নামাজ হলো এমন একটি ইবাদত যা আল্লাহর কাছে খুবই পছন্দের। আর একজন মুসলমানের ওপরে
প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা ফরজ অর্থাৎ আল্লাহর হুকুম। সঠিকভাবে নামাজ
আদায় করার জন্য সকলকে উদ্বুদ্ধ করার উদ্দেশ্যে আজকে আপনাদের জানাবো আসরের নামাজ
কয় রাকাত এবং আসরের নামাজ পড়ার নিয়ম ও নিয়ত সহ আরো বিভিন্ন বিষয়ে।
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজেরই আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য , ফজিলত এবং মর্যাদা রয়েছে। তাই
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে এবং সঠিকভাবে জেনে নেওয়া প্রত্যেকটি
মুসলমানের উচিত এবং যথাযথ ভাবে নামাজ আদায় করা অত্যাবশ্যক। আর এই কারণে
আজকে আপনাদেরকে বিস্তারিতভাবে জানাবো আসরের নামাজ সম্পর্কে। চলুন তাহলে আর দেরি
না করে আসরের নামাজ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
হযরত ইউনুস (আঃ) নিনুয়া দেশ থেকে হিজরত করার সময় নদীর গর্ভে নিম্নে পরিণত চারটি
মুছিবতে পড়ে তা থেকে উদ্ধার পেয়ে নামাজ পড়েছিলেনঃ (ক) নীল দরিয়ার পানির ভেতরে
অন্ধকার। (খ) বিরাট এক মাছের ভক্ষণ জনিত মাছের পেটের ভেতরে অধিকতর অন্ধকার । (গ)
উক্ত মাছকে অন্য আরেকটি বিরাট মাছের ভক্ষণজনিত অধিকতর ঘর অন্ধকার। (ঘ) ও দুপুরে
রাত্রির অন্ধকার। এ সময় তিনি মাছের পেটে থেকে আল্লাহ তায়ালা নির্দেশের "দোয়া
ইউনুস" লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নী কুনতু মিনাজ যোয়ালিমিন। অর্থাৎ তুমি
ব্যতীত কোন উপাস্য নেই তুমি পবিত্র, মহান। আমি তো সীমালঙ্ঘনকারী। অবশেষে ৪০ দিন
অন্তে দিবাশেষে আসরের সময় তাকে নীল দরিয়ার কো কূলে বালুচরে উভয় মাছই উদগীরণ
করে দেয়। অতঃপর একটি কদু গাছের (লাউ গাছের) পাতা ছায়াদান করে এবং বন থেকে আগত
একটি ছাগির দুধ পালন করে শক্তি সঞ্চয় করে। উপরোক্ত চারটি মুছিবোত থেকে মুক্তি
পেয়ে লাউ গাছের ফল খেয়ে এবং ছাগীর দুধ পালন করে শক্তি সঞ্চয় করে আল্লাহ
তায়ালা শুকরিয়া স্বরূপ আসরের সময় চার রাকাত নামাজ আদায় করেন। হযরত ইউনুস (আঃ)
এর স্মৃতিরক্ষার্থে পরবর্তীকালে উম্মতে মুহাম্মদীর উপর সময়আসরের সময় চার রাকাত
নামাজ ফরজ করা হয়েছে
আসরের নামাজ কয় রাকাত
আসরের নামাজ মোট ৮ রাকাত। এই ৮ রাকাত নামাজের প্রথম চার রাকাত সুন্নত (সুন্নতে
গায়েরে মুয়াক্কাদা) নামাজ এবং পরের চার রাকাত ফরজ নামাজ পড়তে হয়। সুন্নাতে
গায়েরে মুয়াক্কাদা হওয়ার কারণে অধিকাংশ মানুষই আসরের প্রথমের চার রাকাত সুন্নত
নামাজ ছেড়ে দেয় কারণ এই চার রাকাত নামাজ না পড়লে কোন গুনাহ নেই , তবে কেউ যদি
আসরের ফরজ চার রাকাত নামাজের পূর্বে চার রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করে তাহলে সে
অশেষ সওয়াবের অধিকারী হবে , এবং সে এর জন্য আল্লাহর কাছে পুরষ্কৃত হবেন।
আসরের নামাজ পড়ার নিয়ত
জোহরের নামাজের ওয়াক্ত শেষ হওয়ার সাথে সাথেই আসরের নামাজের ওয়াক্ত শুরু হয়ে
যায়। যদিও সূর্য হলুদ রং ধারণ করার আগেই আসরের নামাজ পড়ে ফেলা উচিত কিন্তু
আসরের নামাজের ওয়াক্ত থাকে প্রায় সূর্য আস্ত না যাওয়া পর্যন্ত।আসরের নামাজ মোট
৮ রাকাত , এর মধ্যে চার রাকাত সুন্নত এবং চার রাকাত ফরজ। আসরের নামাজের নিয়ত হল
প্রথমে নামাজ আদায়ের জন্য গোসল , অজু অথবা তারা মনের মাধ্যমে পবিত্রতা
অর্জন করতে হবে এরপর আসরের নামাজের নিয়ত করবে। তাকবীরে তাহরীমা বাঁধার সয় আঙ্গুলসমূহ স্বাভাবিকভাবে
কাবামূখী করিয়া পূরুষগণ উভয় হাত কান পর্যন্ত এবং স্ত্রীলোকগণ কাঁধ পর্যন্ত
উঠিয়া "আল্লাহু আকবর" বলে পুরুষগণ নাভীর নিচে ও স্ত্রীলোক বুকের উপর বাম হাতের
উপর ডান হাত রেখে বাম হাতের কব্জিকে ডান হাতের বৃদ্ধা ও কনিষ্টা আঙ্গুল দ্বারা
আকড়ে ধরবে। এবং অবশিষ্ট আঙ্গুলি বাম হাতের পৃষ্ঠোপরিতে বিছিয়ে দিবে। হাতের
কব্জা জোরে আঁকড়ে ধরলে নামাজে মধ্যে প্রবিষ্ট থাকে, অন্যথায় এদিক ওদিক সরে
যাওয়ার সম্ভবনা থাকে। দাঁড়ানো অবস্থায় সিজদাহের স্থানে দৃষ্টি রাখবে।
নামাজের কোনো অবস্থাতেই চক্ষু বন্ধ করে রাখতে নেই বরং দাঁড়ানো অবস্থায় সিজদার
স্থানে , রুকুর সময় পায়ের দিকে এবং শেষ বৈঠকের সময় কোলের উপরে দৃষ্টি
রাখবে।
অতঃপর মনে মনে ছানা বা সোবহানাকা পাঠ করে আউযুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ পাঠ করে, সূরা
ফাতিহা বা আলহামদু সূরা পড়বে। সূরা ফাতিহা শেষ হলে মনে মনে আমীন বলবে। তারপর মনে
মনে বিসমিল্লাহ পড়ে কুরআন শরীফে কোনো সূরা বা বড় আয়াত হতে কমপক্ষে এক আয়াত বা ছোট
আয়াত হলে কমপক্ষে তিন আয়াত পর্যন্ত পাঠ করবে। তৎপর "আল্লাহু আকবর" বলে রুকু করবে
এবং তিন বা পাঁচ অথবা সাত পর্যন্ত রুকুর তাজবীহ পড়বে। রুকু করার সময় আঙ্গুলগুলো
ফাঁক ফাঁক করে উভয় হস্তের হাতলী দ্বারা হাঁটুদ্বয়গুলোকে খুব শক্ত করে আঁকড় ধরবে।
বাহুদ্বয় খুব সোজা করে রেখে মাথা, পৃষ্ঠ, কোমর ও চোতর কোনরূপ উচু বা নিচু ব্যতীত
সম্পূর্ণ বরাবর করে রাখবে।
এবং পায়ের পাতার উপর দৃষ্টি রাখবে। মেয়েগণ শুধু হাঁটুর উপর দৃষ্টি রেখে দিবে,
তাদেরকে হাঁটু আঁকড়াইয়া ধরিতে হবে না। অতঃপর তাছমীহ বা ছামিআল্লাহ লিমান হামিদাহ
বলিতে সরলভাবে দাঁড়িয়া যাবে এবং হাত দুইটি ঝুলাইয়া রেখে মনে মনে তাহমিদ বা
"রাব্বানা লাকাল হামদ" বলবে। অতঃপর তাকবির বলতে বলতে সিজদায় যাবে। সিজদাহ যাওয়া
কালে প্রথমতঃ হাঁটু, অতঃপর হস্তদ্বয়, তৎপর নসিকা এবং সর্বশেষে কপাল সিজদার স্থানে
রাখবে। হস্তদ্বয়ের আঙ্গুলগুলি পরস্পর মিলিয়া এবং কাবামুখী করে কর্ণদয়ের
সোজাসুজি বিছিয়ে রাখবে এবং মুখমন্ডল হাতে হৃদয়ের মধ্যস্থলে রাখবে। উভয় পায়ের
পাতা খাড়া করে আঙ্গুলসমূহ পরস্পর যুক্ত করে ও একটু মুড়িয়া কাবামুখী করে রাখবে
বাহু বগল হতে, পেট উরু হত এবং পায়ের থোরা রান হতে ও কুনই মাটি হতে পৃথক করে
রাখবে।
সেজদা অবস্থায় নসিকার অগ্রভাগের দিকে দৃষ্টিপাত করবে। স্ত্রীলোক এই সমুদয় অঙ্গ
পরস্পর মিলিয়ে সিজদা করবে। অতঃপর তিনবার, পাঁচ/সাতবার সিজদা তাসবিহ পাঠ করবে।
অতঃপর তাকবির বলতে বলতে সোজা হয়ে বসবে। সেজদা হতে মাথা উঠাবার সময় কপাল অতঃপর
নসিকা অতঃপর হস্তদায় উঠে ডান হাতের গোড়ালি খাড়া করে আঙ্গুলীগুলি মুড়িয়ে কেবল
কিবলামুখি করে এবং বাম পা বিছিয়ে তার তালুর উপর বসবে ও উভয় হাত জানু উপর রাখবে।
অতঃপর জলসা বা উভয় সিজদার মধ্যভাগে বসে পড়বার দোয়া পাঠ করবে।
স্ত্রীলোকগণ উভয় পা ডান দিকে বাহির করে দিয়ে চোতরের উপর বসবে ও দোয়া পড়বে।
অতঃপর পুনরায় তাকবীর বলতে বলতে প্রথম সিজদার ন্যায় দ্বিতীয় সিজদা করবে এবং
পূর্ববৎ তাজবিহ পাঠ করবে। পরে তাকবির বলতে বলতে সিজদাহ হতে পূর্ববৎ প্রথমতঃ কপাল,
অতঃপর নসিকা, তারপর সর্বশেষে হাটু উঠিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াবে। এ সময় মাটির উপর ভর
দিয়ে উঠতে নেই। এক রাকাত নামাজ পূর্ণ হইয়া যাইবে এবং তৎপর হতে দ্বিতীয় রাকাত
আরম্ভ হবে।
দ্বিতীয় রাকাতের নামাজও প্রথম রাকাতের ন্যায় পড়তে হবে। তবে এখানে কান বা কাঁধ
পর্যন্ত হাত উঠাতে এবং সানা আউযুবিল্লাহ পড়তে হবে না বরং বিসমিল্লাহ পড়ে সূরা
ফাতিহা পাঠ করতে হবে। তারপরে বিসমিল্লাহসহ অন্য কোন সূরা আয়াত পাঠ করে দ্বিতীয়
সেজদা পর্যন্ত বাকি কাজ পূর্ববৎ সমাধা করবে। অতপর প্রথম সিজদার পর বসার মত বসে
উরুদের মাঝখানে দৃষ্টি রেখে তাশাহুদ বা তাশাহুদ পড়তে হবে। আশহাদু আল্লাইলাহা
বলার সময় তর্জনীয় আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করবে এবং ইল্লাল্লাহ বলে তাহা নামাইবে।
তাশাহুদ পাঠ করা হয়ে গেলে পরবর্তী দুই রাকাত নামাজের জন্য উঠে দাঁড়াতে হবে।
আসরের সুন্নত নামাজ পড়ার জন্য পরবর্তী দুই রাকাতেই পূর্বের নিয়মে সূরা
ফাতিহার পরে , অন্য একটি সূরা মিলিয়ে পড়তে হবে অথবা কোরআনের যে কোন তিন আয়াত
পড়তে হবে আর আসরের ফরজ নামাজ পড়ার জন্য পরবর্তী দুই রাকাতে শুধু
সুরা ফাতেহা পড়তে হবে এরপর রুকু সেজদা করার পরে যথা নিয়মে তাশাহুদ , দরুদ এবং
দোয়া মাসুরা পড়ার পরে ডানে ও বামে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করতে হবে।
আসরের নামাজের পর আমল
আসরের ফরজ নামাজের পরে বিভিন্ন ধরনের তসবি তাহলীল এবং আমল করা যায় যার
মধ্যে রয়েছে,
এছাড়াও বিভিন্ন ধর্মীয় বইপত্র গুলোর মধ্যে থেকে আসরের নামাজের পরে
সূরা নাবা আমল করলে অনেক ফাইদা বলে জানতে পারা যায়। আসরের নামাজের পরে
সুরার আমল সম্পর্কে জোরালো কোন হাদিস না থাকলেও বেশ কয়েকটি দুর্বল হাদিসের
বইগুলোর বর্ণনায় আসরের নামাজের পর সূরা নাবার আমলের কথা উঠে এসেছে।
এছাড়াও আসরের নামাজের পরে গুরুত্বপূর্ণ আমল গুলোর মধ্যে রয়েছে জুম্মার দিন
অর্থাৎ শুক্রবারের দিনের আমল। কারণ শুক্রবারে এমন একটি সময় রয়েছে যে সময়টি
দোয়া কবুলের সময় , আর বিভিন্ন রেয়াতের বর্ণনা গুলো থেকে এবং আলেম ওলামায়েদের
মত অনুসারে জানতে পারা যায় যে , এই দোয়া কবুলের সময়টি হল শুক্রবার আসরের ও
মাগরিবের মধ্যবর্তী কোন সময় তাই শুক্রবারে আসরের নামাজের পরে বেশি বেশি আমল করা
এবং দোয়া করা উচিত এই সময় দরুদ শরীফ পাঠ করা, তসবিহ ও ইস্তেগফার পাঠ
করা এবং খালেক দিলে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা হলো গুরুত্বপূর্ণ আমল।
আবু হুরায়রা (রা) এর একটি বর্ণনা থেকে জানতে পারা যায় যে , জুম্মার দিনে
আসরের নামাজের পরের আমল সম্পর্কে নবীজি বলেছেন - যে ব্যক্তি আসরের নামাজ শেষ
করে ওই স্থানে বসেই ৮০ বার এই দুরুদটি পাঠ করবে তার ৮০ বছরের গুনাহ মাফ
হয়ে যাবে, দরুদ টি হল -
মন্তব্য, যেহেতু পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা আমাদের উপরে আল্লাহর হুকুম তাই ,
বিনা ওজর ছাড়া কোন অবস্থাতে নামাজ বাদ দেয়া যাবে না। যদিও বা কোন কারনে , কোন
ওয়াক্তের নামাজ আদায় করার না হয় তাহলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সুবিধা
অনুযায়ী কাজা নামাজ আদায় করে নিতে হবে না হলে আল্লাহর দরবারে কঠিন গুনাগার
হয়ে হাজির হতে হবে এবং এর কারণে জাহান্নামের আগুনে পুড়তে হবে। তাই নামাজের
ব্যাপারে সচেতন হয় এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সম্পর্কে সঠিকভাবে জেনে নিন।
নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url