গর্ভবতী মায়ের বিশেষ ১০টি আমল

সন্তান যদি সৎ , নেককার , দ্বীনদার , নেই অন্যায়ের পার্থক্যকারী না হয় তাহলে সেক্ষেত্রে , সারা জীবন পিতা-মাতার ভোগান্তি তো চলতে থাকে এমনকি সন্তানের কৃতকর্মের ফল বাবা মাকে ভোগ করতে হয় মৃত্যুর পরেও। তাই গর্ভাবস্থা থেকে চেষ্টা করতে হবে সন্তান যাতে সৎ এবং দ্বীনদার হয় , আর এর জন্য মায়ের ভূমিকা হল সবচেয়ে বেশি। তাই গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মাকে সবসময় আমল আকীদার মধ্যে থাকতে হবে।

ইসলামে একজন মায়ের মর্যাদা দেয়া হয়েছে সর্বাধিক কারণ , গর্ব অবস্থায় একজন মায়ের শারীরিক এবং মানসিক কষ্ট ছাড়াও মায়ের প্রত্যেকটি কাজকর্ম চিন্তাভাবনা আচার ব্যবহার সবকিছুই পেতে থাকা সন্তানকে প্রভাবিত করে। তাই বাচ্চা ভবিষ্যতে বাচ্চা চরিত্র , মনোভাব কেমন হবে তা অনেকটাই ডিপেন্ড করে গর্ভাবস্থায় মায়ের উপরে। গর্ভবতী মা যদি গর্ভাবস্থায় ইবাদত বন্দেগি এবং আমল আকিদার মধ্যে দিয়ে সময় পার করে তাহলে গর্ভের সন্তানও দ্বীনদার এবং নেককার হবে -ইনশাআল্লাহ। আর এর জন্য গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়ের আমল সম্পর্কে জানতে হবে এবং সেই অনুযায়ী চলার চেষ্টা করতে হবে।

গর্ভবতী মায়ের আমল

মায়ের খাবারের পুষ্টিগুণের মাধ্যমে গর্ভের সন্তান যেমন প্রভাবিত হয় এবং সুস্থভাবে বেড়ে ওঠে , ঠিক তেমনি ভাবে মায়ের চরিত্র বা আখলাক , কথাবার্তার ধরন , মনোভাব সবকিছুই কিন্তু বাচ্চাকে প্রভাবিত করে। তাই দ্বীনদার , নেককার , সৎ, সুস্থ বাচ্চা চাইলে মাকে অবশ্যই আমলদার হতে হবে আর এটা সাইন্টিফিক ভাবেও প্রমাণিত। গর্ভাবস্থায় মা যদি আমল আকিদার মধ্যে থাকে তাহলে আল্লাহর রহমতে বাচ্চা দ্বীনদার এবং সৎ হবে , আর এই সময় গর্ভবতী মাকে যে ধরনের আমলগুলো করতে হবে সেগুলো হলো ,

অজু অবস্থায় থাকাঃ সবসময়ই অজুরতর অবস্থায় থাকা হল , গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত গুলোর মধ্যে একটি। তাই গর্ভবতী মাকে চেষ্টা করতে হবে সব সময় পবিত্র এবং অজু অবস্থায় থাকার। ওযু যে শুধু বান্দাকে পাপমুক্ত ও পবিত্র রাখে তাই না , ওযুর মাধ্যমে শারীরিক অনেক উপকারও পাওয়া যায় , তাই গর্ভবতী মা যদি সব সময় ওযু অবস্থায় থাকে তাহলে যেসব বেনিফিটস পাবে তার সংক্ষিপ্ত তালিকা হল - অজু করলে হাত , মুখ , নাক , গলা পরিষ্কার থাকে এবং এখানে থাকা রোগ জীবাণুগুলো দূর হবে , চেহারার উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে  , মাথা মাসেহ করার কারণে সর্দি ও অনিদ্রার সমস্যা দূর হবে , শ্রবণশক্তি এবং দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পাবে , রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পাবে । এছাড়াও অজু করলে আরো অনেক ধরনের শারীরিক উপকারিতা পাওয়া যাবে এবং এই সব কিছুরই প্রভাব পড়বে গর্ভে থাকা সন্তানের ওপরেও । এছাড়াও অজু করলে মেন্টালি ফ্রেশ থাকা যায় এবং ক্লান্তি দূর হয়। আর এই সব কিছুরই প্রভাব পড়বে গর্ভে থাকা সন্তানের ওপরেও। আর আপনারা হয়তো সকলেই জানেন যে গর্ভাবস্থায় মায়ের মেন্টালিটি ভালো থাকাটা কতটা জরুরী।

সময় মতন নামাজ আদায় করাঃ গর্ভাবস্থায়ী মায়ের প্রত্যেকটি কার্যকলাপের প্রভাব পেটে থাকা সন্তানের উপরে পড়ে তাই নামাজী এবং দ্বীনদার সন্তান লাভের জন্য গর্ব অবস্থায় অবশ্যই মাকে নিয়মিত এবং আওয়াল ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। গর্ভাবস্থা নারীদের জন্য অত্যন্ত ও ক্রিটিকাল একটি টাইম , এই সময় শরীরের অভ্যন্তরীণ নানান পরিবর্তনের কারণে , সব সময় অস্থির লাগা , অবসাদ অনুভব হয়। আর এই অস্থিরতা , অবসন্নতা দূর করার উৎকৃষ্ট মাধ্যম হলো নামাজ , এছাড়াও নামাজ হল সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত এবং আল্লাহর অত্যন্ত পছন্দের ইবাদত তাই পাঁচ ওয়াক্ত আদায় করতেই হবে পাশাপাশি গর্ভাবস্থায় চেষ্টা করতে হবে নফল নামাজ এবং নফল এবাদতের উপরে জোর দেয়ার।

কোরআন তেলাওয়াত করাঃ গর্ভাবস্থার আমল গুলোর মধ্যে আরেকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো কোরআন তেলাওয়াত। গর্ভধারণের প্রায় পাঁচ মাসের মধ্যে পেটে থাকা বাচ্চা শ্রবণ শক্তি অর্জন করে এবং মায়ের কথা বার্তা শুনতে পায় , আর এ সময়  নিয়মিতভাবে কোরআন তেলাওয়াত করলে পেটে থাকা বাচ্চা কুরআনের বাণী গুলোর সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে। গর্ভাবস্থায় বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করলে এটি যে বাচ্চার ওপরে প্রভাব বিস্তার করে এবং গর্ভে থাকা বাচ্চা এটি শুনতে পায় তার জলজ্যান্ত প্রণাম হলো - আব্দুল কাদির জিলানী(রহ)।আব্দুল কাদির জিলানী(রহ) গর্বে থাকা অবস্থায় , উনার মাতা নিয়মিতভাবে কোরআন তেলাওয়াত করতেন এবং তিনি প্রায় 18 পারা কোরআন মুখস্ত করার মাধ্যমে অন্তরের ধারণ করেছিলেন। মায়ের সেই কোরআন তেলাওয়াত শুনে গর্ভে থাকা অবস্থাতেই আব্দুল কাদির জিলানী(রহ) ১৮ পারা কোরআন মুখস্ত করে ফেলেছিলেন।

তসবিহ তাহলীল করাঃ গর্ভবতী মায়েদের এ সময় উচিত বেশি বেশি তসবি তাহলীল পাঠ করা। সুবহানাল্লাহ , আলহামদুলিল্লাহ , আল্লাহু আকবার , বিসমিল্লাহ , কালিমা এসব তসবি গুলো যেকোনো অবস্থাতেই অর্থাৎ কাজকর্মরত অবস্থাতেও করা যায় তাই অবসর টাইমে অথবা সাংসারিক কাজগুলো করার সময় আজেবাজে কথা চিন্তা না করে তাসবি তাহলীল পাঠ করুন।

আরো পড়ুনঃ সাইদুল ইস্তেগফার উচ্চারণ এবং ফজিলত

আল্লাহর শুকরিয়া করাঃ গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়ের উচিত বেশি বেশি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা , কারণ এমন অনেক দম্পতি রয়েছে যারা শত চেষ্টা করেও সন্তান নিতে পারছে না। সেই তুলনায় যে আল্লাহ পাক আপনাকে রহম করেছেন অনেক বড় একটি নেয়ামত দান করেছেন বা করতে চলেছেন তার জন্য বেশি বেশি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা উচিত।

দ্বীনদার , সুস্থ সন্তান লাভের দোয়া করাঃ স্বাভাবিক অবস্থায় তুলনায় এবং অন্যান্য ব্যক্তিদের তুলনায় গর্ভবতী নারীদের দোয়া আল্লাহ পাক তাড়াতাড়ি কবুল করেন , এবং গর্ভাবস্থা হল দোয়া কবুলের একটি সময়। তাই এই সময় গর্ভবতী মায়ের উচিত নিয়মিত নামাজ সহগ গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত গুলোর পাশাপাশি বেশি বেশি দোয়া করা । এই সময় দ্বীনদার , সৎ সুস্থ সন্তান লাভের দোয়া ছাড়াও অন্যান্য দোয়া সহ বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা পাওয়া এবং পাপ থেকে ইস্তেগফার করা উচিত।

দান-খয়রাত করাঃ গর্ভাবস্থায় নফল ইবাদত এবং আমল হিসেবে, সাধ্য অনুযায়ী বেশি বেশি দান খায়রত করতে পারেন। এতে একদিকে যেমন আপনি অশেষ সবের অধিকারী হতে পারবেন এবং কোন কোন ক্ষেত্রে আপনার সেই দান সাদকায়ে জারিয়া হিসেবে চলতে থাকবে অপরদিকে , যেহেতু আপনার প্রতিটি কার্যকলাপ এর প্রভাবে আপনার পেটে থাকা সন্তানের উপরে পড়বে তাই গর্ব অবস্থায় বেশি বেশি দান করলে সন্তান দানশীল হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।

আল্লাহর গুণবাচক নাম গুলোর জিকির করাঃ আল্লাহপাকের 99 টি গুণবাচক নাম রয়েছে। অন্যান্য এবাদত গুলোর মধ্যে , মাঝে মাঝে আল্লাহর এই গুণবাচক নাম গুলো জিকির করতে পারেন। এর বদৌলতে আল্লাহ পাক চাইলে গর্ব অবস্থায় আপনার এবং আপনার পেটের সন্তানের উপরে আল্লাহ পাক রহমত এবং বরকত নাযিল করতে পারেন এবং সকল প্রকার বিপদ আপদ থেকে দূরে রাখতে পারেন।

গুনাহ থেকে নিজেকে রক্ষা করাঃ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতগুলোর পাশাপাশি গর্ভবতী মাকে চেষ্টা করতে হবে গীবতসহ সকল প্রকার পাপ কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখার।

আরো পড়ুনঃ সূরা ইয়াসিনের আরবি এবং বাংলা অর্থসহ উচ্চারণ

বিভিন্ন সুরার আমল করাঃ  গর্ভাবস্থায় কোরআন তেলাওয়াত করার পাশাপাশি , বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সূরা গুলোর আমল করতে পারেন যেমন - প্রথম তিন মাসে বেশি বেশি সূরা লোকমান ও সূরা ইনশকাক তেলাওয়াত  করবেন , পরের তিন মাসে - সূরা ইউসুফ ও সুরা ইয়াসিন বেশি বেশি আমল করুন এবং শেষ তিন মাসে সুরা মরিয়ম , সূরা মুহাম্মদ , ইবরাহিম( সম্পূর্ণ না পারলে কিছু অংশ) তেলাওয়াত করুন।

মন্তব্য , সর্বোপরি দ্বীনদার এবং সুস্থ সন্তান লাভের জন্য প্রতিনিয়ত মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে প্রার্থনা করতে হবে ও বেশি বেশি ইস্তেগফার পাঠ করতে হবে এবং সন্তান ছেলে মেয়ে যাই হোক সেটার উপরে সন্তুষ্ট থাকতে হবে। অনেকেই মেয়ে সন্তান হলে খুব একটা খুশি হন না কিন্তু মনে রাখবেন একজন দ্বীনদার মেয়ে সন্তান এর অর্থ হল একটি জান্নাত।  আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন সকল পিতা-মাতাকে নেক সন্তান দান করুন( আমীন)।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url