গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কত দিন পর বোঝা যায়

গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণগুলো মোটামুটিভাবে সব মেয়েদেরই জানা থাকলেও অনেকেই হয়তো জানে না গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কতদিন পরে বোঝা যায়। অনেকের এ বিষয়ে সাধারণ কিছু কেন থাকলেও বিস্তারিতভাবে এবং সঠিকভাবে প্রেগনেন্সি নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর গুলো জানতে চেয়ে থাকেন , আর প্রেগনেন্সির ব্যাপারে সমস্ত তথ্যগুলো সঠিকভাবে জেনে রাখা নিরাপদ প্রসবের জন্য অবশ্যই দরকার।

যাদের গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে অথবা যারা অনিরাপদ সহবাসের কারণে বাচ্চা কনসিভ নিয়ে উদ্বিগ্ন রয়েছেন তারা অবশ্যই এই বিষয়গুলো জেনে রাখতে পারেন।প্রেগনেন্সি সম্পর্কিত বিষয়গুলো সঠিক ভাবে জানা থাকলে , সময়মতো উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে অবশ্যই আপনাদের উপকার হবে।

সূচিপত্রঃ গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কত দিন পর বোঝা যায়

কনসিভ করলে কি পেটে ব্যথা হয়

কনসিভ করলে পেট ব্যথা হয় কিনা তা অনেকেই জানেন না , আর এই কারণেই প্রেগনেন্সির প্রথম দিকে পেট ব্যথা হলে অনেক মহিলায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। আসলে এতে উদ্বিগ্ন হওয়ার প্রয়োজন নেই কারণ কনসিভ করলে পেট ব্যথার সমস্যা হয়ে থাকে। কনসিভ করার পরে পেটে একটু একটু ব্যথা হওয়ার কারণ হলো , এই সময় শরীরের অভ্যন্তরে হরমনসহ নানান ধরনের পরিবর্তন হয়ে থাকে যার উল্লেখযোগ্য কারণগুলো হল

  • শরীরে প্রোজেস্টেরন হরমোন নিঃসরণ বেড়ে যাওয়া
  • জরায়ু সম্প্রসারণ এর ফলে লিভমেন্টের কাছে চলে আসে
  • এসিডিটির সমস্যা বেড়ে যায়
  • কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে পেটে ব্যথা করা
  • ইউরিনারি ট্রাক্ট ইনফেকশন হওয়া
  • ক্রমাগত জরায়ুর প্রসারণ এবং জরায়ু ওজন বৃদ্ধি পাওয়া

ইত্যাদি কারণগুলোর জন্য কনসিভ করলে অর্থাৎ প্রেগন্যান্ট হলে পেটে ব্যথা কোনো অস্বাভাবিক কারণ নয়। তবে এই অবস্থায় যদি পেটে অতিরিক্ত বা অসহ্য ব্যথা অনুভব হয় তাহলে অবশ্যই কোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

বাচ্চা পেটে আসলে কি কি সমস্যা হয়

পেটে বাচ্চা আসলে বিশেষ কিছু উপসর্গের মাধ্যমে প্রাথমিক ভাবে বোঝা যায় কনসিভ করেছে কিনা। আর কনসিভ করার পরে বাপ পেটে বাচ্চা আসার পরে এই উপসর্গগুলোকে সমস্যা বলতে পারেন বা বলতে পারেন প্রেগনেন্সির লক্ষণ। পেটে বাচ্চা আসার পরে সমস্যা বা লক্ষণ যাই বলেন না কেন এগুলো শরীরের বৈশিষ্ট্য ভেদে কারো কারো একটু বেশি এবং কারো একটু কম হতে পারে আর এই সমস্যাগুলো হল,

  • মাথা ঘোরা
  • বমি বমি ভাব লাগা অথবা বমি হওয়া
  • মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া
  • দুর্বলতা এবং ক্লান্তি অনুভব করা
  • সাদা স্রাব স্বাভাবিকের তুলনায় একটু বেশি হওয়া
  • তলপেটে ব্যথা
  • খাবারের অরুচি হওয়া
  • বিশেষ খাবারের উপরে টান হওয়া । কারো কারো ক্ষেত্রে টক খাওয়ার , ঝাল , মিষ্টি খাওয়া ইত্যাদির প্রবণতা বেড়ে যাওয়া
  • লালা নিঃসরণ এর মাত্রা বেড়ে যাওয়া
  • খাবার বা তরকারির গন্ধ সহ্য না হওয়া , খাবারের ঘ্রাণ গুলোকে অসহ্য মনে হওয়া
  • ঘ্রাণ শক্তি বেড়ে যাওয়া
  • ঘন ঘন এবং প্রস্রাবের চাপ হওয়া
  • পেটের ভেতরে অস্বস্তি অনুভব হওয়া
  • পেট ফাঁপা এবং এর সাথে পেটে এসিডিটির মাত্রা বেড়ে যাওয়া , যার ফলে অধিকাংশ সময়ে পেট ভারী হয়ে থাকা ও পেটে গ্যাস হওয়া.
  • পেটে এসিডিটি কারণে বুক জ্বালাপোড়া করা
  • কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেওয়া
  • স্তন ব্যথা
  • স্তন এবং কোমরের সাইজ বেড়ে যাওয়া
  • রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া
  • হার্টবিট বেড়ে যাওয়া
  • মুড সুইং হওয়া
  • কারো কারো ক্ষেত্রে যোনিপথ বা জরায়ু থেকে সামান্য রক্ত ক্ষরণ হতে পারে
  • রক্তশূন্যতাসহ শরীরে পুষ্টি ঘাটতি দেখা দেওয়া
পেটে বাচ্চা আসলে উপরোক্ত এই সমস্যা গুলো প্রত্যেকটা মেয়ে ফেস করে তবে শারীরিক বৈশিষ্ট্য ভেদে এসব সমস্যার মাত্রা কারো কম এবং কারো একটু বেশি হয়ে থাকে। প্রেগনেন্সির কারণে হওয়া এসব সমস্যার বেশির ভাগই প্রথম তিন মাসের তীব্রভাবে প্রকাশ পায় এবং প্রথম ট্রাইমিস্টার শেষ হলে এসব সমস্যার তীব্রতা ধীরে ধীরে কমে আসে , তবে অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় প্রেগনেন্সির সমস্যা প্রসবের আগ পর্যন্ত তীব্রভাবে ফেস করতে অর্থাৎ প্রেগন্যান্সির কারণে হওয়া বমি সহ বিভিন্ন সমস্যাগুলো বেশিরভাগ মহিলাদের ক্ষেত্রে তিন মাসের পরে তীব্রভাবে দেখা যায় না, এসব সমস্যাগুলো তৃতীয় মাস থেকে কমে আসে।
কিন্তু , দুই একজনের ক্ষেত্রে একেবারে প্রেগনেন্সির শেষ অবস্থা পর্যন্ত বমি সহ প্রত্যেকটি সমস্যাগুলোই কঠিন ভাবে পোহাতে হয়।যদিও প্রেগনেন্সির কারণে হওয়া সমস্যাগুলো সময়ের সাথে সাথে অনেক কমে আসে তবে কিছু কিছু সমস্যা যেমন পেট ভারী ও বড় হওয়া , পেটে ব্যথা , কোমরে ব্যথা , কোমরের সাইজ পরিবর্তন হওয়া ,ঘন ঘন প্রস্রাবের চাপ আশা স্তন স্ফীত হওয়া ইত্যাদি প্রবলেমগুলো প্রেগনেন্সির টাইম এর সাথে সাথে বাড়তে থাকে এবং ৮ এবং ৯ মাসের দিকে এসে এসব সমস্যাগুলো চরম আকার ধারণ করে , যখন নাকি শ্বাস-প্রশ্বাস , হাঁটাচলা , ওঠাবসা সবকিছুতেই সমস্যা মনে হয় এবং অস্বস্তি বোধ হয়।

গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কত দিন পর বোঝা যায়

সাধারণত যখন মাসিক মিস হয় ঠিক সেই সময় থেকে অর্থাৎ মাসিকের নির্ধারিত তারিখে মাসিক না হওয়ার পরে আমরা প্রেগনেন্সির বিভিন্ন লক্ষণ গুলোর নোটিশ করতে থাকে , আর এ কারণে অনেকের মনে হতে পারে যে মাসিক মিস হওয়ার পরেই হয়তো গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে থাকে একচুয়ালি বিষয়টি এরকম। মাসিক মিস হওয়ার কিছুদিন আগে থেকেই শরীরে গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণগুলো মৃদুভাবে প্রকাশ পেতে থাকে।

আপনি যদি গর্ভধারণ করতে চান অথবা আপনার যদি কনসেপ্ট করার চান্স থাকে তাহলে , সেক্স বা সহবাসের মোটামুটি 21 দিন পর থেকেই গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পেতে থাকবে ,যদি আপনি কনসিভ করেন তাহলে। তবে প্রেগনেন্সি ব্যাপারে পুরোপুরি ভাবে নিশ্চিত হওয়ার জন্য অবশ্যই এর উপযুক্ত টেস্ট করাতে হবে। গর্ভবতী হওয়ার কিছু লক্ষণ যেমন-বমি বমি ভাব লাগা , শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া , স্তন ব্যথা , ক্লান্তি ও দুর্বলতা , পেটে অস্বস্তি বোধ হওয়া , কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি সমস্যা গুলো প্রেগনেন্সি মিস হওয়ার আগে থেকেই হালকাভাবে বোঝা যায়। 

আর গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণগুলো তীব্রভাবে প্রকাশ পেতে থাকে কনসিভ করার প্রায় ৭-১৪ সপ্তাহের মধ্যে। এগুলো সবই হলো গর্ববতীর অভ্যন্তরীণ লক্ষণ , আর একজন গর্ভবতী মহিলার বাহ্যিকভাবে শারীরিক গঠনের পরিবর্তন হওয়া শুরু হয় ২-৩ মাসের পর থেকে , আর এই সময় গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণগুলো বাহ্যিকভাবে প্রকাশ পেতে থাকে যেমন ওজন বৃদ্ধি , স্তন ও কোমরেরে সাইজ বেড়ে যাওয়া , পেট বড় হতে থাকা ইত্যাদি।

কতদিন পর প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে হয়

আপনাদের মধ্যে যাদের গর্ভবতী বা কনসিভ করার সম্ভাবনা রয়েছে , তাদের জেনে রাখা উচিত মিলনের ঠিক কতদিন পরে প্রেগনেন্সি টেস্ট করাতে হবে এবং ঠিক কতদিন পরে টেস্ট করলে সঠিক রেজাল্ট পাওয়া যাবে। প্রেগনেন্সি টেস্টের পদ্ধতি গুলোর মধ্যে খুব সহজ একটি পদ্ধতি হলো , আশেপাশে থাকা ফার্মেসি থেকে প্রেগনেন্সি টেস্টর নিয়ে এসে প্রস্রাবের মাধ্যমে পরীক্ষা করা। কারণ কনসিভ করলে এক ধরনের হরমোনের নিঃসরণ মাত্রা বেড়ে যায় । এই হরমোনটির নাম হল - বেটা হিউম্যান কোরিওনিক গোনাডোট্রপিন এবং ইউরিন টেস্টের মাধ্যমে খুব সহজেই এই হরমোনের উপস্থিতি শনাক্ত করা যায়।

আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় পেট ব্যথা কেন হয়

গর্ভধারণের মোটামুটি ৬-৭ দিন পর থেকেই এই হরমোন শরীরে তৈরি হতে থাকে কিন্তু প্রেগনেন্সির শুরুর দিকে শরীরে এই হরমোন খুবই কম মাত্রায় নির্গত হতে থাকে , তাই একেবারে শুরুতে ইউরিন টেস্টের মাধ্যমে অনেক সময় সঠিক রেজাল্ট পাওয়া যায় না। ইউরিন টেস্টের মাধ্যমে সঠিকভাবে প্রেগনেন্সি নিশ্চিত হতে হলে সহবাসের ২১ দিন পরে টেস্ট করলে এর সঠিক ফলাফল পাওয়া যায় অথবা মাসিকের নির্দিষ্ট তারিখ পার হওয়ার পরে ইউরিন টেস্ট করার মাধ্যমে  প্রেগনেন্সি  নিশ্চিত হওয়া যায়।

মন্তব্য , প্রেগনেন্সির সম্পূর্ণ পিরিয়ডটাই একটি মেয়ের জন্য এবং তার গর্ভের সন্তানের জন্য অত্যন্ত সেনসিটিভ। আর এই কারণেই প্রেগনেন্সির ব্যাপারে মনের মধ্যে যেকোনো প্রশ্ন জাগলে অবশ্যই এর  সম্পর্কে সঠিকভাবে জানার চেষ্টা করুন অথবা প্রেগনেন্সি টাইমে কোন সমস্যা দেখা দিলে লজ্জা বা সংকোচ বোধ না করে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন , কারণ এই সময়ে সামান্যতম অসচেতনতা হতে পারে বড় ধরনের বিপদের কারণ ,যার কারণে মা মা অথবা সন্তানের কিংবা উভয়েরই মৃত্যু ডেকে আনতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url