কোলন ক্যান্সার কোথায় হয় - কোলন ক্যান্সারের লক্ষণ - কোলন ইনফেকশনের লক্ষণ

কোলন ক্যান্সার অত্যন্ত জটিল এবং প্রাণঘাতী একটি রোগ। প্রতিবছর দিচ্ছে হাজার হাজার নারী পুরুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। প্রাণঘাতী এই কোলন ক্যান্সার থেকে রক্ষা পেতে হলে অবশ্যই জানতে হবে কোলন ক্যান্সারের লক্ষণ,কোলন ইনফেকশনের লক্ষণ, কোলন ক্যান্সার কোথায় হয় এবং ক্যান্সার থেকে বাঁচার উপায়। আর এই বিষয়গুলো যদি ভালোভাবে জানতে চান তাহলে অবশ্যই এই পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।


যে কোন ক্যান্সারের নাম শুনলেই আমাদের মধ্যে একটা ভয় বা আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। ক্যান্সার যদিও একটি আতঙ্কের বিষয় তারপরেও যদি সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত বা চিকিৎসা নেওয়া যায় তাহলে কোলন ক্যান্সার থেকে অনেকাংশেই রেহাই বা মুক্তি পাওয়া সম্ভব। এখন পর্যন্ত অনেকে হয়তো জানেনই না কোলন ক্যান্সার কোথায় হয়, কোলন ক্যান্সারের লক্ষণ এবং কোলন ক্যান্সার থেকে মুক্তির উপায়। তাই পোস্টের মাধ্যমে সকলকে সচেতন করার জন্য আলোচনা করা হবে, কোলন ক্যান্সার সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়। ঠিক পোস্টের মধ্যে কোলন ক্যান্সার বিষয়ক বিভিন্ন তথ্যের পাশাপাশি কোলন ইনফেকশনের লক্ষণ গুলো জেনে নিতে পারবেন, তাই আর দেরি না করে সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়তে থাকুন।

সূচিপত্রঃ কোলন ক্যান্সার কোথায় হয় - কোলন ক্যান্সারের লক্ষণ - কোলন ইনফেকশনের লক্ষণ

কোলন ক্যান্সার কোথায় হয়

কোলন ক্যান্সার কেন হয় বা কোলন ক্যান্সারের লক্ষণ এই বিষয়গুলো জেনে নেওয়ার আগে ,আমাদের জানতে হবে কোলন ক্যান্সার কোথায় হয়। আপনি যদি না জানেন তাহলে জেনে নিন ক্যান্সার কোথায় হবে। কলম ক্যান্সার যেই স্থানটিতে হয় সেই স্থানটির নাম হলো মলাশয়। আর মলাশয় কি রয়েছে আমাদের পরিপাকতন্ত্রের বৃহদান্ত্রের পরের অংশে যেখান থেকে শুরু করে পায়ুপথের শেষ পর্যন্ত মলাশয় বিস্তৃত। কোন কারনে এই মোলাশয় টিউমার দেখা দিল, এই টিউমার ধীরে ধীরে পরবর্তীতে ক্যান্সারে রুপ নেয়। তাহলে বুঝতেই পারছেন, কোলন ক্যান্সার হয় দেরি নাই নিচে থাকা অংশ মলাশয়ে ক্যান্সার জটিল একটি রোগ ,বয়স 40 থেকে 50 ফের হলেই এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অত্যন্ত বেড়ে যায়। আশা করি বলুন ক্যান্সার কোথায় হয় এই অংশটুকু পড়ে বুঝতে পেরেছেন।

কোলন ক্যান্সার কেন হয়

সাধারণত একটু বয়স বেশি হলে কোলন ক্যান্সারে সম্ভাবনা দেখা দেয় , তবে বর্তমানে আমাদের খাদ্যাভ্যাস এবং অনিয়মতান্ত্রিক চলাফেরার কারণ অল্প বয়স্কদের মধ্যেও কলম ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা বাড়তে দেখা যাচ্ছে। কোলন ক্যান্সারের প্রতিরোধের জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণের পূর্বে আমাদেরকে অবশ্যই জেনে নিতে হবে কোলন ক্যান্সার কেন হয় বা কোন ক্যান্সার হওয়ার কারণগুলো। কারণ যখন আমরা কোলন ক্যান্সার হওয়ার কারণগুলো জানবো তখনই এই রোগ প্রতিহত করার জন্য আগে থেকেই সচেতন অথবা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবো। আপনার যদি জানা না থাকে কোলন ক্যান্সার কেন হয় তাহলে এই বিষয়টি অবহেলা না করে এখনই অথবা খুব দ্রুত জেনে নেওয়া উচিত কলম ক্যান্সার কেন হয় বিষয়টি। চলুন তাহলে করুন ক্যান্সার কেন হয় এই বিষয়টি নিয়ে আপনাদের সাথে আলোচনা করা যাক।

বংশগত কারণেঃ কোলন ক্যান্সার হওয়ার একটি অন্যতম কারণ হলো বংশগতি। বংশে যদি কারো কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাস থাকে তাহলে জিনগত কারণে এটি বংশ পরম্পরায় সকলের মাঝে হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

মলদ্বারের বিভিন্ন সমস্যাঃ মলদ্বারের যে কোন সমস্যা থেকে কোলন ক্যান্সারের সৃষ্টি হতে পারে , যেমন-পাইলস ,ফিস্টূলা ইত্যাদি রোগগুলো থেকে কোলন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

আরো পড়ুনঃ পিত্তথলি পাথর কেন হয় ও পিত্তথলির পাথরের লক্ষণ

কোষ্ঠকাঠিন্যঃ কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থকেও হতে পারে কোলন ক্যান্সার। যারা অতিরিক্ত রেডমিট যেমন-গরু, ছাগল , মহিষ ইত্যাদির মাংস খায় এবং আঁশযুক্ত খাবার কম খায়, তাদের ক্ষেত্রে কোষ্ঠকাঠিন্যের অসুবিধা বেশি মাত্রায় দেখা যায় এবং এই জাতীয় মানুষেরা কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকিতে বেশি থাকে।

অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণঃ অস্বাস্থ্যকর এবং ভাজাপোড়া খাবার গ্রহণের ফলে বাড়তে পারে কোলন ক্যান্সারের যুক্তি। কারণ অস্বাস্থ্যকর খাবার গুলো গ্রহণ করার ফলে দেখাতে পারে ডায়রিয়া অথবা কোষ্ঠকাঠিন্য। অনেক সময় ভাজাপোড়া এবং অস্বাস্থ্যকর খাবার গুলো খাওয়ার ফলে পেটে অতিরিক্ত এসিডিটি হয়ে থাকে আর অতিরিক্ত এসিডিটি থেকে হতে পারে পেটের আলসার যা পরবর্তীতে রূপ নিতে পারে কোলন ক্যান্সারে।

এছাড়াও, অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস , আলসারেটিভ কোলাইটিস নামক অসুখ ,অতিরিক্ত ওজন এবং ধূমপানের কারণে তৈরি হয় কোলন ক্যান্সার। আশা করছি কোলন ক্যান্সার হওয়ার কারণগুলো বুঝতে পেরেছেন।

কোলন ক্যান্সারের লক্ষণ

প্রতিনিয়ত তরুণ যুবকদের মাঝে কোলন ক্যান্সার বিস্তার লাভ করায় কোলন ক্যান্সারের লক্ষণ গুলো সম্পর্কে সকলেরই জেনে রাখা উচিত। কারণ কোলন ক্যান্সারের লক্ষণ গুলো জানা থাকলে তবেই আমরা সঠিক সময়ে এই রোগের ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারব। যেকোনো বড় বড় রোগের ক্ষেত্রেই দেখা যায় এই রোগ গুলো শরীরের অভ্যন্তরে নিজেদের অজান্তেই বাসা বাঁধে তাই শুরুতে এরকম কোন লক্ষণ বোঝা না গেলেও , রোগের একপর্যায়ে এসে বেশ কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। শারীরিক যে সকল পরিবর্তন বা লক্ষণ গুলোর মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন , যে আপনি কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারেন সেই সকল সম্ভাব্য লক্ষণগুলো আজকে আপনাদের সামনে প্রকাশ করা হবে। আপনারা যদি কোলন ক্যান্সারের লক্ষণ গুলো সম্পর্কে না জেনে থাকেন এবং জানতে চান তাহলে এর লক্ষণ গুলো ভালোভাবে জেনে নিন।

কোলন ক্যান্সার সাধারণত মলাশয় বা কোলনের ভেতরে ছোট ছোট পলিপস আকারে মাংসপিণ্ড হওয়ার মধ্যে দিয়ে ধাপে ধাপে ক্যান্সারে পরিণত হয়। এবং একপর্যায়ে এসে এর কিছু পরিবর্তন বা লক্ষণ উপলব্ধি করা যায়, কোলন ক্যান্সারের অবস্থান এবং ক্যান্সারের স্টেজ অনুযায়ী এই রোগের লক্ষণগুলো কিছুটা কম বেশি বা তারতম্য দেখা দিতে পারে। তবে কোলন ক্যান্সারের সম্ভাব্য লক্ষণগুলো হল,

  • ডায়রিয়া হওয়া অথবা কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেওয়া
  • মলের সাথে কালকে রঙের রক্ত যাওয়া
  • মলের সাথে মিউকাস যাওয়া
  • মলত্যাগের সময় পেটে ব্যথা অনুভব করা
  • লম্বা ফিতার মতন মল বের
  • স্বাভাবিকের তুলনায় ওজন কমে যাওয়া
  • পেট পরিষ্কার হয়ে পায়খানা না হওয়া
  • ঘন ঘন মলত্যাগ করা বা মলের চা আসা
  • পেটে ব্যথা
  • দুর্বল লাগা
  • পেটে পানি জমা
  • কোন কারণ ছাড়াই হঠাৎ বমি বমি লাগা

উপরের এই লক্ষণগুলো যেকোনো কারণে শরীরে দেখা দিতে পারে ,তবে যদি আপনার শরীরে হঠাৎ করে এই ধরনের লক্ষণ দেখেন তাহলে শুরুতেই ভাববেন না গিয়ে বিষয়টি ২-৩ দিন অবজারভেশনে রাখুন। যদি দেখেন কন্টিনিউয়াসলি এই লক্ষণ গুলো আপনার শরীরের প্রকাশ পাচ্ছে তাহলে আর দেরি না করে দ্রুত ডাক্তারি পরামর্শ নিন এবং কোলনে সমস্যা রয়েছে কিনা চেকআপ করুন।

কোলন ইনফেকশনের লক্ষণ

মানবদেহের কোলন বা মলাশয় প্রায় ৫-৬ ইঞ্চি হয়ে থাকে এবং মাঝে মাঝে মলাশয় ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে ।কোন কারনে মলাশয় বা কোলনের অভ্যন্তরে ব্যাকটেরিয়া অথবা ভাইরাস সংক্রামিত হয়ে প্রদাহ সৃষ্টি করলে তাকে কোলন ইনফেকশন বলে হয়, কোলনের ইনফেকশন কে বলা হয় কোলাইটিস। কোলন ইনফেকশন সাধারণত অস্বাস্থ্যকর খাবার এবং তো পানীয় পান করার ফলে হয়ে থাকে। আর এই ইনফেকশন যদি দীর্ঘদিন মলাশয়ে থাকে তাহলে এখান থেকে সৃষ্টি হয় কোলন ক্যান্সারের মতন মারাত্মক রোগ। এখন প্রশ্ন হল কোলন ইনফেকশনের লক্ষণগুলো কিভাবে বুঝবেন। বেশ কিছু উপসর্গের মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনার কোলনে ইনফেকশন রয়েছে। আপনার যদি কোলন ইনফেকশনের লক্ষণ গুলো সম্পর্কে জানা না থাকে , তাহলে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই এখনই আপনাদের জানিয়ে দেওয়া হবে কোন ইনফেকশনের লক্ষণ গুলো। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক কোলন ইনফেকশনের লক্ষণ গুলো।

  • ঘন ঘন জ্বর আসা
  • শরীর ক্লান্ত লাগায় এবং বমি বমি ভাব হওয়া
  • রক্তশূন্যতা এবং চামড়া ফ্যাকাসি হয়ে যাওয়া
  • শরীরে এবং পেটে ব্যথা করা
  • কোলন ফুলে যাওয়া
  • পানি শূন্যতা দেখা দেওয়া এবং শরীর নিস্তেজ হওয়া।
  • প্রস্রাবের সাথে রক্ত যাওয়া
  • পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া
  • পেটের বাম পাশে ব্যথা করা

মহিলাদের কোলন ক্যান্সারের লক্ষণ

কোলন ক্যান্সার সাধারণত পুরুষদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা গেলেও এটি যে মেয়েদের হবে না। এমন কিন্তু মেয়েদের তুলনায় পুরুষদের ক্ষেত্রে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি থাকে। মেয়েদের ক্ষেত্রেও যেহেতু অল্প হলেও কোলন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে এই কারণে জেনে রাখা ভালো মেয়েদের কোলন ক্যান্সারের লক্ষণগুলো। এবার তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক মহিলাদের কোলন ক্যান্সারের লক্ষণগুলো। কোলন ক্যান্সারের এই লক্ষণগুলো ভালোভাবে জেনে নিন এবং এই ধরনের লক্ষণ শরীরে প্রকাশ পেলে অবহেলা না করে দ্রুত ডাক্তারি পরামর্শ গ্রহণ করবে। মেয়েদের ক্ষেত্রে কোলন ক্যান্সারের উপসর্গগুলো খুব একটা আলাদা হয় না, মেয়েদের কোলন ক্যান্সারের উপসর্গ হিসেবে যেসব লক্ষণ প্রকাশ পায় সেগুলো হলো,

  • কোলন ফুলে যাওয়া
  • কোষ্ঠকাঠিন্য অথবা ডায়রিয়া হওয়া
  • মলের সাথে কালকে রক্ত যাওয়া
  • হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া
  • পেট ভারী অনুভব হওয়া
  • মাসিক ছাড়া যোনিপথে রক্ত আসা
  • জ্বর হওয়া
  • পেট ব্যাথা
  • দুর্বল লাগা
  • পেটে পানি জমা

কোলন ক্যান্সার থেকে বাঁচার উপায়

প্রতিদিনই বিশ্বের শত শত মানুষ কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে ,এই কারণে আমাদেরকে অবশ্যই রেকটাম বা কোলন ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতন হওয়া অত্যন্ত। আমরা আগেই ওপরের আলোচনার মাধ্যমে কোলন ক্যান্সারের লক্ষণ এবং কারণ গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিয়েছি এবার আমাদেরকে কোলন ক্যান্সার থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে জানতে হবে। কারণ যখন আমরা কোলন ক্যান্সার থেকে বাঁচার উপায় জানব তখনই এই বিষয়গুলো মেনে চলতে পারবে। তাহলে চলুন দেরি না করে কোলন ক্যান্সার থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। কয়েকটি সতর্কতামূলক পদ্ধতি অবলম্বন করে এবং বেশ কিছু খাবার খাদ্য তালিকায় মাধ্যমে যুক্ত করার মাধ্যমে আমরা কোলন ক্যান্সার থেকে বাঁচতে পারি।

রেগুলার চেকআপঃ কোলন ক্যান্সারে প্রাথমিকভাবে যেহেতু কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না এবং এটি একটি বংশগত রোগ। এ কারণে আপনার বংশে যদি কোলন ক্যান্সার হওয়ার কোনো নজির বা ইতিহাস থাকে, তাহলে অবশ্যই ছয় মাস অথবা এক বছর পর পর রেগুলার চেকআপ করানো উচিত। এতে আপনি খুব সহজে বুঝতে পারবেন কোলনে কোন রূপ মাংস পিণ্ড বা পলিপস তৈরি হচ্ছে কিনা এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেবেন।

মলদ্বারের সমস্যার দ্রুত সমাধানঃ আপনার মলদ্বারে যদি কোন অসুবিধা থাকে যেমন - ইনফেকশন,পাইলস ইত্যাদি জাতীয় সমস্যা তাহলে এগুলো নিয়ে অবহেলা বা লজ্জা না করে দ্রুতটা ডাক্তারি পরামর্শ গ্রহণ করুন এবং সেগুলো সারিয়ে তোলার চেষ্টা করুন কারণ এখান থেকে পরবর্তীতে সৃষ্টি হতে পারে কোলন ক্যান্সার।

আরো পড়ুনঃ পেটে গ্যাস হলে কি সমস্যা হয় এবং পেটের গ্যাস কমানোর উপায়

কোষ্ঠকাঠিন্য অথবা আমাশয় থাকলে দ্রুত নির্মূলের চেষ্টা করাঃ কোলন ক্যান্সারের একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে কোষ্ঠকাঠিন্য। কারণ কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে সৃষ্টি হয় পাইলস এবং মলদ্বারের অভ্যন্তরে ইনফেকশন । এ ইনফেকশন দীর্ঘদিন মলদ্বারের ভেতরে থাকার ফলে সৃষ্টি হতে পারে কোলন ক্যান্সার। এ কারণেই আপনার যদি কোষ্ঠকাঠিন্য অথবা আমাশয় হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই এটি দ্রুত সারানোর চেষ্টা করুন।

শারীরিক ওজন স্বাভাবিক রাখাঃ যারা অতিরিক্ত মোটা এবং শারীরিক ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে তাদের ক্ষেত্রে কোলন ক্যান্সারের ঝুকি বা সম্ভাবনা বেশি হয়। তাই যাদের শারীরিক ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি তারা ওজন কমানোর চেষ্টা করুন এবং নিয়মিত শরীর চর্চার অভ্যাস গড়ে তুলুন। কারণ যারা নিয়মিত শরীর চর্চা করে তাদের ক্ষেত্রে দেখা যায় শরীরের ওজন স্বাভাবিক থাকে এবং কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে না।

আঁশ যুক্ত খাবার খাওয়াঃ কোলন ক্যান্সার থেকে বাঁচতে হলে রেড মিট জাতীয় খাবার না খেয়ে, যেসব খাবারে প্রচুর পরিমাণে আজ থাকে এবং হজমে সহায়তা করে এই ধরনের খাবার গুলো খাদ্য তালিকায় রাখার চেষ্টা করুন। আজ যুক্ত খাবার গুলো আপনি অনায়াসে সবুজ শাকসবজির মধ্যে থেকে পেয়ে যাবে। সবুজ শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে আঁশ থাকার পাশাপাশি পেতে পাওয়া যায় পর্যাপ্ত পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট, যা কিনা রেক্টাম ক্যান্সার থেকে শুরু করে শরীরের যে কোন ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে।

ঢ্যাঁড়সঃ ঢেঁড়স খেলে এর মধ্যে থাকা এনজাইম আমাদের অন্ত্রের কোষ গুলোকে শক্তিশালী করে এবং ঢেঁড়স গ্যাস কমাতে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে বিশেষ সাহায্য করে। আর ঢ্যাঁড়স খাওয়ার ফলে যেহেতু অন্ত্রের কোষগুলো শক্তিশালী হয় তাই সহজে কোলন ক্যান্সারের মতন মরণব্যাধি বাসা বাঁধতে পারে না।

পেয়ারাঃ পেয়ারার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভীষণ দরকারি। পেয়ারা খেলে এর মধ্যে থাকা ভিটামিন সি ক্যান্সার সেলগুলো ড্যামেজ করতে সাহায্য করে এবং কোলন ক্যান্সার রোধ করতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

কলাঃ কলা আমাদের অনেকেরই অত্যন্ত প্রিয় একটি ফল এবং এই ফলটি সারা বছরই আমাদের দেশে পাওয়া যায়। এই ফল খাওয়ার একটি বড় উপকারিতা হলো এর মাধ্যমে আমরা কোলন ক্যান্সার থেকে রক্ষা পেতে পারি। 

টক দইঃ কোলন ক্যান্সার থেকে বাঁচতে হলে, প্রতিদিন অন্ততপক্ষে ২ চামচ করে টক দই খাওয়ার চেষ্টা করুন। প্রতিদিন দুই চামচ টক দই খেলে এর মাধ্যমে আপনি বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য উপকারিতার পাশাপাশি, কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকিমুক্ত থাকতে পারবেন।

বাদামঃ বাদামের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে ওমেগা-৩ এবং ফ্যাটি এসিড রয়েছে যেই উপাদানগুলো আমাদের শরীরের ক্যান্সারের সেল ড্যামেজ এর জন্য এবং যেকোনো ক্যান্সার প্রতিরোধ করার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এ কারণে বাদাম খেলে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকিমুক্ত থাকা যায়।

জিরাঃ মসলা হিসেবে খাবারের স্বাদ বাড়ানোর পাশাপাশি জিরার মধ্যে রয়েছে বেশ কিছু ঔষধি গুন। কামিনএলডিহাইড নামগির উপাদান কি জিরার মধ্যে রয়েছে সেটি কোলোনের ক্যান্সার সৃষ্টির পোস্টগুলো ড্যামেজ করতে অত্যন্ত ফলদায়ক। আর এই কারণে জিরা খেলে কোলন ক্যান্সার থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব

গ্রিন টিঃ গ্রিন টির মধ্যে বিভিন্ন ধরনের উপাদান থাকায় এটি আমাদের শরীরের অতিরিক্ত মেদ কমাতে এবং ক্যান্সার উৎপাদনকারী সেভ ড্যামেজ করতে সাহায্য করে। এ কারণে নিয়মিত গ্রিন টি পানের অভ্যাস করলে শরীরের যেকোনো ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধ করার পাশাপাশি কোলন ক্যান্সারের ঝুকিমুক্ত থাকা যায়।

এগুলো ছাড়াও কোলন ক্যান্সার থেকে যদি বাঁচতে চান তাহলে অবশ্যই ধূমপান ত্যাগ করতে হবে এবং নিয়মিত প্রতিদিন কিছু সময় শরীর চর্চার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

কোলন ক্যান্সার কি নিরাময়যোগ্য

ক্যান্সার মানেই হলো এর শেষ পরিণতি মৃত্যু তবে আমরা যদি ক্যান্সারের বিপরীতে সঠিক সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে চিকিৎসা শুরু করতে পারি তাহলে অনেক ক্ষেত্রেই এর থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব। অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন , কোলন ক্যান্সার কি নিরাময় যোগ্য? আজকে আপনাদেরকে স্পষ্টভাবে এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। কোলন ক্যান্সার কি নিরাময় যোগ্য এই প্রশ্নের উত্তর জানতে এই অংশটি পড়ুন। আপনারা জানেন, এমন একটি সময় ছিল যখন বিজ্ঞানের এত অগ্রগতি ছিল না। সেই সময় কোন রোগী ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে তার কোলোনেরর অংশটুকু বাদ দিয়ে খেলে কৃত্রিমভাবে মলত্যাগের ব্যবস্থা করা হতো। এই পদ্ধতিটি অত্যন্ত কষ্টদায়ক এর বেশ ঝামেলার ছিল।

কিন্তু বর্তমানে বিজ্ঞানের সাথে সাথে চিকিৎসা পদ্ধতি উন্নত হওয়ায় এখন আর কোলন ক্যান্সার হলে সম্পূর্ণ কোলন কেটে বাদ দেওয়া হয় না , লেপারাসকপি অথবা রোবটের মাধ্যমে নের অপারেশনের মধ্যে দিয়ে শুধুমাত্র ক্যান্সারের অংশটুকু বাদ দিয়ে ফেলা হয় এবং প্রয়োজন অনুযায়ী কেমোথেরাপি এবং রেডিও থেরাপির মাধ্যমে সম্পন্ন রূপে কোলন ক্যান্সার নিরাময়যোগ্য করে তোলা সম্ভব। তবে চিকিৎসা মাধ্যমে  কোলন ক্যান্সার নিরাময় যোগ্য করে তোলার জন্য অবশ্যই সঠিক সময় চিকিৎসা শুরু করা প্রয়োজন।

আরো পড়ুনঃ এ্যাপেন্ডিসাইটিস ফেটে গেলে কি হয়

মন্তব্য, কোলন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে যদি সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারেন তাহলে এর থেকে সম্পূর্ণরূপে নিরাময় সম্ভব। আর সঠিক সময়ে চিকিৎসা গ্রহণ করার জন্য এই পোস্টের মাধ্যমে করুন ক্যান্সার কোথায় হয় কোলন ক্যান্সারের লক্ষণ এবং কোলন ইনফেকশনের লক্ষণ সহ আরো বিভিন্ন তথ্য জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আপনার শরীরে যদি কোলন ক্যান্সারের লক্ষণ গুলোর বহিঃপ্রকাশ ঘটে তাহলে অবশ্যই, অবহেলা না করে ডাক্তারের শরণাপন্ন হন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url