গর্ভবতী হওয়ার কতদিন পর বমি হয় - কত মাসে বাচ্চা নড়াচড়া করে
গর্ভবতী হওয়ার কতদিন পর বমি হয় বা কত মাসে বাচ্চা নড়াচড়া করে ,
প্রেগন্যান্ট হওয়ার কতদিন পর মাসিক বন্ধ হয় এবং মাসিক না হলে কি প্রেগন্যান্ট
হয় ইত্যাদি প্রশ্নগুলোর সাধারণত যারা প্রথমবার প্রেগন্যান্ট হয়েছেন বা হতে
চলেছেন তাদের মধ্যে জানার আগ্রহ বেশি থাকে কারণ তারা এ পরিস্থিতি বিষয়ে
সম্পূর্ণ নতুন আর তাদেরকে এই প্রেগন্যান্ট অবস্থায় ব্যাপারে সঠিক জ্ঞান
দেওয়ার জন্য আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী আজকে এই কয়েকটি বিষয়ের উপরে বাস্তবতা
ভিত্তি আলোচনাগুলো করব।
সূচিপত্রঃ গর্ভবতী হওয়ার কতদিন পর বমি হয় - কত মাসে বাচ্চা নড়াচড়া করে
- গর্ভবতী হওয়ার কতদিন পর বমি হয়
- গর্ভবতী হওয়ার কতদিন পর মাসিক বন্ধ হয়
- কত মাসে বাচ্চা নড়াচড়া করে
- মাসিক না হলে কি প্রেগন্যান্ট হয়
গর্ভবতী হওয়ার কতদিন পর বমি হয়
বমি বমি ভাব লাগা এবং বমি হওয়া এটি হল প্রেগনেন্সির কমন লক্ষণ গুলোর মধ্যে
একটি। মর্নিং সিকুয়েন্স হল প্রেগনেন্সির খুবই সাধারন একটি উপসর্গ।
প্রেগনেন্সিতে শরীরের অভ্যন্তরে হরমোনের তারতম্যের কারণে সাধারণত বমি বমি ভাব
এবং বমি হয়ে থাকে। প্রেগনেন্ট হওয়ার পরে পিরিয়ড মিস হওয়ার আগে থেকেই
সাধারণত বমি বমি ভাব লাগতে শুরু হয় তবে , বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় পিরিওড
মিস হওয়ার প্রায় ১৫ দিন পর থেকে এই বমি ভাব তীব্র আকার ধারণ করে এবং এক মাসের
মধ্যেই বিভিন্ন কারণে বমি হতে থাকে। অর্থাৎ বলতে পারেন প্রেগনেন্ট বা
গর্ভবতী হওয়ার প্রায় তিন থেকে চার সপ্তাহ পরে থেকে মানে এক মাস থেকে বমি
হওয়া শুরু হয় , এবং এই বমি হওয়ার টেন্ডেন্সি চলতে থাকে প্রেগনেন্সির তিন
থেকে চার মাস পর্যন্ত, আবার কারো কারো ক্ষেত্রে এই পরিস্থিতিতে করে ছয় মাস
পর্যন্ত।
বেশিরভাগ গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে তিন থেকে চার মাস পর থেকে , অর্থাৎ প্রায়
13 থেকে 27 সপ্তাহের মধ্যেই বমির টেন্ডেন্সি অনেকটা কমে গেলেও , দুই একজন
ব্যতিক্রম মহিলাদের ক্ষেত্রে দেখা যায় প্রসব না হওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন কারণে
বমি হতে থাকে বিশেষ করে কোন কিছু খেলে। দুই একজন মহিলাদের ক্ষেত্রে এরকম
ব্যতিক্রম দেখা যায় যে তারা প্রসবের আগ পর্যন্ত , পানি ছাড়া তারা কোন খাবারই
ভালোভাবে খেতে পারে না , কারণ খাবার খেলে বমি হয়ে যায়। আবার ব্যতিক্রম দুই
একজনের ক্ষেত্রে এমনও দেখা যায় যে প্রেগনেন্সির সম্পূর্ণ সময়টি জুড়ে তাদের
কোন বমি হয় না। অর্থাৎ বুঝতে পারছেন প্রেগনেন্সিতে বমি বা অন্যান্য উপসর্গগুলো
সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে শরীরের বৈশিষ্ট্যের উপরে। তবে দুই একটি ক্ষেত্রে
ব্যতিক্রম হওয়া ছাড়া সাধারণত প্রেগন্যান্ট হওয়ার 15 থেকে 1 মাসের মধ্যে বমি
শুরু হয় এবং ৩ থেকে ৬ মাসের মধ্যে প্রবণতা কমে যায়।
গর্ভবতী হওয়ার কতদিন পর মাসিক বন্ধ হয়
প্রথমবার গর্ভবতী বা প্রেগন্যান্ট হওয়া মহিলাদের মধ্যেও অনেকেরই একটি প্রশ্ন থাকবে যে ,গর্ভবতী হওয়ার কতদিন পর মাসিক বন্ধ হয় ? বিষয়টি হলো , ফ্যালোপিয়ান টিউবের মধ্যে মেয়েদের শুক্রাণু এবং ছেলেদের ডিম্বাণু মিলিত হয়ে বাচ্চা উৎপাদনের প্রক্রিয়াটি শুরু হয়। নারী এবং পুরুষের মিলনের ফলে শুক্রাণু এবং ডিম্বাণু মিলিত হয়ে বাচ্চা হওয়ার প্রক্রিয়াটি শুরু হলে মেয়েদের মাসিক বন্ধ হয় অর্থাৎ আপনার মাসিক যদি রেগুলার থাকে তাহলে পুরুষের সাথে বা সহবাস করার পরে সেই মাসে মাসিক বন্ধ হবে , যদি আপনি প্রেগন্যান্ট হন তাহলে। যে মাসের কনসিভ করে সেই মাসের নির্দিষ্ট তারিখে থেকে মাসিক বন্ধ হয় এটি নিশ্চিত ভাবে বলা গেলেও , গর্ভবতী হওয়ার কতদিন পরে মাসিক বন্ধ হয় এ ব্যাপারে সেভাবে লিখিত কোন উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
তবে ,মেয়েদের মাসিক চক্রের একটি নির্ধারিত সময় রয়েছে এই সময়টি হল সাধারণত ২৮ থেকে ৩৫ দিন তবে কারো কারো ক্ষেত্রে মাসিক চক্রের এই সময়টি ২৬ থেকে ৩২ দিনে হয়ে থাকে। সাধারণ মাসিক চক্রের নিয়মে অর্থাৎ যেসব মেয়েদের মাসিক চক্র ২৮ -৩৫ মধ্যে হয়ে থাকে তাদের ওভুলেসন অর্থাৎ বাচ্চা কনসেপ এর সময় হল মাসিক শুরুর ৭ম তম দিনের পর থেকে ২১ তম দিনের আগে পর্যন্ত। আশা করছি বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন।
কত মাসে বাচ্চা নড়াচড়া করে
প্রেগন্যান্ট অবস্থায় সাধারণত ১৬ থেকে ২৪ সপ্তাহের মধ্যেই মোটামুটি বাচ্চা
নড়াচড়া শুরু করে এবং মৃদুভাবে মা বিষয়টি বুঝতে পারে , আর ধীরে ধীরে এই
নড়াচড়ার মাত্রা বৃদ্ধি পায়। সুতরাং মোটামুটি সাড়ে তিন থেকে চার মাসের
মধ্যেই পেটের ভেতরে বাচ্চার নড়াচড়া অনুভব করা যায় তবে কারো কারো
ক্ষেত্রে এই সময়টার একটু একটু কম বেশি হতে পারে। যারা একটু বেশি সেনসেটিভ তারা
বিষয়টি আগেই বুঝতে পারে আর যাদের সেনসিটিভিটি একটু কম ক্ষেত্রে বাচ্চার
নড়াচড়া অনুভব করার জন্য একটু সময় লাগতে পারে। তবে মোটামুটি মানে চার - পাঁচ
,ছয় মাস বা ১৬ থেকে ২৪ সপ্তাহের ভেতরেই বাচ্চার নড়াচড়া স্পষ্টভাবে অনুভব
করা যায়।
আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় কোন খাবার খেলে বাচ্চা ফর্সা হয়
এরপর , গর্ভাবস্থার ৭-৮ সাত মাসের দিক থেকে বাচ্চার নড়াচড়ার ধরণী
ভিন্নতা এবং তীব্রতা আসে । এই সময়গুলোতে লক্ষ্য করে দেখা যায় গর্ভে বাচ্চা
সাধারণত বিকালের পর থেকে নড়াচড়া বেশি করে, এবং রাতের গভীরতার বাড়লে এই
নড়াচড়া একটু কমে যায় কারণ এই সময়ে গর্ভে শিশুর স্লিপ সাইকেল সময় চলতে
থাকে। এই স্লিপ সাইকেল পিরিয়ড ৩০-৪০ মিনিট দীর্ঘ হয়ে থাকে অর্থাৎ এই
সময়টি গর্বে শিশু ঘুমিয়ে থাকে বলে নড়াচড়া মাত্রাটা অনেক কম হয়। তবে এই
সময় যদি , প্রেগনেন্ট মায়ের মনে হয় যে শিশুর এই স্লিপচক্র সারাদিন বা রাতের
ভেতরে প্রায় ৯০ মিনিটের কাছাকাছি চলছে তাহলে সে ক্ষেত্রে দ্রুত ডাক্তারি
পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ এটি মোটেই স্বাভাবিক লক্ষণ নয়।
মাসিক না হলে কি প্রেগন্যান্ট হয়
যদিও বিবাহিত মেয়েদের ক্ষেত্রে মাসিক বন্ধ হওয়া পেটে বাচ্চা আসার একটি প্রধান
কারণ হতে পারে কিন্তু শুধু যে এই কারণেই মাসিক বন্ধ হবে বিষয়টি এমন
নয়, বেশ কিছু শারীরিক সমস্যার কারণেও মাসিক বন্ধ হতে পারে , আর এ
সমস্যাটি হতে পারে বিবাহিত বা অবিবাহিত যেকোন নারীদেরই।
মাসিক না হওয়ার কারণ হতে পারে - শরীরের পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাব ,
দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপ , পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম , থাইরয়েড , মাত্রা
অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম , স্বাভাবিকের তুলনায় শরীরের ওজন বৃদ্ধি বা
হ্রাস পাওয়া , জরায়ু সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা , হরমোনার সমস্যা। অর্থাৎ
মাসিক না হওয়া বা মাসিক বন্ধ হওয়া ,এটি দুই রকম ভাবে হতে পারে। যথা,
- শারীরিক জটিলতার কারণে মাসিক না হওয়া
- পুরুষের সাথে সহবাসের পর মাসিক না হওয়া
শারীরিক জটিলতার কারণে মাসিক না হওয়াঃ শারীরিক জটিলতার কারণে যদি মাসিক না হয় তাহলে কখনো এটি শুভ লক্ষণ বা শুভ বার্তা বয়ে নিয়ে আসে না। আপনাদেরকে আগেই জানিয়েছি যে মাসিক হলো মেয়েদের বাচ্চা জন্মদানের বাচ্চা ধারণের প্রথম ধাপ। শারীরিক সম্পর্কের আগে বা পরে যদি আপনার শারীরিক সমস্যার কারণে মাসিক বন্ধ থাকে তাহলে অবশ্যই এটি নিয়ে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত কারণ মাসিক নিয়মিত না হলে মেয়েদের বাচ্চা নিতে অথবা বাচ্চা কনসেপ করতে অনেক অসুবিধায় পড়তে হয়। মাসিক না হওয়ার ফলে শুধু বাচ্চার কনসেপর করার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র অসুবিধা জটিলতায় হয় না মাসিক বন্ধ থাকলে বা অনিয়মিত মাসিক হলে বাচ্চা উৎপাদন ক্ষমতার সম্পূর্ণ রূপে বাধাগ্রস্ত হয় এবং মেয়েরা বন্ধ্যা হয়ে যায় ।
পুরুষের সাথে সহবাসের পর মাসিক না হওয়াঃ আপনার মাসিকের যদি কোন সমস্যা না থাকে অথবা আপনার মাসিক যদি রেগুলার থাকে এবং পুরুষের সাথে সেক্স বা সহবাস করার পরে সেই মাসে বন্ধ হয় তাহলে হ্যাঁ এটি প্রেগন্যান্ট হওয়া বা বাচ্চা হওয়ার লক্ষণ। কারণ ফ্যালোপিয়ান টিউবের মধ্যে মেয়েদের শুক্রাণু এবং ছেলেদের ডিম্বাণু মিলিত হয়ে বাচ্চা উৎপাদনের প্রক্রিয়াটি শুরু হয়। নারী এবং পুরুষের মিলনের ফলে শুক্রাণু এবং ডিম্বাণু মিলিত হয়ে বাচ্চা হওয়ার প্রক্রিয়াটি শুরু হলে মেয়েদের মাসিক হয় না এবং এই মাসিক কত দিন হয় না যতদিন না গর্ভের সন্তান ভূমিষ্ঠ হচ্ছে । সুতরাং বুঝতেই পারছেন পুরুষের সাথে সহবাস করে মেয়েদের যদি মাসিক বন্ধ হয় তাহলে এটি গর্ভধারণ অথবা বাচ্চা হওয়ার লক্ষণ হিসেবে ধরে নেওয়া যেতে পারে। তবে ভালোভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করার আগ পর্যন্ত কোন ব্যাপারেই পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া উচিত নয়।
মন্তব্য , আপনাদেরকে আগেও জানিয়েছি যে প্রেগন্যান্ট অবস্থায় অত্যন্ত
সেনসিটিভ এবং খুবই ক্রিটিক্যাল একটি পিরিয়ড অর্থাৎ সময়ে। যার কারণে একজন
গর্ভবতী মাকে সবসময় অত্যন্ত সচেতন থাকতে হয় , কারণ গর্ভের সন্তানের হার্টবিট
বা নড়াচড়ার ধরন দেখে একমাত্র মা - ই বাচ্চার সুস্থতা এবং অসুস্থতার সম্পর্কে
প্রাথমিক ধারণা পেতে পারে। তাই প্রেগন্যান্ট অবস্থায় সব সময় সচেতন থাকুন এবং
সামান্যতম অস্বাভাবিক পরিবর্তন লক্ষ্য করলে দেরি না করে দ্রুত গাইনি ডাক্তারের
পরামর্শ গ্রহণ করুন।
নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url