চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম - চিয়া সিড এর বাংলা নাম

চিয়া সীডের অনেকেই শুনেছেন, শরীর ভালো রাখতে এর রয়েছে অনেক উপকারিতা। শরীরের মেটাবলিজম সিস্টেম ভালো রাখার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও রয়েছে ছোট ছোট এই বীজের বিশেষ কার্যকরিতা । এই বিষয়গুলো অনেকে জানলেও চিয়া সিড খাওয়ার সঠিক নিয়ম না জানার কারণে অনেকে হয়তো এই সীড খাওয়ার ব্যাপারে একটা আগ্রহ প্রকাশ করেন না।

ইদানিংকালে অনেকেই স্বাস্থ্য সচেতন হওয়ার কারণে এবং দ্রুত শরীরের মেথ ঝরানোর জন্য উত্তম খাদ্য হিসেবে বেছে নিয়েছেন চিয়া সিডকে। চিয়া সিড অত্যন্ত উপকারী কিন্তু আপনাদের এ বিষয়টির পাশাপাশি আরেকটি বিষয় জেনে রাখা উচিত যে এই চিয়া সিড অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে হতে পারে শারীরিক কিছু অসুবিধা কারণ চিয়া সিডের রয়েছে কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া তাই চিয়া সিড খাবারের পূর্বে এর পরিমাণ এবং খাওয়ার সময় ও নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিন।

আলোচনার বিষয়বস্তু সমূহঃ চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম - চিয়া সিড এর বাংলা নাম 

চিয়া সিড এর বাংলা নাম

Salvia Hispanica নামক উদ্ভিদ থেকে Chia seeds পাওয়া যায় এই উদ্ভিদটি মূলত মরুভূমি অঞ্চলে ভালো জন্মায় বিশেষ করে আমেরিকা এবং মেক্সিকো মরুভূমিতে। Chia seeds এর বাংলা নাম হল "চিয়া বীজ"। এই চিয়া সীড মরুভূমি অঞ্চল বা দেশগুলোতে ব্যাপকভাবে চাষাবাদ করা হলেও বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল সহ আরো বেশ কিছু দেশে বাণিজ্যিকভাবে চিয়া সিডের চাষাবাদ শুরু করা হয়েছে। চিয়া সিড সাদা-কালো এবং বাদামী রঙের , আকারে ছোট এবং কিছুটা তিল বীজ এর মতন হয়ে থাকে।

চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম

চিয়া সিড স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। যদি নিয়ম মেনে নিয়মিত খাওয়া হয় তাহলে এর থেকে অনেক ধরনের স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া সম্ভব। বর্তমানে অনেক স্বাস্থ্য সচেতন ব্যক্তিরা চিয়া সিড খাওয়া শুরু করলেও অধিকাংশ মানুষই এই বীজ খাওয়ার সঠিক নিয়ম জানেনা। চিয়া সিডের আলাদা কোন স্বাদ বা গন্ধ নেই , এই বীজ খেতে হয় পানিতে ভিজিয়ে অথবা পানির সাথে মিশিয়ে। এছাড়াও টক দই , স্মুদি , জুস , সালাদ ইত্যাদি খাবারের সাথে খাওয়া যায়। তবে স্বাস্থ্য উপকারিতা সঠিকভাবে পাওয়ার জন্য রাত্রেবেলা চিয়া সিড পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে অথবা সকালে ৫-১০ মিনিট কুসুম গরম পানিতে এই বীজ ভিজিয়ে খালি পেটে খেলে কার্যকরী ফলাফল পাওয়া যায় এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার  পূর্বে এ বীজ খেতে পারেন। চিয়া সিট প্রতিদিন অল্প পরিমাণে নিয়মিত ভাবে খাওয়া যায়, তবে নির্দিষ্ট পরিমাণে সপ্তাহে ৩-৪ দিন খেলেও এর

চিয়া সিড খাওয়ার সময়

চিয়া সিডের মধ্যে অনেক ধরনের স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং ঔষধি গুন থাকায় এই বীজকে সুপারফুড বলেও ডাকা হয়। অনেকেই হয়তো চিয়া সিড কোন সময় খাবেন বা ঠিক কোন সময় খেলে চিয়া সিডের পরিপূর্ণভাবে উপকারিতা গুলো পাবেন এই দ্বিধাদ্বন্দ্বে ডুবে থাকেন , মূলত চিয়া সিড খাওয়ার সঠিক সময় হল রাতে ঘুমানোর আগে অথবা সকালে খালি পেটে পানি বা লেবুর রসের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। এভাবে খেলে শরীরে বিভিন্ন উপকারিতার পাশাপাশি কোলেস্টেরল কমাতেও দ্রুত সাহায্য করবে চিয়া সিড। এছাড়াও দিনের যেকোনো সময়ে জুস, সালাত বা অন্যান্য খাবারের সাথে মিশিয়ে চিয়া সিড খাওয়া যেতে পারে । অনেকে মনে করেন সারারাত ভিজিয়ে রেখে চিয়া সিড পান করা বেশি ভালো তবে এই বীজ দীর্ঘক্ষণ ভিজিয়ে না রাখলেও কোন ক্ষতি নেই কারণ এই বীজগুলো ৫-১০ মিনিটে মধ্যেই তরল শোষণ করে নিতে পারে।

চিয়া সিড খেলে কি ওজন বাড়ে

অনেকেই জানতে চান চিয়া সিড খেলে কি সত্যি ওজন কমে না বাড়ে ? চিয়া সিড শরীরের আদ্রতা ধরে রাখে এবং এর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার , ওমেগা থ্রি , ফ্যাটি এসিড , প্রোটিন। চিয়া সিডের ভেতরে উল্লেখযোগ্য হারে ঐ উপাদান গুলো থাকাই এই বীজ খেলে পেট অনেকক্ষণ ভরা ভাব থাকে যার ফলে ক্ষুধা লাগার প্রবণতা কম থাকে। এছাড়াও প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং ক্যালোরি একেবারে কম থাকায় এটি আমাদের শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে যার কারণে ওজন  কমানোর ক্ষেত্রেও এই বীজ বিশেষ উপকারী। সুতরাং বলা যেতে পারে ওজন কমানোর ক্ষেত্রে চিয়া সিড একটি আদর্শ খাদ্য উপাদান। আর এই কারণেই যারা ডায়েট এর উপরে বেশি যত্নশীল তারা প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় চিয়া সিড রাখেন এতে শরীরের ওজন কমাতে যেমন সুবিধা হয় অপরদিকে শরীরের পুষ্টি ঘাটতি পূরণহয়

ওজন কমাতে চিয়া সীড খাওয়ার নিয়ম

ওজন কমানোর জন্য চিয়া সিড খাওয়ার সবচেয়ে ভালো সময় এবং নিয়ম হলো খালি পেটে। অর্থাৎ ওজন কমানোর ক্ষেত্রে খালি পেটে চিয়া সিড খেলে দ্রুত এবং কার্যকরী ফলাফল পাওয়া যায়। সকালে পেটে খালি থাকা অবস্থায় এক গ্লাস পানিতে ২-৩ টেবিল চামচ চিয়া সীড  ৫-১০ ভিজিয়ে রেখে পান করতে পারেন অথবা রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক গ্লাস পানিতে 2 টেবিল চামচ চিয়া সিডের সাথে এক চামচ লেবুর রস মিশিয়ে পান করতে পারেন। এছাড়া ওজন কমানোর জন্য বিভিন্ন খাবারের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন চিয়া সিড।

চিয়া সিড খেলে কি হয়

অনেকেই কৌতুহলবশত জানতে চেয়ে থাকেন চিয়া সিড খেলে কি হয় ? চিয়া সিড খেলে শরীরে পুষ্টি ঘাটতি পূরণ করার সহজ হয় কেননা এর ভেতরে রয়েছে প্রোটিন , ফাইবার , ওমেগা থ্রি , ফ্যাটি এসিড , ক্যালসিয়াম , ম্যাগনেসিয়াম , ফসফরাসসহ আরো বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান। নিয়মিত চিয়া সিড খেলে এইসব গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি শরীরে থাকে না ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং মেটাবলিজম সিস্টেমের উন্নতি ঘটে।

চিয়া সিড আমাদের রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে এর কারনে শরীর থেকে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কম হয় যার ফলে হার্টের সমস্যা ও শারীরিক ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং কর্মশক্তি বৃদ্ধি পায়। শুধু রক্ত পরিষ্কার করতেই নয় কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতেও সমানভাবে কার্যকরী চিয়া সীড।

এছাড়াও প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকায় কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার মাধ্যমে এর সাথে রিলেটেড বিভিন্ন সমস্যা গুলো দূর করতে , ক্যান্সারের সেল ড্যামেজ করতে , অনিদ্রা দূর করতে , এসিডিটি কমাতে , ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ এবং হাড়ের স্বাস্থ্য উন্নত করা সহজ আর্থ্রাইটিস বা জয়েন্ট এর ব্যথা দূর করার ক্ষেত্রে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে এই বীজ।

চিয়া সিডের শুধু স্বাস্থ্য উপকারিতা আছে এমনটি নয় এই বীজ অবদান রাখতে পারে রূপচর্চার ক্ষেত্রেও। চিয়া সিড ব্যবহার করার মাধ্যমে ত্বক উজ্জ্বল মসৃণ , চুল মজবুত এবং নখের ভঙ্গুরতা দূর করা সম্ভব। রূপচর্চায় চিয়া সিট ব্যবহারের ফলে ত্বক এবং চুল সুন্দর ও স্বাস্থ্যজ্জল হয়ে ওঠে।

চিয়া সিড এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

চিয়া সীডের একাধিক স্বাস্থ্য উপকারিতা থাকলেও পাশাপাশি এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে। চিয়া সিডের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে প্রোস্টেট এবং স্তন ক্যান্সারের। এই বীজ বেশি পরিমাণে খেলে প্রোস্টেট এবং স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। পরিমিত পরিমানে তেমন কোন ক্ষতি না হলেও অতিরিক্ত মাত্রায় এই বীজ খাওয়া শুরু করলে এসিডের সমস্যা , ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি কমে যাওয়া , ব্লাড প্রেসার কম হয়ে যেতে পারে।মাত্রাতিরিক্ত চিয়া সিড খেলে , এটি শরীরের পানি শুষে নিয়ে ডিহাইড্রেশনে ফেলতে পারে বলে বিশেষজ্ঞ গন আশঙ্কা করেন। অনেক ক্ষেত্রে বেশি মাত্রায় চিয়া সিড খাওয়ার ফলে দেখা দিতে পারে ডায়রিয়ার মতন সমস্যাও।

প্রতিদিন কতটুকু পরিমাণ চিয়া সীড খাওয়া উচিত

আপনাদের আগে জানানো হয়েছে যে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি পরিমাণে চিয়া সিড খেলে তা উপকারের পরিবর্তে করতে পারে অপকার তাই অবশ্যই যারা চিয়া সিড খাওয়া শুরু করেছেন এবং শুরু করতে যাচ্ছেন তারা অবশ্যই আগে এই বীজ খাওয়ার পরিমাণ সম্পর্কে জেনে নিন। প্রতিদিন সর্বোচ্চ ২-৩ টেবিল চামচ বা ১০০ গ্রাম চিয়া সিড খাওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা উচিত।

মন্তব্য , যে কোন উপকারী জিনিসই যে স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি ছেলে দ্রুত এবং ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে বিষয়টি এমন নাই তাই যতই উপকারী হোক না কেন সবকিছুরই মাত্রা বুঝে খাওয়া উচিত তা না হলে অনেক সময় সুফল পাওয়ার চেয়ে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে , আর চিয়াসিড এর ব্যতিক্রম নয় তাই অবশ্যই এই বীজ খাওয়ার সময় পরিমাণের বিষয়টি মাথায় রাখবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url