বাতের ব্যথা থেকে মুক্তির ১৪টি উপায়

বাতের ব্যথা থেকে মুক্তির উপায়গুলো যদি জানা না থাকে তাহলে , আমাদের স্বাভাবিক জীবন বিপর্যস্ত এবং স্বাভাবিক কাজকর্ম করার ক্ষমতার একটি বড় একটি অংশ নষ্ট করে খেলার ক্ষমতা রাখে এই বাত নামক রোগটি যাকে মেডিকেল সাইন্সে রিউমাইটেড আর্থ্রাইটিস বলা হয়। যেকোনো বয়সী মানুষের মধ্যেই এই রোগের ঝুঁকি থাকলেও , বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ৪০ - ৪৫ বছর পার হলেই শুরু হয় রিউমাইটেড আর্থ্রাইটিস সংক্রান্ত নানা সমস্যা।
বাতের ব্যথা হল একটি যন্ত্রণাদায়ক রোগ। বয়স্ক ব্যক্তিরা ছাড়াও মাছ বয়সী এবং অল্প বয়সী মানুষের মধ্যেও বাতের সমস্যা দেখা যায়। বাতের অসহ্য যন্ত্রণা থেকে মুক্তির জন্য অনেকেই এর উপায় খুঁজে থাকেন। বাতের এই সমস্যা সমাধানের জন্য আজকে আপনাদেরকে বাতের ব্যথা থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে বেশ কিছু ঘরোয়া টিপস জানাবো।

বাতের ব্যথা থেকে মুক্তির উপায়

বাতের ব্যথা থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে এই টিপসগুলো আপনাদের উপকারে আসবে বলে আশা করা যায়। বাতের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই বিশেষ নজর দিতে হবে লাইফ স্টাইল এবং খাদ্য তালিকার ওপর । বাতের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য যে যে পদক্ষেপ গুলো আপনাদের নিতে হবে সেগুলো হলো-

ঠান্ডা পানির সেঁকঃ বাতের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে হলে আইস ব্যাগ বা আইস কিউ ট্যাওয়েলে পেঁচিয়ে ব্যথায় স্থানে সেঁক দিতে পারেন। ঠান্ডা পানির সেঁক আপনার আক্রান্ত স্থানের প্রদাহ কমিয়ে ব্যথার উপশম দিতে অনেকটা সাহায্য করবে।

গরম পানির সেঁকঃ ঠান্ডা পানির মতন ব্যথা স্থানে  গরম পানির সেঁক দিলেও অনেক আরাম পাওয়া যায়।গরম পানি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন সেঁক দিলে ,এই গরম পানির সেঁক গিরা গুলো শক্ত হতে দেয়না এবং বাতের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

ব্যথাযুক্ত স্থানে মাসাজ করুনঃ মাসাজ আপনাকে বাতের ব্যথা থেকে উপশম দিতে অনেকটাই সাহায্য করতে পারে। ব্যথাযুক্ত স্থানে আলতো হাতে মাসাজ করুন ,মাসাজের ফলে শরীরে রক্ত এবং অক্সিজেন চলাচল বৃদ্ধি পাবে আর পাশাপাশি বাতের ব্যথা কম হতে মাসাজ অনেকটা আরাম দেবে।

বিশ্রাম করাঃ বাতের ব্যথা কমাতে আপনার প্রয়োজন হতে পারে পর্যাপ্ত বিশ্রামের। বাপের ব্যথা যখন বেশি হয় তখন যদি বিশ্রাম না নিয়ে অতিরিক্ত হাটাহাটি বা ব্যথায় স্থানে অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করা হয় সে ক্ষেত্রে ব্যথা কমানো তো দূরের কথা আরো বেড়ে যেতে পারে তাই ভাতের ব্যথা থেকে আরাম পেতে হলে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন এবং যেই স্থানে ব্যথা বা যন্ত্রণা সৃষ্টি হয়েছে সে স্থানে পারোতো পক্ষে অতিরিক্ত চাপ না দেয়া বা জোর করে হাঁটা চলার চেষ্টা করবেন না।

আদা চা বা আদার রসঃ আপনারা হয়তো জেনে থাকবেন যেকোন প্রদাহ এবং ব্যথা দূর করতে আদা অত্যন্ত ভালো একটি উপাদান কেননা তার ভেতরে রয়েছে এন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। শরীরের যেকোনো ব্যথার উপসংঘটানোর পাশাপাশি বাপের ব্যথা কম করতেও আদা চা বা আদার রস অনেক ভালো কাজ করে। তাই বাতে ব্যথা থেকে আরাম পেতে ঘন ঘন আদা চা খেতে পারেন।

হলুদঃ আদার পাশাপাশি ব্যথা নাশক আরেকটি অত্যন্ত উপকারী উপাদান হলুদ। হল প্রাকৃতিকভাবে ব্যথা দূরকারী হিসেবে কাজ করে থাকে। তাই বাতের ব্যথা থেকে মুক্ত থাকার জন্য হালকা গরম দুধের ভেতরে হলুদ মিশিয়ে পান করতে পারেন এই পানীয়টি আপনার বাতের ব্যাথায় এবং বেশির ব্যথা দূর করতে সাহায্য করবে।

আরো পড়ুণঃ হলুদের উপকারীতা

দুধ এবং দুগ্ধজাত খাবারঃ আপনারা জানেন আর দুধের ভেতর থেকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি পাওয়া যায় যা আমাদের হাড় মজবুত করতে এবং হাড়ের ক্ষয় রোধ করতে বিশেষ সাহায্য করে। দুধ এবং দুগ্ধ জাত খাবার গুলো শুধু হাড় মজবুত এবং হায়ারের ক্ষয় রোধই  নয় এর পাশাপাশি দাঁতের ব্যথা মুক্ত রাখতেও সাহায্য করে। তাই নিয়মিত ১ গ্লাস দুধ অথবা দুটো জাত খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।

ভিটামিন সি যুক্ত খাবারঃ বাতের ব্যথা কমাতে বা বাতের ব্যাথা থেকে মুক্ত থাকতে নিয়মিত ভিটামিন সি যুক্ত খাবার এবং ফলগুলো গুলো গ্রহণ করুন কারণ ভিটামিন সি যুক্ত খাবার গুলো হাড়ের সংযোগস্থল থেকে ইউরিক এসিড কমানোর মাধ্যমে বাতের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

গ্রিন টিঃ বাতের ব্যথা কমাতে খেতে পারেন গ্রিন টি কেননা গ্রিন টির ভিতরে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা বাপের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যারা নিয়মিতভাবে গ্রিন টি পান করে তাদের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে এবং গ্রিন টি বাপের ব্যথা কমাতে বিশেষ সাহায্য করে থাকে।

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখাঃ শারীরিক ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি হয়ে গেলে সে ক্ষেত্রে বাপের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই খেয়াল রাখতে হবে শারীরিক ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার নিয়মিত ব্যায়াম এবং খাদ্যাভ্যাস এর মধ্যে দিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণে বা স্বাভাবিক পর্যায়ে রাখলে সেক্ষেত্রে বাপের সমস্যা অনেকটাই কমানো সম্ভব।

পুষ্টিকর খাবার গ্রহণঃ শরীর সুস্থ রাখতে এবং বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে মুক্ত থাকতে হলে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের কোন বিকল্প নেই এবং বাতের সমস্যাটিও এর বাইরে নয়। শরীরে পুষ্টি ঘাটতে থেকে বাত রোগ হতে পারে এই কারণে সব সময় পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্য সম্মত খাবার গ্রহণের চেষ্টা করতে হবে। পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি ঘাটতি থাকবে না এবং অন্যান্য অসুখের সাথে সাথে বাতের ব্যথাও দূর হবে।

ধূমপান এবং অ্যালকোহল পান পরিহার করতে হবেঃ ধূমপান এবং অ্যালকোহল পান করলে বাতের সম্ভাবনা এবং বাতের ব্যথা দুটোই বেড়ে যেতে পারে তাই বাত থেকে মুক্ত থাকতে হলে অবশ্যই ধূমপান এবং অ্যালকোহল পান করা পরিহার করতে হবে। ধূমপান ও অ্যালকোহল পান শুধু বাতের জন্যই ক্ষতিকর নয় এগুলো সেবনের ফলে শরীর বিভিন্নভাবে নানান ধরনের জটিলতা এবং সমস্যার সম্মুখীন হয়।

সাঁতার কাটা বা ব্যায়াম করাঃ সাঁতার আপনার বাতের ব্যথাকে কমাতে বিশেষ সাহায্য করতে পারে একারণে যারা বাতের রুগী রয়েছেন তাদের উচিত সম্ভব হলে সপ্তাহে অন্ততপক্ষে তিন থেকে চার দিন ৩০-৪০ মিনিট সাঁতার কাটা এছাড়াও সাঁতার কাটা পরিবর্তে ছোটখাটো হালকা পাতলা ব্যায়াম অথবা প্রতিদিন স্বাভাবিক গতিতে কিছুক্ষণ হাঁটা চলার অভ্যাস করলে সেক্ষেত্রে বাতের ব্যথা থেকে অনেকটাই উপশম পাওয়া যায়।

ফিজিওথেরাপিঃ বাতের ব্যথা কমাতে আপনি সাহায্য নিতে পারেন ফিজিওথেরাপির। বর্তমানে ফিজিওথেরাপি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বিহীন এবং কার্যকরী একটি চিকিৎসা পদ্ধতি , এই পদ্ধতিতে চিকিৎসকগণ বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম , ম্যানুয়াল থেরাপি অথবা ইনজেকশন এর মাধ্যমে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হীন ভাবে বিভিন্ন ধরনের ব্যথা কমানোর চিকিৎসা করে থাকেন। তাই বাপের ব্যথা কমানোর জন্য আপনি অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্ট এর পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন।

আরো পড়ুনঃ রাতে ঘুম না হলে করণীয়

এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ড্রাই ফ্রুটস , বেরি জাতীয় ফল , ওমেগা থ্রি জাতীয় খাবার , শস্য জাতীয় খাবার গুলোর মধ্যে থেকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম , লোহ , জিঙ্ক , প্রোটিন , পটাশিয়াম , আইরন পাওয়া যায় এবং এই খাবার গুলো প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় যুক্ত করার মাধ্যমে শরীরে পুষ্টি চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বাতের ব্যথা থেকেও মুক্ত থাকা যায়

মন্তব্য , তবে বাতের ব্যথার রোগীদের অবশ্যই জেনে রাখা উচিত যে বাতের ব্যথায় পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেয়ার ব্যাপারটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুরু থেকেই যদি বাতের ব্যাপারে পর্যাপ্ত এবং সঠিক চিকিৎসা করানো যায় তাহলে এই রোগ থেকে সম্পূর্ণরূপে নিরাময় সম্ভব। তাই বাতের ব্যাপারে অবহেলা না করে আজি ডাক্তারি পরামর্শ গ্রহণ করুন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শুরু করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url