পিরিয়ডের সময় টক খেলে কি হয় - পিরিয়ডের সময় দুধ খেলে কি হয়

মেয়েদের চলাকালীন সময়টি অত্যন্ত সেনসিটি। মাসের এই কয়েক দিন সময় বিশেষ সর্তকতা অবলম্বন করে চলতে হয় ।পিরিয়ডের সময় টক খাওয়া যাবে কিনা এই নিয়ে অনেকের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। তাই আজকে আপনাদের জানাবো পিরিয়ডের সময় টক খাওয়া যাবে কিনা এ বিষয়ে।

পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে কোন খাবারগুলো শরীরের জন্য উপকার এবং কোন খাবার গুলো শরীরের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এই বিষয়ে সকল নারীর সঠিক জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। আর পিরিয়ডের সময় খাবার সম্পর্কে সচেতন করার উদ্দেশ্যে আজকে আপনাদের জানাবো এই সেনসিটিভ সময়ে টক খাওয়া যাবে কিনা , দুধ ও চা পান করা যাবে কিনা এই তিনটি বিষয়ে বিস্তারিত। আমরা সকলেই জানি দুধ আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজন তবে পিরিয়ডের সময় দুধ পান করা উচিত কিনা তা জানার জন্য অবশ্যই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

সূচিপত্রঃ পিরিয়ডের সময় টক খেলে কি হয় - পিরিয়ডের সময় দুধ খেলে কি হয়

পিরিয়ডের সময় টক খেলে কি হয়

পিরিয়ডের সময় টক খাওয়ার বিষয়টি নিয়ে অনেক মহিলাদের মনে ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে , অনেকেই মনে করেন পিরিয়ডের সময় টক খেলে শরীরের ক্ষতি হতে পারে এবং মাসিকের সময় হওয়া ক্র্যাম্প বেড়ে যেতে পারে এই ধারণাটি আসলে সঠিক নয়। পিরিয়ডের সময় টক খেলে এটি শরীরের জন্য ক্ষতি নয় বরঞ্চ উপকার। তাই আপনি যদি ইচ্ছে হয় তাহলে ,পিরিয়ডের সময় নির্দ্বিধায় টক খেতে পারেন।

অনেকে মনে করেন পিরিয়ডের সময় টক খেলে রক্ত ক্ষরণের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং পিরিয়ডের ব্যথা বেশি হয় আসলে টক খাওয়ার সাথে এগুলোর কোন সম্পর্কই নেই তবে, এই ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে তাদের ক্ষেত্রে যারা টকের সাথে লবণ বেশি খায় তাদের ক্ষেত্রে। মূলত টক খাওয়ার জন্য পিরিয়ডের সময় রক্তক্ষরণের মাত্রা বাড়ে না , রক্তক্ষরণের মাত্রা বাড়ে বেশি পরিমাণে লবণ খাওয়ার জন্য। পিরিয়ডের সময় লবণ ছাড়া যদি আপনি টক জাতীয় ফল খেতে পারেন তাহলে এটি স্বাস্থ্যের জন্য উপকার কারণ টক জাতীয় ফল গুলোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায় আর ভিটামিন সি পিরিয়ডের সময় হওয়া ক্র্যাম্প কমাতে সাহায্য করে।

আরো পড়ুন ঃ জরায়ু ব্যাথার কারণ

পিরিয়ডের সময় টক জাতীয় খাবার গুলো খেলে রক্তের সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে থাকে , টক জাতীয় ফলে আন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান থাকা এটি মাসিকের সময় হওয়া ব্যথা কমাতে সাহায্য করে , আইরনের ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করে,  তাই নিঃসন্দেহে পিরিয়ডের সময় লবণ ছাড়া টক জাতীয় ফলগুলো খেতে পারেন । তবে অবশ্যই আচার বা প্রসেস করা খাবার , নোনতা বিস্কুট এই জাতীয় খাবার গুলো এড়িয়ে চলুন। কারণ এ ধরনের খাবারগুলোতে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম ব্যবহার করা হয় যার রক্তক্ষরণ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। আর লবণ যেহেতু সোডিয়াম ক্লোরাইড দ্বারা গঠিত তাই এই সময় অতিরিক্ত লবণ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন কারণ এই সময় লবণ খেলে রক্ত ক্ষরণের পাশাপাশি ক্র্যাম্প সহ আরো শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।

পিরিয়ডের সময় চা খেলে কি হয়

চা আমাদের সকলের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি পানীয় এবং এর বিভিন্ন উপকারিতাও রয়েছে । আর পিরিয়ডের সময় চা পান করলে মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার পাশাপাশি পিরিয়ড ক্র্যাম্প  কমাতে বিশেষ সাহায্য করতে পারে চা। তবে মাসিক বা পিরিয়ডের এই সেনসেটিভ সময়টিতে সব ধরনের চা পান শরীরের জন্য উপকারী নয়, আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের চা পান করে থাকি। সঠিক স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়ার জন্য প্রথমে আমাদের জানতে হবে কোন ধরনের চা পান করলে পিরিয়ডের সময় উপকার পাওয়া যাবে।

পিরিয়ডের সময় কেমোমাইল চা , আদা চা , পুদিনা পাতার চা , তুলসীপাতার চা মানসিক চাপ ,স্ট্রেস , মুডসুইং ,জরায়ু পেশি শিথিল , পিরিয়ড ক্র্যাম্প , বমি ভাব দূর করতে সাহায্য করে। পিরিয়ডের সময় চা পান করলে মানসিকভাবে সতেজ থাকা চাই , মানসিক চাপ কম হয় , হজম শক্তি বাড়ে ,তবে পিরিয়ডের সময় ক্যাফেইনযুক্ত চা পানের ক্ষেত্রে সচেতন হওয়া উচিত কেননা এই সময় ক্যাফেইনযুক্ত পানিয় , চা শরীরের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। আর তাই ক্যাফেইন মুক্ত চা যদি আপনার কাছে না থাকে তাহলে , ক্যাফেইন যুক্ত চা না খেয়ে হালকা কুসুম গরম পানি খেতে পারেন।

আরো পড়ুনঃ অনিয়মিত মাসিকের কারণ এবং নিয়মিত মাসিকের কুফল

না জেনেই যদি এই সেনসিটিভ টাইমে যেকোনো ধরনের চা পান করা হয় তাহলে সেক্ষেত্রে উপকারের চাইতে হতে পারে অপকার বা জটিলতা। মাসিকের সময় সাধারণত ক্যাফেইন যুক্ত পানীয় পান করা থেকে দূরে থাকার জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞগণ কেননা ক্যাফেইন বাড়িয়ে দিতে পারে রক্তচাপ , হার্টবিট , এসিডিটি , মাথা ব্যথা , বমি ভাব ,মুড সুইং ইত্যাদি। তাই পিরিয়ডের সময় ব্ল্যাক টি , মিল্ক টি , উলং টি বা আলিশান টি , গ্রিন টি। গ্রিন টির ভেতরে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকলেও এর মধ্যে রয়েছে ক্যাফেইন। মূলত এক কাপ গ্রিন টি এর ভেতরে প্রায়৩০-৩৫ মিলি গ্রাম ক্যাফেইন পাওয়া যায় এছাড়াও পাওয়া যায় পলিফেনোলিক উপাদান যা শরীরে লৌহ নাম ক খনিজ উপাদান ওপরে প্রভাব বিস্তার করে এবং লৌহ নামক উপাদানের শোষণ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। তাই এই সময় ক্যাফেন যুক্ত চা গুলো পরিহার করে হালকা গরম পানি পান করুন অথবা খুব সামান্য লিকার দিয়ে অল্প পরিমাণে চা পান করুন।

পিরিয়ডের সময় দুধ খেলে কি হয়

পিরিয়ডের সময় দুধ খাওয়া যাবে কিনা অথবা পিরিয়ডের সময় দুধ খেলে কি সমস্যা হতে পারে এই নিয়েও অনেকের মধ্যে প্রশ্ন থাকে। দুধ আমাদের শরীরের জন্য নিঃসন্দেহে অত্যন্ত উপকারী। দুধ খেলে শরীরে ক্যালসিয়াম এবং আয়রনের ঘাটতি পূরণ হওয়ার পাশাপাশি শরীরের অন্যান্য চাহিদা পূরণ করতে এবং হাড়ের সমস্যা সহ আরো বিভিন্ন ধরনের সমস্যা ও রোগ দূর করতে সাহায্য করে আর এই কারণে দুধকে বলা হয় সুপার ফুড। কিন্তু অত্যন্ত উপকারী হওয়ার পরেও পিরিয়ডের সময় কয়েক দিন দুধ খাওয়া বন্ধ রাখাই উচিত।

আরো পড়ুনঃ অতিরিক্ত মাসিক বন্ধ করার উপায়

কারণ এই সময় নারী শরীরের ভেতরে হরমোনের তারতম্য সহ বেশ কিছু পরিবর্তন ঘটে থাকে আর যার কারণে হজম প্রক্রিয়াও একটু দুর্বল হয়ে পড়ে , তাই এই সময় দুধ খেলে হতে পারে হজমের সমস্যা কেননা দুধ সহজে হতে চাই না এবং দুধ হজম করতে সময়ও বেশি। এছাড়াও দুধ খেলে পেটে এসিডিটির সমস্যা হতে পারে এবং হতে পারে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও। তাই পিরিয়ডের সময় গুলোতে দুধ এবং দুগ্ধ জাত খাবার গুলো এড়িয়ে চলাই ভালো। তবে আপনার যদি হজম শক্তি ভালো থাকে এবং আপনি যদি দুধ খেলে এই ধরনের সমস্যা গুলো ফেস না করেন তাহলে সে ক্ষেত্রে দুধ পান করতে পারেন।

মন্তব্য , আজকে পোষ্টের মাধ্যমে আলোচনা করা পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে তিনটি বিষয় সম্পর্কে আপনারা নিশ্চয়ই ভালো ভাবে জেনেছেন। পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে শুধু উচ্চ সোডিয়াম যুক্ত খাবারই নয় অতিরিক্ত চিনি যুক্ত খাবার ,ফাস্টফুড ও ভাজাপোড়া খাবারগুলো চলা উচিত।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url