তারাবির নামাজ না পড়লে কি গুনাহ হবে - তারাবির নামাজ কি ফরজ

 
রমজান মাসের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং ফজিলতপূর্ণ একটি ইবাদত হচ্ছে তারাবির নামাজ। অনেক সময় তারাবির নামাজ না পড়লে কি গুনাহ হবে এবং তারাবির নামাজ কি ফরজ এ বিষয়ে বাকবিতণ্ডা হতে দেখা যায়। বিতর্কে না জড়িয়ে জেনে নিন তারাবির নামাজ না পড়লে কি গুনাহ হবে কিংবা তারাবির নামাজ কি ফরজ সে বিষয়ে।


পুরো রমজান মাস জুড়ে এশার নামাজের পরে এবং বেতের নামাজের আগে তারাবির নামাজ আদায় করতে হয়। এই নামাজ আদায় করা নিয়ে অথবা এই তারাবির নামাজ না পড়লে কি গুনাহ হবে এবং তারাবির নামাজ কি ফরজ এই বিষয়ে অনেকের মনের সংশয় থাকে। তারাবির নামাজ সম্পর্কিত এই ধরনের সংশয় দূর করতে আজকের এই পোস্ট

সূচিপত্রঃ তারাবির নামাজ না পড়লে কি গুনাহ হবে - তারাবির নামাজ কি ফরজ

তারাবির নামাজ না পড়লে কি গুনাহ হবে

অনেক সময় অনেকের মনে এই প্রশ্নটি জাগে অথবা অনেককেই এ প্রশ্নটি করতে শোনা যায় যে, তারাবির নামাজ না পড়লে কি গুনাহ হবে? এ প্রশ্নের উত্তর হল, হ্যাঁ তারাবির নামাজ না পড়লে গুনাগার হতে হবে। যখন রমজান শরীফের চাঁদ দেখা যায় সেই রাত হতে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখার আগ পর্যন্ত প্রত্যেক রাত্রে এশার নামাজের পর বেতের নামাজের আগে দুই রাকাত করে দশ সালামে ২০ রাকাত নামাজ আদায় করতে হয় তারাবির নামাজ বলে।

স্ত্রী-পুরুষ, রোজাদার এমনকি বে রোজাদারের ক্ষেত্রেও তারাবির নামাজ পড়ার হুকুম রয়েছে। কোন ওজন ছাড়া ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ যদি তারাবির নামাজ ছেড়ে দেয় তাহলে তাকে অবশ্যই গুনাগার হতে হবে। মহানবী (সা) নিজে তারাবির নামাজ পড়তেন এবং সাহাবীদেরকে তারাবির নামাজ পড়ার জন্য বলতেন। তারাবি নামাজ প্রসঙ্গে একটি হাদিসে নবীজি (সা) বলেছেন-সাওয়াব লাভের উদ্দেশ্যে যে ব্যক্তি রমজান মাসে ঈমানের সাথে তারাবির নামাজ আদায় করবে, আল্লাহ পাক তার অতীতের গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন।(বুখারী শরীফ; প্রথম খন্ড, হাদিস নং ৩৬)

তারাবির নামাজ কি ফরজ

বিভিন্ন সময় মানুষের প্রশ্নটি করে তারাবির নামাজ কি ফরজ? অনেকে আবার এটি জানেও না যে তারাবির নামাজ ফরজ নাকি সুন্নত নাকি নফল। বিভিন্ন সময় আবার অনেক মানুষের মধ্যে তারাবির নামাজ নিয়ে বিতর্ক করতেও দেখা যায় এটি নফল নাকি সুন্নত না ফরজ সে বিষয়ে। আসুন তাহলে আজকে জেনে নেওয়া যাক তারাবির নামাজ কি ফরজ নাকি নফল।  তারাবির নামাজ পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা। 

তারাবির নামাজ কয় রাকাত

তারাবির নামাজ কয় রাকাত এ সম্পর্কেও বিভিন্ন মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন তারাবির নামাজ ৮ রাকাত কেউ মনে করে ১২ রাকাত আবার কারো মতে তারাবির নামাজ ২০ রাকাত। বিভিন্ন সূত্র থেকে এটি জানতে পারা যায় যে হুজুর (সা) সাহাবীদের নিয়ে ২০ রাকাত তারাবির নামাজ আদায় করতেন। এখন পর্যন্ত কোন মসজিদেই ২০ রাকাতের কম তারাবির নামাজ আদায় করতে দেখা যায় না, এ থেকে স্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে তারাবির নামাজ ২০রাকাত।

তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম

দুই রাকাতের নিয়ত করিয়া তাহরিমা বেঁধে সানা , তাসমিয়া পড়ে সূরা ফাতিহা ও তার সাথে অন্য একটি সূরা মিলায়ে করতে হবে এরপর অন্যান্য নামাজের মতন রুকু সেজদা সহ প্রথম রাকাত শেষ করে দ্বিতীয় রাকাতে আবার সূরা ফাতিহা ও অন্য একটি সূরা বা কুরআনের তিন আয়াত পড়ে রুকু সেজদা করতে হবে।

এভাবে দুই রাকাত আদায় করে একবার কিংবা তিনবার দরুদ শরীফ পাঠ করতে হবে তারপর আবার উঠে দাঁড়ায় আবার দুই রাকাত আগের নিয়মে করতে হবে। এভাবে দুই দুই রাকাত করে মোট চার রাকাত নামাজ আদায় করার পর আস্তে আস্তে নির্দিষ্ট দোয়া ও মোনাজাত করতে হবে। এভাবে ২০ রাকাত তারাবির নামাজ পড়তে হবে । এভাবে সাধারণত সুরা তারাবি পড়া হয়। আর খতম তারাবি পড়ার জন্য প্রতিদিন ২০ রাকাত নামাজের মধ্যে কোরআন তেলাওয়াত করতে হয় এভাবে পুরা রমজান জুড়ে নামাজের ভিতরে কোরআন খতম করাকে খতম তারাবি বলা হয়।

তারাবির নামাজের নিয়ত

উচ্চারণঃনাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকায়াতাই সালাতিত তারাবিহী সুন্নতু রাসূলুল্লাহি তায়ালা মুতাওয়াজিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।

অর্থঃ আমি আল্লাহর ওয়াস্তে কেবলামুখী হয়ে দুই রাকাত তারাবির সুন্নত নামাজ পড়ার নিয়ত করলাম।

তারাবির নামাজের দোয়া

প্রতি চার রাকাত তারাবির নামাজ পড়ার পরে কিছুক্ষণ সময় বিশ্রাম নিয়ে তারপর আবার নামাজ শুরু করতে হয় এই বিশ্রাম নেয়ার সময় অযথা চুপচাপ না বসে থেকে বিভিন্ন ধরনের তসবি তেলাওয়াত করা উচিত এবং নিচের দোয়াটি পড়তে হয়। তারাবির নামাজের এই দোয়াটি বেশ কয়েকবার করে তারপরে আবার পরের রাকাত শুরু করতে হয়।

উচ্চারণঃ সুবহানা যিলমুলকি ওয়াল মালাকুতি , সুবহানাজিল ইজ্জাতি ওয়াল আজমতি ওয়াল হাইবাতি, ওয়াল কুদরাতী ওয়াল কিবরিয়াই ওয়াল যাবারুতি , সুবহানাল মালিকল হাইয়িল্লাজি লা ইয়ানামু ওয়ালা ইয়ামুতু আবাদান আবাদা সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালাইকাতি ওয়ার রুহ।

অর্থঃ আমি তারই পবিত্রতা ঘোষণা করছি যিনি এ সকল সাম্রাজ্য ও ফেরেস্তা কুলের মালিক। আমি তারই পবিত্রতা ঘোষণা করছি যিনি সমুদয় সম্মানের অধিকারী , মহীয়ান, ভয়দাতা , ক্ষমতাশীল। আমি সেই চিরজীবী বাদশাহের পবিত্রতা ঘোষণা করছি যিনি তন্দ্রা জান না এবং অমর , তিনি পবিত্র তিনি আমাদের প্রতিপালক এবং ফেরেশতা ও আত্মা সমূহের রব।

তারাবির নামাজের মোনাজাত

প্রতি চার রাকাত তারাবির নামাজ পড়ার পরে একটি বিশেষ মোনাজাত করতে হয় । একবারে ২০ রাকাত নামাজ শেষ করেও এই মোনাজাতটি করা যায়।

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্না নাস আলুকাল জান্নাতা ওয়া নাউজু  বিকা মিনান্নারী ইয়া খালিকাল জান্নাতি ওয়ান্নরী বিরাহমাতিকা ইয়া আজিজু ইয়া গাফফারু , ইয়া কারিম ইয়া সাত্তারু ইয়া রাহিমু ইয়া জাব্বারু ইয়া খালিকু ইয়া বাররু। আল্লাহুম্মা আজিরনা মিনান্নারি। ইয়া মুজিরু, ইয়া মুজিরু ইয়া মজিরু বিরহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমীন।

 অর্থঃ হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমরা তোমার নিকট বেহেস্ত চাচ্ছি ও দোযখ থেকে মুক্তি চাচ্ছি হে বেহেশত দোযখ সৃষ্টিকারী তোমার অনুগ্রহ দ্বারা । হে ক্ষমতাশীল , হে মহান দয়ালু হে কৃপাময় , হে মহান শক্তিধর, হে মহান সৃষ্টিকর্তা , হে উপকারী আল্লাহ! আমাদেরকে দোযখ থেকে রক্ষা করো। হে রক্ষাকারী , হে রক্ষাকারী হে রক্ষাকারী।

রমজান মাসে তারাবির নামাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। এই ইবাদত পালন না করলে অথবা কোন সফর ছাড়া তারাবির নামাজ ছেড়ে দিলে গুনাগার হতে হবে । উপরিক্ত আলোচনার মহানবী(সা) নিজে তারাবির নামাজ পড়তেন এবং সাহাবীদের কেউ তারাবির নামাজ পড়ার আদেশ দিতেন। এই পবিত্র মাসে এই তাৎপর্যপূর্ণ তারাবির নামাজ পড়ার তৌফিক আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে দান করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url