ফুসফুসে ইনফেকশন হলে করণীয় - ফুসফুসে ইনফেকশনের লক্ষণ

আমাদের শরীরে যতগুলো গুরুত্বপূর্ণ অর্গান রয়েছে তার মধ্যেও অন্যতম হলো ফুসফুস যাকে ইংরেজিতে Lung বলে। এই Lung বা ফুসফুস ভালো থাকাটা খুবই জরুরী কেন না এর মাধ্যমে আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রধান কাজটি সম্পন্ন হয়। কিন্তু প্রায় সময়েই আমাদের শরীরে এই গুরুত্বপূর্ণ অর্গানটি বিভিন্ন কারণে আক্রান্ত হয় আর ফুসফুসের সমস্যাগুলোর মধ্যে কমন একটি সমস্যা হল ফুসফুস ইনফেকশন, আর আজকে আমরা জানবো ফুসফুসে ইনফেকশন হলে করণীয় ও ফুসফুসে ইনফেকশনের লক্ষণ সম্পর্কে।

যেকোনো বয়সী মানুষই ফুসফুস ইনফেকশনে আক্রান্ত হতে পারে তবে বিশেষ করে শিশুরা এই সমস্যায় বেশি এবং খুব দ্রুত আক্রান্ত হয়ে থাকে তাই ফুসফুস ইনফেকশন এর ব্যাপারে সচেতন হওয়া এবং বিস্তারিত জেনে রাখা উচিত।ফুসফুস যেহেতু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সেনসিটিভ একটি অঙ্গ তাই সুস্থ অবস্থাতে তো এর ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে কিন্তু কোন কারণে যদি ফুসফুস ইনফেকশনে আক্রান্ত হয় তাহলে এই এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটির ব্যাপারে আরো বেশি সচেতন হতে হবে। কেননা সময় থাকতে যদি ফুসফুস ইনফেকশন এর ব্যাপারে সচেতন না হওয়া যায় তাহলে ক্ষেত্রে জটিল সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে

সূচিপত্রঃ ফুসফুসে ইনফেকশন হলে করণীয় - ফুসফুসে ইনফেকশনের লক্ষণ

ফুসফুসে ইনফেকশন কেন হয়

ফুসফুস আমাদের শরীরের অন্যতম প্রধান অঙ্গ , আর এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটির কাজ হল অক্সিজেন গ্রহণ করা এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড ত্যাগ করা। সঠিকভাবে শ্বাসকার্য পরিচালনা করা ছাড়াও ফুসফুসের রয়েছে আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ তবে এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটিতে অনেক সময় ইনফেকশন দেখা দেয়। ফুসফুসে ইনফেকশন হলো অত্যন্ত জটিল এবং মারাত্মক একটি সমস্যা। ফুসফুসের প্রদাহকে বলা হয় ফুসফুস ইনফেকশন। ফুসফুসে ইনফেকশন হওয়ার পেছনে রয়েছে ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণই হলো এর প্রধান কারণ , তবে ফুসফুস ইনফেকশন এর উল্লেখযোগ্য  আরেকটি কারণ হতে পারে ঠান্ডা লাগাও।

ঠান্ডা লাগা থেকে হতে পারে নিউমোনিয়া আর এই নিউমোনিয়া হলো ফুসফুস ইনফেকশনের অন্যতম প্রধান একটি কারণ। ঠান্ডা লাগা থেকে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে শিশু থেকে শুরু করে যে কোন বয়সী মানুষ। শুধু নিউমোনিয়ায় নয় ফুসফুস ইনফেকশন হতে পারে যক্ষা থেকেও। অনেক সময় আমরা দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা কাশিকে খুব একটা প্রাধান্য দেই না। দীর্ঘদিন চলতে থাকা কাশির ব্যাপারে যদি সচেতন না হওয়া যায় তাহলে এখান থেকে দেখা দিতে পারে ফুসফুস ইনফেকশনের সমস্যা।

আরো পড়ুনঃ ফুসফুস ক্যান্সারের কারণ ও লক্ষণ

এছাড়াও ফুসফুস ইনফেকশন হতে দেখা যায় ধূমপানের কারণে , অ্যালকোহল পান করার কারণে । বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে সাধারণ মানুষের তুলনায় যারা ধূমপান এবং অ্যালকোহল পান করে তাদের ভেতরে ফুসফুস ইনফেকশনের প্রবণতা বেশি থাকে, শুধু তাই নয় বায়ু দূষণের কারণেও ফুসফুস ইনফেকশন হতে পারে কারণ  দূষিত বায়ুতে শ্বাস-প্রশ্বাস নিলে সেখান থেকে বিভিন্ন ধরনের রোগ জীবাণু এবং ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া শরীরের ফুসফুসে প্রবেশ করে এবং সেখান থেকেই দেখা দেয় ফুসফুস ইনফেকশনের মতন সমস্যা।

ফুসফুসে ইনফেকশনের লক্ষণ

রোগ সৃষ্টিকারী অনুজীব গুলোকে ধ্বংস করতে দেহের রোগপ্রতিরোধী কোষ গুলো যখন ফুসফুস বা শ্বাসনালীতে প্রদানের সৃষ্টি করে তখন দেখা দেয় ফুসফুস ইনফেকশন আর ফুসফুস ইনফেকশন হলে সেগুলো প্রাথমিকভাবে বেশ কিছু লক্ষণের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। এই ফুসফুস ইনফেকশনের আক্রান্ত হতে পারে যেকোনো বয়সী মানুষ তাই ফুসফুস ইনফেকশনের লক্ষণ গুলো সম্পর্কে জেনে রাখা সকলের উচিত ।ফুসফুসে ইনফেকশন বা প্রদাহ দেখা দিলে যে সকল উপসর্গ বা লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় সেগুলো হলো ,

**

  • ফুসফুস ইনফেকশন এর অতি সাধারণ একটি লক্ষণ হল কাশি এই কাশি হতে পারে শুকনো অথবা উপযুক্ত
  • শুকনো কাশির সাথে  মৃদু অথবা তীব্র জ্বর থাকবে
  • শ্বাসকষ্ট
  • ফুসফুস ইনফেকশনের কারণে বিভিন্ন বর্ণের যেমন - হলুদ , হালকা লালচে অথবা সবুজ শ্লেষ্মা দেখা দিতে পারে।
  • শ্বাস নেয়ার সময় বাঁশির মতন শব্দ হয় এবং শ্বাস ছাড়ার সময়ও বুকের ভেতরে ঘড় ঘড় শব্দ হয়।
  • গলা ব্যথা 
  • বুকের ব্যথা
  • কোন কোন ক্ষেত্রে নাক বন্ধ থাকা
  • কাশির সাথে রক্ত আসা
  • শরীর ক্লান্ত ও দুর্বল অনুভব হওয়া
  • হাত ও পায়ের নখ ফুলে যাওয়া এবং হালকা বেগুনি রং ধারণ করা
  • অরুচি বা খাদ্যে অনীহা
  • মাংসপেসী ব্যাথা

ফুসফুসে ইনফেকশন হলে করণীয়

আমাদের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্গান হল ফুসফুস আর এই ফুসফুস কে বলা হয় শ্বাসযন্ত্র। এই শ্বাসযন্ত্র অর্থাৎ ফুসফুসে বিভিন্ন সময় রোগ সৃষ্টিকারী অনুজীব গুলোর সাথে লড়াইয়ের কারণে প্রদাহের সৃষ্টি হয়ে থাকে , আর আপনাদের আগে জানানো হয়েছে যে সময় মতন যদি ফুসফুস ইনফেকশনের চিকিৎসা না করানো হয় তাহলে সে ক্ষেত্রে জটিল সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।

**

ফুসফুসের যে কোন সমস্যা হলেই প্রথমেই সচেতন হতে হবে এবং লক্ষ্য করতে হবে যে সমস্যা বা অসুবিধা লক্ষণগুলো ফুসফুস ইনফেকশন এর সাথে মিলে কি না। বিভিন্ন লক্ষণ গুলো পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে যদি মনে হয় যে ফুসফুসে ইনফেকশন তাহলে যত দ্রুত সম্ভব রাস্তায় শরণাপন্ন হওয়া এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা গুলোর মাধ্যমে রোগের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া এবং ডাক্তারের সাজেশন মোতাবেক নির্দিষ্ট ঔষধ গুলো টাইম টু টাইম সেবন করা।

আরো পড়ুনঃ মাথা ব্যথা কোন রোগের লক্ষণ

ফুসফুস ইনফেকশন পেছনে মূলত তিনটি কারণ থাকে , যথা - ব্যাকটেরিয়া , ভাইরাস এবং ছত্রাক। ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয়ে ফুসফুস ইনফেকশন হলে এই ইনফেকশন দূর করার জন্য অবশ্যই এন্টিবায়োটিক এর প্রয়োজন হবে এবং এক্ষেত্রে অবশ্যই নির্দিষ্ট অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করতে হবে। কিন্তু যদি ফুসফুস ইনফেকশনের পেছনে ব্যাকটেরিয়াল কারণ না হয়ে ভাইরাল কারণ হয় তাহলে সে ক্ষেত্রে এন্টিবায়োটিক কোন কাজ করবে না।

আপনারা অনেকেই হয়তো জেনে থাকবেন যে ভাইরাসের বিরুদ্ধে এন্টিবায়োটিক কোন কাজ করে না আর বিভিন্ন সময় আমরা এ বিষয়টি না জানার কারণে বা ফুসফুসে ইনফেকশন হওয়ার পেছনের সঠিক কারণ না জানার কারণে এর থেকে ছেড়ে উঠতে অনেক দেরি হয়। এর মানে হলো , অনেক সময় দেখা যায় যে ফুসফুস ইনফেকশন সারানোর জন্য আমরা নিজেরাই আশেপাশে থাকা ফার্মেসি গুলো থেকে অ্যান্টিবায়োটিক নিয়ে সেগুলো সেবন করি কিন্তু হয়তো এমনও হতে পারে যে ফুসফুস ইনফেকশনের কারণ হলো ভাইরাস আর সেক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক কাজে আসে না তখন ইনফেকশন সেরে উঠতে অনেক সময় লেগে যায়। আর এই কারণেই ফুসফুস ইনফেকশন হলে সর্বপ্রথমে যে কাজটি করণীয় হবে সেটি হলো রেজিস্টার ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে ফুসফুস ইনফেকশন হওয়ার পেছনের কারণ উদঘাটন করা এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

**

যেহেতু ভাইরাস এর কারণে ফুসফুস ইনফেকশন হলে এন্টিবায়োটিক কাজ করবে না সেই ,কারণে যদি ভাইরাসের  কারনে ইনফেকশন হয়ে থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলার ব্যবস্থা করতে হবে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য অবশ্যই খাদ্যি খাওয়ারের উপরে বিশেষ নজর দিতে হবে কারণ ভাইরাস থেকে সেরে ওঠার জন্য শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হবে এবং এই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভাইরাসের সাথে লড়াই করার মাধ্যমে সাহায্য করবে।

ফুসফুস ইনফেকশন হলে ডাক্তারি পরামর্শ মোতাবেক নির্দিষ্ট ওষুধ গুলো সেবনের পাশাপাশি ঘরোয়াভাবে  কিছু টিপস এবং পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে। ফুসফুস ইনফেকশন হলে পর্যাপ্ত পানি পান , বিশ্রাম করার করতে হবে। ফুসফুস ইনফেকশন থেকে দ্রুত সেরে ওঠার জন্য আদা চা , আদা রস, মধু চা  , পুদিনা পাতার চা , গ্রিন টি , হলুদ ইত্যাদি খাবার গুলো খেতে বা পান করতে হবে কারণ এই খাবারগুলো ফুসফুস ভালো রাখতে বিশেষভাবে সাহায্য করে এবং এগুলোর ভেতরে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল, এন্টি ইনফরমেটরি উপাদান থাকায় ইনফেকশন কমাতে সাহায্য করবে পাশাপাশি ইনফেকশনের কারণে হওয়া শ্বাসকষ্ট , গলা ব্যথা , বুকে ব্যথা কমাতে সাহায্য করবে।

আরো পড়ুনঃ ফুসফুস ভালো আছে বোঝার উপায়

ফুসফুস ইনফেকশন হলে স্বাস্থ্যকর খাবার ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার ব্যাপারেও সচেতন হতে হবে এবং যাদের ধূমপান করার অভ্যাস আছে তাদের, ধূমপান সম্পূর্ণরূপে বর্জন করতে হবে কেননা ফুসফুসের ইনফেকশন বা এর যেকোনো সমস্যা হওয়ার অন্যতম একটি প্রধান কারণ হলো স্মোকিং বা ধূমপান। ধূমপান শুধু ফুসফুসের সমস্যা বা ইনফেকশনের জন্য দায়ী নয় বরঞ্চ ফুসফুস সম্পূর্ণরূপে নষ্ট বা অকার্যকর করে ফেলার জন্য যথেষ্ট , তাই অবশ্যই ফুসফুস ইনফেকশন হলে ধূমপান করা থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকতে হবে এবং ধূমপায়ীর সংস্পর্শও এড়িয়ে চলতে হবে।

মন্তব্য, শ্বাসযন্ত্র হিসেবে সব সময় আমাদের ফুসফুসের যত্ন নেওয়া উচিত এবং ফুসফুস খেয়ে ভালো রাখার চেষ্টা করা উচিত। ফুসফুস যদি ভালো না থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রে শরীরে সঠিকভাবে অক্সিজেন সরবরাহ হয় না যার কারণে শারীরিকভাবে একাধিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় এবং ধীরে ধীরে শরীর নিজের কার্যক্ষমতা হারিয়ে নিস্তেজ এবং দুর্বল হয়ে পড়ে যার ফলে বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগ গুলো খুব সহজেই শরীরে বাসা বাঁধতে পারে তাই আমাদের সকলেরই উচিত ফুসফুস সম্পর্কে সঠিক এবং পর্যাপ্ত জ্ঞান রাখা এবং ফুসফুসের যত্ন নেওয়া। আর ফুসফুস ভালো রাখার জন্য চেষ্টা করতে হবে অবশ্যই ধূমপান মুক্ত থাকা।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url