শবে বরাতের নামাজের সঠিক নিয়ম - শবে বরাতের নামাজের নিয়ত

লাইলাতুল বরাত বা শবে বরাত হল অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ একটি রাত ,এই রাতের ফজিলত অনেক বেশি এবং পবিত্র এই রাতটি ইবাদত বন্দেগী , নফল নামাজ , তসবি তাহলীল এর মাধ্যমে কাটানো খুবই সওয়াবের। এই রাত সম্পর্কে নবীজি বলেছেন - যখন তোমাদের সামনে লাইলাতুল বরাতের রাত্রি উপস্থিত হবে তখন তোমরা রাতে ইবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকবে এবং দিনে রোজা রাখবে।
লাইলাতুল বরাতভা শবে বরাতের রাত্রে কি হলো গোনা থেকে মুক্তি লাভ করার অন্যতম একটি রাত। এবং বলা হয়ে থাকে এই রাত্রে প্রত্যেক সৃষ্টির জীবের আগামী এক বছরের ভাগ্য লেখা হয়। শবে বরাতের রাত্রিতে নফল নামাজের মাধ্যমে কাটাতে হলে এই নামাজের নিয়ম সম্পর্কে প্রথমে জেনে নেওয়া উচিত। শবে বরাতের নামাজ পড়ার জন্য বিভিন্ন রেওয়াতে বেশ কিছু নিয়ম পাওয়া যায় আর সেই নিয়মগুলোই আজকে আপনাদের জানাবো যাতে করে এই পবিত্র রাত্রিতে আপনারা আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় ইবাদত নামাজ আদায় করার মাধ্যমে কাটাতে পারেন।

সূচিপত্রঃ শবে বরাতের নামাজের নিয়ম - শবে বরাতের নামাজের নিয়ত

শবে বরাতের নামাজ

শবে বরাত একটি মর্তবাপূর্ণ রাত। শা'বান মাসে ১৫ তারিখে রাতকে শবে বরাতের রাত বলা হয়। শব অর্থ রাত্রি এবং বরাত অর্থ ভাগ্য। এই শবে বরাতের অর্থ ভাগ্যে রজনী। হাদিস শরীফ আছে এই রাতে সকল মানুষের ভাগ্য নির্ধারিত হয়, পরবর্তী এক বৎসরের জন্ম-মৃত্যু, ঘটনা প্রভৃতি এ রাতে নির্ধারিত হয়। এ রাতে আল্লাহ পাক বান্দাদের গুনাহ মাফসমূহ মাফ করার জন্য এবং যাবতীয় প্রার্থনা কবুলের জন্য তার রহমতের দুয়ার খুলে দেন। এই রাতে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)কে ইবাদতে মশগুল থাকতে দেখা গেছে। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন যে, এক রাতে আমি ঘুম থেকে জেগে দেখি রসূলুল্লাহ (সাঃ) পাশে নেই। তখন আমি তাকে খুজতে থাকি, খুজতে খুজতে আমি জান্নাতুল বাকীতে গিয়ে তাঁকে প্রার্থনারত অবস্থায় দেখে এবং আমিও সেখানে মোনাজাতের শরিক হলাম। এরপর মোনাজাত শেষ হলে জানতে চাই, আজকে রাত সম্পর্কে বলুন। তখন তিনি বলেন এই রাতে দোয়া কবুল হয় এবং গুনাহ মাফ করা হয় ।

শবে বরাতের নামাজ কখন পড়তে হয়

শবে বরাত পালন করা হয় শাবান মাসের ১৫ তারিখ রাত্রে অর্থাৎ শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত্রিটি হল শবে বরাতের রাত , আর এই রাতে শবে বরাতেরনামাজ পড়া হয় নির্ধারিত এশার নামাজের পর থেকে ফজরের ওয়াক্ত হওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত। শবে বরাতের পবিত্র রাতে নামাজ আদায়ের জন্য কোন নির্দিষ্ট রাখার সংখ্যা নেই দুই রাকাতের নিয়তে যে যত ইচ্ছা নামাজ পড়তে পারে।

শবে বরাতের নামাজের নিয়ম

শবে বরাতের নামাজের জন্য নিয়ত করতে হবে এবং বাংলায় নিয়ত করলে  প্রথমে মনে মনে চিন্তা করবে যে আমি আল্লাহর উদ্দেশ্যে দুই রাকাত নফল নামাজ কিবলামুখী হয়ে আদায় করছি। তারপর আল্লাহু আকবার বলে নামাজ শুরু করবে। এইরুপে ১২,২০,৫০,১০০ কিংবা যতবার ইচ্ছা পড়া যায়। সুরা ফাতেহার পর যে কোন সূরা মিলাইয়া পড়া যায় তবে যে কোন সংখ্যায় সূরা ইখলাস, আয়াতুল কুরসী, সূরা ক্বদর, সূরা তাকাসুর ইত্যাদি মিলিয়ে পড়া অধিক সবের কাজ। অন্য বর্ণনায় আছে যে যদি কেউ সুরা ফাতেহার পর প্রতি রাকাতে সূরা কদর একবার ও সূরা ইখলাস পঁচিশ পাঠ করে চার রাকাত নামাজ আদায় করে, তবে সে মায়ের গর্ভ হতে সন্তান যেমন নিষ্পাপ অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হয় ঠিক তেমনি নিষ্পাপ হয়ে যাবে। তবে হাদীস শরীফে আছে সুরা ফাতেহার পরে প্রতি রাকাতে দশবার করে সূরা ইখলাস পাঠ করে চার রাকাত নামাজ আদায় করলে আল্লাহ তার চারটি অভাব পূরণ করে দিবেন এবং সমস্ত গুনাহ খাতা মার্জনা করে দেবেন। বর্ণিত আছে এ রাতে যে ব্যক্তি, সুরার দুখান সাতবার এবং সূরা ইয়াসিন তিনবার পাঠ করে আল্লাহ তা'আলা তিনটি মাকসুদ পূর্ণ করে দেবেন। যেমন (১) হায়াত বৃদ্ধি করবেন। (২) রুজি বৃদ্ধি করবেন। (৩) সমস্ত মাফ করে দেবেন এছাড়া কুরআন তেলাওয়াত, তাসবি-তাহলিল, যিকির - আজকার কুরআন হাদিসের ব্যাখ্যা শ্র্রবণ ও ইসলাম বিষয়ে আলোচনা ভিতর দিয়ে রাত্রি অতিবাহিত করলে বেশুমার নেকী হাসিল হবে। এই রাত্রে কবর যিয়ারত করা, দান খয়রাত করা, মিসকিনদের খাওয়ানো, ইত্যাদি উত্তম বলিয়া বিবেচিত।
আরো পড়ুনঃ শবে বরাতের ফজিলত
অন্য এক হাদীসে আছে যে, যে ব্যক্তি এ রাত্রে ১০০ হতে ৩০০ বা দুরুদ পাঠ করবে আল্লাহ তায়ালা নিশ্চয়ই তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেবেন। এবং নবী করীম (সাঃ) সুপারিশ করবেন তাকে জান্নাতে নিয়ে যাবেন। হাদিস শরীফে আছে, হযরত নবী করীম (সাঃ) "শা'বান মাসের ১৫ তারিখ (শবে বরাত) রাতে নামাজ পড়ো এবং দিনে রোজা রাখো। কেননা আল্লাহ পাক সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে নিকটবর্তী আসমানে অবতরন করেন ক্ষমাপ্রার্থনাকারি কেউ আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দিব। বিপদগ্রস্ত কেউ আছে কি? আমি তাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করব। এ ধরণের আরো কেউ আছো কি? আমি আর যে কোন প্রয়োজন পূরণ করব। এমনি করে ফজর ওয়াক্ত হয়ে যায়।" (ইবনে মাজাহ) বারাতের রাতে বিশেষ দোয়াঃ হাদীসে আছে নবী (সাঃ) ফরমাইছেন, যদি কেউ শা'বান মাসে ১৪ তারিখে সূর্যাস্ত পর নিম্ন লিখিত দোয়াটি চল্লিশ বার পাঠ করে তবে তার ৪০ বছরের ছগীরা গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। উচ্চারণ: লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ। অর্থঃ আল্লাহর তৌফিক না করলে কোন নেক কাজ করা শক্তি বা অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকার ক্ষমতা কারো নেই।

শবে বরাতের নামাজের নিয়ত

শবে বরাতের নামাজ পড়ার জন্য দুই রাকাত নফল নামাজের নিয়ত করতে হয় , আর এই নামাজের নিয়ত কেউ আরবিতে না জানলে বাংলাতেও পড়তে পারেন। আপনাদের জন্য শবেবরাতের নামাজ পড়ার আরবি এবং বাংলা দুই ধরনের নিয়ত তুলে ধরা হলো-
উচ্চারনঃ নাওয়াইতু আন উছল্লিয়া লিল্লা-হি তাআ-লা- রাকআতাই ছালা-তি লাইলাতিল বারা-তিন্ -নাফলি, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা-জিহাতিল্ কাবাতিশ্ শারীফাতি আল্লা-হু আকবার।
বাংলা ঃ  “শব-ই-বরাতের দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ার জন্য কিবলামূখী হয়ে নিয়ত করছি আল্লাহু আকবর”।
মন্তব্য , শবে বরাতের রাতে নফল নামাজ ইবাদত বন্দের মাধ্যমে কাটানো খুবই সওয়াবপূর্ণ কাজ এবং এর মাধ্যমে অসংখ্য নেকি মিললেও আমাদের ওপরে অর্পিত ফরজ নামাজ কি বাদ দিয়ে এই নামাজের উপরে জোর দিলে চলবে না কেননা শবে বরাতের নামাজ নফল তাই অবশ্যই আমাদের উপরে যে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ রয়েছে সেই নামাজ আদায় করার পরে নফল এর উপরে জোর দিতে হবে। আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের তৌফিক এবং নেক হায়াত দান করুন (আমিন)।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url