দাঁতের মাড়ি ফুলে গেলে করণীয় - দাঁতের মাড়ি ফোলার ঔষধ

আসলে আমাদের মধ্যে অধিকাংশ মানুষই প্রোপার ওয়েতে দাঁতের যত্ন নেয় না। দাঁতের যত্ন ঠিক যেভাবে নেয়া দরকার এবং দাঁত যেভাবে পরিষ্কার করা দরকার যেহেতু সেভাবে পরিষ্কার করা হয় না বা যত্ন নেওয়া হয় না সুতরাং এর ফলে দেখা যায় দাঁত এবং দাঁতের গোড়ার বিভিন্ন সমস্যা যার মধ্যে একটি হলো দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া। দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া অস্বস্তি কর এবং কোন কোন ক্ষেত্রে যন্ত্রণাদায়ক হয়ে থাকে তবে দাঁতের মাড়ি ফুলে গেলে বেশ কয়েকটি করণীয় বিষয়ে রয়েছে যেগুলোর মাধ্যমে এর সমাধানের চেষ্টা করা যেতে পারে।

দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়ার কারণ এবং এই সময় করণীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকলে , অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে ঘটে যাওয়া মাড়ির এই সমস্যা গুলো ঘরোয়াভাবে সমাধান করা সম্ভব। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় ঘরোয়া রেমেডি গুলোর পাশাপাশি কিছু ঔষধ সেবন করার। আর আজকে আপনাদেরকে এই সকল বিষয়ের সঠিক এবং কার্যকরী তথ্য শেয়ার করার জন্য এ পোস্টে দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া সংক্রান্ত কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করব এবং জানাবো দাঁতের মাড়ি ফুলে গেলে এ পরিস্থিতিতে করণীয় বিষয় সম্পর্কে।

সূচিপত্রঃ দাঁতের মাড়ি ফুলে গেলে করণীয় - দাঁতের মাড়ি ফোলার ঔষধ

দাঁতের মাড়ি ফুলে যায় কেন

হঠাৎ হঠাৎ দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়ার সমস্যা এবং দাঁতের মাড়ি ফুলে গিয়ে দীর্ঘদিন থাকা সাথে ব্যথাও অনুভব হওয়া ইত্যাদি সমস্যাগুলো প্রায় মানুষরই হতে দেখা যায়। কিন্তু ভেবে দেখেছেন কি দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়ার পেছনে কারণ কি , আর কেনই বা হুটহাট করে দাঁতের মাড়ি ফুলে যায় ? দাঁতের মাড়ি বা গোঁড়া যাই বলেন না কেন খেতে প্রদাহ হওয়া এবং ফুলে যাওয়ার পেছনে রয়েছে বিশেষ কিছু কারণ , আর এর অন্যতম প্রধান কারণ হলো মুখের ভেতরের সঠিক যত্ন না নেওয়া।

সঠিক নিয়মে মুখের ভেতর পরিষ্কার না করা এবং মুখের ভেতরের যত্ন ঠিকঠাক ভাবে না নেয়ার কারণে, দাঁতের ফাঁকে খাদ্য কণা আটকে গিয়ে সেখান থেকে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটে এবং দাঁতে ওমারির কেন্দ্রস্থলের কিছুগুলো সংক্রামিত হয় যার ফলে দাঁতের গোড়া ফুলে যায় এবং এখানে প্রদাহের সৃষ্টি হয়।এছাড়াও দাঁতের গোড়ায় পাথর , cavity , প্লাক এর কারনে দাঁতের গোড়া ফুলে যায় আর এ সকল সমস্যার জন্য দায়ী নিয়মিত সঠিকভাবে দাঁত ব্রাশ না করা , দাঁত ফ্লসিং এবং স্কেলিং না করানো ইত্যাদি।

অনেক সময় দীর্ঘমেয়াদি রোগ ডায়াবেটিস ,নিউকমিয়া এবং শরীরে পর্যাপ্ত ভিটামিন সি এর অভাব , অপুষ্টি , জিনজিভাইটিস রোগ , দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ নিয়মিত সেবন করার কারণে ও দাঁতের মাড়িতে এ ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। দাঁতের মাড়ি ফুলে গেলে অবশ্যই এই ব্যাপারে সচেতন হতে হবে কারণ , যদি দাঁতের মাড়ি ফোলার সঠিক কারণ উদঘাটন এবং সঠিক চিকিৎসা সময় মতন করানো না হয় তাহলে এখান থেকে বিভিন্ন ধরনের সমস্যাসহ ওরাল ক্যান্সারের ঝুঁকিও দেখা দিতে পারে।

দাঁতের মাড়ি ফুলে গেলে করণীয়

দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া বা দাঁতের মাড়িতে ঘনঘন সমস্যা হওয়া এটাই কখনোই ভালো লক্ষণ নয় , তাই এই সমস্যা দূর করার জন্য যত দ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বেশ কিছু করণীয় ঘরোয়া ভাবে নিয়মিত কয়েকদিন ট্রাই করলে দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়ার সমস্যা দূর হয়। ঘরোয়া ভাবে দাঁতের মাড়ি ফুল দূর করতে যেসব পদ্ধতি গুলো কার্যকরী ভাবে খুব দ্রুত ফল দেয়  সেগুলো হলো ,

লবণ পানি দিয়ে কুলকুচিঃ দাঁতের মাড়ি ফুলে গেলে দিনের মধ্যে কয়েকবার হালকা কুসুম গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে ভালোভাবে কুলকুচি করুন। লবণ আমাদের দাঁতের গোড়ায় থাকা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ রোধ করতে এবং ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে সাহায্য করে। কুসুম গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে কুলকুচি করার পরিবর্তে আপনি সরাসরি কিছুটা লবণ দাঁতের গোড়ায় আলতোভাবে ঘষতে পারেন , এতেও দ্রুত ফলাফল পাওয়া যায়।

লবণ ও সরিষার তেলঃ দাঁতের গোড়ার ফোলা ভাব এবং ব্যথা দূর করার জন্য লবণ এবং সরিষার তেল একসাথে ভালোভাবে মিশিয়ে আক্রান্ত স্থানে লাগাতে পারেন। দাঁতের গোড়ার সংক্রমণ বৃদ্ধি এই রেমেডিটি খুবই ভালো কাজে দেয়। দিনের মধ্যে দুই থেকে তিন বার লবণ ও সরিষার তেল আক্রান্ত স্থানে লাগান দু চার দিনের মধ্যেই দাঁতের গোড়া ফোলা কমার ক্ষেত্রে এর কার্যকারিতা লক্ষ্য করতে পারবেন।

এলোভেরাঃ আপনারা জানেন এলোভেরা রয়েছে নানান ধরনের ঔষধি গুণ। দাঁতের মাড়ি এবং মুখের অভ্যন্তরের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে কার্যকরী ফলাফল প্রদান করতে পারে এলোভেরা , অ্যালোভেরা অ্যান্টিফাঙ্গাল হিসেবে খুব ভালো কাজ করে। মুখে সে যে কোন সংক্রামন যেমন - দাঁতের মাড়ির ফোলা ভাব , দাঁতের গোড়া দিয়ে রক্ত পড়া ইত্যাদি সমস্যা সমাধানের জন্য ব্যবহার করতে পারেন অ্যালোভেরা জেল।

কুলকুচির পানিতে মিশন লেবুর রসঃ কুলকুচি করার সময় সেই পানিতে কয়েক ফোটা লেবুর রস মিশিয়ে নিলেও দাঁতের ফোলা ভাব দূর হতে এবং দাঁতের গোড়ায় ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ রোধের ক্ষেত্রেও অনেক ভালো ফল পাওয়া যায়। লেবু পানি দিয়ে কুলকুচি করার পরে সকালে দাঁত পরিষ্কার করলে , ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ রোধে অনেক ভালো ফল পাওয়া যায়

ভিটামিন সি যুক্ত খাবার গ্রহণ করুনঃ অনেক সময় শরীরে পর্যাপ্ত ভিটামিন সি এর ঘাটতি থাকলে সেখান থেকে দাঁতের মাড়ির বিভিন্ন সমস্যা সহ দাঁতের মাড়ি ফুলে যেতে দেখা যায়। তাই দাঁতের মাড়ি ফোলা দূর করার জন্য এই সময় ভিটামিন সি যুক্ত খাবার গুলো খেতে পারেন। ভিটামিন সি যুক্ত খাবার একদিকে যেমন আপনার শরীরের ঘাটতি পূরণ করবে অন্যদিকে দাঁতের মাড়ি ফোলা ভাবও দূর করবে।

আরো পড়ুনঃ দাঁত ব্যাথা হলে করণীয় এবং দাঁত ব্যথার দোয়া

আদাঃ আদার মধ্যে রয়েছে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং আন্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য। তাই শরীরের অন্যান্য যে কোন প্রদাহ দূর করার পাশাপাশি দাঁতের গোড়ার প্রদাহ বা দাঁতের গোড়া ফুলে যাওয়ার ক্ষেত্রেও বিশেষ অবদান রাখতে পারে আদা। আর এ কারণেদাঁতের গোড়ার ফোলা ভাব দ্রুত দূর করার জন্য  ব্যবহার করতে পারেন আদার রস

হলুদঃ হলুদ আমাদের শরীরের যেকোনো সমস্যার জন্য অ্যান্টিসেপটিক , আন্টি ইনফ্লামেটরি হিসেবে কাজ করে , এছাড়াও হলুদের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে এক এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এটি দাঁতের গোড়ার  ফোলা এবং ব্যথা দূর করার পাশাপাশি শরীরের যেকোনো প্রদাহ সারাতে সাহায্য করে। দাঁতের গোড়ার ব্যথা এবং ফোলা ভাব দূর করার জন্য চা চামচের চার ভাগের এক ভাগ হলুদ গুঁড়ার সাথে কুসুম গরম পানি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন এবং এই পেস্টটি হালকা ভাবে দাঁতের গোড়ায় ৫ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। দিনে দুইবার করে এই রেমিডিটি এপ্লাই করলে , দাঁতের মাড়ি ফুলা দূর করতে পারবেন খুব সহজেই।

লবঙ্গঃ দাঁতের গোড়া ফুলে যাওয়া রোগ গুলোর মধ্যে রয়েছে জিঞ্জিভাইটিস এবং পেরিওডোনটাইটিস রোগ। দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া এই রোগগুলো থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করতে পারে লবঙ্গ , তাছাড়াও লবঙ্গের ভেতরের রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উৎপাদন যার কারণে লবঙ্গের ব্যবহারে দাঁতের গোড়ার ফোলা ভাবের পাশাপাশি ভেতরে প্রবাহের কারণে হওয়া ব্যথা কমাতে সাহায্য করবে। আর লবঙ্গ শুধু আন্টি ইনফ্লামেটরি নয় , অ্যান্টি সেপটিক হিসেবেও কাজ করে এবং মুখের দুর্গন্ধ দূর করার জন্য রয়েছে লবঙ্গের কার্যকারিতা।

টি ট্রিঅয়েলঃ দাঁতের গোড়ার প্রদাহ রোধ করতে টি ট্রিয়েলের অবদানও কম নয়। এই প্রদাহ দূর করার জন্য , এক চামচ তেল কিছুক্ষণ মুখের মধ্যে নিয়ে থাকুন এরপর হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে কুলকুচি করার মাধ্যমে মুখ পরিষ্কার করে ফেলুন , তবে এ কাজটি করার সময় অবশ্যই খুব সতর্ক থাকবেন যেন, মুখে নিয়ে থাকার সময় তেল কোন ভাবে পেটের অভ্যন্তরে চলে না যায়

অতিরিক্ত ঠান্ডা এবং অতিরিক্ত গরম খাবার এড়িয়ে চলুনঃ দাঁতের মাড়ি ফুলে গেলে এই সময় খুব বেশি গরম এবং ঠান্ডা খাবার পরিহার করে চলুন , কারণ এই সময় আক্রান্ত স্থানটি অত্যন্ত সেনসিটিভ অবস্থায় থাকে তাই এই সময় অতিরিক্ত ঠান্ডা এবং গরম দুই ধরনের খাবারই আক্রান্ত স্থানের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

দাঁত ব্রাশ করার সময় সচেতন থাকুনঃ দাঁত বা মাড়ি আক্রান্ত হলে এই সময় আক্রান্ত স্থানে অতিরিক্ত ঘষাঘষি , চাপাচাপি করা উচিত নয়। এই সময় দাঁত ব্রাশ করা অথবা মুখের অভ্যন্তরে পরিষ্কার করার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে আক্রান্ত স্থানে যেন অতিরিক্ত চাপ না পরে। দাঁতের মাড়ি ফুলে গেলে এবং সেখানে ব্যথা দেখা দিলে অবশ্যই দাঁত ব্রাশ করার সময় সাবধান থাকতে হবে এবং ধীরে ধীরে ব্রাশ করতে হবে।

ঘরোয়া ভাবে প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার এই পদ্ধতি গুলো অবলম্বন করার মাধ্যমে সাধারণত দাঁতের মাড়ির ফোলা ভাব বা ব্যাকটেরিয়ার সাধারণ সংক্রমণ জনিত সমস্যা গুলো ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যেই অনেক কমে আসে। তবে আপনার যদি মনে হয় আর এই রে মেয়েটি গুলো সঠিকভাবে ফলো করার পরেও দাঁতের মাড়ির ফোলা ভাব কমছে না তাহলে , অচিরেই ডেন্টিস্টের পরামর্শ নিন এবং রোগের সঠিক কারণ , রোগের বিস্তার , তীব্রতা ইত্যাদি নিশ্চিত ভাবে জানার জন্য দাঁতের এক্সরে , সিটি স্ক্যান করানো। প্রয়োজনীয় টেস্ট করানোর পরে আপনার পরামর্শ অনুযায়ী দাঁতের মাড়ির ফোলা বা সমস্যা দূর করার জন্য দাঁত উঠানো , রুট ক্যানেল অথবা অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করুন।

দাঁতের মাড়ি ফোলার ঔষধ

আপনাদের ওর মধ্যে অনেকেই দাঁতের মাড়ি ফোলার ব্যাপারে কোন ওষুধগুলো কার্যকরী হবে বা কোন ওষুধগুলো এ ব্যাপারে খাওয়া যেতে পারে সে সম্পর্কে জানতে চান, আর এই কারণেই দারদের মাড়ি ফোলার সমস্যা সমাধান নিয়ে যেই ওষুধগুলো ব্যবহার করতে পারেন তার কয়েকটি নাম নিচে দেওয়া হলো। এই ওষুধগুলো দাঁতের মাড়ি ফোলার সমস্যার কারণে সেবন করতে পারেন তবে অবশ্যই সেবনের পূর্বে ভালো কোন ডেন্টিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ গুলো সেবনের অনুরোধ করা হলো। কেননা কোন রোগেরই সঠিক কারণ না জেনে হুটহাট করে কোন ঔষধ সেবন করা উচিত নয়।

Tb.

  • Etoricoxib
  • Etorix 
  • Tory - 60 
  • Exilok - 20 
  • Fenamic
  • Napa One 
  • Amodis - 400 
  • Moxacil - 500 
মন্তব্য , দাঁত আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পার্ট। কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও এর যত্নে আমরা হয়তোবা সবচেয়ে বেশি অবহেলা করে থাকি আর এই কারণে কথাই এসেছে - দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম না বোঝা। দাঁত যে আমাদের জন্য কতটা প্রয়োজনীয় তা বোঝা যায় যখন আমরা দাঁতের কোন সমস্যা বা দাঁতের মাড়ির সমস্যা গুলোতে আক্রান্ত হয়ে তখন। তাই আপনাদের সকলের কাছে অনুরোধ কোন সমস্যা হওয়ার পূর্বেই দাঁতের ব্যাপারে এবং দাঁতের গোড়ার ব্যাপারে সচেতন হন। এছাড়াও আপনাদের সকলের কাছে আরো একটি অনুরোধ যে কোনো সমস্যার কারণে ঔষধ সেবনের পূর্বে অবশ্যই অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url