চাশতের নামাজের নিয়ত - ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ত

গুরুত্বপূর্ণ নফল নামাজ গুলোর মধ্যে অন্যতম নামাজের তালিকায় রয়েছে চাশতের নামাজ ও ইসরাকের নামাজ। এই নামাজ গুলোর ফজিলত অনেক বেশি। আর এই নামাজগুলোর মাধ্যমে যেহেতু অশেষ সওয়াব লাভ করা যায় তাই আমাদের সকলেরই উচিত নিয়মিতভাবে এই নামাজগুলো আদায় করা।
আজকে আপনাদেরকে জানাবো নামাজ এবং ইসরাকের নামাজ সম্পর্কে। কেয়ামতের দিন ফরজ নামাজের ভুল ত্রুটি গুলো আল্লাহপাক নফল নামাজের দ্বারা পূরণ করবেন আর এই নফল নামাজগুলো আদায় করলে অনেক সওয়াব পাওয়া যায় সুতরাং ফজিলত পূর্ণ নফল নামাজগুলো কখনোই ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়। আর এই গুরুত্বপূর্ণ নফল নামাজগুলো আদায়ের পূর্বে অবশ্যই জানতে হবে , এই নামাজ গুলোর নিয়ত এবং নিয়ম সম্পর্কে।

সূচিপত্রঃচাশতের নামাজের নিয়ত - ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ত

চাশতের নামায

চাশত আরবি শব্দ। আরবীতে একে সালাতুদ্দোহা বলে। বেলা এক প্রহরের পর অর্থাৎ ইশরাকের নামাজের ওয়াক্ত শেষ হওয়ার পর চাশতের নামাজের ওয়াক্ত শুরু হয়ে দ্বিপ্রহরের পর চাশতের নামাজের ওয়াক্ত থাকে। দু' দু' রাকাআ'ত করে ৪ হতে ১২ রাকাআ'ত পর্যন্ত নামাজ পড়া যায়। চাচ্ছেন নামাজ সর্বনিম্ন দুই রাকাত থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১২ রাকাত পর্যন্ত পড়া যায়।  

চাশতের নামাজের ফজিলত

আমাদের শরীরে ২০৬ জোড়া হাড় ও প্রায় চার হাজারের বেশি জোড়া রয়েছে রয়েছে এবং প্রতিদিন সকাল হওয়ার সাথে সাথে এই সকল জোড়া হাড়ের জন্য সাদকা করা উত্তম , আর চাচ্ছেন নামাজ আদায় করলে আমাদের শরীরে প্রত্যেক জোড়া হাড়ের জন্য সাদকা আদায় করা হয়ে যায়। হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে যে, নিয়মিত যারা সালাতুদ্দোহা (চাশতের নামাজ) পড়ে তাদের সংসারে অভাব অনটন থাকবে না। বেহেশতের সোনার মহল তৈয়ার করা হবে এবং সমুদ্রের ফেনা সমতুল্য গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর একটি বর্ণনায় জানতে পারা যায় যে তিনি বলেন -নবীজি আমাকে তিনটি বিষয়ে আমল করার উপদেশ দিয়ে গেছেন আর এই তিনটি বিষয় হলো প্রতিমাসে তিনটি রোজা করা , নিয়মিত চাশতের নামাজ আদায় করা ও বিতরের নামাজ পড়া(বুখারী শরীফ ২৭৪ , মুসলিম ১৫৬০)

চাশতের নামাজের নিয়ম ও সময়

সময়ঃ চাশতের নামাজ পড়ার উত্তম সময় হলো সূর্যের তাপ যখন বেশি হতে শুরু করে তখন থেকে যোহরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত। কারো কারো মতে চাশতের নামাজের ওয়াক্ত শুরু হয় সূর্য এক চতুর্থাংশ উঠলে তারপরে , আর এই নিয়ম অনুযায়ী গরমের দিনে সকাল ৯ টার পর থেকে এবং শীতকালে দশটার পর থেকে চাচ্ছেন নামাজ আদায় করার উত্তম সময়।
নিয়মঃ চাশতের নামাজ পড়ার নিয়ম হলো দুই রাকাত অথবা চার রাকাত করে পড়া। অর্থাৎচাশতের নামাজ দুই রাকাতের নিয়তে পড়া যায় আবার চার রাকাতের নিয়তেও করা যায়। যে কোন সূরা দিয়ে চাশতের নামাজ আদায় করা যায় , তবে কিছু কিছু বুজুর্গানদের মতে এ নামাজের প্রত্যেক রাকাআ'ত সূরা ফাতিহার পরে আয়াতুল কুরসী ও তিনবার সূরা ইখলাস পাঠ উত্তম। অন্যান্য সুন্নত বা নফল নামাজ যেমন ভাবে পড়তে হয় ঠিক তেমনভাবেই চাশতের নামাজ আদায় করতে হয় - যথা নিয়মে নিয়ত করে তাকবীরে তাহরীমা বাধার পর সানা , আউযুবিল্লাহ - বিসমিল্লাহ সহ সূরা ফাতিহার সাথে অন্য কোন সূরা মিলিয়ে পড়ার পরে রুকু , সিজদার মাধ্যমে প্রথম রাকাত শেষ করে কি নিয়মে দ্বিতীয় রাকাত পড়তে হবে।
যদি চাশতের নামাজের জন্য দুই রাকাতের নিয়ত করা হয় তাহলে দুই রাকাত নামাজ শেষে শেষ বৈঠক করে আত্তাহিয়াতু , দরুদ , দোয়া মাসুরা পড়ার পর ডানে বামে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করতে হবে ।আর যদি চার রাকাতের নিয়ত করা হয় তাহলে শুধু আত্তাহিয়াতু পাঠ করে উঠে দাঁড়িয়ে আবার একই নিয়মে সূরা ফাতিহা এবং সাথে অন্য একটি সূরা মিলিয়ে পড়ে , রুকু সেজদা করে শেষ বৈঠকে আত্তাহিয়াতু , দরুদ শরীফ , দোয়া মাসুরা পড়ার মাধ্যমে ডানে বামে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করতে হবে এবং এভাবে সর্বোচ্চ রাকাত নামাজ আদায় করা যাবে।

চাশতের নামাজের নিয়ত

نَوَيْتُ اَنْ اُصَلِّىَ لِلّٰهِ تَعَالٰى رَكْعَتَىْ صَلٰوةِ الْضُحَى سُنَّةُ رَسُوْلِ اللّٰهِ تَعَالٰى مُتَوَ جِّهًا اِلٰى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِ يْفَةِ : اَللّٰهُ اَكْبَرُ

উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন উছ্বল্লিয়া লিল্লা-হি তাআ'লা রাকআ'তাই ছ্বলা-তিদদুহা সুন্নাতু রাসূলিল্লা-হি তাআ'লা- মুতাওয়াজ্জিহান ইলা-জিহাতিল কা'বাতিশ শারী-ফাতি আল্লা-হু-আকবর।

ইশরাকের নামাজ

সূর্য পূর্ণভাবে উদয় হলে ইশরাকের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং এক প্রহর বেলা পর্যন্ত ওয়াক্ত থাকে। ফজরের নামাজের পর জায়নামাজে থেকে দোয়া দরুদ, যিকির ইত্যাদিতে লিপ্ত থেকে সূর্যোদয়ের পর দু'রাকাত নামাজ পড়লে তা আমলনামায় এক হজ ও ওমরার পূর্ণ সওয়াব লেখা হয়। হাদিস কুদসিতে বর্ণিত আছে, চার রাকাত নামাজ পড়লে আল্লাহ তাআ'লা সমস্ত দ্বীন মুসল্লির সাহায্যকারী হবেন। 
হাদিসের বর্ণনা থেকে জানতে পারা যায় যে - আল্লাহপাক বলেছেন যে ব্যক্তি সকালে চার রাকাত ইশরাকের নামাজ আদায় করবে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমি আল্লাহ তার সকল কাজের জিম্মাদার হয়ে যাব ( তিরমিজি)। রাসুলুল্লাহ (সা) আরো বলেছেন - যে ব্যাক্তি ফজরের নামাজ জামাতের সাথে আদায় করার পরে , সেই স্থানে বসে থেকে আল্লাহ পাকের জিকির করে এবং অতঃপর ইশরাকের সময় হলে দুই/চার রাকাত ইশরাকের নামাজ পড়ে তার জন্য একটি হজ ও একটি ওমরাহের সওয়াব লেখা হয়।

ইশরাকের নামাজ কয় রাকায়াত

ইসরাকের নামাজের সুনিদৃষ্ট কোন সংখ্যা উল্লেখ পাওয়া যায়না , তবে ইশরাকের নামাজ চার রাকাত পড়া হয় কিন্তু কোন কোন আলেম উলামাদের মতে সর্বনিম্ন দুই রাকাত থেকে শুরু করে আট রাকাত ও ১২ রাকাত পর্যন্ত এই নামাজ পড়া যাই বলে উল্লেখ করা রয়েছে। তবে বেশিরভাগ হাদিসের বইগুলো থেকে জানতে পারা যায় যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই রাকাত করে মোট চার রাকাত ইশরাকের নামাজ আদায় করতেন।

ইশরাকের নামাজের সময়

আকাশে সূর্য যখন পরিপূর্ণরূপে উদিত হয় ঠিক তারপর থেকে সূর্যের তাপ প্রখর হওয়া শুরু করার আগ পর্যন্ত ইসরাকের নামাজের ওয়াক্ত। ইশরাক শব্দের অর্থ হলো আলোকিত হাওয়া। বিভিন্ন হাদিসের বর্ণনা থেকে জানতে পারা যায় যে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম সূর্য উঠার সাথে সাথেই ইসরাকের নামাজ আদায় করতেন না , সূর্য ভালোভাবে উদিত হওয়ার পরে এই নামাজ আদায় করতেন। কারো কারো মতে সূর্য ওঠার ১৫-২০ মিনিট পর ইশরাকের নামাজ পড়ার উত্তম সময় । নামাজ পড়ার সময় থাকে মোটামুটি এক থেকে দেড় ঘন্টা মতন।

ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ত

উচ্চারণঃ নাওয়াইতুয়ান আন উছ্বল্লিয়া লিল্লা-হি তাআ'লা রাকআ'তাই ছ্বলা-তিল ইশরাক্বি সুন্নাতু রাসূলিল্লা-হি তাআ'লা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা-জিহাতিল কা'বাতিশ শারী-ফাতি আল্লা-হু আকবার। বাংলা নিয়তঃ আমি কেবলা মুখী হয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে ইশরাকের দু'রাকাআ'ত সুন্নাত নামাজ আদায় করার জন্য নিয়ত করছি; আল্লাহু আকবার
মন্তব্য , ইসরাকের নামাজ এবং চাশতের নামাজ দুটোই ফজিলত পূর্ণ এবং গুরুত্বপূর্ণ নামাজ এই নামাজগুলো নফল হলেও এগুলো আদায় করার মাধ্যমে অনেক সওয়াবের অধিকারী হওয়া চাই তাই সকল মুসলমানেরই উচিত কর্মব্যস্ত দিনের মাঝেও একটু সময় করে এই নফল নামাজগুলো আদায় করা।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url