ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তির ২০টি উপায় - ফ্যাটি লিভারের ১২ লক্ষণ

বিশ্বব্যাপী মানুষের একটি বড় অংশ বর্তমানে লিভারে ফ্যাট জনিত রোগে আক্রান্ত। এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে দিন দিন এর পরিমাণ বেড়েই চলেছে। আর সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয় হলো লিভারের ফ্যাট জনিত সমস্যাগুলোই পরবর্তীতে একসময় লিভার সিরোসিসে রূপ নেয় , তাই ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ এবং ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তির উপায় গুলোর সম্পর্কে আমাদের সকলেরই জেনে রাখা উচিত।

ফ্যাটি লিভার সহ লিভারের বিভিন্ন রোগ গুলোর প্রাথমিক পর্যায়ে কোন লক্ষণ ভালোভাবে প্রকাশ পায় না বলে এই রোগগুলোকে বলা হয় নীরব ঘাতক যার সর্বশেষ পরিণতি হিসেবে দেখা দেয় মৃত্যু। তাই লিভার সিরোসিক থেকে বাঁচতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই ফ্যাটি লিভার সম্পর্কে সচেতন হতে হবে । শুধু এ বিষয়ে জানলেই হবে না পাশাপাশি ফ্যাটি লিভার হলে কি খাওয়া উচিত সেই সম্পর্কে জেনে নিয়ে খাদ্য তালিকা প্রস্তুতির সময় এই বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে। তাহলে চলুন আর দেরি না করে , ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তির উপায় ও ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ গুলো জেনে নেওয়া যাক। আজকে আপনাদের জানাবো ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তির ২০টি উপায় - ফ্যাটি লিভারের ১২ লক্ষণ।

সূচিপত্রঃ ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তির ২০টি উপায় - ফ্যাটি লিভারের ১২ লক্ষণ

ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ

অ্যালকোহলিক এবং নন অ্যালকোহল -ফ্যাটি লিভার সাধারণত এই দুই ধরনের হয়ে থাকে। অনেক সময় নিজের অজান্তেই ফ্যাটি লিভারের মতন রোগ শরীরে বাসা বাঁধে, কেননা লিভার বা এর মতন বড় বড় অর্গানগুলো আক্রান্ত হলে বেশিরভাগ সময় প্রাথমিক অবস্থাতে এসব রোগের কোন লক্ষণ প্রকাশ পায় না। ফ্যাটি লিভারের ক্ষেত্রেও এই সমস্যাটি হয়ে থাকে তবে বিশেষ একটি পর্যায়ে গিয়ে একে একে এসব রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে থাকে , এখন আপনাদের জানাবো ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ সম্পর্কে। কেননা ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ সম্পর্কে আপনাদের জানা থাকলে লিভারের ফ্যাট জমেছে কিনা এই বিষয়ে বুঝতে পারবেন এবং ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ জানা থাকলে এর লক্ষণ গুলো প্রকাশ পেলে থাকলে  দ্রুত লিভার বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে পারবেন। তাই যারা লিভারের সমস্যায় রয়েছেন বা যারা ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকিতে রয়েছেন তারা ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ গুলো জেনে রাখুন।

  1. খাদ্যে অরুচি আছে।
  2. বমি বমি ভাব হয়
  3. মাঝে মাঝে শরীর অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়া
  4. হাত - পায়ের , নখ এবং চোখ হলুদ হয়ে যায়
  5. গ্যাসের সমস্যা বা এসিডিটির সমস্যা বেড়ে যায়
  6. লিভারে ফ্যাটের মাত্রা বেশি হলে অনেকের পেট ফুলে যায়
  7. হাত পা ফুলে যাওয়া
  8.  লিভার স্থানে এবং পিঠের দিকে ব্যথা বা যন্ত্রণা অনুভব হওয়া
  9. শরীরের বিলুরুবিনের মাত্রা বেড়ে যায়
  10. পেট সবসময় ভারী লাগে
  11. লিভার শক্ত হয়ে যাওয়া
  12. ত্বকে লাল দাগ বা ছোপ দেখা দেওয়া

ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তির উপায়

আগেই বলেছি যে, শুরুর দিকে ফ্যাটি লিভার রোগের কোন উপসর্গ বা লক্ষণ থাকে না এই কারণেই সেটিকে নীরব ঘাতক বলা হয়। বিভিন্ন লক্ষণ দেখে যখনি আপনার মনে হবে বা আপনি আশঙ্কা করবেন যে আপনি ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত হয়েছেন তখন দেরি না করে আপনি দ্রুত ডাক্তারি পরামর্শ নেবেন এবং কিছু নিয়মকানুন মেনে চলবেনা। তাহলে আসুন জেনে নেওয়া যাক ডাক্তার-ই পরামর্শের পাশাপাশি কোন কোন নিয়ম কানুন গুলো মেনে চললে আপনি ফ্যাটি লিভার থেকে সুস্থ থাকতে পারবেন। 
শুধুমাত্র রেজিস্টার ডাক্তারের দেওয়া ওষুধ খেয়ে ফ্যাটি লিভার নিয়ন্ত্রণ করা বা মুক্তি পাওয়া কোনভাবেই সম্ভব নয়। ফ্যাটি লিভার হওয়ার পরেও আপনি যদি সুস্থ থাকতে চান তাহলে রেজিস্টার ডাক্তারের দেয়া ওষুধের পাশাপাশি কিছু টিপস বা নিয়ম-কানুন আপনাকে ফলো করতে হবে। এই নিয়মকানুন গুলো যদি আপনি ঠিকমতন পালন করতে পারেন তাহলে ঔষধ ছাড়াও আপনি সুস্থ থাকতে পারবেন। ফ্যাটি লিভার হলে করণীয় বিষয়গুলো হলো,
  • খাবারের চিনি ও লবণ যত কম পারা যায় তত কম ব্যবহার করা
  • খাদ্য অভ্যাস পরিবর্তন করা
  • অনিয়মতান্ত্রিকভাবে না চলে নিয়ম তান্ত্রিক এবং রুটিন মাত্র চলা
  • প্রচুর ফল এবং শাকসবজি খাওয়া
  • যেসব খাবার খেলে লিভারের ফ্যাট কমই সেই জাতীয় খাবার খাওয়া
  • প্রতিদিন নিয়মিত কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটা
  • জিংক জাতীয় খাবার গ্রহণ করা
  • ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া
  • মিষ্টি জাতীয় খাবার পরিহার করা অথবা খুব অল্প পরিমাণে খাওয়া
  • শরীরের স্থূলতা কমানো
  • বিভিন্ন শারীরিক পরিশ্রম এবং হাটাহাটির মাধ্যমে শরীরকে ফিট রাখা
  • সহজে হজম হয়ে যায় এ ধরনের খাবার খাওয়া
  • একবারে বেশি না খেয়ে বারেবারে অল্প পরিমানে খাবার খাওয়া
  • পুষ্টিকর খাবার খাওয়া
  • পরিশ্রম এবং শারীরিক চাহিদা অনুযায়ী খাবার খেতে হবে অতিরিক্ত খাবার খাওয়া যাবেনা।
  • চর্বি ,ঘি ,মাখন জাতীয় খাবার না খাওয়া
  • ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া
  • অ্যালকোহল সেবন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা
  • ফ্যাটি লিভার রোগীদের সবচেয়ে বড় ঔষধ হলো নিয়মতান্ত্রিকভাবে চলাফেরা করা 
  • নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করা
আপনি যদি উপরে উক্ত নিয়ম কানুন গুলো মেনে চলতে পারেন তাহলে ফ্যাটি লিভার হওয়ার পরেও ওষুধ না খেয়েও আপনি মোটামুটি সুস্থ জীবন যাপন করতে পারেন।

ফ্যাটি লিভার হলে কি খাওয়া উচিত

ফ্যাটি লিভারের রোগীরা বেশ কিছু খাবার গ্রহণের মাধ্যমে তাদের লিভার থেকে অতিরিক্ত চর্বি ঝরিয়ে ফেলতে পারেন , কিছু কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো খেলে লিভার থেকে অতিরিক্ত চর্বি হয়ে যায় এর ফলে ফ্যাটি লিভারের রোগীরা সুস্থভাবে জীবন যাপন করতে পারে, ঔষধ এর উপর নির্ভরশীল না হয়ে আমরা যদি প্রাকৃতিকভাবে খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে লিভারের ফ্যাট কমিয়ে ফেলতে পারি তাহলে সেটি সবচেয়ে বেশি উপকার । কারণ ঔষধ কিনতে যেমন অনেক টাকা পয়সা খরচ হয় তেমন অন্যদিকে অতিরিক্ত ওষুধ গ্রহণের ফলে শরীরে অনেক জটিলতা বা অন্যান্য রোগের সৃষ্টি হতে পারে। তাই এবার জেনে নিন ফ্যাটি লিভার হলে কি খাওয়া উচিত বা কোন খাবার খাদ্য তালিকায় করলে ফ্যাটি লিভারের রোগীরা সুস্থ থাকতে পারেন বা লিভার থেকে ফ্যাট ঝরে যেতে সাহায্য করে,
কফিঃ কফি লিভারের চর্বি কমাতে কাজ করে, কপিতে থাকে ক্যাফেইন যা লিভারের এনজাইমের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। কিন্তু কফি খাওয়ার শর্ত হলো ,ফ্যাটি লিভারের রোগীদের দুধ ও চিনি ছাড়া ব্ল্যাক কফি খেতে হবে। আপনি যদি চিনি এবং দুধ দিয়ে কফি খান তাহলে লিভারের চর্বি কমানোর ক্ষেত্রে কফির কোনো উপকারিতা পাবেন না।
বাদামঃ বাদাম শরীরের মেদ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে । ফ্যাটি লিভারের রোগীরা নিয়মি ৫০% - ৬০% গ্রাম বাদাম খেলে শরীর থেকে দ্রুত মেদ ঝরে যাবে । কিন্তু অতিরিক্ত বাদাম শরীরে মেদ বা চর্বি সৃষ্টি করার অন্যতম কারণও হতে পারে। তাই ফ্যাটি লিভারের রোগীদের প্রতিদিন অল্প পরিমাণে বাদাম খাওয়া উচিত এতে তারা উপকার পাবেন।
গ্রিন টিঃ শরীরের মেদ কমানোর ক্ষেত্রে গ্রিন টি যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সেটি আমাদের কারোরই অজানা নয়। গ্রিন টি শরীরের মেদ কমাতে সাহায্য করে। চিনিমুক্ত গ্রিন টি গ্রহণ করলে দ্রুত শরীরের মেদ ঝরে যায়, যা ফ্যাটি লিভার রোগীদের সুস্থ থাকার একটি বড় কারণ।
অ্যাপেল সিডার ভিনেগারঃ লিভারের ফ্যাট কমানোর ক্ষেত্রে অ্যাপেল সিডার ভিনেগারের গুরুত্ব অপরিসীম। অ্যাপেল সিডার ভিনেগার শরীর এবং লিভার থেকে অতি দ্রুত অতিরিক্ত মেদ ঝরাতে বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
আপেলঃ আপেল সিডার ভিনেগার পাওয়া না গেলে বা খেতে না পারলে আপনি যদি প্রতিদিন অন্তত একটি করে আপেল খেতে পারেন তাতেও আপনি ফ্যাটি লিভারের রোগ থেকে সুস্থ থাকতে পারবেন। আপেল লিভারের কোষ গঠনে সাহায্য করে এবং লিভারের চর্বি কমাতেও ভূমিকা পালন করে।
টক দইঃ লিভারের ফ্যাট কমানোর উপকরণ হিসেবে আপনি টক দই খেতে পারেন করতে পারেন। প্রতিদিন কয়েক চামচ টক দই খেলে আপনার শরীরকে এই টক দই ফ্যাট মুক্ত রাখতে সাহায্য করবে।
তেতুলঃ আমরা সবাই জানি শরীরের মেদ কমাতে তেতুল বেশ কার্যকরী। তেতুল যেহেতু শরীরের মেদ কমায় তাই পরিমিত পরিমাণে তেতুল খেলে, ফ্যাটি লিভারের রোগীরা সুস্থ থাকতে পারে।
সবুজ শাকসবজিঃ সবুজ শাকসবজির মধ্যে পালং শাক এবং ব্রকলি ফ্যাটি লিভারের রোগীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ দুটি সবজি। এ সবজি দুটো লিভারের ফ্যাট জমতে বাধা প্রদান করে।
লাউঃ লাউ শরীরের চর্বি কমানোর জন্য উপকারী একটি সবজি। নিয়মিত খাদ্য তালিকায় লাউ রাখলে এটি শরীরের চর্বি কমাতে সাহায্য করে। লাউ একটি সহজপাচ্য খাবার হওয়ার কারণে, এটি ফ্যাটি লিভার রোগীদের একটি আদর্শ খাবার।
আখরোটঃ আখরোটে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা থ্রি পাওয়া যায়। ওমেগা থ্রি লিভারের ফাংশন কে উন্নত করতে সাহায্য করে
সূর্যমুখীর বীজঃ সূর্যমুখীর বীজ থেকে পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই। সূর্যমুখীর বীজে প্রচুর পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট ও থাকে, যা লিভারের রোগীদের সুস্থ থাকার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর কারণে রোগীদের রান্নার কাজে যদি সয়াবিন বা অন্য তেল বাদ দিয়ে সূর্যমুখী বীজের তেল খাওয়ানো যায় তাহলে, তাদের লিভার থেকে ফ্যাট কমানোর সম্ভাবনা থাকে।
অলিভ অয়েলঃ বিভিন্ন গবেষণা থেকে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে অলিভ অয়েল শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। আর শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকলে ফ্যাটি লিভার রোগটিও নিয়ন্ত্রণে থাকে। এই কারণে ফ্যাটি লিভারের রোগীদের অলিভ অয়েল খাওয়া উচিত।
অন্যান্যঃ ফ্যাটি লিভারের রোগীদের খাদ্য তালিকায় ফাইবার , ভিটামিন , মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার গুলো রাখার পাশাপাশি জিংক জাতীয় খাবার, দুধ , ডিম , প্রাকৃতিক উপায়ে চাষ করা নিয়মিত এবং পরিমিত পরিমানে খেলে ফ্যাটি লিভারের রোগীরা সুস্থ থাকতে পারে।
ফ্যাটি লিভার কি ভালো হয়
মন্তব্য, আপনারা জানেন বিশ্বের বিপুল সংখ্যক লোক মরণ ব্যাধি লিভার আক্রান্ত এবং লিভার সিরোসিস এর শেষ পরিণতি হল মৃত্যু আর এই লিভার পেছনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো ফ্যাটি লিভার। যেহেতু আজকে আপনারা ফ্যাটি লিভার  সম্পর্কে জেনেছেন তাই অবশ্যই আজই এই বিষয়ের সচেতন হন। আর কারো যদি ফ্যাটি লিভারের লক্ষণগুলো থেকে থাকে তাহলে দেরি না করে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারি পরামর্শ মোতাবেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার করার মাধ্যমে সঠিক চিকিৎসা শুরু করুন। কেননা সঠিক সময়ে চিকিৎসা গ্রহণ করলে ফ্যাটি লিভারের রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা যাই।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url