সহবাসের পর তলপেটে ব্যথা হয় কেন

সহবাসের পরে তলপেটে ব্যথা সমস্যায় অনেক মহিলারাই সাফার করেন , কিন্তু অধিকাংশ মহিলারাই জানেন না কি কারণে সহবাসের পরে তলপেটে ব্যথা হয় বা হতে পারে। দাম্পত্য লাইফকে সুখী করার জন্য যৌন মিলনের ব্যাপারটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এ বিষয়ে অনেক শিক্ষনীয় জিনিস রয়েছে যেগুলো প্রত্যেক নারী পুরুষের জেনে রাখা উচিত বিশেষ করে যারা ম্যারিড পার্সন তাদের।

সেক্স পেইন হওয়ার সহবাসের পর দল পেটে ব্যথা হওয়ার পেছনে চলছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ। যার মধ্যে দু একটি কারণ এমনও রয়েছে যেগুলো জটিল সমস্যার ইঙ্গিত করে। সাধারণ কারণ ছাড়া যদি সহবাসের পরে তলপেটে ব্যথা হয় তাহলে , অবশ্যই এ ব্যাপারে সিরিয়াস হওয়া উচিত এবং উপযুক্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে চিকিৎসার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান করা উচিত। তবে যেটাই হোক না কেন সর্বপ্রথমে জানতে হবে সহবাসের পর তলপেট ব্যথা কারণগুলো সম্পর্কে।

সহবাসের পর তলপেটে ব্যথা হয় কেন

সহবাস বা যৌন মিলনের পরে অনেক মেয়েই তলপেটে ব্যথা অনুভব করে। কিন্তু কেন সহবাস এরপরে তলপেটে ব্যথা হয় এ বিষয়ে জানতে হবে এবং সঠিক কারণ উদঘাটনের মাধ্যমে এর সমাধান খুঁজতে হবে। সহবাসের পরে তলপেটে ব্যথা অনুভব হওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। যৌন মিলনের পরে তলপেট দেখা হতে পারে ,

লুব্রিকেশনের অভাবেঃ আমার জন্য উত্তেজনার কারণে মেয়েরা উত্তেজিত হয়ে উঠলে স্বাভাবিকভাবে যৌনাঙ্গ দিয়ে এক ধরনের পিচ্ছিল পদার্থ নির্গত হয় এই প্রক্রিয়াটিকে বলা হয় লুব্রিকেশন। শারীরিক মিলন সময় সঠিক মাত্রায় হওয়া খুবই জরুরী। মানসিক দুশ্চিন্তা , শারীরিক অসুস্থতা কিংবা ভালোভাবে উত্তেজিত না হওয়ার কারণে যদি লুব্রিকেশনের সমস্যা হয় , তাহলে সে ক্ষেত্রে সহবাসের পরে তলপেটে ব্যথা হতে পারে। লুব্রিকেশনের অভাবে শুধু সহবাসের পরেই নয় সহবাসের সময়ও ব্যথা অনুভব এবং বিভিন্ন ধরনের অস্বস্তি দেখা দেয়। বিশেষ করে কোন প্রকার মানসিক টেনশনে থাকলে অথবা শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা কমে গেলে লুব্রিকেশনের অভাব দেখা দেয়। তবে কোন নারীর যদি দেখা যায় , মানুষের টেনশন নেই , শরীর সুস্থ , এবং ভালোভাবে উত্তেজিত হওয়া অবস্থাতেও লুব্রিকেশন এর সমস্যা হচ্ছে তাহলে অবশ্যই এ ব্যাপারে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত , কারণ ভেজালাল ড্রাইনেস একটি জটিল সমস্যা বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞগণ। সাধারণত এ ধরনের সমস্যা খুব একটা দেখা না গেলেও , দুই একজন নারী ক্ষেত্রে এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে।

মাংসপেশির সংকোচনের কারণেঃ সাধারণত সহবাসের সময় যৌন উত্তেজনা যখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে চলে যায় ঠিক সেই সময়ই জরায়ু , মূত্রথলি , বৃহদান্ত্রের নিচের অংশ বা শেষাংশ আগের সংকুচিত হয় পরিপূর্ণরূপে শিথিল হয় আর সেক্সের এই প্রক্রিয়াটিকে বলা হয় অর্গাজম। কোন কারণে যদি অর্গাজম ঠিকভাবে না হয় অর্থাৎ নির্দিষ্ট স্থান গুলো যদি সংকুচিত হওয়ার পরে পরিপূর্ণরূপে শিথিল বা রিলেক্স না হয় তাহলে এর কারণেও সহবাসের পরে তলপেটে ব্যথা অনুভব হবে বা হতে পারে।

সেক্স পজিশন ঠিক না থাকাঃ অনেক সময় শারীরিক কোন সমস্যা না থাকলেও সহবাসের পরে মেয়েদের তলপেটে ব্যথা হয় আর এর কারণ হলো , সেক্স পজিশন ঠিক না থাকা। পুরুষের পেনিস যদি তারা মহিলাদের যৌনাঙ্গের স্বাভাবিকের চেয়ে গভীরে প্রবেশ করে তাহলে সে ক্ষেত্রে পেনিসের আঘাত জরায়ুতে লাগে। জরায়ুতে যদি বারবার পেনিসের আঘাত লাগতে থাকে তাহলে সহবাসের সময় বা সহবাসের পরে তলপেটে ব্যথা হতে পারে।

পিরিয়ড বা মাসিকের সময় সহবাসের কারণেঃ মাসিক বা পিরিয়ডের সময় মেয়েদের যৌনাঙ্গ এবং জরায়ু অত্যন্ত সেন্সেটিভ অবস্থায় থাকে। আর তাই এই সময় সহবাস করলে , স্পর্শকাতর স্থান গুলোতে বারবার পেনিসের আঘাত বা চাপ লাগার কারণে সহবাসের পরে তলপেট ব্যথা করে। শুধু পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে নয়, পিরিয়ড শুরু হওয়ার ২-১ দিন আগে এই সমস্যাটি অনেকের ক্ষেত্রে অনুভব হয়।

জরায়ুতে ফাইব্রয়েড অথবা ওভারিয়ান সিস্ট এর কারণেঃ যদি জরায়ু সংক্রান্ত কোনো সমস্যা থাকে অথবা জরায়ুতে ফাইব্রয়েড , টিউমার , ক্যান্সার বা ওভারিয়ান সিস্ট থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রেও সহবাসের পরে তলপেট ব্যথা হওয়ার সমস্যা দেখা যায়। বেশিরভাগ সময়ই দেখা যায় যে ওভারিয়ান সিস্ট বা জরায়ুতে ফাইব্রয়েড রয়েছে যার কারণে তারা সহবাসের পরে তলপেট ব্যথা হয় , কিন্তু রোগী বুঝতেই পারে না ঠিক কি কারনে সহবাসের পরে তলপেট ব্যথা করছে কারণ এ ধরনের সমস্যা গুলো সাধারণত লক্ষণহীন থাকে।

পাভলিক ফ্লোর ডিসফাংশন এর কারণেঃ পাভলিক ফ্লোর ডিসফাংশন সহবাসের পর নারীদের তলপেট ব্যথা হওয়ার অন্যতম প্রধান একটি কারণ। গবেষণায় দেখা যায় এই সমস্যায় আক্রান্ত প্রায়ই ৮০- ৯০% নারীরা। পাভলিক ফ্লোরের মাংসপেশি যখন ঠিক ভাবে সংকুচিত ও শিথিল বা রিল্যাক্স হতে পারে না সেটিকে বলা হয় পাভলিক ফ্লোর ডিসফাংশন। যৌন মিলনের সময় অন্য কোন সমস্যার কারণে পেন অনুভব করলে এই সমস্যাটি খুব দ্রুতই পাভলিক ফ্লোর ডিসফাংশনে পরিণত হয়ে পড়ে , আর যার কারণে সহবাসের পরে তলপেটে ব্যথা অনুভব হয়। কারণ যখন পাভলিক ফ্লোর ডিসফাংশন দেখা দেয় তখন জরায়ু এবং এর আশেপাশে থাকা মাংসপেশিগুলো , সহবাসের সময় যতটা রিল্যাক্স হওয়া দরকার ততটা হতে পারে না। বিষয়টি আপনাদেরকে আরেকটু বুঝিয়ে বলা যাক,

শরীরের অভ্যন্তরের কোন সমস্যার কারণে যখন শারীরিক মিলনের সময় ব্যথা অনুভব হয় , ঠিক তখন ভেজাইনা মনে করে হয়তোবা পেনিসের প্রবেশের কারণে এই ব্যথা অনুভব হচ্ছে। আর এ কারণে ভ্যাজাইনাতে  পেনিস প্রবেশের সময় যৌন কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য প্রতিক্রিয়া স্বরূপ ভ্যাজাইনা এবং তার আশেপাশে থাকা মাংসপেশিগুলো টাইট হয়ে পড়ে এবং এই প্রক্রিয়াটি কয়েকদিন এভাবে চলতে থাকলে ভ্যাজাইনার আশেপাশে থাকা মাংসপেশিগুলো এই প্রক্রিয়াতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে , যার কারণে এসব এলাকার মাংসপেশিগুলো যতটা শিথিল হওয়ার প্রয়োজন ততটা হয়ে ওঠেনা। যেহেতু পাভলিক ফ্লোর ডিসফাংশন এর কারনে ভেজাইনা ও তার আশেপাশের মাংসপেশিগুলো ঠিকভাবে শিথিল হয় না , তাই অনেক সময় সহবাসের পরে ব্যথা অনুভব হয়।

এন্ড্রোমেট্রিওসিস এর কারণেঃমেয়েদের ঋতুস্রাব হয় যখন , জরায়ুর ভেতরে থাকা অ্যান্ড্রোমেট্রিয়াম অংশের স্তর খসে পড়ে। অ্যান্ড্রোমেট্রিয়াম হল জরায়ুর ভেতরের লাইনিং বা বলতে পারেন স্তর। অ্যান্ড্রোমেট্রিয়াম যখন জরায়ু ছাড়াও শরীরের অন্য কোন জায়গায় চলে আসে এবং সেখানে খসে পড়ে, এই ঘটনাটিকে বলা হয় এন্ড্রোমেট্রিওসিস। এন্ড্রোমেট্রিওসিস যে রক্তপাতটি হয় সেটি কোন দিক দিয়ে বের হতে না পেরে সেখানে জমাট বেধে যায়। আর এই ঘটনা ঘটলে সহবাসের পর তলপেট ব্যথা হয় কারো কারো ক্ষেত্রে এই ব্যথা তীব্র আকার ধারণ করে আবার কারো কারো ক্ষেত্রে ব্যথার ধরন ভোতা প্রকৃতির থাকে। এন্ড্রোমেট্রিওসিস হল এক ধরনের জটিল সমস্যা , আর এই বিষয়ে কোনভাবেই অবহেলা করা উচিত নয়।

অন্ত্রের সমস্যার কারণেঃ অনেক সময় অন্ত্রের কোন সমস্যা বা তন্ত্রের ক্রনিক ডিজিজ থাকলে , সে ক্ষেত্রে সহবাসের পরে তলপেট ব্যথা হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নাই , কারণ অন্ত্রের সমস্যার কারণে পাবলিক ফ্লোরের মাংসপেশিগুলো সঠিকভাবে সংকুচিত এবং সম্পূর্ণরূপে শিথিল হতে পারে না যার ফল হিসেবে দেখা যায় সহবাসের পরে তলপেটে ব্যথা। আবার অনেক সময় অতিরিক্ত কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণেও পেভ্লিক ফ্লোরের মাংসপেশীকে সম্পূর্ণ রূপে শিথিল হয় না , যার কারণে যৌন মিলনের পরে তলপেটে ব্যথা অনুভব হয়।

যৌনাঙ্গে সংক্রমণের অথবা ইনফেকশনের কারণেঃ অনেক সময় দেখা যায় যে সুগন্ধি যুক্ত সাবান, লোশন ও অ্যালকোহল যুক্ত ডিও অথবা এ জাতীয় প্রোডাক্টগুলো যৌনাঙ্গে বা এর আশেপাশের স্থানে ব্যবহারের ফলে সংক্রমণ দেখা দেয় , যার কারণেই যৌনাঙ্গে চুলকানি , ব্যথা এবং জ্বালাপোড়া হয়। আবার অনেক সময় দেখা যায় যে যৌনাঙ্গে বা জরায়ুতে ইনফেকশনের কারণে সহবাসের সময় এবং পরে পেট ব্যথা হয়।

মন্তব্য , দাম্পত্য জীবনে সুখী হওয়ার জন্য যৌন মিলন আবশ্যক , আর এই যৌন মিলনকে সুখময় করার জন্য এর সাথে রিলেটেড যে কোন সমস্যা সমাধান করতে হবে। সহবাসে পরিপূর্ণ আনন্দ না পাওয়ার অন্যতম একটি কারণ হলো , সহবাসের পর তলপেটে ব্যথা হওয়ার কারণ। যদি এই কারণ সঠিকভাবে শনাক্ত এবং সমাধান করা যায় তাহলে দাম্পত্য জীবন সুখী হওয়া সম্ভব , তাই যাদের এ ধরনের সমস্যা রয়েছে তারা অবশ্যই সমস্যার সঠিক কারণ সনাক্ত করে এর সমাধানের চেষ্টা করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url