এইডস এর লক্ষণ - এইডস প্রতিরোধের উপায় - এইডস এর কারন

AIDS হল ভয়াবহ এক ধরনের যৌন রোগ এবং বিশ্বব্যাপী এটি নীরব ঘাতক নামেও পরিচিত। এইডস থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হল সতর্কতা আর এই কারণে আমাদের জানতে হবে এইডসের কারণ এবংHIV রোগের লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায়। প্রতিনিয়তই সারা বিশ্বে এই রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আশঙ্কা জনক হারে বেড়েই চলে। ২০১২ সালের তথ্য অনুযায়ী জানতে পারা যায় যে বিশ্বের প্রায় ৩৫.৫ মিলিয়ন মানুষ HIV ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত এবং প্রায় ৩৬ মিলিয়ন মানুষ এখন পর্যন্ত এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে।

এখন পর্যন্ত যেহেতু এই নীরব ঘাতক এর সুনির্দিষ্ট কোন চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কার হয়নি তাই এর হাত থেকে বাঁচার জন্য মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।এইডস এর কারণ এবং HIV রোগের লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায় মানুষকে জানানোর মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। আর তাই আজকে আমরা জানবো HIV রোগের লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায় এবং এইডস এর কারন সম্পর্কে। আপনি যদি HIV রোগের লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায় ও এইডস এর কারন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তাহলে পুরো পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন

সূচিপত্রঃ HIV রোগের লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায় - এইডস এর কারন

এইডস কি

HIV এইডস এর কারণ , লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানার আগে আমাদেরকে জানতে হবে এইডস কি।তাই চলুন সর্বপ্রথমে আমরা জেনে নিই এইডস এর পরিচয় বা এইডস কি । এইড হলো এক ধরনের ভাইরাস বাহিত রোগ অর্থাৎ ভাইরাসের মাধ্যমে এই রোগটি একজন থেকে আরেকজনের মধ্যে সংক্রামিত হয়।এবং এইডস এর ভাইরাসের নাম হল HIV . Human Immunodeficiency Virus কে  সংক্ষেপে HIV বলা হয় এবং Acquired Immuno Ddficiencey Syndrome কে কে সংক্ষিপ্তভাবে AIDS বলা হয়। 

আরো পড়ুনঃ পেটে গ্যাস হলে কি কি সমস্যা হয়

HIV ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে শ্বেত রক্তকণিকার ম্যাক্রোফেজ এবং লিম্ফোসাইট ধীরে ধীরে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায় এবং দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একেবারে নষ্ট হয়ে যায়। আর শরীরে যেহেতু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একেবারে থাকে না এই কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মানুষের মৃত্যু ঘটে। AIDS রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিগণ সাধারণ এমন কিছু রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে যেগুলোকে শরীরের জন্য বিপদজনক মনে করা হয় না। সারা বিশ্বব্যাপী AIDS একটি মরণব্যাধি নামে পরিচিত।

এইডস রোগের উৎপত্তি ও আবিষ্কার

চলুন এবার আমরা জেনে নেই এই রোগের উৎপত্তি সম্পর্কে। সর্বপ্রথম মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার প্রাইমেটদের মধ্যেই এইডস রোগের সংক্রমণ ঘটে, এবং ১৯২০ সালে কঙ্গোতে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে এই রোগটি। পরবর্তীতে ১৯৮১ সালে জুন মাসে আমেরিকার জর্জিয়া রাজ্যের আটলান্টার ' সেন্টার অফ ডিজিজ কন্ট্রোল ' সর্বপ্রথম এইডস এর ভাইরাস আবিষ্কার করেন। এরপর , ফ্রান্সের পাস্তুর ইনস্টিটিউট এর বিজ্ঞানী Dr. Lue Montagnire ১৯৮৩ সালে এবং আমেরিকান ন্যাশনাল কেমিক্যাল ইনস্টিটিউট এর বিজ্ঞানী  Dr. Robert Gallo ১৯৮৪ সালে আলাদা আলাদা ভাবে এইডস এর ভাইরাস বা জীবাণু আবিষ্কার করেন। প্রথম অবস্থায় ধারণা করা হতো আফ্রিকার বানরের দেহ থেকে এই ভাইরাসটি মানুষের ভেতরে সংক্রামিত হয় এবং পরবর্তীতে তা আমেরিকা ,ইউরোপসহ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে।

এইডস এর কারন

বিশ্বব্যাপী ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়া একটি আতঙ্কের নাম হল HIV AIDS এই রোগকে নিরব ঘাতক বলেও আখ্যায়িত করা হয়। এর থেকে সতর্ক এবং সাবধান হওয়ার জন্য আমাদের জানতে হবে এইডস এর কারণগুলো। যখন আমাদের এইডস এর কারণ গুলো জানা থাকবে তখন আমরা খুব সহজে এইডস এর ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলো এড়িয়ে চলতে পারব। তাই চলুন এবার এইডস এর কারণগুলো জেনে নেওয়া যাক। বিভিন্নভাবে একজন সুস্থ মানুষের শরীরে এইচআইভি ভাইরাস এর সংক্রমণ ঘটতে পারে, এইডসের কারণগুলো হলো,

  • নারী পুরুষের অবৈধ যৌন মিলন অথবা এইডস আক্রান্ত রোগীর সাথে যৌন মিলন
  • যৌন মিলনের সময় কনডম ব্যবহার না করা
  • সংক্রামিত রোগীর ব্যবহৃত সুচ , সিরিঞ্জ ব্যবহার করা
  • একই ব্লেড বা ক্ষুর  বিভিন্নজন ব্যবহার করা
  • সংক্রামিত রোগীর রক্ত গ্রহণ করা
  • এইডস আক্রান্ত বাবা-মা থেকে বা এইডস আক্রান্ত মায়ের গর্ভে জন্ম গ্রহণকারী শিশুরও এইডস হয়

HIV রোগের লাক্ষণ

এইডস রোগ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানার পাশাপাশি আমাদেরকে HIV রোগের লাক্ষণ সম্পর্কেও ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। এইচআইভি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার পরপরই এইডস রোগের লক্ষণ শরীরের প্রকাশ পায় না , এইচআইভি রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে কয়েক বছর সময় লেগে যায় তবে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে শরীরে এই রোগের উপস্থিত শনাক্ত করা যায়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ব্যাপক হারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা লক্ষ্য করা যায় , বিশ্বব্যাপী এইডস রোগের রোগী থাকলেও অধিকাংশ মানুষই সঠিকভাবে HIV রোগের লাক্ষণ জানেন না। তাই আজকে আমরা HIV রোগের লাক্ষণ সম্পর্কে আলোচনা করব এবং ভালোভাবে জেনে নেব HIV রোগের লাক্ষণ গুলো, চলুন তাহলে এবার HIV রোগের লাক্ষণ গুলো জেনে নেওয়া যাক। এইচআইভি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে যে সকল সিমটমগুলো প্রকাশ পায় সেগুলো হল,

  • শরীরের জ্বর আসা এবং জ্বর দীর্ঘস্থায়ী হওয়া
  • শরীরের ওজন হ্রাস পাওয়া বা কমে যাওয়া
  • শরীরের অভ্যন্তরের বিভিন্ন গ্রন্থগুলো ফুলে যায়
  • পেট ব্যথা
  • খাবারে অরুচি
  • দীর্ঘদিন ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা চলতে থাকা
  • ঘাড়ে ও বগলে ব্যথা হওয়া
  • বুকে ব্যথা হওয়া ও শুষ্ক কফ জমে থাকা
  • শরীর জ্বালাপোড়া করা
  • শ্বাসকষ্ট হওয়া
  • শরীরে রেশ হওয়া
  • স্মৃতিশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া
  • মাথাব্যথা
  • শরীরের মাংসপেশি ব্যথা হওয়া

এইডস প্রতিরোধের উপায়

এখন পর্যন্ত যেহেতু এইডস রোগের সুনিদৃষ্ট কোন চিকিৎসা আবিষ্কার হয়নি এই কারণে আমাদেরকে অবশ্যই এইডস প্রতিরোধের উপায় জানতে হবে। আর তাই সকলের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য আজকে আমরা জানবো এই প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে। তাহলে চলুন আর দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক এইডস প্রতিরোধের উপায় গুলো। প্রতিরোধ করতে হলে,

আরো পড়ুনঃ কোলন ইনফেকশনের লক্ষণ

  • নিরাপদ যৌন মিলন এবং ধর্মীয় বিধি-নিষেধ মেনে চলতে হবে।
  • যৌন মিলনের সময় কনডম ব্যবহার করতে হবে।
  • নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা বন্ধ করতে হবে।
  • এইডস আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে যৌন মিলন এমন কি চুমুও না খাওয়া।
  • ইনজেকশন গ্রহণের পূর্বে পরিশোধিত নতুন সূচ ,সিরিঞ্জ ব্যবহার করা।
  • অন্যের ব্যবহৃত সূচ , সিরিঞ্জ,দাঁতের চিকিৎসায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ব্যবহার না করা।
  • রক্ত গ্রহণের পূর্বে HIV সংক্রামিত কিনা পরীক্ষা করে নেওয়া।
  • এইডস আক্রান্ত মায়ের দুধ সন্তাকে পান না করানো।
  • চুল , দাঁড়ি কাটার সময় নতুন ব্লেড বা ক্ষুর ব্যবহার করে।

আক্রান্ত হওয়ার কতদিন পরে এইডস এর লক্ষণ প্রকাশ পায়

অনেকেই এই প্রশ্নটি জানতে চান ,আক্রান্ত হওয়ার কতদিন পরে এইডস এর লক্ষণ প্রকাশ পায়।HIV ভাইরাস দ্বারা সংক্রামিত হওয়ার পরপরই এর লক্ষণ প্রকাশ পায় না এবং এই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার কোন নির্দিষ্ট সময়ও নেই । শরীর বিশেষে ছয় মাস থেকে এক বছর অথবা কারো কারো ক্ষেত্রে পাঁচ থেকে দশ বছর পরে এর লক্ষণ গুলো প্রকাশ পেতে থাকে। তবে শরীরে AIDS এর লক্ষণ প্রকাশ না পেলেও বিভিন্ন টেস্ট এর মাধ্যমে শরীরে এই ভাইরাসের উপস্থিতি নির্ণয় করা যায় যেমন,ব্লাড টেস্ট, চোখের পানি অথবা বীর্জ টেস্ট , লালা ,জরায়ু ,বুকের দুধ ইত্যাদি পরীক্ষার মাধ্যমে এইচআইভি ভাইরাসের উপস্থিতি শরীরে করা যায়। আশা করছি আক্রান্ত হওয়ার কতদিন পরে এইডস এর লক্ষণ প্রকাশ পায় , এই প্রশ্নের উত্তরটি পেয়েছেন।

এইডস এর চিকিৎসা

চলুন এবার আমরা এইডস এর চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে নিই। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে এখন পর্যন্ত এইডস এর চিকিৎসা করার মতন সুনির্দিষ্ট কোন পদ্ধতি আবিষ্কার হয়নি। এখন পর্যন্ত কোন বিজ্ঞানী এইডস এর ঔষধ বা ভ্যাকসিন আবিষ্কার করতে পারেনি, তবে এই এর সংক্রমণ এর মাত্রা অথবা তীব্রতা কমানোর জন্য বিশেষজ্ঞগণ বেশ কিছু ঔষধের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। বর্তমানে  এন্টি রেট্রোভাইরাল থেরাপির মাধ্যমে এইডস এর চিকিৎসা করানো হয়।এইডস এর চিকিৎসা করতে সাধারণত ৩ ধরনের ঔষধ প্রয়োগ করা হয় এগুলো হলো,

  • NRTC গ্রুপের Zidovudine , Azidothymidine
  • NNRTI গ্রুপের Delviridine ,Nevirapine
  • PI গ্রুপের Indinavir , Ritonavir

মন্তব্য, উপরে উক্ত আলোচনার মাধ্যমে এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন HIV দ্বারা সংক্রামিত রোগ AIDS এর যেহেতু কোন চিকিৎসা নেই তাই জন্য HIV রোগের লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায় এবং এইডস এর কারন সম্পর্কে নিজে জানা এবং অন্যকে জানানো হলো এই রোগ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায়। আর তাই HIV রোগের লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায় এবং এইডস এর কারন কারণ ও এর ভয়াবহতা সম্পর্কে অন্যকে জানতে অবশ্যই সাহায্য করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url