কাজা নামাজের নিয়ত - ওমরি কাযা নামাজ পড়ার নিয়ম

নামাজ হল ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে দ্বিতীয় এবং নামাজ হলো সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। আর প্রত্যেক নর-নারীর জন্য প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ।কেয়ামতের দিন নামাজের হিসাব দেওয়া ছাড়া এক পা এগুলো সম্ভব হবে না এবং আল্লাহ পাক সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব নেবেন বলে হাদিস থেকে জানতে পারা যায়।
প্রত্যেক নর নারীর জন্য দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যেহেতু ফরজ , এ কারণে বিনা ওজরে এই নামাজ পরিত্যাগ করলে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। আর কোন কারণবশত যদি সময়ের নামাজ সময় পড়তে পারেনা যায় তাহলে চেষ্টা করতে হবে এই নামাজগুলো কাজা তুলে নেয়া। এছাড়াও পারোতো পক্ষে চেষ্টা করা উচিত জীবনে যতগুলো নামাজ কাজা হয়েছে সেই নামাজগুলোর ওমরি কাজা পড়ে নেয়া।আজকের এই পোস্টে আমরা জানবো করব কাজা নামাজ পড়ার নিয়ত এবং ওমরি কাজা নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে।

সূচিপত্রঃ কাজা নামাজের নিয়ত - ওমরি কাযা নামাজ পড়ার নিয়ম

কাযা নামাজ পড়ার নিয়ম

কেউ যদি ইচ্ছা করে বা অনিচ্ছায় কিংবা ভুলে ফরয ও ওয়াজিব নামাজ নির্দ্ধারিত সময়ে আদায় না করতে পারে আ হলে তার ঐ নামাজ অন্য সময় পড়তে হবে, একেই কাযা নামাজ বলে। কোন ওয়াক্তের নামাজ কাযা তার পরিবর্তে ওয়াক্তের পূর্বে আদায় আদায় হবে। যেমন- ফজর কাযা হলে জোহরের পূর্বে, জোহর কাযা হলে আসরের পূর্বে। যদি কারো ৩/৪/৫ ওয়াক্ত পর্যন্ত কাযা হয়, তা হলে তা তারতীব অনুয়ায়ী কাযা পড়ে ওয়াক্তিয়া নামাজ পড়তে হয়। কাযা না পড়ে ওয়াক্তিয়া নামাজ পড়া দুরস্ত হবে না। যদি ছয় বা তার বেশি ওয়াক্ত কাযা হয়, তা হলে তার তারতীব ঠিক রাখার প্রয়োজন নেই। ইচ্ছামত যে কোন সময় পড়লে হবে। তিন কারণে ওয়াক্তিয়া নামাজ পড়ে কাযা নামাজ পড়তে পারবে। (১) কাযা নামাজের কথা স্মরণ নাম থাকলে। (২) কাযা নামাজ পড়ার পর যদি ওয়াক্তিয়া নামাজের সময় না থাকে। (৩) ছয় বা তার বেশী ওয়াক্ত নামাজ কাযা হলে। জুমুআ'র নামাজ শুরু করার পর‍ কারও মনে যে, তার জিম্মায় ফজরের কাযা নামাজ রয়েছে, এমতাবস্থায় কাযা পড়ে জুমুআ' পাওয়ার সম্ভবনা থাকলে জুমুআ' ছেড়ে কাযা নিবে। অন্যথায় জুমুআ' ছাড়বে না। যদি জামাআ'তে নামাজ শুরু করার পর মনে পড়ে যে, তার জিম্মায় কাযা আছে তাহলে জামাআ'ত ছেড়ে কাযা পড়বে। অতঃপর ওয়াক্তের নামাজ পড়বে ; যদিও জামাআ'ত ফওত হয়ে যায়। ছয় ওয়াক্তের অধিক কাযা হলে জামাআ'ত ছাড়বে না। কাযা নামাজের কোন ওয়াক্ত নির্দিষ্ট নাই। নিষিদ্ধ সময় ছাড়া সব সময় পড়া যাবে। শুধু ফরজ ও ওয়াজিবের কাযা পড়তে হয়। তবে যদি কারো ফজরের নামাজ কাযা হয় এবং দ্বিপ্রহরের পূর্বে তা পড়ে তবে ফজরের সুন্নাত নামাজের কাযা পড়তে হবে ।

কাযা নামজের নিয়ত

  • ফজরের কাজা নামাজের নিয়তঃ নাওয়াইতুয়ান আকদিয়া লিল্লাহি ত’আলা রাকাআতি ছালাতিল ফাজরি ফায়েতাতি ফারযুল্লাহি তা’আলা মোতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার। অর্থঃ আমি কিবলামুখী হয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে ফজরের ফরজ দুই রাকাত কাযা নামাজ আদায় করছি। আল্লাহু আকবার।
  • জোহরের কাজা নামাজের নিয়তঃ নাওয়াইতু আন উক্বযিয়া লিল্লা-হি তাআ'লা আরবায়া রাকায়া'তি ছলাতিজ জুহরিল ফায়তাতি ফারদিল্লা-হি তাআ'লা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা-জিহতিল কা'বাতিশ শারীফাতি আল্লা-হু আকবার। অর্থঃ আমি কিবলামুখী হয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে জোহরের চার রাকা'আত ফরজের কাযা আদায় করার জন্য নিয়ত করছি ; আল্লা-হু আকবার
  • আসরের কাজা নামাজের নিয়তঃ নাওয়াইতুয়ান আকদিয়া লিল্লাহি ত’আলা আরবায়া রাকাআতি ছালাতিল আছরিল ফায়েতাতি ফারযুল্লাহি তা’আলা মোতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।অর্থঃআমি কিবলামুখী হয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে আছরের ফরজ চার রাকাত কাযা নামাজ আদায় করছি। আল্লাহু আকবার।
  • মাগরিবের কাজা নামাজের নিয়তঃ নাওয়াইতুয়ান আকদিয়া লিল্লাহি ত’আলা ছালাছা রাকাআতি ছালাতিল মাগরিব ফায়েতাতি ফারযুল্লাহি তা’আলা মোতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।অর্থঃ আমি কিবলামুখী হয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে মাগরিবের ফরজ তিন রাকাত কাযা নামাজ আদায় করছি। আল্লাহু আকবার।
  • এশার কাজা নামাজের নিয়তঃ নাওয়াইতুয়ান আকদিয়া লিল্লাহি ত’আলা আরবায়া রাকাআতি ছালাতিল এশাই ফায়েতাতি ফারযুল্লাহি তা’আলা মোতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।অর্থঃ আমি কিবলামুখী হয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে এশা ফরজ চার রাকাত কাযা নামাজ আদায় করছি। আল্লাহু আকবার।

ওমরি কাযা নামাজ পড়ার নিয়ম

সাবালক হওয়ার পরে নামাজ কাযা বা ফাসেদ হয়েছে কি না এই সন্দেহ দূর করারা জন্য যে নামাজ পুণঃ পড়া হয় তাকে ওমরী কাযা নামাজ বলে। আলমগীরী কিতাবের মর্মে জানা যায় যে, হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, এশরাক, চাশত, আওয়াবীন ও তাহাজ্জুদ ইত্যাদি নফল নামাজ ছাড়া অন্যান্য নফল নামাজের চাইতে ওমরী কাযার নিয়ত করে পিছনের ফরজ ও ওয়াজিব নামাজ আদায় করা উত্তম। সুন্নাতের ওমরী কাযা নাই। মাগরীব ও বিতরের ওমরী কাযা পড়তে হলে যাথারীতি তিন আক'আত শেষ করে সালাম না ফিরিয়ে দাঁড়ীয়ে সূরা ফাতিহা ও অন্য সূরা মিলিয়ে চতুর্থ রাক'আত শেষ করে তাশাহহুদ, দরুদ, দোয়া মাসুরা, পড়ে নামাজ শেষ করবে। আর যারা সাবালেক হওয়ার পর মোটেই নামাজ পড়েনি তারা ওয়াক্তের রাকা'আত হিসাবে নামাজ পড়বে।

ওমরি কাযা নামাজের নিয়ত

উচ্চারণঃ নাওয়াইতুয়ান আন উছ্বল্লিয়া লিল্লা-হি তাআ'লা আরবাআ রাকআ-তি তাকফী-রাল লিলক্বাদ্ব-ই ফা-তাত মিননী আ'লা-ওমরী-ছ্বলা-তি নাফলী মুতাওয়াজ্জিহান ইলা-জিহাতিল কা'বাতিশ শারী-ফাতী; আল্লা-হি আকবার বাংলা অর্থঃ আমি কিবলামুখি হয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে চার আকা'আত অতিরিক্ত নামাজ ক্ষতিপূরন স্বরূপ আদায় করার নিয়ত করছি যা ইতিপূর্বে আমার জীবনে খোয়া গেছে; আল্লাহু আকবর।
মন্তব্য , আপনারা নিশ্চয়ই পোস্টটি পড়ে কাজা নামাজ এবং ওমরি কাজা নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে ভালোভাবে জেনেছেন। নামাজ যেহেতু আমাদের উপরে ফরজ এবং আল্লাহ পাকের অত্যন্ত পছন্দের ইবাদত তাই সকলেরই উচিত যথাযথভাবে নামাজ আদায় চেষ্টা করা এবং কোন কারণবশত এই নামাজ কাজা হয়ে গেলে পরবর্তী সময়ে কাজা তুলে নেওয়া। আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে সময় মতন যথার্থভাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় তাওফিক দান করুন (আমিন)

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url