টক দই এর ১২টি বিশেষ উপকারিতা - টক দই এর ক্ষতিকর দিক
মিষ্টি দই আমরা সচরাচর খেলেও , নিয়ম করে কখনোই টক দই খেয়ে ওঠা হয় না। হ্যাঁ টক দই আমরা ব্যবহার করে থাকি স্পেশাল কিছু রান্নার কাজে এবং স্পেশাল কিছু খাবারে শুভ রাত্রি। কিন্তু আপনাদের মধ্যে অধিকাংশ মানুষই জানেন না যে টক দই আমাদের শরীরের জন্য কতটা উপকারী। নিয়ম করে টক দই খেলে এর মাধ্যমে বিশেষ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যায়।
টক দই নিঃসন্দেহে স্বাস্থ্য উপকারী হলেও বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে এর পার্শ্ব
প্রতিক্রিয়া দেখা যায় তাই টক দই খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে
এবং টক দই খাওয়ার সময় এবং নিয়ম সম্পর্কেও ভালোভাবে জেনে নিতে হবে ,
কারণ টক দইয়ের উপকারিতা পাওয়ার জন্য টক দই খাওয়ার সঠিক সময় , নিয়ম
এবং এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলো জেনে নেওয়া খুবই জরুরী না হলে শারীরিক জটিলতা
দেখা দিতে পারে।
সূচিপত্রঃটক দই এর উপকারিতা - টক দই এর ক্ষতিকর দিক
টক দই এর উপকারিতা
নিয়মিত যদি টক দই সঠিক নিয়মে খাওয়া যায় তাহলে , এই টক দই আমাদের সৃষ্ট হবে
জীবন যাপন করার ক্ষেত্রে অনেক সাহায্য করতে পারে। কারণ টক দইয়ের রয়েছে বিশেষ
কিছু গুনাগুন অথবা বলতে পারেন স্বাস্থ্য উপকারিতা। টক দইয়ের যে স্বাস্থ্য
উপকারিতাগুলো আপনাদের মধ্যেই অনেকেই জানেন না সেগুলো হল , এই টক দই
ভিটামিন এবং খনিজ উপাদানের ভালো উৎসঃ টক দই এর ভেতর থেকে প্রচুর পরিমাণে
ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান পাওয়া যায় , আর এ কারণে ভিটামিন এবং খনিজের বড়
একটি উৎস হিসেবে কাজ করতে পারে টক দই। টক দই থেকে ক্যালসিয়াম , পটাশিয়াম
, ম্যাগনেসিয়াম , ফসফরাস , জিংক , সেলেনিয়াম , প্রোটিন , ভিটামিন বি
কমপ্লেক্স এবং ভিটামিন এ পাওয়া যায়
এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোবায়োটিকঃ টক দই থেকে প্রচুর পরিমাণে
প্রোবায়োটিক পাওয়া যায় , আর প্রবায়টিক যুক্ত খাবার গুলো আমাদের হজম
প্রক্রিয়া উন্নত , অন্ত্র ভালো রাখা , ডায়রিয়া ইত্যাদি সমস্যা সমাধান নিয়ে
কার্যকরী ফল প্রদান করে থাকে।
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলেঃ টক দইয়ের ভেতরে প্রচুর
পরিমাণে বিভিন্ন ধরনের খনিজ উপাদান এবং ভিটামিন থাকার কারো নেই নিয়মিত টক
দই খেলে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে এবং টক দইয়ের ভেতরে থাকা উপাদান গুলো
আমাদের দেহের রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুর সাথে লড়াই করে এবং জীবাণু ধ্বংস করার
মাধ্যমে শরীফকে সুস্থ রাখে।
হাড় গঠনে সহায়তা করেঃ আমাদের শরীরের হাড় গঠনের জন্য ক্যালসিয়াম খুবই
জরুরী , আর টকদয়ের মধ্যে যথেষ্ট মাত্রায় ক্যালসিয়াম থাকাই নিয়মিত টক দই
খাওয়ার অভ্যাস করলে তা আমাদের শরীরের হাড় গঠনে সহায়তা করে। গবেষণায় দেখা গেছে
এক কাপ টক দইয়ের ভেতর থেকে প্রায় ২৭৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম পাওয়া যায় । আর
এই ক্যালসিয়াম শুধু আমাদের হার গঠনে সহায়তা করে না হাড়ের ঘনত্ব ঠিক
রাখার ক্ষেত্রেও সাহায্য করে। ক্যালসিয়াম থাকার কারণে টক দই শুধু হাড়
গঠনেই নয় দাঁত মজবুত করতেও সহায়তা করে।
অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণ করেঃ আপনারা অনেকেই হয়তো জানেন টক দই
আমাদের শরীরের অতিরিক্ত প্রয়োজন নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে
থাকে। টক দইয়ে হাই প্রোটিন এবং প্রবায়োটিক থাকার কারণে এটি খেলে পেট অনেকক্ষণ
ভরে থাকে , যার কারণে অতিরিক্ত খাবার খাওয়া এবং ঘন ঘন খাবার খাওয়ার ইচ্ছা কমে
যায় যা ওজন কমানোর ক্ষেত্রে খুবই সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। আবার অনেক সময়
দেখা যায় ওজন কমানোর সময় সঠিক ডায়েট হলো না করার কারণে শরীরে পুষ্টি
ঘাটতি দেখা দেয় এবং শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। টক দই যেহেতু বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি
উপাদান রয়েছে , তাই ডায়েটের সময় খাদ্য তালিকায় টক দই রাখলে শরীর দুর্বল হয়
না , পাশাপাশি স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
ডাইজেস্টিভ সিস্টেম উন্নত করেঃ শরীরের ডাইজেস্টিভ সিস্টেম উন্নত
করতেও সাহায্য করে টক দই। টক দই প্রোবায়টিক জাতীয় খাবার হওয়ার কারণে এটি
আমাদের হজম প্রক্রিয়া ভাল রাখতে এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখঃ শরীরের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতেও
বিশেষভাবে সাহায্য করে টক দই। একাধিক পরীক্ষায় দেখা গেছে হাই
প্রেসারের সমস্যা প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ কমিয়ে ফেলতে পারে টক দই। তাই যারা
উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় রয়েছেন তারা নিয়মিত টক দই খেতে পারেন , এতে
আপনাদের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য হবে।
হার্ট ভালো রাখেঃ আমাদের শরীরের খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে
সাহায্য করে টক দই। টক দই শুধু কোলেস্টেরলের মাত্রায় কমায় না পাশাপাশি উচ্চ
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও রাখে। আর টক দই খেলে যেহেতু রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং
কোলেস্ট্রল এর মাত্রা বাড়তে পারে না, এ কারণে হার্ট সুস্থ থাকে।
মুখের আলসার দূর করেঃ মুখের ভেতরে যাদের আলসার আছে তারা খেতে পারেন টক দই ,কারণ টক দই মুখের আলসার দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে। মুখের আলসার দূর করার জন্য টক দই এর সাথে মধু মিশিয়ে সকাল বিকাল খেলে উপকার পাওয়া যায়।
মানসিক চাপমুক্ত রাখেঃ টক দই খেলে এর ভেতরে থাকা উপাদানগুলো আমাদের শরীরের
অভ্যন্তরে গিয়ে যে প্রতিক্রিয়া দেখায় সেগুলোর কারণে মানসিক চাপ কম হতে থাকে।
বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা নিয়মিত ভাবে টক দই খাই তাদের ক্ষেত্রে
মানসিক চাপ , ডিপ্রেশন , স্ট্রেস , এংজাইটির সমস্যা অনেক কম হয়।
চর্মরোগ দূর করেঃ টক দইয়ের ভেতরে ল্যাটিক অ্যাসিড থাকায় ,
চর্মরোগ এবং স্কিনের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতেও সাহায্য করে। টক দই আমাদের স্কিনের
উপর থেকে ডেট সেল দূর করতে সাহায্য করে।
রূপচর্চায়ঃ শুধু স্বাস্থ্য ভালো রাখার ক্ষেত্রেই নয় রূপচর্চার
কাজেও বহুলভাবে ব্যবহৃত হয় টক দই। ত্বকের মশ্চারাইজার ধরে রাখা , আদ্রতা দূর করা
, স্কিন গ্লোয়িং করা , সানবার্ন দূর করা , ডার্ক সার্কেল রিমুভ করা ইত্যাদি সকল
ক্ষেত্রে টক দই রাখতে পারে বিশেষ অবদান। রূপচর্চার জন্য টক দইয়ের সাথে বেসন এবং
লেবুর রস মিশিয়ে ত্বকে লাগাতে পারেন ,সপ্তাহে তিন দিন লাগালে দ্রুত সময়ের মধ্যে
এর ফলাফল লক্ষ্য করতে পারবেন।
এছাড়াও টক দই শরীরে শ্বেত রক্তকণিকা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে , কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ও ডায়রিয়া সারাতে , অস্টিওপোরোসিস , আর্থ্রাইটিস ইত্যাদি সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রেও বিশেষভাবে ভূমিকা পালন করে থাকে এবং যাদের দুধ খেলে এসিডিটির সমস্যা হয় তারা দুধের বিকল্প হিসেবেও এই টক দই খেতে পারে।
নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন
comment url