টনসিল ফোলা কমানোর উপায় - টনসিল ইনফেকশনের লক্ষণ

টনসিল আমাদের মাঝে অত্যন্ত পরিচিত একটি রোগের নাম, ছোট বড় সকলের ক্ষেত্রেই এই রোগ সমান ভাবে কষ্টদায়ক। এই প্রশ্নের মাধ্যমে আজকে আমরা বিস্তারিতভাবে জানবো টনসিল ফোলা কমানোর উপায় টনসিল ইনফেকশনের লক্ষণ গুলো। কারণ টনসিল সম্পর্কে আমাদের যদি জানা না থাকে এবং আমরা যদি সচেতন না হয় তাহলে এটি ডেকে আনতে পারে ক্যান্সারের মতন রোগ।


টনসিল সম্পর্কে সকলেরই মোটামুটি ধারণা থাকলেও, বিস্তারিত ভাবে টনসিল সম্পর্কে জানানোর জন্য এই পোস্টটি আজকে আলোচনা করা হবে টনসিল ফোলা কমানোর উপায় ও টনসিল ইনফেকশনের লক্ষণ সহ আরও বিভিন্ন বিষয় যেমন -টনসিল হওয়ার কারণ ,টনসিল হলে কি কি খাওয়া যাবেনা, টনসিল পেকে গেলে করণীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে। টনসিলের ব্যাপারে এ বিষয়গুলোর ওপরে আপনার যদি সঠিক ধারণা না থাকে তাহলে এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন এবং জেনে নিন।

সূচিপত্রঃটনসিল ফোলা কমানোর উপায় - টনসিল ইনফেকশনের লক্ষণ ।

টনসিল হওয়ার কারণ

টনসিলের সমস্যায় আক্রান্ত হননি এমন মানুষ খুঁজলে খুব কমই পাওয়া যাবে।টনসিল আমাদের মাঝে অত্যন্ত কমন এবং পরিচিত রোগ হলেও এই রোগের ব্যাপারে বিস্তারিত আমরা খুব কম মানুষই জানি অনেকে হয়তো বা এখন পর্যন্ত এটাই জানিনা যে টনসিল হওয়ার কারণ কি। তাই আমরা আজকে জেনে নেব টনসিল হওয়ার কারণ সম্পর্কে। টনসিল সাধারণত এক ধরনের গ্ল্যান্ড বা গ্রন্থি। যখন এই গ্রন্থির ভেতরে ইনফ্লামেশন অথবা ইনফেকশন দেখা দেয় তখন একে বলা হয় টনসিলাইটিস।

এই টনসিলাইটির সাধারণত দুইটি কারণে হয়ে থাকে , একটি হলো ভাইরাসের সংক্রমণ এবং অপরটি হল ব্যাকটেরিয়ার সংক্রম। অর্থাৎ ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া দুই ধরনের সংক্রমণ থেকেই টনসিলাইটিস হয়ে থাকে।ভাইরাস ছাড়াও আরো যে সকল কারণগুলো টনসিলাইটিস হওয়ার পেছনের দায়ী সেগুলো হলো শরীরে পুষ্টির অভাব , ঋতু পরিবর্তন , ঠান্ডা লাগা , শরীরের ইমিউন সিস্টেম কমজোর হওয়া। আশা করি বুঝতে পেরেছেন টনসিল হওয়ার পেছনের কারণগুলো।

টনসিল ইনফেকশনের লক্ষণ

আমরা আগেই জেনেছি যে টনসিল ইনফেকশনের প্রধান কারণ হলো ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ, এছাড়াও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে এবং শরীরে পুষ্টির অভাব হলে, ঋতু পরিবর্তনের সময় ঠান্ডা লাগা থেকে টনসিলের সমস্যা হয়ে থাকে। টনসিল নামক এই গ্রন্থিতে প্রদাহ বা ইনজেকশনের সৃষ্টি হলে এর কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। টনসিলাইটিস হলে যেই উপসর্গগুলো প্রকাশ পায় সেগুলো সম্পর্কে এবার আপনাদের জানাবো। আপনার যদি টনসিল ইনফেকশনের লক্ষণ গুলো জানা না থাকে তাহলে এখনই জেনে নিন টনসিল ইনফেকশনের লক্ষণ গুলো।

  • গলায় প্রচন্ড ব্যথা হয় যার কারণে কথা বলতে এবং খাবার খেতে অত্যন্ত অসুবিধা হয়
  • গলা ব্যথার পাশাপাশি কানের ভেতরে ব্যথা হতে পারে
  • প্রচন্ড জ্বর (১০৩,১০৪ ডিগ্রী) হতে পারে
  • টনসিল লাল হয় এবং ফুলে যায় 
  • কণ্ঠস্বর পরিবর্তন হওয়া
  • খাদ্যে অরুচি
  • বাচ্চাদের ক্ষেত্রে টনসিল ইনফেকশন হলে মুখ দিয়ে অতিরিক্ত লালা পড়ে।

টনসিল ইনফেকশনের ব্যাপারে শুরু থেকেই সচেতন হয়ে যদি সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করা যায় তাহলে টনসিল ইনফেকশন সম্পূর্ণ নির্মূল করা সম্ভব। তবে টনসিলের এই ইনফেকশন যদি ক্রনিক আকার ধারণ করে তাহলে এখান থেকে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা এবং জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে যার কারণে টনসিলে অস্ত্রপচার করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে।

টনসিল ফোলা কমানোর উপায়

টনসিলাইসিস এর কারণ এবং টনসিল ইনফেকশনের লক্ষণ সম্পর্কে আমরা এতক্ষণ জেনেছি। টনসিল যেহেতু অত্যান্ত কমন একটি সমস্যা এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন ছোট বড় সবাই এ কারণে আমাদের সকলেরই জেনে রাখা উচিত টনসিল ফোলা কমানোর উপায়। টনসিল ফোলা কমানোর উপায় গুলো জানা থাকলে বিভিন্ন কারণে যখন আমাদের টনফিল হয় তখন টনসিলের সমস্যা নিয়ে আমাদের খুব বেশি অসুবিধায় পড়তে হবে না। তাই চলুন আর দেরি না করে আমরা জেনে টনসিল ফোলা কমানোর উপায় গুলো।

পেঁয়াজের রসঃ পেঁয়াজের ভেতরে এন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান থাকায় এটি প্রদাহ এবং ফোলা ভাব কমাতে অত্যন্ত কার্যকরী। এ কারণে টনসিলের খোলা ভাব এবং ইনফেকশন কমানোর জন্য পেঁয়াজের রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়। পেঁয়াজের সাথে মধু মিশিয়ে এই রসটি অল্প করে দিনের মধ্যে কয়েকবার খাওয়ার চেষ্টা করুন দেখবেন খুব তাড়াতাড়ি আপনার টনসিলের খোলা ভাব অনেকটা কমে গেছে।

আরো পড়ুনঃ দাঁত ব্যথা হলে করনীয়

লবণ পানিঃ টনসিলের ফোলা এবং ব্যথা কমানোর একটি জনপ্রিয় এবং কার্যকরী পদ্ধতি হলো হালকা কুসুম গরম পানির ভেতরে লবণ মিশিয়ে গার্গেল করা। টনসিলের ফোলা ভাব এবং টনসিল এর প্রদাহ কমাতে গরম পানি ও লবণের গার্গেল ভূমিকা অনেক বেশি। টনসিল খুলে গেলে দিনের মধ্যে কয়েকবার হালকা কুসুম গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে গারগেল করুন এটি আপনার গলার ফোলা ভাব কমানোর পাশাপাশি গলা ব্যথা দূর করতে সাহায্য করবে।

মধুঃ টনসিলের ফোলা ভাব কমানোর জন্য মধু অত্যন্ত কার্যকরী একটি উপাদান। আমরা জানি টনসিল হওয়ার একটি কারণ হলো ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ আর মধুর মধ্যে রয়েছে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান। এই কারণে টনসিলের প্রদাহ বা টনসিল ফুলে গেলে। গরম পানি অথবা আদা চায়ের সাথে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন।

লেবুঃ আপনারা আগেই জেনেছেন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হওয়ার কারণেও হতে পারে। লেবুর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকায় এটি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং লেবুর ভেতরে সাইট্রিক এসিড থাকার কারণে টনসিলের প্রদাহ দূর করতে সাহায্য করে নেব আর টনসিলের প্রদাহ দূর হলে এমনিতেই ফোলা ভাব কমে যাবে। তাই টনসিলের ফোলা ভাব কমানোর জন্য লেবু চা অথবা হালকা কুসুম গরম পানিতে লেবু মিশিয়ে পান করুন।

আদাঃ এন্টি ব্যাকটেরিয়াল ও এন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদানে ভরপুর আরেকটি মসলা জাতীয় দ্রব্য হল আদা। তাই টনসিল ফোলা থেকে শুরু করে টনসিলের যেকোনো সমস্যা দ্রুত উপশম দেয়ার জন্য আদা অত্যন্ত কার্যকরী। টনসিলাইটিস জনিত যে কোন সমস্যায় আদার রস কুসুম গরম পানিতে অথবা আদা চা বানিয়ে দিনের মধ্যে কয়েকবার পান করলে খুব দ্রুত টনসিলের ফোলা এবং ব্যথা সেরে যাবে বলে আশা করা যায়।

গ্রীন টিঃ গ্রীন টি শরীরের জন্য উপকারি একটি পানিয়, গ্রীন টি এর ভেতরে রয়েছে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল উপাদান ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা টনসিলের প্রদাহ এবং ফোলা দূর করতে সাহায্য করে।তাই টনসিলের ফোলা কমাতে দিনের মধ্যে ২-৩ বার পান করতে পারেন গ্রীন টি, আরো ভালো ফল পেটে এর সাথে এড করতে পারেন মধু।

লেবু পানিঃ টনসিলের ফোলা ভাব এবং প্রদাহ কমানোর জন্য ঘন ঘন হালকা কুসুম গরম পানিতে লেবুর রস এবং লবণ মিশিয়ে গার্গেল করুন, এতে আপনার টনসিলের ফোলা ভাব ভাব এবং ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ দুটোই দূর হবে।

কাঁচা রসুনঃ ভাইরাস এবং ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রামন কমাতে ভিষন কার্যকরী কাঁচা রসুন। তাই টনসিলের ফোলা ,ব্যাথা এবং প্রদাহ কমাতে কাঁচা রসুন চিবিয়ে খেলে অনেক ভালো উপকার পাবেন।

আরো পড়ুনঃ রসুনের উপকারিতা ও অপকারিতা

তুলসি পাতা ও পুদিনা পাতাঃ তুলসি পাতা ও পুদিনা পাতার ভেতরে রয়েছে অসাধারন ঔষধি গুন সম্পন্ন উপাদান। টনসিলের ফোলা কমাতে দিনের মধ্যে কয়েকবার পান করুন তুলসি পাতা ও পুদিনা পাতার তৈরি চা।

টকদইঃ টকদই এর মধ্যে থাকা প্রোবায়টিক ব্যাক্টেরিয়া শরীরের ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়ার সাথে লড়াই করে।এ কারনে টনসিল প্রদাহে বা টনসিল ফুলে গেলে টকদই খেলে অনেক আরাম পাওয়া যায়।

টনসিল হলে কি কি খাওয়া যাবে না

টনসিল হলে বেশকিছু খবার আপনার খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে,আপনি কি সঠিক ভাবে জানেন টনসিল হলে কি কি খাওয়া যাবে না ? যদি জানা না থাকে তাহলে ,অব্যশয় বিষয়টি জেনে রাখুন।যেসব খাবার গুলো টনসিলের প্রদাহ বা ব্যাথা বাড়িয়ে দিতে পারে  সে ধরনের খাবারগুলো  খাওয়া থেকে দূরে থাকতে হবে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক টনসিল হলে কি কি খাওয়া যাবেনা। টনসিল হলে দুধ এবং দুগ্ধজাত খাবার গুলো খাওয়া যাবেনা, কারণ এ জাতীয় খাবার গুলো ইনফেকশন বা প্রবাহ বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করে।

টনসিল হলে যে কোন টক জাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না, কারণ টক খাবার গুলো টনসিলের গলা ব্যথা আরো বাড়িয়ে দিবে। এ কারণে টক জাতীয় খাবার গুলো পরিহার করে এনসিটি এনটিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। টনসিলের সমস্যায় অতিরিক্ত মসলা , ঝাল , তেল যুক্ত খাবার গুলো পরিহার করতে হবে। শীতকালীন সবজির মধ্যে বাঁধাকপি , ব্রকলি , ফুলকপি টনসিলের প্রদাহ এবং টনসিলের যে কোন সমস্যা বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করে এই কারণে টনসিল হলে খাদ্য তালিকা থেকে এই সবজিগুলো বাদ দিতে হবে। টনসিলের সমস্যায় আরো যে সকল খাবারগুলো বাদ দিতে হবে সেগুলো হলো মিষ্টি আলু ও মূলা, গাজর ইত্যাদি।

আরো পড়ুনঃ কোলন ইনফেকশনের লক্ষণ

এছাড়াও টনসিল হলে জাতীয় খাবার যেমন -আইসক্রিম, ফ্রিজে রাখা ঠান্ডা পানি পানি অথবা যেকোনো খাবার খাওয়া যাবে না। টনসিলের কারণে যেহেতু গলায় প্রচন্ড ব্যথা থাকে এবং কথা বলতে খাবার খেতে অসুবিধা হয় এই কারণে টনসিলের  সময় শক্ত খাবার গুলো পরিহার করে নরম এবং তরল জাতীয় খাবার গুলো বেশি পেতে হবে। পাশাপাশি মিষ্টি জাতীয় অথবা চিনে যুক্ত খাবার গুলো অল্প পরিমানে খেতে হবে কারণ চিনি বা মিষ্টি খাবার গুলো টনসিলের প্রবাহ বাড়াতে সাহায্য করে।

টনসিল পেকে গেলে করণীয়

চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক টনসিল পেকে গেলে করণীয় বিষয় সম্পর্কে। টনসিলের ব্যাপারে সকলেরই শুরু থেকে সচেতন হওয়া প্রয়োজন, অনেক সময় সতর্ক থাকার পরেও টনসিল পেকে যায় এই কারণে আমাদের জেনে রাখা ভালো টনসিল পেকে গেলে করণীয় বিষয় সম্পর্কে। টনসিল পেকে গেলে সর্বপ্রথমে যে কাজটি আমাদের করণীয় সেটি হল ভাল একজন ENT স্পেশালিস্ট এর পরামর্শ গ্রহণ করা এবং সেই অনুযায়ী অপারেশনের প্রয়োজন হলে দ্রুত অপারেশন করিয়ে নেওয়া। কারণে অবস্থাতে টনসিল বেশিদিন থাকলে হতে পারে এখান থেকে ক্যান্সারের মতন মারাত্মক ব্যাধি। আর যদি আপনার ডাক্তারের কাছে যেতে দু এক দিন দেরি থাকে তাহলে আপনি দিনের মধ্যে কয়েকবার হালকা কুসুম গরম পানিতে লবণ দিয়ে গার্গিল করার চেষ্টা করুন। ঠান্ডা জাতীয় খাবার সম্পূর্ণরূপে পরিহার করুন। হালকা গরম তরল খাবার গুলো যেমন- চা , স্যুপ এই জাতীয় খাবার গুলো ঘন ঘন খাওয়ার চেষ্টা করুন। আশা করি টনসিল পেকে গেলে করণীয় বিষয় সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন।

মন্তব্য, উপরের আলোচনার মাধ্যমে এতক্ষণে আপনারা নিশ্চয়ই ভালোভাবে জেনে নিয়েছেন টনসিল ইনফেকশনের লক্ষণ এবং টনসিল ফোলা কমানোর উপায় সম্পর্কে। টনসিলের ব্যাপারে শুরু থেকে সচেতন না হলে এখান থেকে হওয়া ইনফেকশন ডেকে নিয়ে আসতে পারে ক্যান্সারের মতন মরণব্যাধি। এই কারণে টনসিল এর ব্যাপারে শুরু থেকে সচেতন হন এবং ডাক্তারি পরামর্শ অনুযায়ী অপারেশনের প্রয়োজন হলে দ্রুত টনসিল অপারেশন করিয়ে নেওয়াই ভালো।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url