কাঠ বাদাম খাওয়ার নিয়ম - প্রতিদিন কয়টা কাঠবাদাম খাওয়া উচিত

Almond বা কাঠবাদাম নিঃসন্দেহে অনেক উপকারী হলেও অতিরিক্ত মাত্রায়  খেলে দেখা দিতে পারে শারীরিক জটিলতা। এছাড়াও আপনি যদি নিয়ম না মেনে রেনডম কাঠ বাদাম খেতে থাকেন তাহলে কতটুকু শারীরিক উপকারিতা পাবেন তা ভেবে দেখার বিষয় রয়েছে।

শারীরিক কোন জটিলতা ছাড়াই যদি কাঠবাদাম খাওয়ার উপকারিতা পেতে চান , তাহলে অবশ্যই কাঠবাদাম খাওয়ার পূর্বে এর ক্ষতিকর দিক , খাওয়ার নিয়ম এবং দৈনিক কয়টি করে কাঠ বাদাম খাওয়া যাবে সেই ব্যাপারে বিস্তারিতভাবে জেনে নিতে হবে। কারণ উপকারী হলেও নির্দিষ্ট নিয়মে এবং নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে বেশি কাঠ বাদাম খেলে কিছু ক্ষতিকর প্রভাব আমাদের শরীরের উপরে দেখা দিবে।

সূচিপত্রঃ কাঠ বাদাম খাওয়ার নিয়ম - প্রতিদিন কয়টা কাঠবাদাম খাওয়া উচিত

কাঠ বাদাম খাওয়ার নিয়ম

প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে কয়েকটি কাঠবাদাম ভালোভাবে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিবেন এরপর বাদামে পানি দিয়ে সারারাত ভিজিয়ে রাখুন সকালে পানিটা সহ বাদামগুলো খেয়ে ফেলুন এভাবে কাঠ বাদাম খেলে আপনারা সবচেয়ে বেশি উপকারিতা পাবেন। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে কাঠ বাদাম খোসা সহ খাওয়ার চেয়ে ভিজিয়ে রেখে খোসা ছাড়িয়ে খেলে এর উপকারিতা বেশি পাওয়া যায় , আর এ কারণে ডায়েটিশিয়ানরা কাঠবাদামের খোসা ছাড়িয়ে খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে। অনেক সময় দেখা যায় খোসা সহ কাঠ বাদাম খেলে এটি আমাদের পেটে এসিডিটির সমস্যা তৈরি করে।
কাঠবাদাম সরাসরি খাওয়া যেতে পারে অথবা বিভিন্ন খাবার , ডেজার্ট , ভর্তা ,কাঠবাদাম দিয়ে মিল্কশেক তৈরি করেও খাওয়া যেতে পারে। তবে কাঠবাদাম আপনি যেভাবে খান না কেন ভিজিয়ে রেখে খোসা ছাড়িয়ে খাওয়া উত্তম এবং এভাবে খেলে এর কার্যকারিতাও বেশি পাওয়া যায়। কাঠবাদাম খাওয়ার পূর্বে ৮ থেকে ১০ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে এবং এরপর উপরের খোসাটি ছাড়িয়ে নিয়ে খেতে হবে

প্রতিদিন কয়টা কাঠবাদাম খাওয়া উচিত

কাঠবাদাম খাওয়ার নিয়ম জানার পরে এবার প্রশ্ন এসে যায় , একদিনে আপনি কি আনলিমিটেড কাঠবাদাম খেতে পারবেন ? না , বিষয়টি মোটেই এমন নয়। দৈনিক কাঠবাদাম খাওয়ার একটা লিমিট বা মাত্রা রয়েছে । আর আপনি যদি দৈনিক মাত্রাতিরিক্ত কাঠবাদাম বা অন্যান্য যেকোনো বাদাম খেতে থাকেন তাহলে এর ফলে শরীরের ওপরে বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিবে এবং হতে পারে ডায়রিয়া।
দৈনিক খাদ্য তালিকায় আপনি ৪-৬ টি অথবা খুব বেশি হলে ৮-১০ কাঠবাদাম যুক্ত করতে পারেন। আপনি যদি আপনার খাদ্য তালিকায় শরীরের চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি কাঠ বাদাম বা অন্যান্য যেকোনো বাদাম জাতীয় খাদ্যযুক্ত করেন তাহলে সে ক্ষেত্রে পেটে এসিডিটি সহ , শ্বাসকষ্ট বেড়ে যেতে পারে এবং শরীরে বিষক্রিয়া দেখা দিতে পারে। সবচেয়ে ভালো হয় দৈনিক কাঠবাদাম খাওয়ার পূর্বে অথবা খাদ্য তালিকায় যুক্ত করার পূর্বে একজন ভালো ডায়েটেশিয়ানের পরামর্শ গ্রহণ করা কারণ আপনার বয়স এবং শারীরিক পুষ্টি চাহিদা চেয়ে বেশি পরিমাণে কাঠ বাদাম খেতে থাকেন তাহলে শারীরিকভাবে নানান জটিলতার সম্মুখীন হতে পারে না।

কাঠ বাদাম খেলে কি হয়

কাঠবাদাম যে বিভিন্ন খাবারে স্বাদের একটি নতুন মাত্রা যুক্ত করে তা তো আমরা সবাই জানি। কিন্তু শুধু খাবারের স্বাদকে বাড়িয়ে তুলতে নয় বরঞ্চ শরীর সুস্থ রাখার প্রায় সকল ক্ষেত্রেই রয়েছে কাঠবাদামের পুষ্টিগুণের অবদান। নিয়মিত ভাবে যদি নির্দিষ্ট পরিমাণে কাঠ বাদাম খাওয়া শুরু করেন তাহলে শরীর , স্কিন , চুল সবকিছুই সুস্থ করে রাখতে পারবেন খুব সহজে। যদি নিয়মিত চার থেকে ছয়টি কাঠবাদাম ভিজিয়ে রেখে খোসার ছাড়িয়ে সকালে খাওয়ার অভ্যাস করেন তাহলে শরীরে যে যে সমস্যা গুলো দূর করতে পারবেন তার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো,
  • শরীরের পুষ্টি ঘাটতি দূর হবে
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে
  • বেশি শক্তি বৃদ্ধি পাবে
  • ব্রেন ডেভেলপ করবে
  • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে
  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে
  • ডাইজেস্টিভ সিস্টেম উন্নত হবে
  • কোষ বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে
  • ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করবে
  • দাঁতও হাড় ভালো থাকবে
  • অস্টিওপোরোসিস রোগের সম্ভাবনা কম হবে
  • শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল কমবে এবং ভালো কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পাবে
  • হার্ট ভালো থাকবে
  • স্ট্রোক করার ঝুঁকি কম থাকবে
  • দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পাবে
  • ক্যান্সার প্রতিরোধ করবে
  • শিশুর জন্মগত ত্রুটি দূর হবে
  • মেনোপোজ কালীন সমস্যা দূর হবে
  • শুক্রাণুর গুণগত মান বৃদ্ধি পাবে
  • যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে
  • অ্যানিমিয়া রোগ দূর হবে
  • অনিদ্রা দূর করবে
  • শরীরের বিভিন্ন প্রদাহ দূর করতে সাহায্য করবে
  • বয়সের ছাপ দূর হবে
  • ত্বক গ্লোয়িং এবং সুন্দর হবে
  • চুল মজবুত , ঘন , স্বাস্থ্যজ্জাল হবে

কাঠ বাদামের ক্ষতিকর দিক

নিয়মিতভাবে কাঠবাদাম খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই জেনে নেওয়া উচিত কাঠ বাদামের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে কারণ নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত কাঠ বাদাম খেলে দেখা দিতে পারে বিশেষ কিছু শারীরিক জটিলতা। যাদের বাদাম খেলে এলার্জির প্রবণতা বেড়ে যায় তারা যদি কাঠবাদাম খায় তাহলে সে ক্ষেত্রে ত্বকে চুলকানি সহ স্কিনের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে পাশাপাশি এলার্জির কারণে হতে পারে শ্বাসকষ্ট।
যারা ভিটামিন ই এর সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করে তাদের ক্ষেত্রে কাঠ বাদাম না খায় ভালো কারণ যেহেতু একদিকে ভিটামিন ই সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করছে এবং অপরদিকে কাঠ বাদাম থেকেও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ পাওয়া যায় তাই , এ অবস্থায় কাঠবাদাম খেলে দেখা যাবে ভিটামিন ই মাত্রা অতিরিক্ত হয়ে যাবে এবং এর কারণে মাথাব্যথা , ডায়রিয়া , উইকনেস , দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যার সৃষ্টি হবে।
কাঠ বাদামে যথেষ্ট পরিমাণে ম্যাঙ্গানিজ থাকায় যারা উচ্চ রক্তচাপের ঔষধ সেবন করেন তাদের ক্ষেত্রে ঔষধের কার্যকারিতা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়াও ম্যাঙ্গানিজ এন্টিবায়োটিক এর কার্যকারিতা নষ্ট করে দিতে পারে তাই যারা এন্টিবায়োটিক অথবা উচ্চ রক্তচাপের ঔষধ সেবন করেন তারা কাঠ বাদাম খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন , অন্যথায় কাঠবাদামের ভেতরে থাকা উপাদান গুলো ওষধের কার্যকারিতা নষ্ট করে দিতে পারে যার কারণে অসুখ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে।
যদিও নির্দিষ্ট মাত্রায় কাঠ বাদাম খেলে এটি আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে, তবে মনে রাখবেন অতিরিক্ত মাত্রায় কাঠবাদাম খাওয়ার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দিতে পারে যদি আপনি বেশি কাঠবাদাম খাওয়ার পরে পর্যাপ্ত পানি পান না করেন। আবার বেশি পরিমাণে কাঠবাদাম খাওয়ার কারণে পেটে এসিডিটি হওয়ার ফলে বমি বমি ভাব সহ ডায়রিয়াও হতে পারে।
নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণে কাঠ বাদাম খেলে , এর কারণে আমাদের শরীরে টক্সিসিটি উৎপন্ন হতে পারে , আর এর কারণ হলো কাঠ বাদামে রয়েছে হাইড্রোকার্বন এসিড। আর শরীরে হাইড্রোকার্বন এসিডের মাত্রা বেশি হয়ে গেলে নার্ভ এর জটিলতা সহ শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে রুগীকে মৃত্যু পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে।
ছাড়াও আপনি যদি বেশি পরিমাণে কাঠবাদাম খাওয়া শুরু করেন তাহলে , কাঠবাদামে থাকা ফ্যাট এবং ক্যালোরির শরীরে বেশি পরিমাণে জমা হয়ে ওজন কমার পরিবর্তে ওজন বেড়ে যেতে পারে। অতিরিক্ত কাঠবাদাম খাওয়ার ফলে পেটে এসিডের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে এবং যার কারণে হজম শক্তি কমে যাওয়ারও সম্ভাবনা থাকে।
আপনি যদি ভুলবশত নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণে কাঠবাদাম খেতে থাকেন , তাহলে আপনার কিডনির সমস্যাও তৈরি হতে পারে। অতিরিক্ত কাঠবাদাম খাওয়ার ফলে কিডনিতে পাথর তৈরি হতে পারে এবং কিডনি সম্পূর্ণরূপে অকেজ হয়ে যেতে পারে।
মন্তব্য, সব কিছুরই যেহেতু ভালো-মন্দ দুইটি দিক রয়েছে তাই শুধু ভালো দিক দেখে ইম্প্রেস হলেও চলবে না আবার খারাপ দিক চিন্তা করে ভয় পেলেও চলবে না। যে কোন কিছু খাওয়ার পূর্বেই অবশ্যই এর ভালো দিক এবং মন্দ দিক সঠিকভাবে জেনে নিতে হবে এবং নির্দিষ্ট পরিমাণে বা নির্দিষ্ট মাত্রায় খেতে হবে। আমাদের শরীরের পুষ্টি চাহিদা যেহেতু বয়স এবং শরীর ভেদে আলাদা হয়ে থাকে তাই কোন কিছু নিয়মিতভাবে খাওয়ার অভ্যাস শুরু করার পূর্বে অবশ্যই একজন ভালো ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নিতে হবে এবং সঠিক মাত্রা জেনে খাওয়া শুরু করতে হবে। আশা করছি কাঠবাদাম যদি আপনি নির্দিষ্ট মাত্রায় এবং নির্দিষ্ট নিয়মে খান তাহলে এর থেকে স্বাস্থ্য উপকারিতা পাবেন এবং সুস্থ থাকতে পারবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url