রোযার মাকরূহ কারণ - যে কারণে রোয়ার কাযা ও কাফফারা উভয়ই আদায় করতে হয়

প্রাপ্তবয়স্ক , সুস্থ , সজ্ঞান সকল মুসলমান নর-নারীর উপর রমজানের এই ৩০ টি রোজা ফরজ। প্রাপ্তবয়স্ক , সুস্থ ,সজ্ঞান হওয়া সত্বেও যদি কেউ রমজানের এই ৩০ টি রোজা পালন না করে তাহলে তাকে গুনাগার হতে হবে এবং যথাযথভাবে রোজা পালনের পূর্বে অবশ্যই রোজা মাকরুহের কারণ এবং যে সকল কারণে রোজার কাজা ও কাফফারা উভয় আদায় করতে হয় সে বিষয়গুলো ভালোভাবে জেনে নিতে হবে আর আজকের এই পোস্টে রোজা সম্পর্কিত এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলোই আপনাদের সামনে তুলে ধরবো।
রোজা মাকরুহের কারণ এবং যে কারণে রোজা কাফফারা ও কাজা উভয় আদায় করতে হয় এই বিষয়গুলো জেনে রাখা খুবই জরুরী, কেননা এগুলো শুধু ফরজ রোজার ক্ষেত্রেই নয় নফল রোজার ক্ষেত্রেও এই একই নিয়মগুলো প্রযোজ্য। তাই চলুন রোজা পালনের পূর্বে সঠিকভাবে রোজার মাখরুহ এর কারণ এবং রোজার কাফফারা আদায় সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

সূচিপত্রঃ রোযার মাকরূহ কারণ - যে কারণে রোয়ার কাযা ও কাফফারা উভয়ই আদায় করতে হয়

রোযার মাকরূহ কারণ

১. কোন জিনিসের স্বাদ গ্রহণ করলে। ২. গীবত করিলে। ৩. কিছু চর্বণ করিলে ৪. রোযা রেখেছি বলে একবারে নীরব থাকলে। ৫. বিনা প্রয়োজনে কুলকুচি করিলে। ৬. বিনা প্রয়োজনে নাকে পানি দিলে। ৭. হামেশা গালাগালি করলে। ৮. টূথপেস্ট বা পাউডার দ্বারা দাঁত মাজিলে। ৯. পানিতে নামিয়া বায়ূ ছাড়িলে। ১০. ইচ্ছা করে বলি করলি। ১১. মিথ্যা শপথ করিলে। ১২. শাহাওয়াতে আলিঙ্গন করিলে। ১৩. ভিজা কাপড় শরীরে জড়াইয়া রাখিলে। (হেদায়া)

রোযা মাকরুহ না হওয়ার কারণ

ভুলে কিছু খাইয়া ফেললে। 
শরীরে তেল লাগালে। 
ধুলাবালি গলায় প্রবেশ করলে। 
স্বপ্নদোষ হলে। 
সুগন্ধি লাগালে।

যেসব কারনে রোজা কাযা আদায় করতে হয়

 ১. বলপূর্বক, কেহ কিছু খাইয়ে দিলে। ২. অসাবধানতাবশত যেমন, অজু করার সময় কণ্ঠনালি দিয়ে পানি প্রবেশ করলে। ৩. যে কোন দ্বার দিয়ে পিচকারি করলে। ৪. নাসিকা দ্বারা পানি মস্তকে টেনে নিলে। ৫. কর্ণে তৈল প্রবেশ করলে। ৬.পেটের কিংবা মস্তকের জখমে ওষুধে লাগালে যদি উহা ভেতরে প্রবেশ করে। ৭. মুখভর্তি বমি করলে। ৮. সূর্যান্ত গিয়েছে অনুমানের বেলা থাকিতে ইফতার করিলে। ৯. নিদ্রিতাবস্থায় অবস্থায় হলকুমে কিছু প্রবেশ করিলে। ১০. যৌন মিলন ঘটিলে। ১১. সম্পূর্ণ রোজ রমজানে একটি রোজারও নিয়ত না করলে। ১২. রাত আছে অনুমান করে সোবেহ সাদেকের পর সেহরি খেয়ে নিলে। ১৩. ভুলে পানাহার করে রোজা ভঙ্গ হয়েছে, এ ধারণা করে ইফতার করিয়া ফেললে।

যে কারণে রোয়ার কাযা ও কাফফারা উভয়ই আদায় হয়

ইচ্ছা করে যৌনাচার করলে বা করালে। ইচ্ছাকৃত পানাহার করলে। ঔষধ সেবন করলে। সিঙ্গা লাগিয়ে রোযা নষ্ট হয়েছে নষ্ট হয়েছে ধারণা করে পানাহার করলে। এইসব কারণে রোযার কাযা ও কাফফারা উভয়ই আদায় করতে হয়।

কাযা রোযা সম্পর্কিত মাসাআলা

মাসাআলাঃ যদি কোন কারনবশত রমজানের রোজা ছুটে যায় তাহলে রমজান মাসের পর যথা সম্ভব তাড়াতাড়ি কাছে আদায় করে নিবে দেরি করবে না। কাযা আদায় করার মধ্যে দেরি করা গুনাহ। মাসাআলাঃ কাযা রোজার নিয়ত রাতে করতে হবে। যদি সকালে নিয়ত করা হয় তাহলে কাযা আদায় হবে না বরং নফল রোজা হয়ে যাবে। কাযা রোজা পুনরায় রাখতে হবে। 
মাসাআলাঃ কাফফারার রোজা রাত থেকেই নিয়ত করতে হবে। যদি সকালে নিয়ত করা হয় তাহলে কাফফারার রোজা আদায় হবে না রোজাতেই হবে না। 
মাসাআলাঃ যে কটি রোজা কাযা হয়েছে সেগুলো একসাথে রাখতে পারে, আবার বিভিন্ন সময়ও রাখতে পারে। 
মাসাআলাঃ রমজানের কাযা এখনো আদায় হয়নি এই অবস্থায় দ্বিতীয় রমজানে এসে গেছে, তাহলে এ অবস্থা দ্বিতীয় রমজানের রোজা আদায় করবে এবং ঈদের পূর্বে রমজানের কাযা রোজা রাখবে। [কিন্তু এত দেরি করা খারাপ কাজ] 
মাসাআলাঃ যদি কেউ রাতে বেহুশ হয় তাহলে যে রাতে বেহুশ হয়েছে সেদিন রোজা কাযা ওয়াজিব হবে না। বাকি যত দিন বেহুশ হয়েছে সবগুলো কাযা ওয়াজিব হবে। তবে যদি এমন হয় যে, সে রাতে পরের দিন রোজা রাখার নিয়ত ছিল না অথবা সকালের গলার মধ্যে কোন ওষুধ দেওয়া হয়েছে তাহলে সে রোজা কাযা রাখবে।
মাসাআলাঃ কেউ যদি সমস্ত রমজান মাস বেহুশ থাকে তাহলেও কাযা রোজা রাখতে হবে। মনে করা যাবে না যে, সমস্ত রোজা মাফ হয়ে গেছে। আর যদি কেউ পাগল হয়ে যায় এবং সমস্ত রমজান মাস পাগল থাকে তাহলে সেই রমজানের কোন রোজায় তারপর কাযা ওয়াজিব হবে না। আর যদি রমজান মাসেই ভালো হয়ে যায় এবং মাথা ঠিক হয়ে যায় তাহলে সেই দিন ভালো হবে সেদিন রোজা রাখবে এবং যে কয়টি পাগল ছিল সেই কটি দিনের রোজা আদায় করতে হবে।
মন্তব্য, রমজান মাসে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভের জন্য বেশি বেশি ইবাদত বন্দেগি করুন, জিকির- আজগার তাসবিহ-তাহলিল বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত বেশি বেশি দোয়া ইস্তেগফার ও আল্লাহর কাছে সবসময় জান্নাত চেয়ে নিন। জাহান্নামের ভয়াবহ আগুন থেকে মাশাল্লাহ তায়ালার কাছে মুক্তি চেয়ে নিতে হবে এবং সব সময় রোজা মাখরুল ও কাজা হওয়ার কারণগুলো মেনে চলতে হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url