বিলিরুবিনের মাত্রা কত হলে জন্ডিস হয় - জন্ডিস এর লক্ষণ কি - জন্ডিস হলে কি ঔষধ খাব
জন্ডিস কমন একটি রোগ হলেও, সঠিক সময়ে যদি এই রোগের বিরুদ্ধে চিকিৎসা গ্রহণ না করা যায় তাহলে এর থেকে জটিল এবং মারাত্মক রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। জন্ডিসের সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার কোন সময় ও বয়স নেই। রক্তের বিলুরুবিনের মাত্রা বেশি হওয়া জন্ডিসের অন্যতম প্রধান কারণ। এই পোষ্টের মাধ্যমে আমরা আজকে জানব বিলিরুবিনের মাত্রা কত হলে জন্ডিস হয় , জন্ডিস এর লক্ষণ কি ও জন্ডিস হলে কি ঔষধ খাব।
জন্ডিস সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য গুলো জানার জন্য মানুষ বিভিন্নভাবে চেষ্টা করে থাকে। সকলের কথা চিন্তা করে আজকে এই ছোট পোষ্টের মাধ্যমে জানানোর চেষ্টা করছি, সকলের মাঝে অত্যন্ত পরিচিত একটি সমস্যা জন্ডিস এর লক্ষণ কি , জন্ডিস হলে কি ওষুধ খাব এবং বিলিরুবিনের মাত্রা কত হলে জন্ডিস হয় এই বিষয়গুলো। এছাড়াও এই প্রশ্নের মাধ্যমে জন্ডিস সম্পর্কে আরো বিভিন্ন ধরনের তথ্য পেয়ে যাবেন যেমন- জন্ডিস হলে করণীয় কি, জন্ডিস হলে কি ডিম খাওয়া যাবে , জন্ডিস কি বাহিত রোগ, জন্ডিস কি ভাইরাসজনিত রোগ ইত্যাদি বিষয়ে সম্পর্কে। চলুন তাহলে আর দেরি না করে জন্ডিস বিষয়ক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো জেনে নেয়া যাক।
সূচিপত্রঃ বিলিরুবিনের মাত্রা কত হলে জন্ডিস হয় - জন্ডিস এর লক্ষণ কি - জন্ডিস হলে কি ঔষধ খাব
- জন্ডিস কি
- জন্ডিস কেন হয়
- জন্ডিস কত প্রকার
- জন্ডিস এর লক্ষণ কি
- জন্ডিস কি বাহিত রোগ
- জন্ডিস কি ভাইরাসজনিত রোগ
- বিলিরুবিনের মাত্রা কত হলে জন্ডিস হয়
- জন্ডিস হলে কি ঔষধ খাব
- জন্ডিস হলে করণীয় কি
- জন্ডিস হলে কি ডিম খাওয়া যাবে
জন্ডিস কি
জন্ডিস এই নামটির সাথে আমরা অনেকেই পরিচিত এবং অনেকে এই রোগটির দ্বারা আক্রান্ত
হয়েছি। কিন্তু আমরা কি সঠিক ভাবে জানি জন্ডিস আসলে কি। আমরা অনেকেই জন্ডিসকে রোগ
হিসেবে জানলেও এটি আসলে কোন রোগ নয় , এটি হলো রোগের উপসর্গ বা লক্ষণ। রক্তে
বিলিরুবিনের মাত্রা যখন বৃদ্ধি পেতে থাকে তখন আমাদের শরীর অথবা চোখ ,নখ , চামড়া
হলুদ হতে শুরু করে সাধারণত এই পরিস্থিতিটি আমাদের মাঝে জন্ডিস হিসেবে পরিচিত। আরো
সহজভাবে জন্ডিস কি এই প্রশ্নের উত্তরে বলতে হয় -রক্তের লোহিত কণিকা ভেঙ্গে গিয়ে
বিলুরুবিনের বাড়ার ফলে , সম্পূর্ণ শরীরসহ প্রস্রাবের রং হলুদ হয়ে যাওয়ার নামই
হলো জন্ডিস।
জন্ডিস কেন হয়
আপনারা কি সঠিকভাবে জানেন জন্ডিস কেন হয়? জন্ডিস এর সমস্যার সাথে ছোট বড় আমরা
প্রায় সকলেই পরিচিত। কারণ এই রোগের কোন বয়স নেই। নারী পুরুষ নির্বিশেষে যে কোন
সময় যে কোনো বয়সের মানুষ এই জন্ডিস রোগে আক্রান্ত হতে পারে। অনেকেরই জন্ডিস কেন
হয় জানা না থাকার কারণে ,আজকে আপনাদেরকে জন্ডিস কেন হয় এ বিষয়টি জানাবো। চলুন
তাহলে সহজ ভাবে জেনে নেওয়া যাক জন্ডিস কেন হয়।
আমাদের রক্তে দুই ধরনের ব্লাড সেল থাকে, এগুলো হলো - Red blood cells এবং
White blood cells. একটি নির্দিষ্ট সময় পরে রক্তের Red blood cells গুলো ভেঙ্গে
গিয়ে বিলু রবিনের তৈরি হয় , এবং এই বিলুরুবিন লিভারের মাধ্যমে তো পিত্তরসের
সাহায্যে পিত্তনালীর মধ্যে দিয়ে পরিপাকতন্ত্রে এবং পরিপাকতন্ত্র থেকে পায়খানা
বা মলের মাধ্যমে শরীর থেকে বের হয়ে যায়। তবে সঠিকভাবে যদি এই বিলুরুবিন শরীর
থেকে বের হতে না পারে তাহলে ,শরীরে এর মাত্রা বেড়ে গিয়ে দেখা দেয় সকলের কাছে
পরিচিত জন্ডিস নামক রোগের সমস্যা। সাধারণত লিভারের প্রদাহ থেকে জন্ডিস হয়। তবে
আরও বিভিন্ন কারণে জন্ডিস হতে পারে।
আরো পড়ুনঃ
পিত্তথলির পাথর কেন হয় ও পিত্তথলির পাথরের লক্ষণ
বংশগত কারণে , থ্যালাসিমিয়া রোগ থেকে , হিমোগ্লোবিনের সমস্যা থাকলে , পিত্তথলিতে
পাথর থাকল, শরীরে টিউমার বা ক্যান্সার থাকলে জন্ডিস হতে পারে। লিভারের প্রদাহ বা
অন্যান্য সমস্যার কারণে জন্ডিসের সমস্যাটি বেশি দেখা যায়, তবে শুধুমাত্র যে
লিভারের সমস্যার জন্য জন্ডিস হবে বিষয়টি এমন নয়। আমাদের মধ্যে অনেকেরই এই ভুল
ধারণাটি রয়েছে যে শুধুমাত্র লিভারের সমস্যা থেকে জন্ডিস হয়।
জন্ডিস কত প্রকার
জন্ডিসেরও কয়েকটি ধরন বা প্রকারভেদ রয়েছে, আপনার কি জানা আছে জন্ডিস কত প্রকার? এক এক ধরনের জন্ডিসের তীব্রতা এবং জন্ডিসের কারণ এক এক রকম। চলুন আজকে জেনে নেওয়া যাক জন্ডিস কত প্রকার ও কি কি সেগুলো। জন্ডিস মূলত তিন প্রকার , যথা
হেমোলাইটিক জন্ডিসঃ শরীরে যখন রেড ব্লাড সেল বা RBC বেড়ে যায় তখনই শরীরে দেখা দেয় হেমোলাইটিক জন্ডিস।
হেপাটোসেলুলার জন্ডিসঃ হেপাটোসেলুলার জন্ডিস তৈরি হয় লিভার প্রদাহ থেকে। কোন কারনে যখন লিভারের কোষগুলো আক্রান্ত হয় এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে , তখন হেপাটোসেলুলার জন্ডিস দেখা দেয়।
অবস্ট্রাক্টিভ জন্ডিসঃ পিত্তথলিতে পাথর বা অন্য কোন সমস্যার কারণে পিত্তরস বের
হতে না পারলে অ্যাবস্ট্রাক্টিভ জন্ডিস হয়।
জন্ডিস এর লক্ষণ কি
আমাদের দেশসহ আশেপাশের বেশ কয়েকটি দেশে জন্ডিস রোগটি ব্যাপক হারে দেখা দেয়। যেহেতু যেকোনো বয়সের মানুষ যেকোনো সময় এই জন্ডিস দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে তাই এর ব্যাপারে আমাদের সকলকে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। আর সচেতন হওয়ার জন্য অবশ্যই আমাদেরকে জানতে হবে জন্ডিস এর লক্ষণ কি সেগুলো। জন্ডিস এর লক্ষণ কি তা যদি আপনার সঠিকভাবে জানা না থাকে তাহলে, অবশ্যই আপনার জেনে রাখা প্রয়োজন জন্ডিস এর লক্ষণ কি এ বিষয়টি। চলুন আজকে জন্ডিসের লক্ষণ কি কি এগুলো নিয়ে সঠিক একটি ধারণা নেয়া যাক। আমাদের মধ্যে অনেক মানুষের মধ্যেই বদ্ধমূল একটি ধারণা রয়েছে যে জন্ডিস আক্রান্ত হলে ত্বক এবং প্রস্রাব হলুদ হবে। এগুলো জন্ডিসের লক্ষণ গুলোর মধ্যে থাকলেও, শরীর হলুদ হওয়া জন্ডিসের একমাত্র লক্ষণ নয়। জন্ডিসের প্রধান লক্ষণ গুলো হল -
- চোখ হলুদ হওয়া
- প্রস্রাব হলুদ হওয়া
- হাতের নখ হলুদ হয়ে যাওয়া
- সমগ্র শরীর এবং ত্বক হলুদ হয়ে যাওয়
এগুলো ছাড়াও জন্ডিস হলে যে সব ছোটখাট উপসর্গগুলো প্রকাশ পেতে পারে সেগুলো নিচে একে একে তুলে ধরা হলো।
- জ্বর হওয়া
- পায়খানার রং পরিবর্তন হওয়া
- তলপেটে এবং নাভির আশেপাশে ব্যথা করা
- শরীর দুর্বল লাগা
- বমি বমি ভাব
- লিভার শক্ত হয়ে যাওয়া
- শরীরে এলার্জির মতন চুলকানি হওয়া
- ক্ষুধা মন্দা বা খাদ্যে অরুচি দেখা দেওয়া
- পায়ে ব্যথা হয়
- ওজন কমে যায়
জন্ডিস কি বাহিত রোগ
জন্ডিস কি বাহিত রোগ সে সম্পর্কে কি আপনার জানা আছে যদি জানা না থাকে তাহলে
উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই এখনই আপনাদেরকে জানিয়ে দেওয়া হবে জন্ডিস কি বাহিত রোগ
এই বিষয়টি। কারণ জন্ডিস কি বাহিত রোগ জানা থাকলে তবেই আমরা যে যে মাধ্যমগুলো
থেকে জন্ডিস ছড়াই সেগুলো সম্পর্কে সচেতন হতে পারব এবং জন্ডিস থেকে নিরাপদে থাকতে
পারবে। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক জন্ডিস কি বাহিত রোগ।
আরো পড়ুনঃ
কিসমিসের উপকারিতা
জন্ডিস মূলত এক ধরনের পানি বাহিত রোগ। দূষিত বা অস্বাস্থ্যকর পানি পানের ফলে এবং
রান্না বা বিভিন্ন কাজে ব্যবহারের ফলে, এটি যদি কোন ভাবে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে
তাহলে এই দূষিত পানির মাধ্যমে জন্ডিসের জীবাণু আমাদের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। দূষিত
পানির মাধ্যমে বা পানিবাহিত রোগ হওয়ার কারণে বিশেষ করে বর্ষাকালে এই রোগের
প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায় তবে বছরের যে কোন সময়ই মানুষ জন্ডিস দ্বারা আক্রান্ত
হতে পারে
জন্ডিস কি ভাইরাস জনিত রোগ
জন্ডিস যে একটি পানিবাহিত রোগ এই বিষয়ে আমরা জেনে নিয়েছি এবার জানবো
জন্ডিস কি ভাইরাস জনিত রোগ কিনা। আমাদের মধ্যে অনেকেরই জানা রয়েছে যে জন্ডিস
পানিবাহিত রোগ কিন্তু অনেকেই জানেন না এটি ভাইরাস বাহিত কিনা। এই কারণে অনেক সময়
হবে আমরা জানার চেষ্টা করে থাকি জন্ডিস কি ভাইরাস জনিত রোগ ?
পানি বাহিত রোগ হওয়ার পাশাপাশি জন্ডিস এক ধরনের ভাইরাসজনিত রোগও ঘটে। মূলত
হেপাটাইটিস ভাইরাস গুলোর কারণে জন্ডিস হয়। আর হেপাটাইটিস ভাইরাস গুলোর মধ্যে
রয়েছে,
- হেপাটাইটিস এ
- হেপাটাইটিস বি
- হেপাটাইটিস সি
- হেপাটাইটিস ই
জন্ডিস সাধারণত হেপাটাইটিস এ এবং হেপাটাইটিস ই ভাইরাসের কারণে বেশি দেখা
যায়। হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক কম থাকলেও ধীরে
ধীরে এই রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তবে হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের
আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা খুবই নগণ্য বা রেয়ার।
বিলিরুবিনের মাত্রা কত হলে জন্ডিস হয়
আমরা আলোচনার মধ্যে দিয়ে এটা পরিষ্কারভাবে জানতে পেরেছি যে রক্তের বিলিরুবিনের
মাত্রা বেড়ে গেলে জন্ডিস হয়। এবার আমাদের জানার বিষয় হলো যে বিলিরুবিনের
মাত্রা কত হলে জন্ডিস হয়। আপনার যদি জানা না থাকে রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা কত
হলে জন্ডিস হয়, তাহলে বিষয়টি অবশ্যই এখনই জেনে নিন। চলুন তাহলে আর দেরি না
করে জেনে নেওয়া যাক রক্তের বিলিরুবিনের মাত্রা কত হলে জন্ডিস হয় ।
রক্তে বিলিরুবিনের ঘনত্বের স্বাভাবিক মাত্রা হলো 1.2 mg/dl বা এর নিচে ,
কিন্তু যদি এটা আমার পা সকালেবিলিরুবিনের ঘনত্বের এই স্বাভাবিক মাত্রা বেড়ে
গিয়ে যদি 3 mg/dl বা তার বেশি হয়ে যায় তখনই দেখা দেয় জন্ডিস। আর বিলিরেবিনের
মাত্রা যত বাড়তে থাকে, শরীর ,চোখ এবং প্রসাব তত হলুদ হতে থাকে ও জন্ডিসের উপসর্গ
গুলো তীব্রভাবে প্রকাশ পেতে থাকে। বিলিরুবিনের মাত্রা কত হলে জন্ডিস হয় বিষয়টি
নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন
জন্ডিস হলে কি ঔষধ খাব
অনেকের মাঝেই একটি প্রশ্ন থেকেই যায় সেটি হল জন্ডিস হলে কি ঔষধ খাব অনেকে
জানেন না বা বুঝতে পারেন না , জন্ডিস হলে কি ঔষধ খাব এ বিষয়টি
সম্পর্কে। তাই আপনাদেরকে আজকে সহজভাবে বোঝানোর চেষ্টা করছি জন্ডিস হলে কি
ঔষধ খাব এই বিষয়টি। এই পোষ্টের ওপরে অংশে আমরা আগেই জেনেছি যে জন্ডিস আসলে কোন
রোগ নয়, এটি হলো রোগের একটি উপসর্গ। যেহেতু জন্ডিস কোন রোগ নয় সেই জন্য এর কোন
নির্দিষ্ট ঔষধও নেই। সাধারণ জন্ডিস হলে ৭ থেকে শুরু করে ২৮ দিন রেস্ট নিলে অথবা
কিছু নিয়ম কানুন মেনে চললে ,কোন ঔষধ ছাড়াই জন্ডিস ভালো হয়ে যায়। আর যদি এই
সময়ের মধ্যে জন্ডিস সেরে না যায় তাহলে, অবহেলার না করে দ্রুত ডাক্তারি পরামর্শ
গ্রহণ করুন।
জন্ডিস হলে অনেকেই বিভিন্ন ধরনের গাছ গাছড়ার রস বিভিন্ন ঔষধ খেয়ে থাকেন
তবে এই বিষয়টি একেবারেই উচিত নয় এতে করে উপকারের চাইতে অপকার হওয়ার সম্ভাবনা
থেকে যায়। পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম এবং তরল জাতীয় খাবার বেশি বেশি খাওয়ার
পরেও যদি এক মাসের মধ্যে ভালো না হয়ে যায় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারি পরামর্শ
মোতাবেক চলা এবং সেই অনুযায়ী ঔষধ গ্রহণ করা উচিত। আশা করছি জন্ডিস হলে কি ঔষধ
খাব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছেন।
জন্ডিস হলে করণীয় কি
শুধুমাত্র জন্ডিস কেন হয় এবং এর লক্ষণ সম্পর্কে জানলে চলবে না আমাদেরকে জানতে
হবে জন্ডিস হলে করণীয় কি সেই বিষয় সম্পর্কেও। ঔষধের পরিবর্তে কিছু
নিয়ম-কানুন এবং কিছু খাবার খাদ্য তালিকায় যুক্ত করার মধ্যে দিয়ে আমরা
জন্ডিস থেকে পরিত্রাণ পেতে পারি। তাহলে চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক জন্ডিস হলে
করণীয় কি বিষয়টি।
বিশ্রাম গ্রহণ করাঃ লিভার বা যকৃতের যে কোন সমস্যায় শারীরিক পরিশ্রম বা ভারী
কাজকর্ম করলে এর সমস্যাগুলো আরো বেড়ে যায় এবং জটিল আকার ধারণ করে। জন্ডিস
যেহেতু লিভার রিলেটেড একটি সমস্যা এই কারণে জন্ডিসের সময় অতিরিক্ত কাজকর্ম ,
চলাফেরা এবং শারীরিক পরিশ্রম না করে পর্যাপ্ত বিশ্রামের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
সম্পূর্ণরূপে বিশ্রাম নিলে খুব তাড়াতাড়ি জন্ডিসের সমস্যা থেকে সেরে ওঠা
সম্ভব।
তরল খাবার বেশি খাওয়াঃ জন্ডিস হলে তরল জাতীয় খাবার গুলো বেশি খাওয়া প্রয়োজন
যেমন বিভিন্ন ফলের রস , লেবুর শরবত , ঘোল ইত্যাদি।
কুশলের রসঃ কুসর বা আখের রস জন্ডিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত ফলদক। আখের রস পান করার
মধ্যে দিয়ে খুব সহজেই জন্ডিস থেকে সেরে উঠা যায়। তবে অবশ্যই আখের রস খাওয়ার
সময় খেয়াল রাখবেন সেটি যেন রাস্তার ধারে ফুটপাতে বিক্রি করা ফসলের রসগুলো না
হয় কারণ এতে বিভিন্ন ভাইরাস দ্বারা সংক্রমণ করতে পারে আর যেটি জন্ডিস রোগীদের
ক্ষেত্রে সুফল বয়ে আনবে না।
লেবুর শরবতঃ আখের রসের পাশাপাশি লেবুর শরবত লিভারের পোস্ট কে ভালো রাখতে ভীষণ
কার্যকরী। আপনি যদি জন্ডিসের আক্রান্ত হন তাহলে বেশি বেশি লেবুর শরবত খাওয়ার
চেষ্টা করুন, কারণ লেবুর শরবত আপনাকে দ্রুত জন্ডিস থেকে সেরে উঠতে সাহায্য
করবে।
মুলার রসঃ জন্ডিস রোগীদের এ রোগ থেকে ছেড়ে ওঠার জন্য অত্যন্ত সাহায্যকারী হতে
পারে, মুলার রস।
চর্বি এবং ভাজাপোড়া খাবার না খাওয়াঃ জন্ডিস রোগীদের জন্য চর্বি এবং ভাজাপোড়া
জাতীয় খাবার গুলো না খাওয়াই উত্তম। বিশেষ করে বাইরের ফাস্টফুড জাতীয় খাবার
অত্যন্ত মারাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে জন্ডিস রোগীদের জন্য।
টাটকা শাকসবজি খাওয়াঃ জন্ডিস রোগীদের জন্য প্রচুর পরিমাণে টাটকা শাকসবজি খাওয়া
উচিত কারণ এর মধ্যে দিয়ে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান গুলো শরীরে পাওয়া যায়
যার ফলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং সবজি জাতীয় খাবার গুলোতে
প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকায় হজমিও সহায়তা করে। তাই লিভার অথবা জন্ডিস রোগীদের
জন্য ভিটামিন এবং বিটা ক্যারোটিন সমৃদ্ধ খাবার গুলো অত্যন্ত জরুরী।
আরো পড়ুনঃ
পেটের গ্যাস কমানোর উপায়
এগুলো ছাড়াও দ্রুত জন্ডিসের সমস্যা থেকে সেরে ওঠার জন্য পেঁয়াজের রস এবং টমেটোর
রস গোলমরিচের সাথে মিশিয়ে খেলে অত্যন্ত দ্রুত ফল পাওয়া যায়। জন্ডিসের সমস্যা
সারাতে শুধু এই খাবার গুলোর উপরে নির্ভর করে থাকলে চলবে না পাশাপাশি ভিটামিন
সমৃদ্ধ খাবারগুলো গ্রহণ করতে হবে। জন্ডিস রোগের ক্ষেত্রে বেশ কিছু মানুষের কিছু
ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে যেমন হলুদ খেলে জন্ডিস বেড়ে যায়-কিন্তু আসলে এ ধারণাটি
একেবারেই ভুল হলুদের সাথে জন্ডিসের কোন সম্পর্ক নেই এ কারণে হলুদ খেলে এর
প্রভাব জন্ডিস রোগের উপরে কোনভাবেই পড়ে না।
জন্ডিস হলে কি ডিম খাওয়া যাবে
জন্ডিস নিয়ে বিভিন্ন জনের বিভিন্ন মতামত রয়েছে তাই এ বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা
নেয়ার জন্য অনেকেই জানতে চান জন্ডিস হলে কি ডিম খাওয়া যাবে। সঠিক জ্ঞানের অভাবে
আমাদের অনেকেরই জন্ডিস থেকে ছেড়ে উঠতে অনেক দেরি লাগে বা অসুবিধা হয়। আপনাদের
আজকে জানিয়ে দিয়ে জন্ডিস হলে কি ডিম খাওয়া যাবে এই প্রশ্নের উত্তর। সাধারণত
জন্ডিস রোগীদেরকে সহজে হজম হয় অর্থাৎ সহজ পাচ্য খাবারগুলো খাওয়ানো পরামর্শ
দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞগণ। এবং জন্ডিস রোগীদেরকে ফ্যাট বা চর্বি জাতীয় জাতীয়
খাবার গুলো জন্ডিস থেকে সেরে না উঠা পর্যন্ত খাদ্য তালিকা থেকে দূরে রাখতে বলা
হয়।
ডিমের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন এবং ফ্যাট। উচ্চমাত্রায় প্রোটিন এবং
ফ্যাট থাকায় অনেক সময় সুস্থ অবস্থাতেও ডিম খেলে অনেকেরই এটি হজমে অসুবিধা
সৃষ্টি করে। আর লিভারের প্রদাহ ও পিত্তথলি র সমস্যা জনিত কারণে এমনিতেই যেহেতু
হজম প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয় আর জন্ডিস যেহেতু লিভার ও পিত্তথলি বিষয়ক
একটি সমস্যা এই কারণে জন্ডিস এর সময় যদি ডিম খাওয়া হয় তাহলে এটি আমাদের
হজম প্রক্রিয়াকে আরো দুর্বল করে তুলতে পারে এবং এর কারণে সৃষ্টি হতে পারে নানা
ধরনের শারীরিক জটিলতা। তাই জন্ডিসের সমস্যায় ভোগা কালীন অবস্থায় ডিম না খাওয়াই
ভালো। জন্ডিস থেকে সম্পূর্ণরূপে সেরে ওঠার পরেই ডিম খাওয়া উচিত। আশা করছি
জন্ডিস হলে কি ডিম খাওয়া যাবে বিষয়টি বুঝতে আর কোন সমস্যা নেই।
মন্তব্য, জন্ডিস একটি সাধারণ রোগ হলেও অবহেলা বা সঠিক চিকিৎসার অভাবে যেহেতু এটি
মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে বা প্রাণঘাতী রোগের সৃষ্টি করতে পারে এজন্য
জন্ডিসকে অবহেলা না করে সতর্ক হোন এবং জন্ডিস থেকে দূষিত পানি ব্যবহার
এবং খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। আশা করছি জন্ডিস এর লক্ষণ সম্পর্কিত এই পোস্টটির
মাধ্যমে জন্ডিসের ব্যাপারে বিভিন্ন তথ্য পেয়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন এবং বুঝতে
পেরেছেন জন্ডিস হলে কি ঔষধ খাব।