রোজা রাখার দোয়া - রোজার ফজিলত ও গুরুত্ব

মুসলিম উম্মাহের জন্য রমজান মাসটি অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ এবং বরকতময় একটি মাস। নিজেদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিনের কাছে গুনাহ মাফ করার এটি হলো শ্রেষ্ঠ একটি মাস। রমজানের একমাস রোজা রাখা প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক নন নারীর উপরে ফরজ , আর রমজান এর এই একমাস রোজা রাখার ফজিলত ও গুরুত্ব রয়েছে অনেক বেশি। তবে শুধু সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানাহার বর্জন করে তথাকথিত রোজা রাখলে চলবে না , যথাযথভাবে রোজা পালনের জন্য জানতে হবে রোজা রাখার দোয়া সম্পর্কে।
আমাদের মধ্যে অনেক মানুষই ফরজ আদায়ের উদ্দেশ্যে রমজান মাসে রোজা পালন করে থাকে ঠিকই কিন্তু এই রোজার যে কত গুরুত্ব বা ফজিলত তা সম্পর্কে বিস্তারিত জানেনা , আবার অনেকেই হয়তো রোজা রাখার দোয়া সম্পর্কেও ভালোভাবে অবগত নয়। তাই চলুন আজকে যথাযথভাবে রোজা পালনের উদ্দেশ্যে রোজার গুরুত্ব ও ফজিলত জেনে নেওয়ার পাশাপাশি রোজা রাখার দোয়াটিও সঠিকভাবে জেনে নেওয়া যাক।

সূচিপত্রঃ রোজা রাখার দোয়া - রোজার ফজিলত ও গুরুত্ব

রোজা রাখার দোয়া

প্রাপ্তবয়স্ক প্রত্যেক মুসলমান নর নারীর উপরে রমজানের এক মাস রোজা রাখা ফরজ। আর যথাযথ নিয়মে এই ফরজ রোজা আদায় করার জন্য , অবশ্যই রোজার নিয়ত বা রোজা রাখার দোয়া পাঠ করতে হবে। কেউ যদি রোজা রাখার দোয়া বা নিয়ত না করে তাহলে , রোজা শুদ্ধ হবে না। সূর্যাস্তের পরেই যদি আগামীকালের রোজার জন্য কেউ নিয়ত করে তাহলে সে ক্ষেত্রেও রোজার নিয়ত হয়ে যাবে তবে সেহেরী খাওয়ার সময় রোজা রাখার নিয়ত করা সবচেয়ে ভালো। কিন্তু কেউ যদি দুর্ভাগ্যবশত রোজা রাখার দোয়া করতে ভুলে যায় তাহলে - সুবহে সাদিকের পর থেকে সূর্য অস্ত যাওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত রোজার কথা স্মরণে আসলেই , সেই সময় নিয়ত করে ফেললেও রোজা শুদ্ধ যাবে। 
আমাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো রোজার নিয়ত জানেন না এবং অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে এক বছর ঘুরে রমজান আসার কারণে এই নিয়ত অনেকেই ভুলে যান বা সঠিকভাবে মনে থাকে না। তাই আপনাদের রমজানের এই রোজা শুদ্ধভাবে পালন করার জন্য , রোজা রাখার দোয়া আরবি এবং বাংলায় ভালোভাবে জেনে নিন। যারা আরবিতে রোজা রাখার দোয়া পড়তে পারবেন না তারা বাংলায় এই দোয়া পড়লেও অর্থাৎ মনে মনে রোজা রাখার জন্য বাংলাতে নিয়ত করলেও রোজা শুদ্ধ হবে।
রোজা রাখার দোয়া আরবি - نَوَيْتُ اَنْ اُصُوْمَ غَدًا مِّنْ شَهْرِ رَمْضَانَ الْمُبَارَكِ فَرْضَا لَكَ يَا اللهُ فَتَقَبَّل مِنِّى اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْم
উচ্চারণ - নাওয়াইতু আন আছুমা গদাম মিং শাহরি রমাদ্বানাল মুবারকি ফারদ্বল্লাকা ইয়া আল্লাহু ফাতাক্বব্বাল মিন্নি ইন্নাকা আংতাস সামিউল আলিম।

রোজার নিয়ত বাংলা

রোজা রাখার নিয়ত যারা আরবিতে করতে পারবেন না তারা , নিম্নলিখিতভাবে বাংলাতেও রোজার নিয়ত করে নিতে পারেন।
"হে আল্লাহ, আগামীকাল পবিত্র রমজান মাসে তোমার পক্ষ থেকে ফরজ করা রোজা রাখার নিয়ত করলাম, অতএব তুমি আমার পক্ষ থেকে কবুল কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।"

রোজার ফজিলত ও গুরুত্ব

যদি যথাযথভাবে এবং সঠিক নিয়মে , আল্লাহর আদেশ পালনের উদ্দেশ্যে রোজা রাখা যায় তাহলে এই রোজার মাধ্যমে অনেক ফজিলত অর্জন করা যাবে এবং এই রোজায় কেয়ামতের দিন , রোজা পালনকারীর সুপারিশকারী হিসেবে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানাবে। এছাড়াও যথাযথ ভাবে রোজার আরো যেসব গুরুত্ব রয়েছে সেগুলো হল নিম্নরূপ - 
(১) যথাযথভাবে রোযা রাখতে পারলে বিনিময়ে তার পূর্ববর্তী সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। 
(২) রোযাদারের ঘুমও ইবাদত। তার চুপ থাকা আল্লাহর নিকট তাসবীহস্বরুপ গণ্য হয়। 
(৩) জান্নাতের আটটি দরজা আছে তার মধ্যে একটি নাম রাইয়ান ( বাংলায় প্রতিশব্দ: তৃপ্তি) এর দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করার সৌভাগ্য শুধুমাত্র রোজাদার গণই লাভ করবেন। 
(৪) রোজাদারের মুখে গন্ধ আল্লাহ তায়ালার কাছে মিশক হতেও বেশি সুগন্ধময় ও উত্তম । 
(৫) রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দ রয়েছে একটি ইফতারের সময় আর অপরের একটি আখিরাতে আল্লাহ তায়ালার সাক্ষাৎ লাভের সময়। 
(৬) রোজার মধ্যে হারাম বর্জন করার কারণে হারাম বস্তু ও হারাম কাজ বর্জন করা এবং আল্লাহর আহকাম পালন করা সহজ হয় রোজা মানুষকে বদকাজ হতে ফিরিয়ে রাখে। 
(৭) রোজা ফাঁকি দেওয়ার ও অভ্যাস দূর করে যেহেতু রোজার দিনে রোজাদার গোপনে পানাহার করলে কারো টের পাওয়ার উপায় নেই। কিন্তু রোযাদার তা করেনা। 
(৮) আল্লাহ তায়ালা বলেছেন যে, আদম সন্তানের নেক আমলের কেবলমাত্র প্রতিদান দশ হতে সাত শত গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করে দেয়া হয়। কিন্তু রোযার অবস্থা সেরূপ নয়, রোযা খাছ আমার জন্য রোযাদার শুধু আমার খুশীর জন্য কামনা বাসনা ও পানাহার ত্যাগ করে রোযা রাখে, অতএব আমি স্বয়ং এর প্রতিদান দিবো। 
(৯) আল্লাহ সকল পানাহার থেকে মুক্ত। রোযাদারও দিনের বেলায় পানাহার হতে বিরত থাকে, রোযার মাসে আল্লাহ তায়ালার অভাবহীনতার শক্তি রোযাদারের ওপর বর্তে তার ফলে রামাদান মাসে রোযাদারের যিকির বাড়ে। 
(১০) খাওয়ার লোভ মানুষের বড় লোভ, এ লোভ সংবরণ করা জীবনের শ্রেষ্ঠ সংযম। রোযা রুহকে শক্তিশালী করে, বিচার-শক্তি ও স্মরণ শক্তি বাড়ায়। রোযা কফ রোগ দূর করে। 
(১১) যে ব্যাক্তি রোযাদারকে ইফতার করায় সে ব্যক্তি রোযাদারের সমান ছাওয়াব লাভ করে; কিন্তু তাতে রোযাদারের নেকি কমে না। 
(১২) ধনী মানুষরা রোযার সময় গরীব মানুষের ক্ষুধার কষ্ট সরাসরি অনূভব করার সুযোগ পায়। 
(১৩) সংসারে অসংখ্য প্রয়োজন মিটিয়ে, প্রচুর খাদ্য সামগ্রী সম্মুখে রেখে প্রলোভন তুচ্ছ করে রোযাদারগন পূর্ণ একটি মাস কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে রোজা রাখে, শুষ্ক মলিন মুখ নিয়ে ক্লান্ত শান্ত শরীররে প্রত্যেকে আপন কাজ করে। এমন সময় আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাগণদের ডেকে বলেন "দেখো, আমার বান্দাগণ আমার সন্তুষ্টি লাভের আশায় কত ধৈর্য ও ত্যাগ স্বীকার করেছে, আল্লাহ তখন অত্যন্ত খুশি হয়ে বান্দা গন্ধের অতীতের সকল গুনাহ মাফ করে দেন। "
এছাড়াও আয়ু বৃদ্ধিতে রয়েছে রো্যার অবদান ডাঃ ক্লাইভ মেকক মানুষের জীবন বৃদ্ধিতে একটি নতুনতত্ত্ব আবিষ্কার করেছেন, অবশ্য তত্ত্বটি নতুন আবিষ্কার বলা চলে না। কেননা ইসলামী শরীয়তে এই সুনির্দিষ্ট আইন পূর্ব থেকে চালু রয়েছে। তত্ত্বটি এই যে; প্রাণীদেহ যতদিন বাড়তে থাকে ততদিন বার্ধক্য আসতে পারেনা, শরীরের বর্ধন থেমে গেলে ক্ষয়ই আরম্ভ হয়ে বার্ধক্য উপস্থিতি হয়। সুতরাং বার্ধক্যের সূচনা থামিয়ে রাখতে হলে শরীরের বৃদ্ধি যাতে ধীর গতিতে চলতে থাকে তার সুব্যবস্থা করতে হয়। কচ্ছপ দীর্ঘজীবন পায়। এরা ১০০ বছর বাঁচে। কেননা এদের শরীর দীর্ঘকাল যাবত ধীরগতিতে বাড়তে থাকে। মানুষের মতো ২৫ বছর বয়সে এদের শারীরিক বৃদ্ধি বন্ধ হয় না। রোজা উপবাস ছাড়া শারীরিক বৃদ্ধিকে ধীর গতি সম্পন্ন করার অন্য কোন ব্যবস্থা নেই। ডাঃ মেকক ইঁদুর নিয়ে পরীক্ষা করে এর সত্যতা প্রমাণ করেছেন বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞানের মধ্যে দীর্ঘ জীবন লাভ করার জন্য খাবার বেশি প্রয়োজন। প্রচলিত কথায় আছে "বেশি বাঁচবি তো কম খা" এ প্রবাদটি সত্য।
মন্তব্য , আশা করছি পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে রোজার ফজিলত ও গুরুত্ব সম্পর্কে মোটামুটি একটি ধারণা পেয়েছেন এবং বুঝতেই পারছেন রমজানের এই ৩০ টি রোজা একজন মুসলমানের জন্য মুক্তির পথ হতে পারে। তাই অবশ্যই উপযুক্ত কারণ ছাড়া রমজানের এই ৩০ টি রোজা কোনোভাবেই বাদ দিবেন না এবং অবশ্যই ফরজ রোজা আদায়ের ক্ষেত্রে রোজা রাখার দোয়া বা নিয়ত করার বিষয়টিও গুরুত্বের সাথে আমলে রাখতে হবে। আমাদের সকলকে রমজানের ত্রিশটি রোজা যথাযথভাবে পালনের তৌফিক দান করুন (আমিন)।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url