছড়িয়ে দিবে। স্ত্রীলোকের: খাটের ওপরে প্রথম সিনাবন্ধ তার উপর লেফাফা, তার ওপর ইজার সকলের উপরে কামিজ বিছাবে। যেখানে মাথা থাকবে ঠিক সেই স্থানে ছেরবন্ধ বা ওড়না স্থাপন করবে। প্রথমে কামিজ মাথার উপর দিয়ে নিয়ে সিনার উপর দিয়ে ঢেকে দিবে। তারপর ওড়না বা ছেরবন্ধ দ্বারা মাথার চুল দু'ভাগ করে ছেরবন্ধের দু'পার্শ্বে দুই ভাগ চুল জড়িয়ে বুকের উপরের কামিজের উপর স্থাপন করবে। অতঃপর ইজার ও লেফাফার জড়িয়ে সবশেষে ছিনাবন্ধ প্রথমে বাম দিকের, পরে ডান দিকের কাপড় উঠিয়ে দিবে। কাপড় পরিয়ে মাথার পায়ের দিকে সামান্য মুড়ে দিবে। খুলে যাওয়ার ভয় থাকলে মাথার ও পায়ের দিকে এবং মাঝখানে সুতা দিয়ে বেঁধে দিবে। মৃত ব্যক্তির শরীরে ও কাফনের আতর লাগানো এবং কাফনে কর্পূর ছিটিয়ে দেওয়া মুস্তাহাব।

দাফন করার নিয়ম

জানাযা সম্পর্কে জানানোর পরে এবার আপনাদের দাফন করার নিয়ম সম্পর্কে জানাবো।দাফন করার নিয়ম এর সর্বপ্রথম বিষয়টি হলো জানাযার পরে মৃত ব্যক্তিকে যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি দাফন করা উচিত। তবে এর কোন নির্দিষ্ট সময় সীমা নেই। অপেক্ষা করার কারণে মৃতের শরীরে যেন কোন পরিবর্তন না হয় সে দিক অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। শরীরের পরিবর্তন হওয়ার পূর্বে অবশ্যই দাফন করতে হবে। কবর মৃত ব্যক্তির অর্ধেক বা সিনা বরাবর গভীর হতে হবে। কবরের দৈর্ঘ্য মৃত দেহের লম্বানুপাত হতে হবে। প্রস্থ দৈর্ঘ্যের অর্ধেক হতে হবে। কবর এলাকা ও মাটির তারতম্যের কারণে কিছুটা পার্থক্য হয়ে থাকে। অবশ্য খেয়াল রাখতে হবে যাতে মৃতদের গন্ধ উপরে উঠতে না পারে বা কোন হিংস্র যন্ত্র দেহ উপরে উঠতে না পারে। জানাজার পর মৃতের খাট চারকোনা চারজনের কাঁধে নিয়ে কবরস্থানের দিকে যাওয়ার সময় সকালে কালিমায় শাহাদত পাঠ করবে। মৃতের মাথা সামনের দিকে থাকবে এবং যথাসম্ভব দ্রুতগতিতে হাঁটবে খাট কবরের পশ্চিম পাশে রাখতে। অতঃপর মৃতের আপন দুজন পরহেজগার লোক কবরে নামবে।দাফন করার নিয়ম হলো মৃত ব্যক্তির স্ত্রীলোক হলে খাটের উপর ও কবরে রাখার সময় পর্দার ব্যবস্থা করবে। খাট ও মোহরেম ব্যাক্তি বহন করবে ও দেহ কবরে রাখবে। কিছু কবরে মুখমন্ডল কিবলামুখি করে রাখবে কাপড় মোড়ান বা বাঁধা থাকলে খুলে দিবে। তিন বার এই দুয়া পড়বে: " বিসমিল্লা-হি ওয়া আ'লা-মিল্লাতি রাসূলিল্লা-হ" মুর্দা কবরে রেখে কবরের উপর কাঁচা বাঁশ বা কাঠ বিছয়ে তার উপর চাটাই (কলা পাতা) দিয়ে তার উপর মাটি দিবে। সকলে নিম্নের দুআ' পাঠ করে তিন মুষ্ঠি মাটি দিবে। উচ্চারণ: মিনহা খালাকনা-কুম ওয়া ফী-হা নুঈ'-দুকুম ওয়া মিনহা-নুখরিজুকুম তা-রতান উখরা। অতঃপর ভালো করে মাটি দিয়ে ঢেকে দিবে। কবরের হেফাজতের জন্য উপরে কুড়া ছিটাতে হবে এবং বরই ডাল ব্যবহার করতে পারে। এর পর সকলে দুআ' করে চলে যাবে। জ্ঞাতব্য: পানিতে ডুবে, আগুনে জ্বলে,ঘরের চাপায় পড়ে, কোন হিংস্র জন্তুর কোপে পড়ে, কুমির ধরলে, প্লেগে মরলে, কলেরায় মরলে, জুমুআ'র রাতে বা দিনে, পাঠ্যাবস্থায় ঋতুবতী, নেফাসিনী ও প্রসব সময় ইত্যাদি কারণে মরলে 'শহীদের' দরজা পাবে।আশা করি দাফন করার নিয়ম বুঝেছেন
মন্তব্য, একজন মুসলমানের জন্য আরেকজনের মুসলমানের জানাজায় শরিক হওয়াও অনেক সওয়াবের কাজ। আল্লাহ পাক সকলকে মুসলমানের জানাজায় শরিক হওয়ার মাধ্যমে অশেষ সওয়াবের অধিকারী করুন এবং জানাজা ও দাফনের আগে সঠিকভাবে বিভিন্ন নিয়ম কানুন গুলো পালন করার তৌফিক দান করুন। এবং আল্লাহ পাক যেন আমাদের সকলকে ঈমানের সহিত মৃত্যুবরণ এর নসিব করুন আমিন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url