চিয়া সিড খাওয়ার অপকারিতা - বাচ্চাদের চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম
চিয়া সিড নিঃসন্দেহে অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্য উপকারী। কিন্তু উপকারী বলে যে এর কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা অপকারিতা থাকবে না বিষয়টি এমন নয়। স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী হওয়া সত্বেও চিয়া সিডের বিশেষ কিছু অপকারিতা রয়েছে , আর নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে বেশি এই সিড খাওয়ার ফলে দেখাতে পারে বেশ জটিল কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া।
উপকারিতা জানার পাশাপাশি সবকিছুরই অপকারিতা সম্পর্কেও ভালোভাবে জেনে নেওয়া উচিত
এবং চিয়া সিডও এই রুল এর বাইরে নয়। উপকারী হলেও কোন অবস্থাতেই চিয়া
সিড অতিরিক্ত মাত্রায় খাওয়া যাবে না। যদিও নির্দিষ্ট পরিমাণে দৈনিক চিয়া
সিড খাওয়া যায় তারপরেও সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকলে সপ্তাহে ৩-৪ দিন
এই সিড খেলেও স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যায়। আপনাদেরকে আগের একটি পোস্টে
চিয়া সিডের অনেকগুলো উপকারিতা সম্পর্কে জানিয়েছিলাম , উপকারিতা জানানোর
পাশাপাশি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সম্পর্কে সচেতন করার জন্য তাই আজকে আপনাদেরকে
চিয়া সিডের অপকারিতা গুলো জানাবো। আশা করি পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে আপনারা
চিয়া সিড খাওয়ার পূর্বে এই বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতন হবেন।
সূচিপত্রঃ চিয়া সিড খাওয়ার অপকারিতা - চিয়া সিড কিডনির জন্য কতটা ভাল
চিয়া সিড খাওয়ার অপকারিতা
চিয়া সিড আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী এবং স্বাস্থ্য ভালো রাখার ক্ষেত্রে
এর একাধিক কার্যকারিতা থাকলেও বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে , যদি নির্দিষ্ট
মাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণে এই সিড খাওয়া হয় তাহলে দেখাইতে পারে বেশ কিছু
সমস্যা। যদিও চিয়া সিড ক্যান্সার প্রতিরোধে হিসেবে কাজ করে এবং চিয়া সিড খেলে
কোলন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম থাকি কিন্তু তারপরেও যদি অতিরিক্ত
মাত্রায় চিয়া সিড খাওয়া হয় তাহলে এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে প্রোস্টেট
এবং স্তন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই নির্দিষ্ট পরিমাণের তুলনায়
চিয়া সিড বেশি না খাওয়াই ভালো।
চিয়া সিড হজম প্রক্রিয়াকে ভালো করলেও , যেহেতু এর ভেতরে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে তাই মাত্রাতিরিক্ত খাওয়ার ফলে বিপাকীয় সমস্যা দেখা দিতে পারে এবং এখান থেকে সৃষ্টি হতে পারে বমি ভাব ও ডায়রিয়া। এছাড়াও চিয়া সিড রক্তে সুগারের মাত্রা কমাতে এবং ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়াতে বিশেষভাবে সাহায্য করে তাই প্রি-ডাইবেটিসের রোগীদের এবং যারা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের ঔষধ সেবন করেন অথবা ইনসুলিন গ্রহণ করেন তারা যদি নিয়মিতভাবে চিয়া সিড খেতে থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রে ডায়াবেটিসের মাত্রা কমে গিয়ে বিপদ হতে পারে।
শুধু ডায়াবেটিস নয় উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের ক্ষেত্রেও সেম ঘটনা ঘটতে পারে।
অর্থাৎ যেহেতু চিয়া সিড উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে খুব ভালো কাজ করে তাই ,
যাদের রক্তচাপ অলরেডি স্বাভাবিকের তুলনায় কম রয়েছে বা যাদের লো
প্রেসারের সমস্যা আছে তারা যদি নিয়মিত চিয়া সিড খেতে থাকে অথবা
মাত্র না জেনে এই বীজ খায় তাহলে সে ক্ষেত্রে প্রেসার একেবারে কমে যেতে
পারে। সেম পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে রোগা বা যাদের ওজন স্বাভাবিকের
তুলনায় অনেক কম রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে।
শুধু তাই নয় , চিয়া সিড অনেকের ক্ষেত্রে এলার্জির সমস্যাও বাড়িয়ে দিতে
পারে এবং এর কারণে জিবভা ও ঠোঁটে চুলকানি জ্বালাপোড়া হতে পারে। শুকনা চিয়া
সিড খেলে অনেক সময় একটি গলায় আটকে গিয়ে দম বন্ধ হতে পারে এ কারণে
চিয়া সিড শুকনো অবস্থায় না খেয়ে পানি অথবা জুসের সাথে মিশিয়ে কিংবা খাওয়ার
কিছুক্ষণ পূর্বে পানিতে ভিজিয়ে রেখে খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
এই বীজে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকায় বেশি পরিমাণে খেলে কিডনির উপরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখাইতে পারে। চিয়া সিড। আমাদের শরীরে ডিহাইড্রেশন তৈরি করতে পারি আর এ কারণে এই বীজ পানিতে ভিজিয়ে অথবা সিড খাওয়ার পরে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খাওয়ার কথা বলা হয়। চিয়া সিড মাত্রাতিরিক্ত খাওয়ার আরেকটি অপকারিতা হলো এটি রক্ত পাতলা করে দেয়। এছাড়াও যাদের আলফারেটিভ কোলাইটিস রয়েছে তাদের চিয়াসীড না খাওয়াই ভালো , কারণ এ ধরনের রোগীদের বেশি পরিমাণে ফাইবার খেলে সমস্যা দেখা দেয় আর চিয়া সিডে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার।
বাচ্চাদের চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম
চিয়া সিড বাচ্চাদের কেউ খাওয়ানো যেতে পারে তবে অবশ্যই বাচ্চাদেরকে খাওয়ানোর
সময় অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। শুকনো চিয়া সীড কখনোই বাচ্চাদেরকে
দেওয়া উচিত নয় কারণ , এটি গলায় আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বাচ্চাদেরকে যদি
চিয়া সিট খাওয়াতে হয় তাহলে পানির সাথে ভালোভাবে ভিজিয়ে রেখে অথবা দুধের ভেতরে
ভিজিয়ে রেখে খাওয়াতে পারেন। গোটা চিয়া সিড খাওয়াতে গেলে যদি গলায় আটকে
যাওয়া সম্ভব না থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রে ব্লেন্ডার কিংবা পাতায় একেবারে গুড়ো
করে দুধ , স্মুদি , পুডিং ইত্যাদি খাবারের সাথে মিশিয়ে বাচ্চাকে
খাওয়ান।
অন্যান্য উপকারিতার পাশাপাশি চিয়া সিড বাচ্চাদের ব্রেন ডেভলপে যথেষ্ট
কার্যকরী , তবে চিয়া সিড এক বছরের নিচে বাচ্চাদের না দেয়ায় ভালো। এক বছরের পর
থেকে বাচ্চাদের চিয়া সিড দিতে পারেন তবে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন
দৈনিক এক টেবিল চামচের বেশি না দেয়ার। এক থেকে দশ বছর বয়সী
বাচ্চাদের খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন এক টেবিল চামচ চিয়া সিড যুক্ত করা যেতে
পারে।
চিয়া সিড খেলে কি ওজন কমে
চিয়া সিডে আছে প্রচুর পরিমানে ফাইবার যা আমাদের পেট দীর্ঘক্ষণ ভরে রাখতে সাহায্য করে এবং সাথে সাথে শরীরে পানির ভারসাম্য ঠিক রাখে। দীর্ঘক্ষণ পেট ভরে থাকে বলে চিয়া সিট খেলে ক্ষুধা লাগার প্রবণতা কম থাকে আর যার কারণে আমরা অল্প পরিমাণে খাবার গ্রহণ করি , এতে আমাদের শরীরে মজুদকৃত ক্যালরি বার্ন হওয়ার সুযোগ পায় এবং এক্সট্রা কিলোরি কম জমা হয় ।এছাড়াও চিয়া সিডে ক্যালরির পরিমাণ একেবারেই কম থাকে। চিয়া সিড আমাদের রক্তে পরিস্কার করতে এবং খারাপ কলেস্টেরল দূর করতে সাহায্য করে।এই সিডের ভেতরে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ও অন্যান্য উপাদান মজুদ থাকায় আমরা যখন ডায়েট করার জন্য অল্প খাবার গ্রহণ করি তখন আমাদের শরীরে প্রোটিনসহ অন্যান্য পুষ্টি ঘাটতি গুলো থাকে না এতে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে না। ওজন কমানোর জন্য চিয়া সিট খেতে পারেন এক গ্লাস পানিতে দুই টেবিল চামচ ভিজিয়ে সকালে খালি পেটে অথবা লেবুর রসের সাথে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে।
মন্তব্য , চিয়া সিট খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই এর অপকারিতা গুলো সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিন এবং প্রয়োজনীয় সতর্কতা গুলো অনুসরণ করুন ।শুধু চিয়া সিড নয় যেকোনো জিনিস খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলার পূর্বে অবশ্যই এর বিষয়ে ভালোভাবে জেনে নেওয়া উচিত , কেননা সবকিছুই ভালো-মন্দ দুটি দিক থাকে।
নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url