সিজারের পর কি কি সমস্যা হতে পারে - সিজারের পর কি কি খাওয়া যাবে না

সিজারের সময় একদিকে যেমন শরীর থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয় , তাই এরপরে শরীরের এই ঘাটতি পূরণের জন্য খাবারের উপরে বিশেষ নজর দিতে হয় , অপরদিকে এটি যেহেতু এক ধরনের অপারেশন তাই এই বিষয়ের উপরে বিস্তারিত জ্ঞান রাখতে হবে। অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু সমস্যা এড়িয়ে চলার জন্য সিজারের পূর্বে এবং পরে ভালোভাবে জেনে নিতে হবে ফিচারের পর কি কি সমস্যা হতে পারে এই বিষয়ে।
শুধুমাত্র সিজারের পরবর্তী সমস্যা গুলোর উপরে ধারণা রাখলে চলবে না , পাশাপাশি কোন খাবারগুলো খেলে সিজারিয়ান রোগীর দ্রুত সেরে উঠবে এবং কোন খাবারগুলো এই ধরনের রোগীদের এড়িয়ে চলতে হবে এ বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান রাখতে হবে। তাই চলুন কথা না বাড়িয়ে এ বিষয়ে গুলোর উপরে বিস্তারিত ভাবে জেনে নেওয়া যাক।

সূচিপত্রঃ সিজারের পর কি কি সমস্যা হতে পারে - সিজারের পর কি কি খাওয়া যাবে না

সিজারের পর কি কি সমস্যা হতে পারে

যে কোন ধরনের হস্ত প্রচারে শরীরের জন্য খারাপ। শরীরের অস্ত্র প্রচার বা অপারেশনের ফলে রোগীকে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা বা জটিলতায় ভুগতে হয়, কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই সমস্যা গুলো সারা জীবনই পোহাতে হয়। আবার কোন কোন অপারেশনের পর শারীরিক জটিলতা হলো ধীরে ধীরে প্রকাশ পেতে শুরু করে। সিজার বর্তমান যুগের খুবই সাধারণ এবং ছোট একটি অপারেশন হলেও শরীরের উপরে এটি বড় ধরনের প্রভাব ফেলে এবং এবং এর প্রভাব হয় দীর্ঘমেয়াদি । এ কারণে সিজারের পর কি কি সমস্যা হয় এ বিষয়ে জ্ঞান রাখা দরকার , যারা সিজার করাতে চাচ্ছেন এবং যারা সিজার করিয়েছেন তাদের উভয়েরই। চলুন তাহলে আর দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক সিজারের পর কি কি সমস্যা হতে পারে। আপনাদের সুবিধার জন্য সিজারের পর কি কি সমস্যা হতে পারে সেগুলো নিচে উল্লেখ করা হলোঃ-

  • সিজারের পরে কাঁটা অংশ থেকে হার্নিয়া হওয়ার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে
  • সিজারের কাটা অংশে সেলাই থাকুক বা প্লাস্টিক সার্জারি এ কাটা স্থান পেকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে
  • সিজার করার পরে আজীবন এই কাটা জায়গায় ব্যথা ও জলা অনুভব হতে থাকে
  • বিভিন্ন ধরনের ভারী কাজগুলো বা হাসির কাজই দিতে গেলে কাঁটা স্থানে ব্যথা অনুভব হয়
  • সিজারের পরে মেয়েদের পেটে এসিডিটি বেড়ে যায়
  • সিজারের পর বাচ্চার মায়ের দুধ পেতে সমস্যা হয়
  • সিজারের পরে মেয়েদের শরীর মোটা হয়ে যায় এবং তলপেটে চর্বি জমে যায়
  • ভারী কাজ বা ভারী জিনিসপত্র ওঠাতে সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়, অনেক ক্ষেত্রে ভারী কাজগুলো করার পরে পেটে প্রচন্ড ব্যথা হয়।
  • সিজারের পরে জরায়ুতে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা
  • খাদ্যনালী ফুটো হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে
  • সিজারিয়ান ডাক্তার অভিজ্ঞ না হলে তার ব্যবহারিত চাকু ও কাথিতে বাচ্চা আঘাতপ্রাপ্ত হওয়া সম্ভব না থাকে।
  • সিজারের পরে সুস্থ হয়ে উঠতে প্রায় এক মাস বা তারও বেশি সময় লেগে যেতে পারে
  • সিজার করার সময় অবচেতনের ইঞ্জেকশন এর ফলে কোমরের হাড় ক্ষয় হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়
  • সিজারের সময় রক্তনালী গুলো আঘাত পেলে তা থেকে রক্ত সমস্যা হয় যা পরবর্তীতে মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

সিজারের পর কি কি খাবার খাওয়া উচিত

সন্তান প্রসবের প্রক্রিয়া টিতে যেহেতু অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান ভূমিষ্ঠ করানো হয় সেই জন্য গর্ভবতী মায়ের ওপরে বেশ অনেকটা চাপ পড়ে। এছাড়াও সিজারের সময় কাটা ছেঁড়া করার কারণে প্রচুর রক্তপাত হয়। সিজারের পরে রোগীর দ্রুত শারীরিক সুস্থতা আনার জন্য, রোগীর খাওয়া-দাওয়ার ওপরে নজর দেওয়া উচিত। সিজারের পরে মায়ের দ্রুত সুস্থ হওয়ার পাশাপাশি বাচ্চা যাতে ভালোভাবে বুকের দুধ পাই সেই কারণেও মায়ের খাবারের দিকে যথেষ্ট নজর দিতে হবে । আসুন তাহলে এবার জেনে নেওয়া যাক সিজারের পরে রোগীকে কি ধরনের খাবার দিতে হবে।

  • হালকা গরম তরল পানিও পান করুন
  • ফাইবার যুক্ত খাবার গুলো খেতে হবে
  • ক্যাফেন জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে
  • খনিজ লবণ , ক্যালসিয়াম , প্রোটিন জাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে
  • খাদ্য তালিকায় ডাল অথবা শস্য জাতীয় খাবার রাখতে হবে
  • আইরন ,ক্যালসিয়াম এবং প্রোটিন জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া
  • গোটা শস্য জাতীয় খাবার খাওয়া
  • ভিটামিন এবং পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা
  • সহজে হজম হয় এ ধরনের খাবার গুলো খাওয়া
  • শাকসবজি এবং ফলমূল বেশি বেশি খাওয়া
  • যে খাবারগুলো শরীরে রক্ত উৎপাদন করে সেই খাবারগুলো বেশি খাওয়া
  • ভিটামিন সি জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া
  • টক জাতীয় খাবার বেশি বেশি খাওয়া

সিজারের পর কি কি খাওয়া যাবে না

সিজারের পরে যেহেতু মানুষ বেশ কিছুদিন অসুস্থ থাকে এই কারণে, সিজারের রোগীদেরকে কিছুদিন পুষ্টিকর , ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার গুলো বেশি খেতে দেওয়া। এবং যে খাবারগুলো রোগীদের ক্ষেত্রে হজম বা অন্যান্য সমস্যার সৃষ্টি করে সেই খাবারগুলো কিছুদিন এড়িয়ে চলাই ভালো । এবার আলোচনা করব সিজারের পরে কোন খাবার গুলো খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দেওয়া প্রয়োজন।
সিজারের রোগীদেরকে মসলাদার খাবার দেওয়া মোটেই উচিত না কারণ বেশি তেল মসলাযুক্ত খাবার পেটে এসিডিটির সমস্যা সৃষ্টি করে, যা মা এবং বাচ্চা দুইজনের জন্যই ক্ষতিকর। ক্যাথেনযুক্ত খাবারগুলো খুব কম পরিমাণে অথবা সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলা সিজারের রোগীদের জন্য ভালো। কারণ সমৃদ্ধ খাবার গুলো বাচ্চার বেড়ে উঠাতে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। অ্যালকোহল যুক্ত খাবার সিজারের রোগীদের জন্য অথবা যারা বাচ্চাকে বুকের দুধ পান করান তাদের জন্য সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অ্যালকোহল যুক্ত খাবার শিশুর বুদ্ধি বিকাশের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
যেসব খাবারগুলোতে পেটে গ্যাস হয় সেই ধরনের খাবারগুলো সিজার হওয়ার পর অন্ততপক্ষে ৩০/৪০ দিন না খাওয়ার চেষ্টা করুন। ঠান্ডা খাবার খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিন আপনি ঠান্ডা খাবার খেলে বুকের দুধের মাধ্যমে এই ঠান্ডা লাগা শিশুর লাগতে পারে এবং শিশু অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। ফাস্টফুড জাতীয় খাবার সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে চলুন। সিজারের পরে চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার কিছুদিন এড়িয়ে চলুন কারণ, চিনি জাতীয় খাবার খেলে আপনার কাটা স্থান পেকে যেতে পারে এবং সেখান থেকে বড় ধরনের ইনফেকশন সৃষ্টি হতে পারে।
মন্তব্য , পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে আপনারা নিশ্চয়ই সিজারের পরে রোগীর সুস্থ ও হয়ে ওঠার ব্যাপারটি ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন। আপনাদেরকে আবারো বলি একজন সিজারিয়ান রোগীর প্রপার টেক কেয়ার করার পাশাপাশি তার খাদ্য তালিকার দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। না হলে রোগী কখনোই সম্পূর্ণভাবে সেরে উঠতে পারবে না।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url