শবে কদরের দোয়া - শবে কদর আমল

শবে কদরের রাত্রির জন্য নবীজি (সা) একটি বিশেষ দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন। আপনাদের মধ্যে অনেকেরই হয়তো শবে কদরের বিশেষ দোয়াটি জানা নেই। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- শবে কদরের রাত্রিতে দোয়াটি বেশি বেশি পাঠ করতে। আজকে আপনাদেরকে শবে কদরের বিশেষ দোয়াটির পাশাপাশি এই পবিত্র রাত্রিতে আরো কি কি আমল করতে হবে সেগুলো জানাবো।

শবে কদরের রাত্রি কোন যেন তেন রাত নয়, এই রাতের ফজিলত অনেক বেশি। এই রাতের মধ্যে দিয়ে , উম্মতে মোহাম্মাদিদের কম হলেও এই রাতের মধ্যে দিয়ে , হাজার মাস ইবাদতের চেয়েও অধিক সওয়াব লাভ করার সুবর্ণ সুযোগ করে দিয়েছেন মহান রাব্বুল আলামিন। আর তাই এই পবিত্র রাতটি ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে কাটানোর জন্য শবে কদরের নামাজ সম্পর্কে জানার পাশাপাশি এই রাতের বিশেষ দোয়া ও আমল সম্পর্কেও জেনে রাখতে হবে।

সূচিপত্রঃ শবে কদরের দোয়া - শবে কদর আমল

শবে কদর

রমযান মাসের ২৬ তারিখ দিবাগত রাতকে শবে কদরের রাত বলা হয়। আমাদের দেশের প্রচলিত নিয়মে অধিকাংশ লোক এই রাতেকেই কদরের রাত বলে ধারণা করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "তোমরা রমজান মাসের শেষ ১০ দিনের বেজোড় রাতগুলোতে ক্বদর তালাশ কর। "এই হাদিসের মর্মে বুঝা যায়, ২১,২৩,২৫,২৭,২৯ এর যে কোন রাতে ক্বদর হতে পারে। এই রাতের ফজিলত পাওয়ার ইচ্ছায় অনেকে এ'তেকাফে বসে শেষ দশ দিন ইবাদত বান্দেগীতে কাটিয়ে দেন অনেকে এই বিজোড় রাত সমূহে নামাজ, তেলাওয়াত, দুআ' দরূদ ইত্যাদি ইবাদত বন্দেগীতে সারারাত অতিবাহিত করেন। 

শবে কদরের বিশেষ দোয়া 

শবে কদরের রাতের আমল এর জন্য মহানবী (সা) আমাদের একটি দোয়া শিখিয়ে দিয়ে গেছেন। তিনি বলেছেন-তোমাদের মধ্যে কেউ কদরের রাত্রি পেলে এই দোয়াটি বেশি বেশি আমল করবে। শবে কদরের রাত্রের দোয়াটি হলোঃ اللَّهُمَّ إِنَّكَ عُفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي
উচ্চারণঃ "আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্নী"। এর অর্থ হল-হে আল্লাহ! তুমি মার্জনা কারী , তুমি মার্জনা কে ভালোবাস ; অতএব তুমি আমাকে মার্জনা করো।
এছাড়াও আরো কিছু দোয়া শবে কদরের রাতে আমরা বেশি বেশি পড়তে পারি যে দোয়াগুলো নিম্নরূপ,
উচ্চারণঃ রাব্বানাকশিফ আন্নাল আযাবা ইন্না মুমিনুন । অর্থ-হে আমাদের পালনকর্তা! আপনি আমাদের উপর থেকে আপনার শাস্তি প্রত্যাহার করুন আমরা আপনার উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছি (সূরা আল দুখান; আয়াত ১২)
উচ্চারণঃ রাব্বিগফির ওয়ারহাম ওয়া আংতা খাইরুর রাহিমীন। অর্থ-হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা করুন , আমার উপর রহম করুন , আপনি তো সর্বশ্রেষ্ঠ রহমাকারি (সুরা মুমিনুন; আয়াত ১১৮)।
উচ্চারণঃ "রাব্বি ইন্নি জালামতু নাফসি ফাগফিরলি"। অর্থ-হে আমাদের প্রতিপালক ! আমি নিজের উপর জুলুম করেছি, আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।(সূরা কাসাস; আয়াত ১৬)

শবে কদর আমল

শবে কদরের রাতের আমল সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান , এবার আপনাদেরকে তাই শবে কদরের রাতের আমল সম্পর্কে কিছু তথ্য জানাবো। শবে কদরের রাত্রি মাগরিবের পর হতে সুবহে সাদিক পর্যন্ত সময়ে এবাদত বন্দেগী করতে হয়। নফল নামাজ , কোরআন তেলাওয়াত করা , হাদিস-তাফসির ইত্যাদি পাঠ করা বা শোনা , তসবি তাহলীল , জিকির আজগার , দরুদ শরীফ পাঠ , বেশি বেশি ইস্তেগফার পাঠ করা , বেশি বেশি কালেমা পাঠ করা ইত্যাদি সবই শবে কদরের রাতের আমল এর অন্তর্ভুক্ত।
শবে কদরের রাতের আমল বা ইবাদত বন্দেগীর নির্দিষ্ট কোন সংখ্যা বা পরিমাণ নেই । যে যত বেশি আমল করবে সে তত বেশি সওয়াব হাসিল করবে। আমাদের উচিত শবে কদরের রাত্রে বেশি বেশি ইস্তেগফার দরুদ এবং নামাজ আদায় করা। আমরা সবাই জানি যে সকল ইবাদতের মধ্যে নামাজ হলো সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদাত।
এছাড়াও শবে কদরের রাত্রিতে আমরা সালাতুল তাসবির নামাজের আমল করতে পারি । এই নামাজ সম্পর্কে নবীজি বলেছেন তোমরা প্রতিদিন একবার , না হয় মাসে একবার , না হলে বছরে একবার এবং তাও যদি না পারো তাহলে জীবনে একবার এই নামাজ আদায় কর । সুতরাং এই মহিমান্বিত সালাতুল তাসবীর নামাজ পড়ার জন্য আমরা শবে কদরের মর্যাদাপূর্ণ যাত্রীটি বেছে নিতে পারি। এবং ইস্তেগফার হিসেবে সাইয়াদুল ইস্তেগফারটি বেশি বেশি পাঠ করতে পারি। কারণ অন্যান্য ইস্তেগফারের গুলোর চাইতে সাইয়েদুল ইস্তেগফারের মর্যাদা অনেক বেশি।
মন্তব্য , আমাদের এই ক্ষণিকের ইহকাল জীবনে যদি সহস্র বছর ধরে ইবাদত করার সমতুল্য সওয়াব আমরা পেতে চাই তাহলে এর জন্য শবে কদরের রাতে সারা রাত জেগে ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে কাটাতে হবে। আর শবে কদরের রাত্রি পাওয়ার জন্য রমজানের শেষ 10 দিনের মধ্যে বেজোর রাত্রে গুলো সব কয়টি ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে কাটাতে হবে কেননা শবে কদরের রাত্রি কোন দিন নাযিল হয় এটি কেউ নির্দিষ্ট ভাবে বলতে পারেনা। তবে নবীজি আমাদেরকে রমজানের শেষ ১০ দিনের মধ্যে বিজোড় রাত্রি গুলোতে শবে কদর তালাশ করতে বলেছেন। আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে শবে কদরের রাত্রিটি এবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে কাটানোর তৌফিক দান করুন এবং এর উসিলায় আমাদের সকলকে অতীতের গুনাহ থেকে মুক্ত করুন (আমীন)।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url