প্রোস্টেট বড় হওয়ার লক্ষণ - প্রোস্টেট রোগের লক্ষণ - প্রোস্টেট ভাল রাখার উপায়

বয়স ৪০-৪৫ পার হলেই পুরুষদের ক্ষেত্রে খুব কমন যে সমস্যাটি হতে পারে সেটি হল প্রোস্টেট এর সমস্যা। বিশেষ করে বড় হওয়া মাঝ বয়সী পুরুষদের ক্ষেত্রে অত্যন্ত স্বাভাবিক। কিন্তু এই অসুখটি হওয়া খুব স্বাভাবিক বলে অবহেলা করলে চলবে না কারণ , অবহেলার কারণে এখান থেকে প্রোস্টেট ক্যান্সারও হতে পারে তাই জানতে হবে প্রোস্টেট বড় হওয়ার লক্ষণ, প্রোস্টেট রোগের লক্ষণ ও প্রোস্টেট ভাল রাখার উপায় সম্পর্কে।

বিশ্বের প্রায় ১৬ লক্ষ পুরুষ প্রোস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত এবং প্রায় ৪ লাখ পুরুষ প্রোস্টেট ক্যান্সারে মৃত্যুবরণ করে । তাই অবশ্যই প্রোস্টেট ভালো রাখার ব্যাপারে অত্যন্ত সচেতন হতে হবে , এ বিষয়ে জানতে হবে এবং সেই অনুযায়ী চলার চেষ্টা করতে হবে। আর প্রোস্টেট সংক্রান্ত কোনো সমস্যা অনুভব করলে অবশ্যই দ্রুত ডাক্তারি শরণাপন্ন হতে হবে। তবে প্রস্ট্রেট এর ব্যাপারে সচেতন হওয়ার জন্য সর্বপ্রথমে জানতে হবে প্রোস্টেট বড় হওয়ার লক্ষণ , প্রোস্টেট রোগের লক্ষণ এবং প্রোস্টেট ভাল রাখার উপায় সম্পর্কে। আজকে এই পোস্টে আমরা আলোচনা করব পুরুষদের প্রোস্টেট গ্লান্ড সম্পর্কে।প্রোস্টেট রোগের লক্ষণ ও প্রোস্টেট ভাল রাখার উপায় এবং প্রোস্টেট বড় হওয়ার লক্ষণ সম্পর্কে জানতে অতি অবশ্যই পড়ুন।

সূচিপত্রঃ প্রোস্টেট বড় হওয়ার লক্ষণ - প্রোস্টেট রোগের লক্ষণ - প্রোস্টেট ভাল রাখার উপায় 

প্রোস্টেট কি

আপনারা অনেকেই হয়তো প্রোস্টেট রোগের কথা শুনেছেন, কিন্তু আপনার জাবা আছে, প্রোস্টেট কি এ বিষয়ে? যদি জানা না থাকে তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক প্রোস্টেট কি।প্রোস্টেট হলো পুুরুুষদের দেহে থাকা একটি অঙ্গ এবং এটি একটি গ্রন্থি।এই প্রোস্টেটগ্রন্থিটি পুুরুুষের প্রজননতন্ত্রের অন্তর্ভুক্ত।প্রোস্টেটর অবস্থান মূত্রথলির একটু নিচের দিক থেকে মূত্রনালীর চারপাশ জুড়ে। এবং এই প্রোস্টেট গ্রন্থির মধ্যে দিয়েই প্রবাহিত হয় মূত্র এবং বীর্জ। প্রোস্টেট গ্রন্থী এক ধরনের আঠালো পদার্থের সৃষ্টি করে, যে আঠালো পদার্থটি পুরুষের শুক্রানুর সাথে মিলিত হয়ে বীর্জ তৈরি করে।

প্রোস্টেট রোগের লক্ষণ

প্রোস্টেট বড় হওয়ার সাথে সাথে এই গ্রন্থিতে বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি হয় এবং এখানে কোন রোগ বাসা বাঁধলে সেখান থেকে বিভিন্ন লক্ষণ প্রকাশ পেতে থাকে। প্রোস্টেট এর রোগ গুলোর মধ্যে অত্যন্ত কমন হল , প্রোস্টেট বড় হওয়া , প্রস্টেটে চর্বি জমা , প্রোস্টেট ক্যান্সার ইত্যাদি। অনেকেই প্রোস্টেট রোগের লক্ষণ গুলো জানেন না আর এই কারণেই এই লক্ষণগুলোকে শুরুর দিকে স্বাভাবিকভাবে নেন আর যার ফলে রোগ বিস্তার লাভ করতে থাকে এবং জটিল হতে থাকে।তাই জেনে নিন প্রোস্টেট রোগের লক্ষণ গুলো।

কোন কারণে প্রশ্নের আক্রান্ত হলে প্রধানত প্রসাবের সমস্যা হয়ে থাকে যেমন- প্রস্রাবের শুরুতে সুবিধা হওয়া, প্রসাব আটকে রাখতে পারা যাবেনা।রাতে বার বার প্রসাবের বেগ হবে ,প্রসাব ঘন ঘন হবে ,প্রস্রাব ক্লিয়ার হবেনা।প্রস্রাব শেষের দিকে ফোঁটা ফোঁটা আকারে বের হবে, প্রস্রাব করার সময় হঠাৎ থেমে গিয়ে আবার প্রসাব হয়,অনেক সময় প্রসাবের সাথে রক্ত যেতে পারে,প্রসাব আস্তে আস্তে বের হয়,প্রস্রাবের সময় ব্যাথা অনুভব হয়,প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া করা,কিডনি কার্যক্ষমতা কমে যাওয়া ,বীর্জ বের হওয়ার সময় ব্যাথা এবং যন্ত্রনা হওয়া।

প্রোস্টেট নরমাল সাইজ

এখন আমরা জানবো প্রস্টেট নরমাল সাইজ।অনেকেই হয়ত জানেন না প্রস্টেট নরমাল সাইজ কত , তাই আজ আপনাদের এ বিষয়টি ক্লিয়ার করে জানাব। শিশুকালে প্রোস্টেট একটি মটরের দানার সমান থাকে , এবং এটি বয়সের সাথে সাথে বাড়তে থাকে। স্বাভাবিক প্রোস্টেট চওড়ায় ৪ সে.মি এবং লম্বায় ৩ সে.মি হয়ে থাকে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের প্রোস্টেট এর ওজন হয় ২০ গ্রাম।

প্রস্টেট বড় হওয়ার কারণ

প্রস্টেট বড় হলে ইউরিন রিলেটেড বিভিন্ন ধরনের অসুবিধা হয়ে থাকে। বয়সে সাথে সাথে সকল পুরুষেরই প্রোস্টেট গ্ল্যান্ড বেড়ে যায় কিন্তু কারো কারো ক্ষেত্রে এর লক্ষণ গুলো প্রকাশ পায় আর কারো ক্ষেত্রে প্রস্টেট বড় হওয়ার লক্ষণ গুলো সেভাবে প্রকাশ পায়। কিন্তু প্রশ্ন হল প্রস্টেট বড় হওয়ার কারন কি ? অনেকেই হয়তো জানেন না এই বিষয়টি , তাই চলুন আজকে জেনে নিন প্রস্টেট বড় হওয়ার কারণ। বয়সের সাথে সাথে কিছু হরমোনাল চেঞ্জ এর কারনে প্রধানত পোস্টেট গ্ল্যান্ড বড় হয়ে থাক। প্রোস্টেটের কোষগুলো বেড়ে গিয়ে মূত্রনালীর চারিদিকে চাপ সৃষ্টি করে আর যার ফলে প্রোস্টেট বড় হলে প্রস্রাবের সমস্যা হয়। এছাড়াও শরীরের মেদ জমার কারণে বা প্রস্টেট গ্ল্যান্ডে চর্বি জমার কারণেও প্রস্টেট বড় হয়ে থাকে।

প্রোস্টেট বড় হওয়ার লক্ষণ

বয়সের সাথে সাথে পুরুষদের প্রোস্টেট গ্ল্যান্ড বড় হতে শুরু করে এবং একসময় পোস্টেট গ্ল্যান্ড বড় হওয়ার কারণে বিভিন্ন অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়।প্রোস্টেট গ্ল্যান্ড  এর বৃদ্ধিকে মেডিকেল সাইন্সে বলা হয়ে থাকে Benign prostatic hyperplasia আর প্রোস্টেট বড় হওয়া এক ধরনের রোগ হিসেবে ধরা হয়। ৪০-৫০ বছর বয়সী পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রোস্টেট বড় হওয়ার সমস্যাটি খুবই কমন, তাই যাদের বয়স ৪০ বা তার বেশি তাদের সকলেরই জেনে রাখা উচিত প্রোস্টেট বড় হওয়ার লক্ষণ। শুরু থেকে প্রোস্টেট বড় হওয়ার চিকিৎসা না করলে দিনে দিনে এটি জটিল আকার ধারণ করতে পারে, তাই সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু করার জন্য জেনে নিন প্রোস্টেট বড় হওয়ার লক্ষণ গুলো।

আরো পড়ুনঃ হার্টের সমস্যার লক্ষণ

  • প্রোস্টেট বড় হলে প্রসাব আটকে রাখা যায়না।
  • রাতে বার বার প্রসাবের বেগ হয়
  • প্রোস্টেট গ্ল্যান্ড বড় হলে,প্রসাব ঘন ঘন হবে 
  • প্রস্রাব ক্লিয়ার হবেনা।
  • প্রস্রাব শেষের দিকে ফোঁটা ফোঁটা আকারে বের হবে
  • প্রস্রাব করার সময় হঠাৎ থেমে গিয়ে আবার প্রসাব হয়
  • অনেক সময় প্রসাবের সাথে রক্ত যেতে পারে
  • প্রসাব আস্তে আস্তে বের হয়
  • প্রস্রাবের সময় ব্যাথা অনুভব হয়
  • প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া করা
  • কিডনি কার্যক্ষমতা কমে যাওয়া

প্রোস্টেট ভাল রাখার উপায়

প্রোস্টেট সমুস্যা গুলোর মধ্যে একটি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ৪০ পার হওয়ার পরেই প্রোস্টেট সমস্যাগুলো বাড়তে দেখা যায়। তাই প্রতিটি পুরুষের প্রোস্টেট ভাল রাখার উপায় গুলো জেনে রাখা ভালো।কিন্তু অনেকেই প্রোস্টেট ভাল রাখার উপায়গুলো জানেন না ,তাই এখন আপনাদের জানাবো প্রোস্টেট ভাল রাখার উপায় সম্পর্কে।

লাইকোপেন জাতীয় খাবার ঃ প্রোস্টেট ভাল রাখাতে হলে আমাদেরকে প্রচুর পরিমানে লাইকোপেন জাতীয় খাবার গুলো খেতে হবে। লালা রঙের ফল এবং সব্জিতে প্রচুর লাইকোপেন থাকে ,তাই এ জাতীয় খাবার গুলো খাদ্য তালিকাতে যুক্ত করতে হবে।

টমেটো ঃ শীতকালে প্রচুর পরিমানে টমেটো পাওয়া যায় , বর্তমানে শুধু শীতকালেই নয় সারা বছরই , আমরা আমাদের হাতের কাছে টমেটো পেয়ে থাকি ।প্রোস্টেট ভালো রাখতে আমরা কাজে লাগাতে পারি টমেটোকে। টমেটোর ভেতরে অন্যান্য উপাদানের পাশাপাশি রয়েছে প্রচুর পরিমাণে লাইকোপেন , যেটি প্রোস্টেট ভালো রাখতে বিশেষ সাহায্য করে। তাই প্রোস্টেট ভাল রাখতে বিভিন্ন ভাবে টমেটো টমেটো খাওয়ার চেষ্টা করুন। তবে কাঁচা টমেটো চেয়ে , রান্না করার টমেটোর পুষ্টিগুণ বেড়ে যায় এই কারণে বিভিন্ন রেসিপিতে টমেটো এড করার চেষ্টা করুন।

লালাশাকঃ লাইকোপেনের আরেকটি বড় উৎস হলো লালাশাক। লাল শাক খুব সহজে এবং সুলভমূল্যে পেতে পারি তাই প্রোস্টেট ভালো রাখতে খাদ্য তালিকায় লাল শাক রাখার চেষ্টা করুন।লালশাক আপনার প্রোস্টেট সমস্যা দূর করার পাশাপাশি প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধ করতেও সাহায্য করবে।

বেরি জাতীয় ফল ঃ বেরি জাতীয় ফল গুলোও প্রোস্টেট ভালো রাখতে বিশেষ সাহায্য করে। তাই দেশী বেরিইর সাথে সাথে বিদেশী বিভিন্ন বেরি জাতীয় ফল গুলো খাওয়ার চেষ্টা করুন এতে আপনার প্রোস্টেট ভালো থাকবে ,এবং প্রোস্টেটের বিভিন্ন সমস্যা দূর হবে।

আরো পড়ুনঃ পাইলসের কারণ ও লক্ষণ

সুগার জাতীয় খাবার এভোয়েড করাঃ ফ্যাট শরীরের যেকোন অংশেই জমতে পারে ,পুরুষের প্রোস্টেটও এর বাইরে নয়।সুগার জাতীয় খাবারগুলো এ কারনে এড়িয়ে চলতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে শরীরে যেন অতিরিক্ত কোলেস্ট্রোল না জমে। কারণ প্রোস্টেট এ কোলেস্টেরল জমলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়।

সঠিক সময়ে ইউরেন পাস করাঃ সঠিক সময়ে ইউরিন পাস না করা বা প্রস্রাব চেপে রাখা প্রোস্টেট এর জন্য খুবই ক্ষতিকর। এ কারণে প্রোস্টেট ভালো রাখতে যথাসময়ে ইউরিন পাস করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের প্রতিদিন যাতে দিনে ৭-৮ বার প্রস্রাব হয় এই পরিমাণ পানি পান করতে হবে প্রস্টেট ভাল রাখার জন্য।

এছাড়াও প্রস্টেট ভালো রাখার জন্য প্রস্টেট ও ইউরিন সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যায় অবহেলা না করে দ্রুত ইউরোলজিস্ট এর শরণাপন্ন হন এবং পর্যাপ্ত পানি ও পরিমিত ঘুমের ব্যবস্থা করুন।প্রস্টেট ভালো রাখতে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ হাটাহাটি বা শরীর চর্চা করার চেষ্টা করুন ।আশা করছি প্রস্টেট ভাল রাখার উপায় গুলো বুঝতে পেরেছেন।

প্রোস্টেট ভাল রাখার খাবার

পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রোস্টেট সমস্যা যেহেতু খুবই কমন এ কারণে প্রোস্টেট এর সমস্যার ব্যাপারে অত্যন্ত সচেতন থাকা উচিত। বিশেষ করে বয়স ৪০-৪৫ পার হলে নজর দিতে হবে প্রোস্টেট ভালো রাখার খাবার এর ব্যাপারে , খাদ্য তালিকায় প্রোস্টেট ভালো রাখার খাবার গুলো যুক্ত করতে হলে অবশ্যই জানতে হবে কোন খাবারগুলোতে প্রোস্টেট ভালো থাকে। কোথায় আজকে আমরা প্রোস্টেট ভালো রাখার খাদ্য গুলোর নাম জানবো। প্রস্ট্রেট ভালো রাখতে লাইকোপ্যান জাতীয় খাবার গুলো বিশেষ উপকারী।লাইকোপেন এর পাশাপাশি আরও বেশ কিছু খাবার প্রস্টেট ভালো রাখতে সাহায্য করে পাশাপাশি।প্রোস্টেট ভাল রাখার খাবার গুলো হলো

  • টমেটো
  • লাল শাক
  • ছোলা
  • গাজর
  • মিষ্টি আলু
  • বিট
  • কুমড় বীজ
  • তিলের বীজ
  • মেথি বীজ
  • ব্রকলি
  • ফুলকপি
  • আনার/ডালিম
  • খেজুর
  • আপেল
  • চেরি
  • ব্লু বেরি
  • ট্রবেরি

এছাড়াও প্রোস্টেট ভাল রাখাতে হলে ফুল ক্রিম দুধ , রেডমি ,ফাস্টফুড , ফ্যাট যুক্ত খাবার , ধূমপান , অ্যালকোহল , অতিরিক্ত চিনি যুক্ত খাবার গুলো কম খেতে হবে।

আরো পড়ুনঃ ফুসফুস ক্যান্সারের কারণ

মন্তব্য , এই পোস্টটি ভালোভাবে পড়ার মাধ্যমে এতক্ষণে নিশ্চয়ই প্রোস্টেট সম্পর্কে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এবং প্রোস্টেট রোগের লক্ষণগুলো জেনে নিয়েছেন।প্রোস্টেট  এর ব্যাপারে অবহেলা না করে অবশ্যই যথাসময়ে ডাক্তারি শরণাপন্ন হন এবং প্রোস্টেট ভালো রাখতে লাইকোপেন জাতীয় খাবার গুলো খাদ্য তালিকায় যুক্ত করি। কোন সমস্যাই ছোট বলে অবহেলা করা নয় কারণ , আপনার অবহেলার কারণে শারীরিক সামান্য জটিলতাও বড় আকার ধারণ করতে পারে। তাই যেকোন অসুখের ক্ষেত্রে শুরু থেকেই সচেতন হন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url