মধু খাওয়ার উপকারিতা - মধু খাওয়ার সঠিক সময় - রাতে মধু খাওয়ার উপকারিতা
বহু গুনে গুণান্বিত মধুর মধ্যে রয়েছে মৃত্যু ছাড়া সকল ধরনের অসুখের ঔষধ-এই কথাটি আমার বা আপনার বলা কোন কথা নয় এটি স্বয়ং আল্লাহ পাক কুরআনে বর্ণনা করেছেন এবং মধু খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ একটি সূরা নাযিল করেছেন যার নাম সূরা 'নাহল'। তাই আপনি সঠিকভাবে মধু খাওয়ার মাধ্যমে আপনার যেকোনো ধরনের অসুখ সারিয়ে ফেলতে পারেন।
মধু সম্পর্কে যেহেতু আমাদের পবিত্র গ্রন্থ আল কুরআনে বর্ণনা করা আছে তাই এটি যে
নিঃসন্দেহে একটি শরীরের জন্য ভীষণ উপকারী পানীয় এটি বলতে আর কোন অপেক্ষা
রাখে না। মধুর গুনাগুন সম্পর্কে আপনি যদি সঠিকভাবে না জানেন তাহলে এই পোস্টটি
আপনাকে জানানো হবে মধু খাওয়ার উপকারিতা, রাতে মধু খাওয়ার উপকারিতা এবং
সকালে মধু খাওয়ার উপকারিতা সহ মধু সম্পর্কিত আরো বিভিন্ন ধরনের তথ্য। আপনি যদি
মধুর গুনাগুন এবং মধু সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্যগুলো জানতে চান তাহলে পোস্টটি অবশ্যই
শেষ পর্যন্ত পড়ে নিন।
সূচিপত্রঃ মধু খাওয়ার উপকারিতা - মধু খাওয়ার সঠিক সময় - রাতে মধু খাওয়ার উপকারিতা
- মধু তৈরির প্রক্রিয়া
- মধুর গুনাগুন
- মধু খাওয়ার উপকারিতা
- রাতে মধু খাওয়ার উপকারিতা
- সকালে মধু খাওয়ার উপকারিতা
- মেয়েদের মধু খাওয়ার উপকারিতা
- ছেলেদের মধু খাওয়ার উপকারিতা
- মধু খাওয়ার সঠিক সময়
- ইসলামে মধু খাওয়ার নীতি নিয়ম
- মধুর সম্পর্কিত হাদিস
- মধু খাওয়ার অপকারিতা
মধু তৈরির প্রক্রিয়া
আমরা সকলেই জানি মধু বহু গুনে গুণান্বিত। ছোট বড় সকলের শরীরের জন্য মধু খুব উপকারী একটি পানীয়। কিন্তু আমরা কি কখনো মধু তৈরীর প্রক্রিয়াটি ভেবে দেখেছি। আমরা কি সঠিকভাবে মধু তৈরি প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানি? আসুন অল্প কথায় আমরা একটু আলোচনা করে নিয়ে মধু তৈরীর প্রক্রিয়া সম্পর্কে। মধু যে মৌমাছি দ্বারা তৈরি হয় এটি জানতে আমাদের কারোর বাকি নেই। মৌমাছি এই মধু তৈরি করে বেশ কয়েকটি স্তরে। প্রথমে মৌমাছি তার একটি চাপ তৈরি করে মানুষের ঘরে বিভিন্ন গাছে অথবা পাহাড়ের গায়ে। মৌমাছির যখন চাক তৈরি করা হয়ে যায় তখন একদল মৌমাছি বিভিন্ন ফুলে গিয়ে ফুলের ভেতরে থাকা মধু গ্রন্থি গুলো থেকে ফুলের রসগুলো একত্রিত করে।
মৌমাছি শরীরে ফুলের রসগুলো সংগ্রহ করে রাখার জন্য একটি থলি রয়েছে বিভিন্ন ফুলের
রসগুলো তারা তাদের শরীরের এই থলির মধ্যে একত্রিত করে চাকে ফিরে আসে । তারপর যাকে
থাকা আরেক দল মৌমাছির মুখে ফুলের সংগ্রহকৃত রসগুলো দিয়ে দেয় , মৌচাকে থাকা
মৌমাছিগুলো তখন এই রসগুলোর সাথে তাদের শরীরে থাকা বিভিন্ন ধরনের এনজাইম
মিশিয়ে তাদের তৈরি করা মৌচাকে রেখে দেয়। মৌচাকে থাকা মৌমাছির শরীরের এনজাইম এবং
ফুলের রস একত্রিত হয়ে মৌচাকে কিছুদিন থাকার পরে ফুলের রসগুলো পাতলা অথবা
তরল অবস্থা থেকে ঘন হয়ে মধুতে পরিণত হয়।
মধুর উপাদান
এতক্ষণ আমরা জানলাম মধু কিভাবে তৈরি হয় সে সম্পর্কে এবার আসুন জেনে নেওয়া যাক
এই উপকারী পানীয় মধুর উপাদানগুলো কি অর্থাৎ মধুর মধ্যে কি কি উপাদান রয়েছে।
মধুর মধ্যে প্রায় ৪৫ ধরনের উপাদান রয়েছে, এর মধ্যে থেকে মধুর বিশেষ বিশেষ
উপাদান গুলো তুলে ধরা হলো। মধুর উপাদান গুলো নিম্নরূপ
মধুতে রয়েছে গ্লূকোজ
- ফ্রূক্টোজ
- পানি
- তেল
- এমাইনো এসিড
- এনজাইম
- মন্টেজ
- প্রোটিন
- আয়োডিন
- জিংক
- সেলুলোজ
- ডেক্সট্রোজ
- লৌহ
- কপার
- ম্যাঙ্গানি
- ভিটামিন-বি 1,2,3,4,5,6
মধু খাওয়ার উপকারিতা
মধু খাওয়ার উপকারিতা অনেক বেশি এই কথাটি আমরা ছোট বড় সবাই জানি। কিন্তু আসলে অ্যাকচুয়ালি মধু খাওয়ার কি কি উপকারিতা রয়েছে তা আমরা নির্দিষ্ট করে কয়জন বলতে পারি? মধুর মধ্যে রয়েছে সকল ধরনের অসুখের ঔষধ মধুর উপকারিতা বর্ণনা করে কুরআনে আল্লাহ পাক একটি পূর্ণাঙ্গ সূরা নাযিল করেছেন যার নাম সূরা "নাহল"।
সূরা নাহলের ৮৯ নং আয়াতে আল্লাহ পাক বলেন-যে রঙ্গিন বা তরল পদার্থটি মৌমাছির পেট থেকে নির্গত হয় তার মধ্যে মানুষের সকল ধরনের রোগ থেকে মুক্ত হওয়ার উপায় রয়েছে। কোরআনের এই আয়াত দ্বারা স্পষ্ট ভাবে বোঝা যায় যে এত ছোট পোস্টের মাধ্যমে মধুর সকল গুনাগুন বা উপকারিতা সম্পর্কে তুলে ধরা অসম্ভব। এই কারণে শুধুমাত্র মধুর উল্লেখযোগ্য উপকারিতা গুলো এই পোস্টের মধ্যে দিয়ে তুলে ধরা হলো।আসুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক মধু খাওয়ার উল্লেখযোগ্য উপকারিতা গুলো কি কি। মধু খাওয়ার উপকারিতা গুলো হলো,
আরো পড়ুনঃকফির উপকারিতা ও অপকারিতা - দিনে কয় কাপ কফি খাওয়া উচিত
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
- সর্দি , কাশি , কফ কমাতে সাহায্য করে
- পোড়া এবং ক্ষত সারাতে সাহায্য করে
- ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়
- হার্ট ভালো রাখে
- রক্তস্বল্পতা দূর করে
- ওজন কমাতে সাহায্য করে
- খারাপ কোলেস্টেরল দূর করে
- হজমে সহায়তা করে
- ত্বকের লাবণ্য বৃদ্ধি করে
- শিশুদের দৈহিক ও মানসিক বিকাশ সাধন করে
- হাড় গঠনে সহায়তা করে
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে
- শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যাদূর করে
- যৌন দুর্বলতা দূর করে
- অনিদ্রা দূর করে
- দাঁতের ব্যথা ও প্রদাহ দূর করে
- আমাশয় ও পেট ব্যথা দূর করে
চলুন এবার মধু খাওয়ার উপকারিতা গুলো সম্পর্কে নিচে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা
যাক
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ নিয়মিত মধু খেলে শরীরের ইমিউনিটি বৃদ্ধি পায় এবং
বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শরীরের অভ্যন্তরে গড়ে ওঠে।
সর্দি ,কাশি ,কফ কমাতে সাহায্য করেঃ তুলসি পাতার রস মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে সর্দি কাশি ও
কফের সমস্যা যাদের আছে তারা দ্রুত এই সমস্যা থেকে সেরে উঠতে পারবেন কারণ মধু
ভেতরে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যেগুলো সর্দি কাশি ও কমাতে সাহায্য করে।
পোড়া ও ক্ষত সারাতে সাহায্য করেঃ আন্টিফাঙ্গাল উপাদান রয়েছে মধুর মধ্যে এই
কারণে পোড়া বা ক্ষতস্থানে মধু লাগালে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া
যায়। পোড়া বা ক্ষতস্থানে মধু লাগালে যেহেতু ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করতে পারেনা
তাই পোড়া এবং ক্ষতস্থান দ্রুত সরে উঠে।
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়ঃ মধুর মধ্যে যে উপাদান গুলো রয়েছে সেগুলো আমাদের শরীরের
ক্যান্সারের সেল গুলোকে নষ্ট করতে সাহায্য করে। যেহেতু ক্যান্সারের সেলগুলো
ড্যামেজ করতে মধু সাহায্য করে সেই কারণে নিয়মিত মধু পান করলে ক্যান্সারের
ঝুঁকি কম হয়। ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে নিয়মিত পানির সাথে অথবা এমনি খালি মধু
আপনি খেতে পারেন।
হার্ট ভালো রাখেঃ নিয়মিত মৌরি এবং মধু একসাথে মিশিয়ে খেলে এই মিশ্রণটি হার্ট
ভালো রাখার ক্ষেত্রে খুব ভালো কাজ করে এবং হার্টের কার্যক্ষমতা ও বৃদ্ধি করে।
রক্তস্বল্পতা দূর করেঃ মধুর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন , ক্যালসিয়াম এবং
ভিটামিন বি কমপ্লিট এই কারণে নিয়মিত মধু খেলে শরীরের হিমোগ্লোবিন ঠিক থাকে এবং
রক্তস্বল্পতা দূর হয়।
ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস হালকা কুসুম গরম পানির সাথে এক
থেকে দুই চামচ মধু মিশিয়ে খেলে যাদের অতিরিক্ত ওজন তাদের ওজন কমাতে এটি সাহায্য
করে। গরম পানি এবং মধুর মধ্যে যদি লেবু মিশিয়ে দেওয়া যায় তাহলে এটি আরো দ্রুত
এবং ভালো কাজ করবে।
খারাপ কোলেস্টেরল দূর করেঃ খালি পেটে হালকা কুসুম গরম পানির সাথে লেবু মিশিয়ে
রেগুলার পান করলে এটি শরীরের খারাপ কোলেস্ট্রল দূর করে এবং রক্ত পরিষ্কার
রাখুন।
হজমে সহায়তা করেঃ পাকস্থলীর সমস্যা দূর করার জন্য নিয়মিত মধু পান করা খুবই
জরুরী। যাদের হজমে সমস্যা রয়েছে তারা যদি নিয়মিতভাবে মধু পান করেন তাহলে হজমের
সমস্যা থেকে দ্রুত সরে উঠতে পারবেন। কারণ মধু হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করতে
সাহায্য করে
ত্বকের লাবণ্য বৃদ্ধি করেঃ মধুর মধ্যে রয়েছে প্রথম পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
যা ত্বকের তারণ্য ধরে রাখতে এবং ত্বকের লাবণ্য বৃদ্ধি করতে ভীষণ উপকারী একটি
উপাদান। এ কারণে নিয়মিত মধু পানের ফলে ভেতর থেকে আপনার ত্বকের লাবণ্য বৃদ্ধি
পায় এবং ত্বকের কুঁচকে যাওয়া ভাব দূর করে।
শিশুদের দৈহিক ও মানসিক বিকাশ সাধন করেনঃ প্রতিদিন সকালে অথবা রাতে
ঘুমানোর আগে পানির সঙ্গে মিশিয়ে মধু পান করলে এটি মস্তিষ্কের কাজ সঠিকভাবে
পরিচালনা করতে সাহায্য করে যার ফলে শিশুদের দৈহিক ও মানসিক বিকাশ
সাধন হয়।
হাড় গঠনে সহায়তা করেঃ মধুর মধ্যে যেহেতু প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম
থাকে আর আমরা সকলেই জানি যে ক্যালসিয়াম হাড় গঠনে এবং হাড় শক্ত করতে
সাহায্য করে। এ কারণে প্রতিদিন মধু খাওয়ার অভ্যাস করলে শরীরের হাড় গঠনের মধু
সহায়তা করবে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করেঃ নিয়মিত মধু খেলে শরীরের শর্করার মাত্রা ঠিক থাকে এবং
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে মধু খুব ভালো কাজ করে। মধু যেহেতু প্রাকৃতিক ভাবেই
মিষ্টি সেই কারণে পরিমিত পরিমাণে মধু খেলে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য একটি
উপকারী।
শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা দূর করেঃ বহু কাল থেকে শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা দূর করার
জন্য মধু ব্যবহার হয়ে আসছে। কারো যদি শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা হয় তাহলে খাঁটি
মধুর নাখের কাছে এনে শ্বাস টানলে এটি শ্বাসকষ্টের রোগী ক্ষেত্রে ভীষণ আরাম
দেয়।
যৌন দুর্বলতা দূর করেঃ ছোলা এবং মধু একসাথে মিশিয়ে খেলে এটি পুরুষদের যৌন
দুর্বলতা দূর করতে কাজ করে। ছোলা এবং মধু দুটোই যেহেতু প্রাকৃতিক উপাদান সেই জন্য
এটি নির্ভয়ে আপনি খেতে পারেন এতে ওষুধের মতন কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হওয়ার
ভয় থাকে না।
অনিদ্রা দূর করেঃ বিভিন্ন কারণেই অনেকের অনিদ্রার সমস্যা হতে দেখা যায় এটি হতে
পারে কোন অসুখের কারণে অথবা পার্থক্য জনিত কারণে যাদের অনিদ্রার সমস্যা রয়েছে
তারা যদি রাতে ঘুমানোর আগে পানির সঙ্গে মধু মিশিয়ে খান তাহলে এটি আপনার
তাড়াতাড়ি ঘুম আসছে সাহায্য করবে।
হাঁপানি রোগ দূর করেঃ হাঁপানি রোগ দূর করার জন্য গোলমরিচের গুঁড়া এবং মধু
একসাথে মিশিয়ে খেলে হাঁপানি রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করা যায়।
দাঁতের ব্যথা ও প্রদাহ দূর করেঃ মধুতে রয়েছে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান এবং
হাইড্রোজেন পার অক্সাইড এই দুটি উপাদান দাঁতকে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে
রক্ষা করে এবং দাঁতের ব্যথা ও প্রদাহ দূর করতে সাহায্য করে।
আমাশয় ও পেট ব্যথা দূর করেঃ নিয়মিত মধু পান করলে পুরাতন আমাশয় ও পেট ব্যথার হাত
থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। যাদের পুরাতন আমাশয় এবং পেটের ব্যথার সমস্যা রয়েছে
তারা নিয়মিত সকালবেলা মধু পান করুন।
এছাড়াও আরও বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা রয়েছে মধুর মধ্যে যেমন মধু চুল এবং চোখ ভালো রাখে , কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে , গলার স্বর সুন্দর করে, পাকস্থলী সুস্থ রাখে , পানি শূন্যতা দূর করে , পেশির শক্তি বৃদ্ধি করে , দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করে এক কথায় বলতে গেলে মধুর মধ্যে যাবতীয় গুণ রয়েছে।
রাতে মধু খাওয়ার উপকারিতা
রাতে ঘুমানোর আগে মুখে খেলে এটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ম্যাজিকের মতন কাজ করে।
আপনি যদি রাতে মধু খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে অবগত না থাকেন তাহলে আপনার এখনই
জেনে নেওয়া উচিৎ রাতে মধু খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে। চলুন তাহলে দেরি না করে
শুরু করা যাক রাতে মধু খেলে আপনি কি কি উপকারিতা পেতে পারেন সে সম্পর্কে।
আরো পড়ুনঃবাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা - কাঁচা বাদামের উপকারিতা
রাতে হালকা গরম পানির সাথে মধু খেলে আপনি গলা ব্যাথার সমস্যা থেকে উপশমও পেতে পারেন, এছাড়াও রাতে মধু আপনার দাঁতের বিভিন্ন ধরনের ফ্লাক তৈরি করতে বাধা দেবে এবং আপনার এলার্জি সমস্যা থাকলে সেই এলার্জি সমস্যা দূর করতেও খুব ভালো কাজ করবে রাতে মধু সেবন করা। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক গ্লাস পানির ভেতরে একটা চামচ মধু দিয়ে পান করলে এটি আপনার রাতের সাউন্ড স্লিপ করার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে।
রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মধু খেলে এটি আপনার ত্বককে ভিতর থেকে উজ্জ্বল হতে
সাহায্য করে। রাতের বেলা ঘুমানোর আগে গরম পানি অথবা গরম দুধের মধ্যে মধু মিশিয়ে
খেলে এটি চুল পড়া রোধ করে , ব্রণের সমস্যা দূর করে এবং দৃষ্টি শক্তি বাড়াতেও
সাহায্য করে। রাত্রে ঘুমানোর আগে মধু পান করলে এটি মানসিক দুশ্চিন্তা দূর
করতেও বেশ ভালো কাজ করে হলে সারাদিন অনেকটাই চিন্তা মুক্ত বা মানসিক চাপ
মুক্ত থাকা যায়। রাতের বেলা ঘুমানোর আগে মধু খেলে গলা ব্যথা এবং কফের সমস্যা
থেকে বেশ ভালো উপকার পাওয়া যায়।
সকালে মধু খাওয়ার উপকারিতা
উপরের অংশে আমরা এতক্ষণ আলোচনা করলাম রাতের বেলা মধু খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক সকালে মধু খাওয়ার উপকারিতা গুলো সম্পর্কে। রাতের বেলা মধু খাওয়ার যেমন বিশেষ কিছু উপকারিতা হয়েছে তেমন সকালে মধু খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে। সকালে মধু খাওয়ার উপকারিতা।
আপনি যদি সকালবেলা হালকা কুসুম গরম পানিতে মধু এবং লেবুর রস মিশিয়ে খান তাহলে
এটি আপনার লিভারের টক্সিন দূর করতে সাহায্য করবে এবং আপনার অতিরিক্ত ওজন কমাতেও
সাহায্য করবে। সকালবেলা মধু খেলে যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা রয়েছে তারা
কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা থেকে রেহাই পাবে এবং সারাদিন শরীর সতেজ এবং কর্মদম থাকবে।
সকালবেলা মধুর জল পান করলে শরীরে প্রচুর শক্তি পাওয়া যায় কারণ মধুর মধ্যে
রয়েছে প্রাকৃতিক সুগার আর আমরা সকলেই জানি সুগার বা চিনি আমাদের শরীরের শক্তি
জোগাতে সাহায্য করে।
মেয়েদের মধু খাওয়ার উপকারিতা
এবার আমরা জানবো মেয়েদের মধু খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে। মধু খেলে মেয়েদের
শরীরে যে যে পরিবর্তনগুলো লক্ষ্য করা যায় সেগুলো হল,
- ইমিউনিটি বৃদ্ধি করে
- একটুতেই ঠান্ডা লাগা থেকে দূরে রাখে
- আলসার নিরাময় করে
- গর্ভবতী মেয়েদের ক্ষেত্রে মধু খেলে শিশুর শারীরিক এবং মানসিক বিকাশ দ্রুত হয়
- মেয়েদের জন্য স্বাস্থ্য ঠিক রাখে এবং সেক্স ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
- ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি করে
- নিয়মিত মধু পান করলে মেয়েদের চেহারার তারুণ্য বজায় থাকে এবং ভিতর থেকে উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়
- নিয়মিত মধু পান করলে মেয়েদের স্ক্রিন সুন্দর হয় এবং চুল পড়া রোধ হয় ও চুলের বিভিন্ন সমস্যা দূর হয়।
ছেলেদের মধু খাওয়ার উপকারিতা
উপরে অংশে আমরা আলোচনা করেছি মেয়েদের মধু খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে এবার আমরা
জানবো ছেলেদের মধু খাওয়ার উপকারিতা তাহলে আর দেরি না করে চলুন জেনে নেওয়া যা
ছেলেদের মধু খাওয়ার উপকারিতা গুলো কি কি
- সকালবেলা পানির সাথে মধু পান করলে ছেলেদের যৌন সমস্যা দূর হয়
- পুরুষদের শরীরে যে টেস্টোস্টেরন হরমোন রয়েছে মধু পানের ফলে এই হরমোন নিঃসরণের মাত্রা বৃদ্ধি পায়
- মধু পান করলে পুরুষদের দীর্ঘক্ষণ যৌন সঙ্গমের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
- পুরুষের শুক্রাণুর সংখ্যা বৃদ্ধি করে
- পুরুষদের পেশি গঠনে সহায়তা করে
মধু খাওয়ার সঠিক সময়
আমাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছে যারা মধু খাওয়ার সঠিক সময় না জেনে দিনের মধ্যে যখন
তখন দু-এক চামচ মধু খেয়ে ফেলে। যখন তখন মধু খাওয়া এটি আসলে মধুখর সঠিক নিয়ম
নয়। আপনি যদি মধু খাওয়ার মাধ্যমে আপনার শরীরের বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য
উপকারিতা পেতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই মধু খাওয়ার সঠিক সময় জেনে মধু খেতে হবে।
আসুন তাহলে মধু খাওয়ার সঠিক সময় গুলো জেনে নেওয়া যাক
মধু খাওয়ার সঠিক এবং সবচেয়ে উত্তম সময় হলো সকালে ঘুম থেকে উঠে এবং রাতে
ঘুমোতে যাওয়ার আগে , তবে অবশ্যই দুটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যে সকালে ঘুম থেকে
উঠে একেবারে খালি পেটে মধু খাওয়া যাবেনা মধু খাওয়ার খানিকটা পানি খেয়ে
নিতে হবে এরপর খালি অথবা হালকা কুসুম গরম পানিতে মধু মিশিয়ে খেতে হবে সকালে খালি
মধু খাওয়ার চাইতে হালকা কুসুম গরম পানিতে মধু মিশিয়ে খাওয়ার উপকারিতা বেশি। আর
রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মধু খেতে হলে অবশ্যই আপনাকে রাতের খাবার শেষ করার
কমপক্ষে ২/৩ ঘন্টা পরে মধু খেতে হবে।
ইসলামে মধু খাওয়ার নীতি নিয়ম
আমাদের ইসলাম ধর্মে মধু খাওয়ার ব্যাপারে তাগিদ রয়েছে । ইসলাম ধর্মের মধু
খাওয়ার ব্যাপারে এ কথাও বলা রয়েছে যে মধু হলো সকল অসুখের ঔষধ শুধুমাত্র মৃত্যু
ব্যতীত। ইসলামের মধু খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বলা রয সকালে মধু খাওয়ার জন্য।
রাসূলুল্লাহ (সা) নিজেও খালি পেটে মধুর শরবত পান করতে বিশেষ করে সকালবেলা
এবং সকাল বেলা খালি পেটে মধু খাওয়া সম্পর্কে তিনি বলেন-কেউ যদি মাসে ৩ দিন
সকাল বেলা খালি পেটে চেটে চেটে মধু সেবন করে তাহলে তার কোন বড় ধরনের রোগ হবে
না।
মধু সম্পর্কিত হাদিস
মধু শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি ঔষধ পবিত্র কুরআন থেকে জানা যায় যে মধুর
মধ্যে রয়েছে যাবতীয় সকল রোগের ঔষধ। কুরআনে আল্লাহ পাক বলেন-মৌমাছির পেট থেকে
নির্গত তরল পদার্থের মধ্যে মানুষের সকল রোগের প্রতিরোধ ব্যবস্থা রয়েছে (সূরা
আল নাহাল, আয়াত;৬৯)। এবং হাদিসেও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মধু
খাওয়ার ব্যাপারে তাগিদ দিয়েছেন। নবীজি(সা) নিজে মধু খেতেন এবং অন্যদেরকেও মধু
খাওয়ার পরামর্শ দিতেন।
মহানবী (সা) বলেছেন-মৃত্যু ছাড়া সকল রোগের মহা ঔষধ হচ্ছে মধু। এবং এ কথাটি এখন
বিজ্ঞানের মাধ্যমেও প্রমাণিত হয়ে গেছে।
অন্য একটি হাদিস থেকে জানা যায়-কোন রোগীকে মধু খাওয়ানো হলে ধীরে ধীরে সে রুগী
সুস্থ হয়ে ওঠে(বায়হাকি , হাদিস ৩৪৫ , আস সুনানুল সুগরা , হাদিস ৩৯৫৮)
রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন-যদি কোন ব্যক্তি মাসে ৩ দিন সকালে খালি পেটে মধু
চেটে চেটে খায় তবে সে যে কোন ধরনের বড় রোগ থেকে দূরে থাকবে (ইবনে মাজাহ; হাদিস
৩৪৪১)
মহানবী(সা) বলেন-সকল পানীয়র মধ্যে উত্তম পানীয় হলো মধু (ইবনে মাজাহ,হাকেম)
রাসুলুল্লাহ(সা) -আল্লাহর শপথ করে বলেন যে ঘরে মধু রয়েছে সেই ঘরে অবশ্যই
ফেরেশতারা আসে এবং সেই ঘরের বাসিন্দাদের জন্য মাগফিরাতের কামনা করেন। এবং কোন
ব্যক্তি যদি পেটে মধু থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে তবে তাকে জাহান্নামের আগুন
স্পর্শ করবে না (নিয়ামুল কোরআন)
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর বর্ণনা থেকে জানতে পাওয়া যায়-মধু নবীজি
(সা) খুব প্রিয় একটি খাবার ছিল (সহিহ বুখারী হাদিসঃ৫২৪৮)
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ(রা) থেকে একটি হাদিসের বর্ণনা পাওয়া যায়, যেখানে নবীজি
(সা) বলেছেন-বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তোমরা দুইটি জিনিসকে
প্রয়োজনীয় করে নয় । এই জিনিস দুটি হল মধু এবং কুরআন কারণ এই দুইটির মধ্যে
রয়েছে সকল রোগের ঔষধ।
মধু খাওয়ার অপকারিতা
এতক্ষণ আমরা শুধু মধুর উপকারিতার কথা শুনে এসেছি এবার আমরা মধু খাওয়ার অপকারিতা গুলো সম্পর্কে জানব চলুন তাহলে জেনে আসা যাক মধু খাওয়ার অপকারিতা গুলো সম্পর্ক। মধুর অনেক গুনাগুন আছে বলেই যখন তখন যত ইচ্ছা তত মধু খাওয়া যাবে না এতে আপনার শরীরে উপকারের চাইতে বেশি উপকারিতা দেখা দিতে পারেযেমন, দিনের মধ্যে যখন তখন মধু খাওয়ার অভ্যাস থাকলে এটি আপনার পেটের এসিডিটি বা গ্যাসের সমস্যা বৃদ্ধি করতে পারে।
আরো পড়ুনঃ আম খেলে কোন কোন রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
এ কারণে আপনাকে মধু খেতে হবে সকালে এবং রাতে। আমরা পোস্টের আলোচনার কোন এক অংশে জানতে পেরেছি যে মধু হলো প্রাকৃতিক চিনি কিন্তু প্রাকৃতিক চিনি বলেই এটি অতিরিক্ত খাওয়া উচিত নয় কারণ আমরা সকলেই জানি চিনিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালোরি, তাই আপনি যদি অতিরিক্ত মধু খান তাহলে আপনার শরীরের ওজন বেড়ে যেতে পারে এবং আপনি যদি ডায়াবেটিসের রোগী হয়ে থাকেন তাহলে অতিরিক্ত মধু খেলে আপনার ডায়াবেটিস এর মাত্রাও বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও অতিরিক্ত মধু খেলে লিভারের সমস্যা, স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া , ক্যান্সারের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাওয়া ইত্যাদি সমস্যা ও বেড়ে যেতে পারে।
মন্তব্য, উপরের আলোচনা মাধ্যমে স্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে মধুর ম
অহনধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ এর ক্ষমতা এবং মধু খাওয়ার
উপকারিতাও অনেক বেশি। কিন্তু মধুর মাধ্যমে আপনি যদি আপনার শারীরিক বিভিন্ন জটিলতা
, অসুবিধা , রোগ সারাতে চান তাহলে আপনাকে সংগ্রহ করতে হবে খাঁটি মধু। বর্তমান
যুগে খাঁটি মধু সংগ্রহ করা খুবই একটি কঠিন কাজ হয়ে উঠেছে। তাই আপনাকে মধু
খাওয়ার ব্যাপারে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে এবং টেস্ট করে নিতে হবে আপনি যে মধুটি
খাচ্ছেন, সেটি খাঁটি নাকি ভেজাল। অবশ্যই আপনি যদি খাঁটি মধু সংগ্রহ করে খেতে না
পারেন তাহলে কখনোই মধুর উপকারিতা গুলো আপনি পাবেন না। আশা করছি এ ব্যাপারটি
ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন।
নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url