নাক বন্ধ হলে করনীয় - নাকের সর্দি কমানোর উপায়

সর্দি হল অত্যন্ত অস্বস্তিকর এবং বিব্রত কর একটি পরিস্থিতি। আমাদেরকে অনেক সময়ই না চাইলেও এই অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়, সর্দির কারণে নাক দিয়ে পানি ঝরা সহ আরো একটি সমস্যায় পড়তে হয় সেটি হল নাক বন্ধ হওয়া। আর আজকে আপনাদেরকে এই দুই সমস্যারই সমাধান জানাবো। আজকে আপনারা জানতে পারবেন নাক বন্ধ হলে করণীয় এবং নাকের সর্দি কমানোর উপায় সম্পর্কে।
আবহাওয়া পরিবর্তন সহ বেশ কিছু কারণে হতে পারে সর্দির সমস্যা। আর সর্দিতে আক্রান্ত হলে বেশ কয়েকদিন আমাদেরকে কাটাতে হয় অস্বস্তিকর পরিস্থিতি। সর্দি লাগলে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয় সে সকল মানুষদেরকে যারা অফিস আদালত অথবা ঘরের বাইরে কাজ করেন। তাহলে চলুন আর দেরি না করে পোস্টটি শুরু করা যাক এবং জেনে নেওয়া যাক নাকের সর্দি ও নাক বন্ধের সমস্যা গুলোর সমাধান।

সূচিপত্রঃ নাক বন্ধ হলে করনীয় - নাকের সর্দি কমানোর উপায়

নাক বন্ধের কারণ

নাক বন্ধের সমস্যায় অনেকেই ভূগে থাকেন বিভিন্ন সময়। কিন্তু নাক বন্ধের কারণ সম্পর্কে আপনারা কি জানেন? কি কারনে হয় না বন্ধ? এখন আপনাদের জানাবো এই বিষয়টিই। নাক বন্ধের কারণ থাকতে পারে একটি নয় একাধিক। সাধারণভাবে ঠান্ডা লাগার কারণে সর্দি হলে নাকের ভেতরে শ্লেষ্মা জমার কারণে নাক বন্ধ হওয়া ছাড়াও নাক বন্ধের কারণ হতে পারে এলার্জি , যাদের নাকের এলার্জি রয়েছে তাদের ক্ষেত্রেও প্রায় প্রায় নাম বন্ধ হওয়ার সমস্যা দেখা যায়।
এছাড়াও নাক বন্ধের পেছনে সাইনাসের হাত থাকতে পারে অথবা দীর্ঘদিন ধরে সর্দি লাগার কারণে নাকে পলিপাস বা পলিপ তৈরি হতে পারে।সাধারণত এই কারণগুলোর জন্যই বেশিরভাগ সময় নাক বন্ধ হওয়ার সমস্যা হয়ে থাকে ,তবে আরো একটি কারনে সবসময় নাক বন্ধের সমস্যা হতে পারে আর সেই কারণটি হল - নাকের হাড় বাঁকা থাকলে নাক সবসময় বন্ধ থাকে , এবং এই সমস্যাটি সমাধান করার জন্য ছোট্ট একটি সার্জারির প্রয়োজন হয়।

নাকের সর্দি কমানোর উপায়

যারা ঘরের বাইরে কাজ করেন তাদের ক্ষেত্রে সর্দি হল বেশ জটিল একটি সমস্যা, কারণ লাগলে নাক দিয়ে অনবরত পানি পড়ে যার ফলে বাইরের মানুষের সাথে কথাবার্তা বলার সময় একটি বিব্রত কর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। আর এ সমস্যা থেকে সমাধানের জন্যই এখন আপনাদেরকে জানাবো নাকের সর্দি কমানোর উপায় সম্পর্কে। নাকের সর্দি কমানোর কার্যকরী উপায় গুলো হলো নিম্নরূপ।
ভিটামিন সিঃ সর্দির সংক্রামণ কমানোর জন্য ভিটামিন সি জাতীয় ফল গুলো খুবিই উপকারি।আপনি যদি দ্রুত সর্দি কমাতে চান তাহলে বেশি বেশি ভিটামিন সি জাতীয় ফল গুলো খেতে হবে।ভিটামিন সি সর্দি সারাতে এবং সর্দির সংক্রমণ রোধ করতে সাহায্য করে।
সরিষার তেলঃ সর্দি-কাশি এবং ঠান্ডা লাগার সমস্যা কমাতে সরিষার তেলের বিকল্প খুব কমই রয়েছে। সরিষার তেলের ভেতরে রসুন কুচি দিয়ে গরম করে , এই গরম তেলটি সহনীয় পর্যায়ে আসলে কপালে , বুকে , পিঠে এবং হাত-পায়ের তালুতে ভালোভাবে মালিশ করলে, খুব অল্প সময়ের মধ্যে সর্দি কমে যায়।
মধুঃ সর্দি কমাতে মধু খান। শুধু সর্দি নয় ঠান্ডা লাগা জনিত কাশি কমাতেও বিশেষভাবে সাহায্য করে মধু।হালকা গরম পানিতে মধু মিশিয়ে অথবা আদা চা কিংবা লেবু চাইয়ের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে সর্দির সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
লেবুর রস বা চাঃ সর্দির অস্বস্তিকর পরিস্থিতি থেকে দ্রুত মুক্তি পাওয়ার জন্য ঘন ঘন পান করতে পারেন লেবু চা। লেবুর ভেতরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকায় লেবু চা সর্দি কমাতে সাহায্য করবে। শুধু লেবু চা নয় পান করতে পারেন লেবু পানিও।
আদা চা বা আদার রসঃ আদা হলো সর্দি কমানোর অব্যর্থ ঘরোয়া ঔষধ। সর্দি কমাতে খান আদা চা বা আদার রস। এন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান থাকায় নাকের ঝিল্লির প্রদাহ কে কমিয়ে শ্লেষ্মা দূর করে ,আর এ কারনে আদার রস বা আদা চা পান করলে দ্রুত সর্দি কমে যায়।
ক্যামোমাইল চাঃ সর্দি কমাতে পান করতে পারেন ক্যামোমাইল চা , এই চা সর্দি সহ ঠান্ডা লাগা জনিত যে কোন সমস্যা দূর করতে দ্রুত কাজ করতে পারে। আপনারা জানেন মূলত সর্দির পেছনের উল্লেখযোগ্য কারণ হলো শ্বাসনালীতে ভাইরাসের সংক্রমণ ,আর শ্বাসনালীর সংক্রমণ রোধেও বিশেষ সহায়তা করে ক্যামোমাইল চা। ক্যামোমাইল চা পানির ফলে খুব দ্রুত সর্দির অস্বস্তিকর পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়।
তুলসী পাতাঃ ঠান্ডা লাগার সমস্যা দূর করার পাশাপাশি সর্দি সারাতে তুলসী পাতার রস কতটা উপকারী তা হয়তো নতুন করে আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সর্দি সারানোর জন্য বহুকাল আগে থেকে ব্যবহার হয়ে আসছে তুলসী পাতা,
পুদিনা পাতাঃ পুদিনা পাতাই রয়েছে মেন্থলের গুন। পুদিনা পাতাও সর্দি কমাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে। সর্দি কমানোর জন্য পুদিনা পাতা রস হিসেবেও খেতে পারেন আবার এই পাতা দিয়ে চা তৈরি করেও খেতে পারেন।
গরম পানির ভাপ নেয়াঃ সর্দি কমানোর জন্য গরম পানির ভাপ নিন। গরম পানির ভাপ নিলে নাক দিয়ে পানি পড়ার সমস্যা অনেক কমে যায়। তাই সর্দি কমাতে ব্যবহার করুন গরম পানির ভাব এবং অতি দ্রুত ও ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য এই পানিতে ব্যবহার করতে পারেন কয়েকটি কেমোমাইল ফুল অথবা কয়েক ফোটা টি-ট্রি অয়েল।
কালোজিরাঃ কালোজিরা মধ্যে যে আশ্চর্য ঔষধি গুন গুলো রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সর্দি কাশি সারানোর উপকারিতাও ।সর্দি কমানোর জন্য কালোজিরার সাথে তুলসীর রস এবং মধুর একসাথে খেলে উপকার মেলে ।

নাক বন্ধ হলে করনীয়

ঘরোয়া বেশ কিছু উপকরণ এবং টিপস রয়েছে যেগুলো ফলো করার মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই নাক বন্ধের সমস্যা দূর করতে পারেন। এবার আপনাদেরকে নাক বন্ধের সমস্যা দূর করার সেই টিপস গুলোই জানাবো। তাহলে চলুন আর দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক নাক বন্ধ থাকলে কোন টিপসগুলো ফলো করলে খুব দ্রুত এই সমস্যার সমাধান পাওয়া যায়, নাক বন্ধের সমস্যা দূর করার জন্য ব্যবহার করুন,
পুদিনা পাতার রসঃ নাক বন্ধ থাকলে ব্যবহার করতে পারেন পুদিনা পাতার রস। পুদিনা পাতার রস খাওয়া ছাড়াও এই পাতা দিয়ে চা বানিয়ে খেলে অথবা পুদিনা পাতার একফোঁটা রস নাকের ভেতরে দিলে নাকের বন্ধ ভাব সেরে যায়।
কালোজিরার ঘ্রাণঃ কালোজিরার ঘ্রাণ নাক বন্ধ হওয়ার সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। ঠান্ডা লাগা জনিত কারণে যেকোনো কারণে নাক বন্ধ থাকে তাহলে একটি নরম কাপড়ে কালোজিরা নিয়ে সেটির ঘ্রাণ মিলে সহজেই নাক বন্ধ হওয়ার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
গরম পানিতে গোসলঃ নাক বন্ধ থাকলে সে ক্ষেত্রে হালকা গরম পানিতে গোসল করুন। কুসুম গরম পানিতে গোসল করলে নাকের বন্ধ ভাব দূর হবে এবং সর্দি কাশি কমাতেও এই গোসল অনেকটা সাহায্য করবে।
গরম পানির ভাপঃ গরম পানিতে কয়েকটি কেমোমাইল অথবা কয়েক ফোটা টি ট্রি অয়েল দিয়ে এই গরম পানির ভাব নিলে সর্দি কম হওয়ার পাশাপাশি নাক বন্ধ হওয়ার সমস্যা ও দূর হয়। আপনার কাছে যদি কেমমাইল অথবা টি ট্রি অয়েল না থাকে তাহলে শুধু গরম পানির ভাপ নিতে পারেন এতেও নাক বন্ধ হওয়ার সমস্যা দূর হবে। তবে মনে রাখবেন এই টিপসটি ফলো করার পরে বেশ কিছুক্ষন ফ্যানের বাতাস না খাওয়াই ভালো অন্ততপক্ষে ১৫ - ২০ মিনিট।
আদাঃ নাক বন্ধ দূর করতে পান করুন আদার রস অথবা আদা চা। আদা কুচি করে কেটে মধুর সাথে মিশিয়ে সরাসরি খেতে পারেন অথবা পান করতে পারেন আদা চা , তাহলে দ্রুত আপনার নাকের বন্ধ দূর হবে। তবে আদা চা এর পরিবর্তে সরাসরি আদা রস পান করলে খুব দ্রুত নাক বন্ধুই সমস্যা দূর হবে।
রসুনঃ শুধু আদায় নয় নাক বন্ধ থাকলে এই সমস্যা দূর করার জন্য রসুনও রাখতে পারে কার্যকরী ভূমিকা। রসুনের ভেতরেও রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য যা অন্যান্য প্রদাহ দূর করার পাশাপাশি সর্দির সমস্যা এবং নাক বন্ধের সমস্যা দূর করতেও সাহায্য করে। নাক বন্ধের সমস্যা দূর করার জন্য রসুন থেঁত করে পানিতে দিয়ে দশ মিনিট জ্বাল দিয়ে নিন , এবার এই পানিটি হালকা কুসুম গরম অবস্থায় পান করুন । এইভাবে রসুন ফোটানো পানি পান করলে খুব দ্রুত নাক বন্ধের সমস্যা দূর হবে।
তেজপাতাঃ তেজপাতার ভেতরে রয়েছে প্রবাহ নাশক বৈশিষ্ট্য , যা ঠান্ডা লাগার সমস্যা দূর করার পাশাপাশি নাক বন্ধের সমস্যা দূর করতেও সমান কার্যকরী। নাক বন্ধ থাকলে পরিমাণ মতো পানির ভেতরে কয়েকটি তেজপাতা টুকরো করে দিয়ে ১০-১৫ মিনিট পানি ফোটাতে থাকে। এরপর এই পানিটি ঠান্ডা হলে পান করুন । কয়েকবার পান করলে দেখবেন খুব দ্রুতই আপনার নাক বন্ধের সমস্যা দূর হয়ে গেছে।
সরিষার তেলঃ সরিষার তেল নাকের ছেদ্রের কাছে দিয়ে রাখলে এর ঝাঁঝালো ঘ্রাণ দ্রুত নাক বন্ধের সমস্যা দূর করে। নাকের ভেতরে এক ফোটা সরিষার তেল দিতে পারলে , এটি নাক বন্ধের সমস্যা দূর করার পাশাপাশি শ্বাসনালী পরিষ্কার করতেও সাহায্য করবে।
মন্তব্য , যদিও বাজারে বিভিন্ন ধরনের ঔষধ রয়েছে নাকের সর্দি কমানোর এবং নাক বন্ধ সারানোর। কিন্তু যেহেতু যেকোন মেডিসিনেরই কিছু কম বা কিছু বেশি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে এই কারণে ঔষধ সেবনের পূর্বে চেষ্টা করুন ঘরোয়া ভাবে সর্দি এবং নাক বন্ধের সমস্যা গুলো দূর করার। আশা করি আজকে কষ্টের মাধ্যমে দেখানো টিপস গুলো যদি আপনি সঠিকভাবে ফলো করতে পারেন তাহলে অবশ্যই এই সমস্যাগুলো কাটানোর জন্য ঔষধের প্রয়োজন পড়বে না , ঘরোয়া ভাবেই অল্প সময়ের মধ্যে সর্দি এবং নাক বন্ধের সমস্যা আপনারা দূর করে ফেলতে পারবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url