তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত - তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম

আল্লাহর কাছে নফল ইবাদত গুলোর মধ্যে সবচাইতে বেশি পছন্দের ইবাদত হচ্ছে তাহাজ্জুদের নামাজ। তাহাজ্জুদ নামাজ নবীজি নিজে আদায় করতেন এবং অন্যকে তাহাজ্জুদ নামাজের আদায়ের পরামর্শ দিতেন। এই পোস্টের মাধ্যমে আমরা জানবো তার জন্য নামাজের ফজিলত, তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত সম্পর্কে।


তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত করার সময় যদিও আমরা সুন্নত নামাজের হিসেবে নিয়ত করি কিন্তু তারপরেও এটি নফল নামাজ। তাহাজ্জুদ নামাজ না পড়লে কোন গুনাহ হয় না কিন্তু তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়কারী অশেষ সওয়াবের অধিকারী হয়ে থাকে। এমনকি ধর্মীয় গ্রন্থ থেকে এরকম কথাও জানতে পারা যায় যে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়কারীর দোয়া আল্লাহ ফিরিয়ে দেন না। আপনার যদি তাহাজ্জুদ নামাজ সম্পর্কে জানা না থাকে তাহলে এই পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার মাধ্যমে জেনে নিতে পারেন তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত , তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম , তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত সম্পর্কে।

সূচিপত্রঃতাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত - তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম

তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত

তাহাজ্জুদ অর্থ হল ঘুম থেকে ওঠা । মধ্যরাতে ঘুম থেকে উঠে আল্লাহ খুশির জন্য যে নামাজ পড়া হয় তাকে তাহাজ্জুদ নামাজ বলে। তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত বা মর্যাদা অন্যান্য নফল নামাজের চাইতে অনেক বেশি। তাহাজ্জুদের ফজিলত বর্ণনা করতে যেয়ে নবীজি (সা) বলেছেন-নফলের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম নামাজ হল তাহাজ্জুদ এর নামাজ।(মুসলিম শরীফ, তিরমিজি , নাসাঈ)। বিভিন্ন আলেম এবং ধর্মীয় বই পুস্তকগুলো থেকে জানা যায় যে যে সকল শ্রেণীর লোকজন বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে তাদের মধ্যে একদল হবে যথাযথভাবে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায়কারী।

কুরআনেও সূরা মুজাম্মিল এবং আরো বেশ কয়েকটি সূরার মধ্যে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ার তাগিদ রয়েছে। তাহাজ্জুদের ফজিলত বর্ণনা করে শেষ করার মতন না, তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়কারীর দোয়া আল্লাহ কবুল করেন। আরামের ঘুম ত্যাগ করে আল্লাহর খুশির উদ্দেশ্যে মধ্যরাতে উঠে যারা তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে তাদের দোয়া আল্লাহ পাক ফিরান না। শেষ রাতে, আল্লাহ পাক শেষ আসমানে এসে তার বান্দাদেরকে ডেকে বলেন-কেউ কি আছো অভাবী, আমি অভাব দূর করে দেব। কেউ কি আছো বিপদগ্রস্ত, আমি বিপদ দূর করে দেব। কেউ কি আছো আক্রান্ত, আমি অসুখ দূর করে দেবো।

আরো পড়ুন ঃ আকিকার নিয়ম ও আকিকার দোয়া।

এই সময় আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে যারা নামাজের উদ্দেশ্যে পাক-পবিত্র হয়ে ইবাদতে তাদের দোয়া আল্লাহ কবুল করে নেন। হযরত মোহাম্মদ(সা) এর ওপর তাহাজ্জুদের নামাজ ফরজ ছিল। তাই কোন সময় যদি তাহাজ্জুদের নামাজ ছুটে যেত তাহলে নবীজি পরবর্তীতে সেই নামাজের কাজা আদায় করে নিতেন। তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ার সম্পর্কে কুরআনে আল্লাহ পাক বলেন-হে বস্ত্রাদৃত (মোহাম্মদ) রাতের কিছু অংশ ছাড়া রাত জাগরণ কর, অর্ধ রাত বা তদুপেক্ষা কম , অথবা তদপেক্ষা কিছু বেশি করে।(সূরা মুজাম্মেল, আয়াত; ১ ও ২)।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম

এবার আমরা আলোচনা করব তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম সম্পর্কে। তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম বলতে বিশেষ কিছু নেই। প্রথমে দুই রাকাত সুন্নত নামাজের নিয়ত করতে হবে, তারপর যথা নিয়মে তাকবীরে তাহরীমা পড়ে হাত বাধতে হবে সূরা সানা পড়ে সুরা ফাতিহা এবং সূরা ফাতিহার সাথে অন্য একটি সূরা মিলিয়ে পড়তে হবে তারপর রুকু, সিজদা এইভাবে প্রথম রাকাত নামাজ শেষ করে দ্বিতীয় রাকাতে প্রথম রাকাতের মতই সূরা ফাতিহা এবং অন্য একটি সূরা , রুকু - সিজদা , শেষ বৈঠক এবং সালাম ফিরানোর মধ্যে দিয়ে দুই রাকাত নামাজ শেষ করতে হবে।

তাহাজ্জুদের নামাজ যে কোন সূরা দ্বারা পড়া গেলেও বিভিন্ন রেওয়াতে বিভিন্ন ধরনের নিয়ম লেখা রয়েছে। তাহাজ্জুদ নামাজের এই রেওয়ায়াতগুলো নিজে তুলে ধরা হলো। তবে অবশ্য বিভিন্ন হাদিস থেকে এটিও জানা যায় যে কোন নামাজের জন্য কোন সূরাকে নির্দিষ্ট করে নেওয়া জায়েজ নেই।কোন কোন রে ওয়াতে তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম সম্পর্কে লেখা রয়েছে যে, প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পরে সূরা ইখলাস তিনবার পড়তে হয়। 

আরো পড়ুনঃ যাকাত কি ,যাকাত দেয়ার নিয়ম

আবার অন্য এক রেওয়াত থেকে জানতে পারা যায় যে সূরা ফাতিহার পরে সূরা ইখলাস তিনবার পড়ার বদলে "আলাম নাশরাহ" করে এই নামাজ আদায় করতে। অনেক বুযুর্গানের মতে মতে সূরা ফাতিহার পরে একবার আয়াতুল কুরসি পাঠ করে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তে হয়। আবার অনেক  বুজুর্গগান মনে করেন  তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করার জন্য - প্রথম রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সূরা ইখলাস ১২ বার , দ্বিতীয় রাকায়াতে ১১ বার , তৃতীয় রাকাতে ১০ বার , চতুর্থ রাকাতে ৯ বার, এইভাবে আস্তে আস্তে কমাতে হবে।

তবে কুরআন এবং হাদিসের কোন জায়গাতেই নির্দিষ্ট করে কোন সূরা দেওয়া নাই তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের জন্য। হাদিসে যেহেতু তাহাজ্জুদ নামাযের জন্য কোন নির্দিষ্ট সুরার কথা বলা নেই সেহেতু যে কোন সূরা দিয়ে তার জন্য নামাজ আদায় করা যাবে।

তাহাজ্জুদ নামাজের রাকায়াত

তাহাজ্জুদ নামাজ অত্যন্ত ফজিলত পূর্ণ নামাজ সকল নফল নামাজের মধ্যে তাহাজ্জুদের নামাজ আল্লাহর কাছে বেশি পছন্দের। নিয়মিতভাবে যথাযথ নিয়মে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে আল্লাহর কাছে কিছু চাইলে আল্লাহ দোয়া কবুল করে নেন। এবার আমরা জেনে নেব তাহাজ্জুদ নামাজের রাকাত সম্পর্কে। তাহাজ্জুদ নামাজের রাকাতের মোট সংখ্যা হল ১২। বিভিন্ন গ্রন্থ থেকে এটি জানতে পারা যায় যে নবীজি ১২ রাকায়াত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতেন। এবং এই ১২ রাকাত নামাজে সূরা গুলো এতই দীর্ঘ বা বড় হত যে নামাজে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে নবীজির পা মোবারক পর্যন্ত ফুলে যেত। তবে তাহাজ্জুদ নামাজ ১২ রাকাত হলেও দুই রাকাত দুই রাকাত করে ৪ ,৬,৮ বা ১০ রাকাত নামাজ আদায় করা যাবে তবে সর্বনিম্ন চার রাকাত নামাজ আদায় করা উচিত।

তাহাজ্জুদ নামাজের সময়

এবার জেনে নিন তার জন্য নামাজের সময় সম্পর্কে। তার্জুস নামাজের সময় সম্পর্কে আপনি যদি সঠিক ধারণা না থাকে তাহলে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই , এখুনি জানিয়ে দিচ্ছি তাহাজ্জুদ নামাজের সময় অর্থাৎ তাহাজ্জুদ নামাজ কোন সময় পড়বেন। তাহাজ্জুদ শব্দের অর্থই হলো নিদ্রা থেকে জাগরণ অর্থাৎ তাহাজ্জুদ নামাজ এর মানে হল রাতের কিছু অংশ ঘুমিয়ে উঠে এই নামাজ আদায় করা। তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার উত্তম সময় হলো রাত বারোটার পর থেকে সুবহে সাদিক অর্থাৎ ফজরের আজানের আগ পর্যন্ত। তবে কারো যদি রাত্রে উঠে পড়ার মতন পরিস্থিতি বা সম্ভাবনা না থাকে তাহলে এশার নামাজের পর বেতরের নামাজের আগেও তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া যাবে। তবে তাহাজ্জুদ নামাজ মধ্যরাতে অথবা শেষ রাতে পড়া সর্বোত্তম।

মন্তব্য, তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়কারীর সওয়াব যেহেতু অনেক বেশি এবং এই নামাজটি আল্লাহর অত্যন্ত পছন্দের নামায সুতরাং আমাদের উচিত যথাসাধ্য তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করেন। একটু কষ্ট হলেও আমাদের উচিত গভীর রাতে উঠে আমাদের গুনাহের জন্য আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করার এবং তার জন্য আমার আদায় করার । আর আপনারা যাতে করে তাহাজ্জুদ নামাজ ঠিকভাবে বা ঠিক সময় অনুযায়ী তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতে পারেন এই কারণে এই পোস্টের আলোচনার মাধ্যমে আপনাদেরকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম , তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত , তাহাজ্জুদ নামাজের রাকাত এবং তাহাজ্জুদ নামাজের সময় সময় সম্পর্কে। আশা করছি যথাযথ নিয়মে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে অশেষ সওয়াবের অধিকারী হবেন। আমাদের সকলকে আল্লাহ পাক তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের তৌফিক দান করুন (আমিন)।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url