ইউরিন ইনফেকশন দূর করার উপায় - ইউরিন ইনফেকশনের কারণ

প্রস্রাবের সংক্রমণ হলে আমরা যেটাকে সাধারণ ভাষায় ইউরিন ইনফেকশন বলে থাকি মেডিকেল সাইন্সে বা ডাক্তারি ভাষায় সেটাকে বলা হয় ইউরিনারি ট্র্যাক্ট। এটি নারী পুরুষ উভয়েরই কমন একটি সমস্যা তবে বেশিরভাগ সময় এই সমস্যায় আক্রান্ত হতে দেখা দেয় মেয়েদেরকে বেশি। ইউরিন ইনফেকশনে আক্রান্ত হলে এর থেকে দ্রুত সেরে ওঠার উপায় এবং ইউরিন ইনফেকশনের কারণ কি এ বিষয়ে আজকে আপনাদের বিস্তারিত জানাবো।

আপনার প্রসব যদি লালচে হলুদ , দুর্গন্ধযুক্ত , জ্বালাপোড়া হয়ে থাকে এবং বেশিরভাগ সময় বমি ও জ্বর জ্বর ভাব থাকে , আর পাশাপাশি তলপেটে , পিঠে ব্যথা অনুভব হয়ে থাকে তাহলে হতে পারে আপনি ইউরিন ইনফেকশনে আক্রান্ত। আর যদি তাই হয় তাহলে আপনার অবশ্যই জেনে নেয়া উচিত ইউরিন ইনফেকশন দূর করার উপায় হল। ইউরিন ইনফেকশনের কারণ এবং ইউরিন ইনফেকশন দূর করার উপায় গুলো জানা থাকলে এই রোগটি থেকে খুব সহজেই নিরাপদ থাকা যায়।

সূচিপত্রঃ ইউরিন ইনফেকশন দূর করার উপায় - ইউরিন ইনফেকশনের কারণ

ইউরিন ইনফেকশনের কারণ

ইউরিন ইনফেকশন হলো মূত্রতন্ত্রে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ গঠিত একটি অসুখ। অর্থাৎ মুত্রতন্ত্রের যে কয়টি অংশ রয়েছে তার মধ্যে কোথাও, কোন অংশেই যদি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটে তাহলে তাকে ইউরিন ইনফেকশন বলা হয়। সাধারণভাবে মূত্র তন্ত্রের এই সংক্রমণকে ইনফেকশন বলা হলেও মেডিকেল সাইন্স থেকে বলা হয় ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন। এই ইউরিন ইনফেকশন হওয়ার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে, যেমন - দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব আটকে রাখা, শরীরে পুষ্টির অভাব। কারণ শরীরের পুষ্টি ঘাটতি দেখা দিলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং সেই সুযোগে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের সুযোগ পাই এবং এখান থেকে হতে পারে ইউরিন ইনফেকশন।

আরো পড়ুনঃ জরায়ু ইনফেকশন এর লক্ষণ

ইউরিন ইনফেকশনের আরেকটি উল্লেখযোগ্য কারণ হলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব। ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে প্রস্রাবের ইনফেকশন হয়ে থাকে। বিশেষ করে মাসিকের সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাবে বেশিরভাগ সময় ইউরিন ইনফেকশনে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। ডায়াবেটিস রোগীদের এবং মেনোপজ হওয়া নারীদের ক্ষেত্রে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকার কারণে সহজেই ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ ঘটাতে পারে আর এখান থেকেই বেড়ে যেতে পারে ইউরিন ইনফেকশনের ঝুঁকি। এছাড়াও যৌন সম্পর্কে মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটের কারণে ইউরিন ইনফেকশন হয়ে থাকে। আশা করছি উনি ইনফেকশনের কারণগুলো সম্পর্কে ধারণা পেয়েছে। মেয়েদের ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা কমে গেলে ইউরিন ইনফেকশনের আশঙ্কা বেড়ে যায় কারণ এই সময় খুব সহজে ব্যাকটেরিয়া মূত্রতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটাতে পারে।

ইউরিন ইনফেকশন দূর করার উপায়

ইউরিন ইনফেকশন হলে বেশ কিছু সমস্যা দেখা দেয় আর এই সমস্যাগুলো যদি দীর্ঘদিন ধরে চলে অথবা ক্রনিক আকার ধারণ করে তাহলে ইউরিন ইনফেকশনের কারণে প্রভাবিত হতে পারে কিডনি। তাই প্রসাবের ইনফেকশন অচিরেই দূর করার জন্য আমাদের জানা প্রয়োজন ইউরিন ইনফেকশন দূর করার উপায় গুলো। তাহলে চলুন আর দেরি না করে ইউরিন ইনফেকশন দূর করার উপায় গুলো আমরা জেনে নেই।
পানি পানঃ ইনফেকশন হয়ে থাকে মূলত মূত্রতন্ত্রে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে , আর এই সংক্রমণ দূর করার জন্য ইউরিন ইনফেকশন হলে আমাদেরকে প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে। কারণ পানি আমাদের শরীর থেকে বিভিন্ন রোগ জীবাণু অথবা টক্সিক পদার্থগুলো প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দেয়। আর এ কারণে ইনফেকশনের সময় প্রচুর পরিমাণে পানি পান করলে ইনফেকশনের জীবাণুগুলো পানির মাধ্যমে বের হয়ে যেতে পারে।
আনারসঃ ইউরিন ইনফেকশন হলে বেশি বেশি আনারস খাওয়ার চেষ্টা করুন। ব্রোমেলাইন নামক এক ধরনের এনজাইম থাকে আনারসের ভেতরে। আর এই ব্রোমেলাইন এনজাইমটি প্রস্রাবের ইনফেকশন সারাতে ভীষণ কার্যকরী। ঔষধের ক্ষেত্রেও দেখা যায় ইউরিন ইনফেকশনের রোগীদেরকে ডাক্তাররা ব্রোমেলাইন যুক্ত অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের জন্য সাজেস্ট করেন। তাই ইউরিন ইনফেকশন থেকে সেরে ওঠার জন্য বেশি বেশি আনারস খাওয়া প্রয়োজন।
ভিটামিন সি জাতীয় খাবার গ্রহণঃ ইউরিন ইনফেকশনে আক্রান্ত হলে বেশি বেশি ভিটামিন সি জাতীয় খাবার গুলো গ্রহণ করা উচিত। কারণ ভিটামিন সি জাতীয় খাবার গুলোর মধ্যে রয়েছে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান যা মূত্রতন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া গুলোকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে। এবং ভিটামিন সি জাতীয় খাবার প্রসবের জ্বালাপোড়া কমাতে পারে। আর এই কারণেই ইউরিন ইনফেকশনে আক্রান্ত হলে ভিটামিন সি জাতীয় খাবার গুলো বেশি পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত। এ পরিস্থিতিতে দৈনিক যদি ৫০০০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি গ্রহণ করা যায় তাহলে প্রস্রাবের ইনফেকশন দূর করতে কার্যকরী ফলাফল পাওয়া যাবে।
আপেল সিডার ভিনেগারঃ আপেল সিজার ভিনেগারে রয়েছে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান ছাড়াও এনজাইম , পটাশিয়াম এবং বিভিন্ন ধরনের খনিজ উপাদান। তাই ইউরিন ইনফেকশনের সময় হালকা কুসুম গরম পানিতে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে খেলে এটি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ দূর করতে এবং ইনফেকশনের জ্বালাপোড়া কমাতে সাহায্য করে।
ক্রেনবেরি ও ব্লুবেরিঃ ইউরিন ইনফেকশনে আক্রান্ত রোগীদের জন্য আদর্শ খাবার গুলোর মধ্যে রয়েছে ক্রেনবেরি ও ব্লুবেরির জুস। এদেশের ভেতরে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করেক্রেনবেরি ও ব্লুবেরি আর যার ফলে ইউরিন ইনফেকশনের কারণে হওয়া জ্বলা পোড়া কমাতে সাহায্য করে।
শসাঃ শসার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকায় এটি আমাদের শরীরকে পানি শূন্যতা থেকে রক্ষা করতে সাহায্য এবং সশার ভেতরে পানি পরিমাণ বেশি থাকায় শরীর থেকে বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত বা ক্ষতিকর উপাদান গুলো প্রস্রাবের মাধ্যমে বের হয়ে যেতে সাহায্য করে। আর একারণে ইউরিন ইনফেকশনের সময় বেশি বেশি শসা খেলে ইনফেকশনের কারণে হওয়া জ্বলা পড়া থেকে অনেকটা রেহাই পাওয়া যায়।
দইঃ ইউরিন ইনফেকশন আক্রান্ত রোগীদের জন্য প্রবায়োটিক জাতীয় খাবার অত্যন্ত জরুরী। আর দইয়ের ভেতরে রয়েছে প্রবায়োটিক জাতীয় উপাদান এ কারণে ইউরিন ইনফেকশনের সময় টক দই খেলে অনেকটাই উপকার পাওয়া যায়।
বেকিং সোডাঃ  বেকিং সোডা যদি এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে প্রতিদিন একবার করে খাওয়া হয় তাহলে , এই রেমিডিটি ইউরিন ইনফেকশন সারাতে দ্রুত কাজ করে। ইউরিন ইনফেকশনের সময় বেকিং সোডা পানিতে মিশিয়ে খেলে এটি প্রসাবের জ্বালাপোড়া এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করে , কারণ বেকিং সোডা মূত্রনালীর সংক্রামন দূর করতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে বেশি মাত্রায় বেকিং সোডা খেলে এটি উপকারের চেয়ে উপকার বেশি করতে পারে।
এছাড়াও ইউরিন ইনফেকশনে আক্রান্ত হলে অস্বাস্থ্যকর এবং ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চলুন এবং অল্প মসলাযুক্ত তরল খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। পাশাপাশি ডাবের পানি খেতে পারেন। আর ইউরিন ইনফেকশনের জ্বালাপোড়া ভাব কমাতে হট ওয়াটার ব্যাগের সাহায্যে পেটে সেক নিতে পারেন এতে আপনার প্রসাবের রাস্তার জ্বালাপোড়া সাময়িকভাবে কিছুটা কমাতে সাহায্য করবে বলে আশা করা যায়, ইউরিন ইনফেকশন থেকে মুক্ত থাকার জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অত্যন্ত জরুরি এবং অপরিহার্য।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url