ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার কি কি - ভিটামিন ডি এর অভাবে কি হয়

ভিটামিন ডি অ্যাকচুয়ালি এক ধরনের প্রো হরমন। আমাদের শরীরে ভিটামিন ডি এর কার্যকারিতা অনেকটা হরমোনের মতন। ভিটামিন ডি আমাদের শরীরের জন্য খুবই দরকারি , আর শরীরে যদি ভিটামিনের ঘাটতি থাকে তাহলে দেখা দেয় নানান ধরনের অসুবিধা ও রোগ।
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থেকে শুরু করে সুস্থ ভাবে জীবন যাপন করার জন্য দেহের সঠিক মাত্রায় ভিটামিন ডি খুবই প্রয়োজন। আর শরীরে যদি প্রতিদিন দৈহিক চাহিদা অনুযায়ী ভিটামিন ডি এর ঘাটতি পূরণ করতে হয় তাহলে জানতে হবে ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার কি কি এবং কিভাবে শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি পূরণ করা যায় এই বিষয়গুলো। আর শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি রয়েছে কিনা তা জানার জন্য জ্ঞান রাখতে হবে ভিটামিন ডি এর অভাব হলে কি কি সমস্যা হয় এই ব্যাপারে।

সূচিপত্রঃ ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার কি কি - ভিটামিন ডি এর অভাবে কি হয়

ভিটামিন ডি এর অভাব কেন হয়

ভিটামিন ডি আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং জরুরী একটি উপাদান। আমাদের শরীরে ভিটামিন ডি বিশেষ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল - ক্যালসিয়াম শোষণ, হাড় , দাঁত এবং পেশী গঠন। কিন্তু অধিকাংশ মানুষের ক্ষেত্রে দেখা যায় শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি বা এর অভাবজনিত সমস্যা গুলো প্রকাশ পেতে। শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি হওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ থাকে যেমন - আমিষ যুক্ত খাবার না খাওয়া , দীর্ঘদিন ধরে এন্টিবায়োটিক সেবন করা , গায়ে সূর্যের আলো না লাগানো , বার্ধক্য জনিত কারণে , আবার অনেক সময় জিনগত কারণেও ভিটামিন ডি এর ঘাটতি দেখা দেয়।

ভিটামিন ডি এর অভাবে কি হয়

ভিটামিন ডি এর নাম সবাই জানলেও অধিকাংশ মানুষই জানে না  ভিটামিন ডি এর অভাবে কি হয়।  শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি দেখা দিলে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয় হাড় , কারণ হাড়ে ক্যালসিয়াম শোষণ করতে সাহায্য করে ভিটামিন ডি।  শিশুদের শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতির কারণে হয়ে থাকে রিকেট নামক রোগ এর কারণে শিশুদের হাড়ের বৃদ্ধি এবং বুদ্ধির বিকাশ সঠিকভাবে হয় না বরঞ্চ এই রোগের কারণে শিশুদের হাড় বিকৃত হয়ে যায়। এছাড়াও ভিটামিন ডি এর অভাবে শরীরে অনেক গুলো সমস্যা দেখা দেয় কারন ভিটামিন ডি শরীরে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ কাজে সঠিকভাবে সম্পূর্ণ হতে সাহায্য করে। শরীরে যখন ভিটামিন এর অভাব হয় তখন যেসব সমস্যাগুলো দেখা দেয়, সেগুলো হলো

  • হাড় দুর্বল ও ভঙ্গুরতা
  • হাড়ে ব্যথা সহ বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা
  • পিঠে ব্যথা
  • দাঁত ক্ষয়
  • কাটা বা ক্ষতস্থান শুকাতে স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক দেরি 
  • মাংসপেশী কাঁপা ও দুর্বলতা
  • অল্পতে ক্লান্ত হয়ে পড়া এবং সব সময় ঘুম ঘুম অনুভব হওয়া
  • অতিরিক্ত চুল ঝরে যাওয়া
  • বিষন্নতায় ভোগা
  • মুড সুইং
  • ঘুম না আসা
  • ওজন বেড়ে যাওয়া
  • ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া
ভিটামিন ডি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে যার ফলে শরীরে যদি ভিটামিন ডি এর ঘাটতি দেখা দেয় তাহলে উপরে উল্লেখ করা সমস্যাগুলো ছাড়াও শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগ বালাই বাসা বাঁধতে পারে খুব সহজে শুধু তাই নয় ভিটামিন ডি এর অভাবে বেড়ে যায় হার্টের রোগে এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি। শরীরে ভিটামিন ডি এর অভাবে অস্টিওপোরোসিস নামক রোগ দেখা দেয় এই রোগের ফলে শরীরের হাড় গুলো ধীরে ধীরে দুর্বল এবং ভঙ্গুর হয়ে পড়ে।

ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার কি কি

আমাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঠিকভাবে কাজ করার জন্য ভিটামিন ডি এর ভূমিকা অনেক বেশি। এই ভিটামিন ডি এর চাহিদা বয়স অনুযায়ী এক এক রকম হতে পারে যেমন বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি এর শারীরিক চাহিদা 400 IU , কিশোর কিশোরী এবং প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে এই চাহিদা 600 IU , আর বয়স্ক মানুষদের ক্ষেত্রে শরীরে ভিটামিন ডি এর চাহিদা 800 IU. সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে সঠিক পরিমাণে শরীরে ভিটামিন ডি এর প্রয়োজন। আর আমাদের দৈনন্দিন জীবনে শরীরের ভিটামিন ডি এর চাহিদার বড় অংশ পেতে পারি খাবারের মাধ্যমে। খাদ্য তালিকায় ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার গুলো এড করতে হলে প্রথমে জানতে হবে কোন কোন খাবারে ভিটামিন ডি রয়েছে। ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার গুলোর মধ্যে রয়েছে ,

আরো পড়ুনঃ ভিটামিন ই ক্যাপসুল খেলে কি হয়

  • মাছ - বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছ এবং ইলিশ মাছ , চিংড়ি মাছ
  • মাংস
  • কলিজা
  • ডিমের কুসুম
  • গরুর দুধ এবং দুগ্ধজাত খাবার
  • সয়াবিন
  • মাশরুম
  • ফলের ভেতরে রয়েছে - কমলা , অ্যাভোকাডো , আপেল , কলা , ব্লুবেরি , বাতাবি লেবু ,আঙ্গুর ,স্ট্রবেরি
  • কড লিভার অয়েল
  • বাদাম
  • মিষ্টি কুমড়া
  • পালং শাক
  • বীজ জাতীয় খাবার
  • চিজ
  • পনির
  • ঘি

ভিটামিন ডি এর অভাব হলে করণীয় 

শরীরে ভিটামিনের চাহিদা ডিপেন্ড করে বয়সের উপরে। বয়স অনুযায়ী যদি সঠিক মাত্রায় শরীরের ভিটামিন ডি না থাকে তাহলে নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় এবং অনেক সময় এই সমস্যাগুলো জটিল রোগের আকার ধারণ করে। আর এই কারণে আমাদের সবসময় সচেতন থাকা উচিত শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি যাতে না হয় এ ব্যাপারে , আর যদি কোন সময় ভিটামিন ডি এর ঘাটতি দেখা দেয় তাহলে ছোট কয়েকটি স্টেপ গ্রহণ করতে হবে , আর ভিটামিন ডি এর ঘাটতি পূরণে করণীয় স্টেপ গুলো হল ,

খাদ্য তালিকায় ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার রাখাঃ শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি পূরণের জন্য অবশ্যই খাদ্য তালিকা প্রস্তুতের সময় সচেতন হতে হবে। খাদ্য তালিকায় এমন খাবারগুলো যুক্ত করতে হবে যে খাবারগুলো থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। কারণ বেশিরভাগ সময় দেখা যায় শরীরে পুষ্টি ঘাটতি থেকে বিশেষ করে আমিষের ঘাটতির কারণে ভিটামিন ডি এর অভাব হয়। তাই খাদ্য তালিকায় সামুদ্রিক মাছ , মাংস , দুগ্ধ জাত খাবার , ডিম বাদাম , মাশরুম ইত্যাদি খাবার পরিমিত পরিমাণে রাখতে হবে।

শরীরে রোদ লাগানোঃ ভিটামিন ডি কে বলা হয় সান সাইন ভিটামিন , কারণ সূর্যের আলোর মাধ্যমে শরীর ভিটামিন ডি পেয়ে থাকে। সূর্যের আলো হলো ভিটামিন ডি এর অন্যতম বড় একটি উৎসব , প্রায় ৮০% ভিটামিন ডি পাওয়া যায় সূর্যের আলো থেকে।। আর এ কারণে শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি দূর করতে আমরা কাজে লাগাতে পারি সূর্যের আলোকে। শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি পূরণের জন্য প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ২ টার ভেতরে রোদে বসতে হবে কমপক্ষে ১৫ - ২০ মিনিট। যদি শরীরে পর্যাপ্ত সূর্যালোক লাগান তাহলে খুব সহজেই ভিটামিন ডি এর ঘাটতি পূরণ করতে পারবেন।

আরো পড়ুনঃ ভিটামিন ডি ক্যাপসুল এর নাম

ভিটামিন ডি ক্যাপসুল গ্রহণঃ শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি পূরণের করণীয় বিষয়গুলোর মধ্যে আরেকটি সহজে বিষয় হলো সাপ্লিমেন্ট বা ঔষধ গ্রহন করা। আপনার শরীরে যদি খুব বেশি ভিটামিন ডি এর ঘাটতি থাকে তাহলে ভিটামিন ডি ক্যাপসুলগুলো সেবন করার মাধ্যমে এই ঘাটটির দ্রুত মেটাতে পারেন। তবে ভিটামিন ডি ক্যাপসুল গ্রহনের পূর্বে অবশ্যই একজন রেজিস্টার ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করে দিলেন কেননা বয়স ভেদে শরীরে ভিটামিন ডি চাহিদা কম বেশি হয়ে থাকে , আর প্রয়োজন নেই এর চেয়ে অতিরিক্ত ভিটামিন ডি গ্রহণ শারীরিক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।

ভিটামিন ডি বেশি খেলে কি হয়

প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ভিটামিন ডি অবশ্যই যুক্ত করতে হবে এবং শরীরে যদি ভিটামিন ডি এর যথেষ্ট ঘাটতি থাকে তাহলে সেই ঘাটতি পূরণের জন্য ডাক্তারি পরামর্শ অনুযায়ী ভিটামিন ডি ক্যাপসুল গ্রহণ করতে হবে তবে পাশাপাশি আরও একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে যে , শরীরে ভিটামিন ডি এর মাত্রা যেন অতিরিক্ত না হয়ে যায়। কারণ ভিটামিন ডি নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে বেশি খেলে এর কারণে বেশ কিছু জটিলতা সৃষ্টি হয়ে থাকে।

শরীরে যদি নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে ভিটামিন ডি এর মাত্রা বেশি হয়ে যায় তাহলে সে ক্ষেত্রে রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা বেড়ে যায় আর যার কারণে হাইপার ক্যালসিয়াম এর সমস্যা দেখা দেয় এবং এই সমস্যা থেকে সৃষ্টি হয়  স্ট্রোক , হার্টের অসুখ এর পাশাপাশি বমি ভাব , কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হয়ে থাকে

বেশি পরিমাণে ভিটামিন ডি গ্রহণ শরীরে টক্সিসিটি তৈরি করে এবং বেশি পরিমাণে ভিটামিন ডি খেলে শরীরে ক্যালসিয়ামের মাত্রা বেড়ে গিয়ে কিডনির কার্যকারিতা নষ্ট করে ফেলে এবং এখান থেকে সৃষ্টি হতে পারে কিডনিতে পাথর। এছাড়াও অতিরিক্ত ভিটামিন ডি আমাদের হাড়ের ভেতরে যন্ত্রণার কারণ হয়েও দাঁড়াতে পারে , দেখা দিতে পারে পেটে এসিডিটি সমস্যা এবং এর কারণে হতে পারে পেটব্যথা অথবা ডায়রিয়া।

মন্তব্য , এতক্ষণে আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন ভিটামিন ডি আমাদের শরীরের হাড় , দাঁত এবং পেশী গঠনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এই কারণে ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার কি কি তা জানতে হবে ও দৈনিক খাদ্য তালিকায় সেগুলো রাখার চেষ্টা করতে হবে। কারণ শরীরে যদি ভিটামিন ডি এর ঘাট দেখা দেয় তাহলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হওয়ার পাশাপাশি আরও বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিবে কিন্তু ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার গ্রহণ করার সাথে সাথে এটাও খেয়াল রাখতে হবে এর মাত্রা যেন অতিরিক্ত না হয়ে যায়। শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি যেমন অনেকগুলো রোগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে ঠিক তেমনি , অতিরিক্ত ভিটামিন ডি গ্রহণের ফলেও দীর্ঘমেয়াদি কিছু রোগ হতে পারে তাই অবশ্যই এই বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url