ফিতরা কাকে দেওয়া যাবে - ফিতরা আদায়ের নিয়ম কানুন

ঈদুল ফিতরেরদিন এক সের ১৪ ছটাক গম বা তাহার সমমূল্য রোজাদার ব্যক্তি কোন ব্যক্তিকে দান করার নাম ফিতরা। ধনী ব্যক্তির জন্য তার নিজের পরিবারবর্গের সকলের পক্ষ হতে আদায় করা ওয়াজিব। তবে যাকে তাকে বা যেনতেন উপায়ে ফিতরা আদায় করা যাবে না , ফিতরা আদায়ের নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম রয়েছে। এবং কুরআন হাদিসের আলোকে স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে ফিতরা কাকে দেওয়া যাবে বা কাকে দেওয়া যাবেনা।
ঈদুল ফিতরের দিনের সুন্নত কাজগুলোর ভেতরে ফিতরা আদায় করা উল্লেখযোগ্য একটি কাজ এবং এই ফিতরা আদায়ের মাধ্যমে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে হওয়া রোজার ভুল-ত্রুটিগুলো আল্লাহ পাক মাফ করে দিয়ে থাকেন। তাই আমাদেরকে জানতে হবে ফিতরা আদায়ের নিয়ম কানুন সম্পর্কে এবং তাদেরকে ফিতরা দেওয়া যাবে এবং তাদেরকে দেওয়া যাবে না এই বিষয়েও সঠিকভাবে জেনে তারপরে সাদকায়েফিতরা আদায় করতে হবে।

সূচিপত্রঃ ফিতরা কাকে দেওয়া যাবে - ফিতরা আদায়ের নিয়ম কানুন

অর্ধ ছা অর্থাৎ এ দেশীয় ৮০তলা সেরের পণ্যের দু'সের। এ পরিমাণ গম, আটা কিংবা ছাতু দ্বারা ফিতরা আদায় করতে হয়। মনে রাখবে উল্লিখিত বস্তুসমূহের পরবর্তী উক্ত চাউল দ্বারা ফিতরা দিলে আদায় হবে না। অবশ্য ওই বস্তুসমূহের উল্লেখিত পরিমাণের মূল্য দ্বারা যে পরিমাণ চাউল পাওয়া যায় সে পরিমাণ চাউল পাওয়া যায় সে পরিমাণ চাউল দ্বারা দিলে জায়েজ হবে।

ফিতরা কারা দেবে

গৃহকর্তা ফিতরা দেবে  নিজ পরিবারের পক্ষে। নিজের দরিদ্র নাবালেক সন্তান-সন্ততিগণের পক্ষ থেকে এটা গৃহকর্তাকে আদায় করে দিতে হবে। ঈদের দিন ফজরের নামাজের পূর্বে যদি কোন সন্তান জন্মগ্রহণ করে তার পক্ষ থেকেও ফিতরা আদায় করতে হবে। তবে যদি ওই সময় কেউ মারা যায় তাহলে তার পক্ষ থেকে ফিতরা দিতে হবে না। আদায় করতে হবে না। কিন্তু কেউ যদি মারা যায় তাহলে তার পক্ষে ফিতরা আদায় করা লাগবে। সন্তান সম্পতি বা স্ত্রী যদি নিসাব পরিমান সম্পদের মালিক হয় তাহলে তাদের নিজেদের ফিতরা নিজেরাই আদায় করবে।

ফিতরা কাকে দেওয়া যাবে

আমাদের অনেকেরই জানা নেই অথবা জানা থাকলেও হয়তো বছর ঘুরে আসতে আসতে সেটি আমাদের মনে থাকে না যে ফিতরা কাকে দেওয়া যাবে। ফিতরা কাকে দেওয়া যাবে সেটি জানতে হলে অবশ্যই পোস্টের এই অংশটি ভালোভাবে পড়ুন। ফিতরা কাকে দেওয়া যাবে সে বিষয়টি নিয়ে তুলে ধরা হল।

  • দরিদ্র ভাইবোন থাকলে তারা ফিতরা গ্রহণ করতে পারবে
  • গরিব প্রতিবেশী
  • কাছে বা দূরের ফকির মিসকিন
  • গরিব বা আমলে ওলামাগণ
  • একজন ব্যক্তির ফিতরা একজনকেই দেওয়া উত্তম তবে একাধিক ব্যক্তিকে দেওয়ার নিয়ম আছে। 
  • বহু মানুষের ফিতরা একজনকে দেওয়া যায়
  • কোন প্রতিষ্ঠান বা মসজিদ মাদ্রাসা রাস্তাঘাট ইত্যাদি তৈরির কাজে ফিতরা দেওয়া জায়েজ নাই

 ফিতরা আদায়ের নিয়ম

ফিতরা দেওয়ার নিয়ম রমজান মাসের প্রত্যেক সামর্থ্যবান নর নারী উপরে ফিতরা দেয়ার নিয়ম রয়েছে। কেউ যদি এটি অস্বীকার করে অথবা না দেয় তাহলে তাকে গুনাগার হতে হবে কারণ সমর্থ্যবান বা নিসাব পরিমাণ সম্পত্তির মালিকের উপরে ফিতরা দেয়া ওয়াজিব। ফিতরা দেয়ার নিয়ম গুলো যদি আপনার জানা না থাকে তবে অবশ্যই এটি জেনে নিন।
আশি তোলা সের এর পোনে দুই সের এ পরিমাণ গম, আটা কিংবা ছাতু দ্বারা ফিতরা আদায় করতে হবে। আপনাকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে আপনি উল্লেখিত এই বস্তুগুলোর পরিবর্তে একই পরিমাণ চাল দ্বারা ফিতরা আদায় করা যাবে না। তবে অবশ্যই ওই বস্তুগুলোর মূল্য দ্বারা যে পরিমাণ পাওয়া যায় সেই পরিমাণ চাউল কিনে সেটাই দিয়ে ফিতরা দেয়া জায়েজ হবে।
যারা যাকাত গ্রহণ করতে পারে সেই ধরনের সকল ব্যক্তিকেই ফিতরা দেয়ার নিয়ম আছে তবে কারো যদি নিকট আত্মীয় অথবা কাছের ভাই বোন গরিব, দরিদ্র হয় তবে দূরের কাউকে না দিয়ে কাছের আত্মীয়-স্বজনকে ফিতরা দেয়া উত্তম। একজনের জন্য নির্ধারিত ফিতরা বহু জনের মধ্যে বন্টন করা যাবে না। তবে অবস্থার প্রেক্ষিতে বহুজনের ফিতরা একজনকে দেয়া যাবে।

ফিতরা কাদের উপরে ওয়াজিব

ফিতরা আদায়ের কোন নির্দিষ্ট বয়স নেই, যে কোন বয়সের সামর্থ্যবান ব্যক্তি তার নিজের ফিতরা আদায় করতে পারবে। আজকে আপনাদের সাথে আলোচনা করা হবে ফিতরা কাদের উপরে ওয়াজিব। নিচে জেনে নিন ফিতরা কাদের ওপর ওয়াজিব। সব পরিমাণ সম্পদের প্রত্যেকটি মালিক অথবা নর-নারী ক্ষেত্রে ঈদুল ফিতরের নামাজের পূর্বে ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব। এখানে নিসাব পরিমাণ বলতে বোঝানো হয়েছে সাড়ে সাত ভরি সোনা বা সাড়ে ৫২ ভরি রুপা অথবা এর সমমূল্য পরিমাণ ব্যবসার পণ্য বা নগদ অর্থ এবং সম্পত্তির মালিক হওয়াকে। কেউ নিসাব পরিমাণ অর্থের মালিক হলে । তার নিজের ও তার পরিবারের সকলের পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব।

অবশ্যই গৃহকর্তা তার নিজের এবং তার পরিবারের ব্যক্তিবর্গ যদি অসামর্থ্যবান হয় তাহলে তাদের পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করবে। নিজের গরিব ছেলে মেয়ের পক্ষ থেকে এটা পরিবারের প্রধান কে আদায় করতে হবে। ঈদের দিন এর আগে অর্থাৎ ফজরের নামাজের আগে যদি কোন বাচ্চা জন্মগ্রহণ করে তবে তার পক্ষ থেকেও ফিতরা আদায় করতে হবে, তবে সেই সময় যদি কেউ পরলোক গমন করে তাহলে তার কক্ষের ফিতরা আদায় করার প্রয়োজন নেই। ফিতরা যেহেতু রমজান মাসে আদায় করতে হয় এই কারণে ঈদের দিন সূর্যাস্তের পরে যদি কোন বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হয় তাহলে তার পক্ষে ফিতরা আদায় করার প্রয়োজন হয় না।

কোন ব্যক্তির স্ত্রী অথবা ছেলে মেয়ে যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয় তাহলে তাদেরকে নিজের ফিতরা নিজেদের আদায় করতে হবে সেই ক্ষেত্রে গৃহকর্তা অথবা বাড়ির প্রধান ফিতরা আদায় করে দিলে সেটির জায়েজ হবে না।

মন্তব্য , আমাদের ঈমান পূর্বের নবী-রাসূল এবং উম্মতগণের মতন অতটা শক্তিশালী না হওয়ার কারণে , রমজান মাসেও রোজা থেকে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বা দুর্ভাগ্যবশত নিজেদের অজান্তেই অনেক ধরনের গুনাহ বা পাপ হয়ে থাকে , আর এই ফিতরা রোজার ভুল ত্রুটির কাফফারা স্বরূপ কাজ করে এবং মনে রাখবেন, রোজাদারের রোজা আসমানে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে এবং তারা আদায় করা মাত্র আল্লাহর কাছে আল্লাহর দরবারে পৌঁছে যায়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url